আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ম্যারাডোনার ভক্তদের জন্য রিপোস্ট


ফিরে এলো ম্যারাডোনার সেই দিন সৌমিত চন্দ জয়দ্বীপ সূত্রঃ বিডিস্পোর্টসনিউজডটকম বল নিয়ে ‘ইচ্ছেঘুড়ি’ ওড়ানোর অমিত অথচ প্রত্যাশিত এক ক্ষমতা ছিল তার। লাখ লাখ ভক্তকে সে গুণে ‘বশ’ করেছেন তিনি। সে ক্ষমতা তাকে বিশ্বব্যাপী মহানায়কে পরিণত করেছে। পুরো বিশ্বের জন্য যে বিশ্বকাপের অর্থ উৎসবের মহামঞ্চ, তার জন্য বিশ্বকাপের মর্মার্থ ‘মা’! তিনি দিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা। যার কাছে ফুটবল মানে আবেগমাখা ভালোবাসা।

ফুটবলের কাছে যার পরিচয় ‘আবেগ বৎসল’ এক শিল্পী। আর বিশ্বকাপের চোখে ম্যারাডোনা হলেন নন্দিত ও নিন্দিত এক রহস্য! প্রতিবার বিশ্বকাপ আসে আর ম্যারাডোনা ভেসে ওঠেন ভক্তকুলের মনের ক্যানভাসে। ম্যারাডোনার জন্ম ফুটবলের জন্য হতে পারে, তবে বিশ্বকাপ নিশ্চয়ই কারও জন্য জন্ম নেয় না। বিশ্বকাপ বরং জন্ম দেয়। বড় ফুটবলার হতে গেলে বিশ্বকাপের ‘সন্তান’ হতে হয়।

কারণ সারা পৃথিবীর চোখ এই মহাযজ্ঞকে বিশ্বাস করে। আর করে বলেই বিশ্বকাপের বিরল-প্রসবের অপেক্ষায় থাকে মানুষ। আজকে যে ম্যারাডোনার ভুবন-ভরা পরিচিতি তার কারণ বিশ্বকাপ তাকে গর্ভে ধারণ করেছিল। এ কারণেই অনেক বড় ফুটবলার হয়েও ডি স্টেফানো কিংবা জর্জ বেস্টরা বিশ্বকাপে খেলতে না পারার কারণে ‘বিশ্বময়’ হতে পারেননি! বিশ্বকাপ যদি জনপ্রিয়দের ‘গর্ভধারিণী’ হয়, তবে শুধু ম্যারাডোনাই তো নয়, তার গর্ভে জন্ম অনেক রত্নের। তবে কেন বিশ্বকাপ এলে শুধু ম্যারাডোনাই চোখে ভাসেন? এর উত্তর বড় কঠিন।

কোটি টাকার প্রশ্ন। এর একটা উত্তর দিয়েছিলেন উরুগুয়ের বিখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক অ্যাডুয়ার্দো গ্যালিনো- “ম্যারাডোনাকে যেদিন ১৯৯৪-এর বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করা হলো, সেদিনই ফুটবল হারিয়ে ফেলল তার সবচেয়ে বড় ‘বিদ্রোহী’ ও একজন অকল্পনীয় ফুটবলারকে। বাকপটু ম্যারাডোনার কথা যতটা ধারালো, তার চেয়েও ধারালো বল পায়ে থাকা ম্যারাডোনা। ধ্বংসাত্মক কৌশল দিয়ে নিজের কিংবদন্তি গড়ার পথে এই ‘বিস্ময়কর স্রষ্টা আসলে কী করতে যাচ্ছেন সেটা কারোরই বোধগম্য নয়, কেননা তিনি কখনও কোনো কৌশলের পুনরাবৃত্তি করেন না। ” ম্যারাডোনা বিশ্বকে তার প্রতিভা চিনিয়েছেন ’৮৬ বিশ্বকাপে।

ভাঙাচোরা একটা দলকে নেতৃত্ম্ব দিয়েছিলেন মেক্সিকোতে। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ‘ঈশ্বরের হাত’ ও ‘শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ গোল’ করে জবাব দিয়েছিলেন ফকল্যান্ড যুদ্ধের। একক প্রতিভাগুণে জিতিয়েছিলেন বিশ্বকাপ। ’৮৬ বিশ্বকাপ তাই শুধুই ম্যারাডোনাময়। এভাবে আর কে পেরেছে বিশ্বকাপকে নিজের গুণে মহিমান্বিত করতে? সে থেকেই ম্যারাডোনা-জ্বর পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিল।

তিনি হয়ে গেলেন আবালবৃদ্ধবনিতার মহানায়ক! সেই সঙ্গে নিশ্চিত করে দিলেন ভবিষ্যৎ আর্জেন্টিনার জন্য