আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এমপি হতে যোগ্যতা লাগে না!

ইংল্যান্ডের রাজা-রানীদের সবচেয়ে বিখ্যাত, আলোচিত ও সমালোচিতদের মধ্যে রয়েছেন_ রাজা অষ্টম হেনরি, তার কন্যা রানী প্রথম এলিজাবেথ ও আঠারো শতকের বিখ্যাত রানী ভিক্টোরিয়া। এই তিনজন মিলে আধুনিক গ্রেট ব্রিটেনকে বিশ্বে একটি শক্তিশালী ও মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রের ভিত অনেকটাই তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই উন্নতির সোপানের অনেকটাজুড়েই ছিল তাদের সুদক্ষ লিডারশিপ। রাজা অষ্টম হেনরি প্লেটো ও এরিস্টটলের দর্শন সম্ভবত খুব ভালোভাবেই পাঠ করেছিলেন। আর সে জন্যই তিনি প্লেটো প্রণীত দর্শন যেমন_ একজন ভালো ও সফল রাজা কিংবা রাষ্ট্রনায়ককে অবশ্যই একজন দার্শনিক হতে হবে, এই দর্শনটুকু না মানলেও এরিস্টটল প্রণীত দর্শন অর্থাৎ রাজা কিংবা রাষ্ট্রনায়ককে দার্শনিক না হলেও চলবে কিন্তু একজন রাজাকে অবশ্যই তার উপদেষ্টা হিসেবে দার্শনিকদের নিয়োগ দিতে হবে।

এই দর্শনটুকু অবশ্য তিনি মনেপ্রাণেই ধারণ করেছিলেন। আর সে জন্যই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি নিয়োগ দিয়েছিলেন থমাস ক্রমওয়েলকে। থমাস ক্রমওয়েলের পাণ্ডিত্য বা যোগ্যতা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কিংবা বিগত বিএনপি সরকারের কোনো আলু-পটল ব্যবসায়ী নন। কোনো মুদি দোকানদার কিংবা জুট ব্যবসায়ী নন। তিনি ছিলেন সেই যুগের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন আইনজ্ঞ।

লেখাপড়া করেছিলেন ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ অঙ্ফোর্ডে। লিংকনস-ইন থেকে ব্যারিস্টার হয়েছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে রাজা অষ্টম হেনরি নিয়োগ দিয়েছিলেন স্যার থমাস মুরকে। থমাস মুরও ছিলেন একজন অসামান্য বিজ্ঞ রাজনীতিক, ব্যারিস্টার ও চার্চ সম্পর্কিত আইন বিশেষজ্ঞ। একই সঙ্গে তিনি ইউটোপিয়া নামক গ্রন্থটি লেখার মধ্য দিয়ে কমিউনিজম নামক দর্শনটির জন্মদাতা হিসেবে বিশ্বে খ্যাত হয়ে আছেন।

যদিও কমিউনিজমের দর্শনটির বিবিধ প্রচারক হিসেবে কার্ল মার্কস ও এঙ্গেলস কিংবা লেনিনই বিশ্বে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। রাজা হেনরি তার মন্ত্রী কিংবা উপদেষ্টাদের মধ্যে আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন, তার নাম হচ্ছে থমাস উজি। তিনিও অঙ্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব নিয়ে লেখাপড়া করেছেন। এখানে একটি বিষয় বেশ লক্ষণীয়। ইংল্যান্ড কোন পথে চালিত হবে কিংবা ইংল্যান্ডকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে মেধার সঙ্গে কোনো আপস করা হয়নি।

সেটি আমরা দেখি সেই মধ্য যুগে ইংল্যান্ডে রাজা-রানী কর্তৃক মন্ত্রী, উপদেষ্টা নিয়োগের ইতিহাস থেকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে_ সেই সময় অর্থাৎ ১৫শ' শতকের মাঝামাঝি সময়ে কোন ধরনের ব্যক্তিবর্গ পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য হয়ে যেতেন। প্রসঙ্গ ক্রমেই বলতে হয়, যদিও ইংল্যান্ডে তখন রাজতন্ত্র ছিল কিন্তু সীমিত আকারে। সংসদও বিভিন্ন বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম ছিল। আর সেই পার্লামেন্টে এমপি হয়ে যেতেন কোনো হেঁজিপেঁজি ধরনের ব্যক্তি নন।

সেই মধ্যযুগেও এমপি হয়েছেন বিখ্যাত লেখক ও দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকন, স্যার ওয়াল্টার স্কটের মতো বিজ্ঞজনরা। আজও গ্রেট ব্রিটেনে সিংহ ভাগ এমপি নির্বাচিত হন অঙ্ফোর্ড, ক্যামব্রিজ, লন্ডন ইউনিভার্সিটিসহ সেরা সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা মেধাবী ব্যক্তিত্বরা।

দুই. ১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জন এফ কেনেডি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, তিনি তার মন্ত্রী পরিষদ কিভাবে ও কাদের নিয়ে গঠন করবেন। ইত্যবসরে কেনেডির বাবা জোসেফ কেনেডি ছেলে জন এফ কেনেডির হাতে একটি তালিকা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এদের তুমি মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দাও।

জন এফ কেনেডি তালিকাটিতে একবার চোখ বুলিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলেন এবং তার পিতাকে বললেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছে। আমি নিজেই মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের নিয়োগ দেব। সেই মন্ত্রিপরিষদ ও উপদেষ্টাদের বেশির ভাগই হবে হার্ভার্ড গ্রাজুয়েট, ডক্টরেট ও যুক্তরাষ্ট্রের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা সেরা সব প্রফেশনালসদের নিয়ে। জন এফ কেনেডি নিজেও ছিলেন একজন হার্ভার্ড গ্রাজুয়েট। প্রসঙ্গক্রমেই এখানে জন এফ কেনেডির রাজনীতিতে প্রবেশ ও তার উত্থান সম্পর্কে কিছু কথা বলে নিতে হয়।

জন এফ কেনেডির রাজনীতিতে আসার পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন তার পিতা জোসেফ কেনেডি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু আগে জোসেফ কেনেডিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত করে লন্ডনে পাঠানো হয়। জোসেফ কেনেডি ছিলেন একজন ডাকসাইটে রাষ্ট্রদূত। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে এই বলে তার মতামত ব্যক্ত করেন যে, এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়ানো ঠিক হবে না। আর এতেই অাঁতে ঘা লাগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ইহুদি সম্প্রদায়ের।

তারা জোসেফ কেনেডিকে পদচ্যুত করার জন্য উঠেপড়ে লাগে এবং পরিশেষে পদচ্যুতও হন জোসেফ কেনেডি। তখনই তিনি মনেমনে পণ করেন, তার জ্যেষ্ঠ পুত্র জোসেফ প্যাট্রিক কেনেডি জুনিয়রকে রাজনীতিতে এনে তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হতে যা কিছু প্রয়োজন সবই তিনি করবেন। কিন্তু বিধি বাম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্যাট্রিক কেনেডি সক্রিয় অংশগ্রহণ করে মারা যান। প্যাট্রিক যুদ্ধে মারা গেলেও পিতা জোসেফ কেনেডি এতটুকু মনোবল না হারিয়ে মেজ পুত্র জন এফ কেনেডিকে রাজনীতিতে আসতে এক প্রকার বাধ্য করলেন। তারপর তিনি ম্যাসাচুয়েটসের চার্লস টাউন থেকে ১৯৪৬ সালে জীবনে প্রথম কংগ্রেসম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসেন।

সব কিছুর পেছনে ভাগ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেন পিতা জোসেফ কেনেডি। কিন্তু জন এফ কেনেডি নিজেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা বিশ্ব রাজনৈতিক মঞ্চের প্রতিভূ হিসেবে নিজেকে আস্তে আস্তে গড়ে পিঠে নিচ্ছিলেন। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয় যেমন, হার্ভার্ড, ইয়েল, কলম্বিয়া ইত্যাদিসহ সেরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ছাত্রছাত্রীর মধ্য থেকে গড়ে ১০ জনের একজন সিনেটর কিংবা কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হন।

তিন. এখানে আমি যে দৃশ্যকল্পের অবতারণা করছি সেটি আমার একান্তই কল্পনাআশ্রিত। বিষয়টি স্যাটায়ার ফর্মে লেখা হলেও, এটি বললে অত্যুক্তি হবে না যে, এই দৃশ্যপটে বর্তমান রাজনীতির বাস্তব চিত্রটিই প্রকাশ পেয়েছে।

২০১৩ সালের ডিসেম্বরের যে কোনো একটি তারিখ_ বিরোধীদলীয় নেতা বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ইন্টারভিউ নিচ্ছেন_ ধরা যাক, এ পর্যায়ে সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন, পাবনা সুজানগর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী কিছু ব্যক্তির। একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের কক্ষে স্থায়ী কমিটির সব সদস্য সমেত সবার মধ্যমণি হয়ে বসে আছেন বিরোধী নেত্রী। অতিরিক্ত শুধু তিনজন মানুষ। দলের জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং অন্যজন নেত্রীর বিশেষ সহকারী। প্রথমে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য কক্ষটিতে ডাকা হলো সলিম রাজা হবিকে।

তিনি গতবারের হারু এমপি। হারু বললাম এই কারণে যে, তিনি গতবার দাঁড়িয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু হেরে গেছেন বিপুল ভোটের ব্যবধানে। রুমটিতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই নেত্রী সলিম রাজা হবিকে টেবিলের ওপর রক্ষিত এক বোতল আমের জুস, ফ্রুটিকা পান করার নির্দেশ দিলেন, কারণ এবার নতুন ধারার রাজনীতি শুরুর আগে প্রত্যেক প্রার্থীকে ফ্রুটিকা খাইয়ে মুখ থেকে সত্য কথাগুলো বের করে নিতে হবে। যদিও প্রত্যেক মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীর আমলনামা নেত্রীর হাতেই একটি ফাইল আকারে রক্ষিত আছে, তারপরও তিনি সলিম রেজা হবিকে উদ্দেশ করে বললেন, আপনি সুজানগর এলাকায় কি কি কাজ করেছেন? সলিম রাজা হবি আমতা আমতা করে বললেন_ ম্যাডাম, ফ্রুটিকা যখন খেয়েই নিয়েছি চাইলেই তো আর মিথ্যা কথা বলতে পারব না। আমি ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে ছিলাম একজন ঠিকাদার।

নির্বাচিত হওয়ার পরও সেই পুরনো ব্যবসা ত্যাগ করতে পারিনি। এলাকার যত উন্নয়ন কাজ হয়েছে সব আমি নিজেই করেছি। সঙ্গে বরাদ্দকৃত টিন, গম, চাল, আটা সবটুকু আমারই উদরস্ত হয়েছে। তবে হ্যাঁ_ দানশীল মহসিন হিসেবে এককালে আমার বেশ নামডাক ছিল। ম্যাডাম, ধরুন আমার কাছে যদি কোনো দরিদ্র ব্যক্তি অর্থ সাহায্য চাইতে আসত, তবে আমি তাকে তৎক্ষণাৎ আর্থিক সাহায্য না করে কিছুটা কৌশল খাটাতাম।

ওই ব্যক্তিটিকে হাট কিংবা বাজারে এসে সাহায্যের টাকাটুকু নিয়ে যেতে বলতাম। ম্যাডাম আপনি তো জানেন, গ্রামের হাটে-বাজারে হাজার লোকের সমাগম ঘটে। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আমি আমার পাঞ্জাবির পকেটে আগেই যত্ন করে রেখে দিতাম এবং হাটের সেই শত সহস্র মানুষের মধ্যে এক মুঠো টাকা পাঞ্জাবির পকেট থেকে বের করে সেই কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার হাতে তুলে দিতাম। নেত্রী বললেন, তাহলে এখন আর দান-খয়রাত করেন না? সলজ্জভাবে হবি বললেন_ জি না ম্যাডাম, ২০০১ সালে একবার এমপি হওয়ার পর আল্লাহ আমার সেই গুণটি তুলে নিয়েছেন। এখন পকেটে হাত দিলে আমার মনে হয় হাতটি যেন আমার পক্ষাঘাতগ্রস্ত।

হাজার কিংবা শত টাকা তো অনেক দূরের কথা, একটি ফুটোকড়িও আর পকেট থেকে উঠে আসে না। দ্বিতীয় প্রার্থীকে ডাকা হলো। দ্বিতীয়জনের নাম আবদুল কলিম রাজ্জাক। বিরোধীদলীয় নেতা দ্বিতীয় প্রার্থীকে জিজ্ঞেস করলেন_ আপনার সিভিতে লেখা আছে আপনি বিএ পাস, কিন্তু সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন শুধু ইন্টারমিডিয়েট। কোন কলেজ থেকে পাস করেছেন? আবদুল কলিম রাজ্জাক এবার কিছুটা বিব্রতভাবে বললেন, জি ম্যাডাম_ ঝিটকা থেকে।

ঝিটকা? বিরোধীদলীয় নেতা তার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত বিশেষ সহকারীর দিকে তাকালেন। বিশেষ সহকারীর আর বুঝতে বাকি রইল না নেত্রী তার কাছে কী জানতে চাইছেন। তিনি নিচু স্বরে বললেন_ ঝিটকা কলেজটি মানিকগঞ্জ নামক একটি জায়গায় অবস্থিত। আশি ও নব্বইয়ের দশকে পাবনা ও আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দলে দলে ছাত্রছাত্রীরা ওখানটায় এসে উন্মুক্ত বই পদ্ধতিতে কৃতকার্য হতো। বিরোধী নেতা এবার এই প্রার্থীকে প্রশ্ন করলেন_ এমপি হলে আইন-কানুন কিছু পাস করতে পারবেন তো? আবদুল কলিম রাজ্জাক সলজ্জভাবে বললেন_ ম্যাডাম কী যে বলেন? আইন তো তৈরি করবে আইন মন্ত্রণালয়।

আমরা শুধু হো হো করে হাততালি দিয়ে_ হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে, হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে বলে সংসদে আইনটি পাস করিয়ে নেব। নেত্রী বললেন_ তা আপনি এলাকার জন্য কী কী করেছেন? ম্যাডাম কী যে বলেন, করার সুযোগ আর পেলাম কোথায়? তবে শত শত মোটরসাইকেল নিয়ে এলাকায় শো-ডাউনে আমি বেশ এঙ্পার্ট। ম্যাডাম এবার আপনাকে একটা সত্যি কথা বলি। ফ্রুটিকা যখন খেয়েই নিয়েছি, মিথ্যা তো আর বলতে পারব না। আসলে এমপি হওয়ার খায়েশ আমার কোনো কালেই ছিল না।

এক সময় আমি সাবেক এমপি সলিম রাজা হবি কে অর্থ ও লোকবল সাপ্লাই দিতাম। একদিন সুজানগরের পাশের উপজেলার এক পাতি নেতা নাম রমিজুদ্দিন আমাকে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখাল। সে অবশ্য এক সময় হাট ও ঘাটের দালাল ছিল। ঢাকার বড় বড় নেতাদের ভাঙিয়ে খেতে ওস্তাদ লোক। রমিজুদ্দিন আমাকে বলল, মাসে মাসে কিছু হাত খরচের দক্ষিণা পেলেই সে আমাকে সুজানগর এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করে দেবে।

আমি নমিনেশন না পেলেও কোনো দুঃখ নেই। আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সমাজে সম্মানের কিছু ঘাটতি ছিল, এমপি প্রার্থী হওয়ায় সেই ঘাটতি কিছুটা ঘুচে গেছে। ম্যাডাম, আপনাকে বলতে লজ্জা নেই। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছেও এখন বেশ খানিকটা সমাদর বেড়ে গেছে।

নেত্রী বিরক্ত হয়ে বললেন, এসব ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে আমার মাথাটি ধরে গেল। এখনকার মতো ইন্টারভিউর যবনিকাপাত। উপরোক্ত দৃশ্যপটটি শুধু পাবনার সুজানগরেরই দৃশ্যপট নয়, এটি বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার, প্রতিটি অঞ্চলেরই প্রতিচ্ছবি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে_ এমপি হওয়ার মধ্যে কী এমন সুখ যে, সবাই এমপি হওয়ার পেছনে ছুটছে? আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এমপি পদটি এমন একটি পদ, যেখানে যোগ্যতার কোনো মাপকাঠি নেই। যেমন ধরুন একজন পিয়ন আর্দালির চাকরি পেতেও আইএ-বিএ পাস করতে হয়।

কিন্তু এমপি হওয়ার ক্ষেত্রে সেসব যোগ্যতার কোনো বালাই নেই। অথচ এ পদটি ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী সচিবেরও উপরে। একজন পান দোকানদার কিংবা মুদিখানার মালিক কিংবা ঝুট ব্যবসায়ীর মতো কিছু লোকের হাতে যখন হঠাৎ করে কিছু টাকা আসে, তখন তারা দাঁড়িয়ে যান এমপি হওয়ার জন্য। তারা ভাবেন যেহেতু পান দোকানদার কিংবা মুদিখানার মালিক হিসেবে সমাজে তাদের তেমন কোনো সম্মান নেই, স্ট্যাটাস নেই, অন্যদিকে এমপি হতেও কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। তাই সহজ রাস্তাটি হচ্ছে_ যে করেই হোক এমপি হতে হবে।

অথচ গ্রেট ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার রাষ্ট্র শাসনকার্য পরিচালনাকে এয়ারক্রাফট অর্থাৎ বিমান চালনার সঙ্গে তুলনা করেছেন। একটু এদিক সেদিক হলেই বিমানটি যেমন ক্র্যাশ হয়ে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, ঠিক তেমনি দেশ চালাতে গিয়ে একটু ব্যর্থ হলেই দেশের সর্বাঙ্গে সর্বনাশ হয়ে যায়। তিনি এ নিয়ে বিশদ একটি বইও লিখেছেন। নাম : স্টেট ক্রাফট। কী অসাধারণ সেই গ্রন্থ।

বইটিতে দেশ পরিচালনার অপূর্ব সব দিক-নির্দেশনায় ভরপুর, কেউ চাইলেই বইটি পড়ে দেখতে পারেন।

লেখক : সাহিত্যিক ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী।

ই-মেইল : barristershaifur@yahoo.com  

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.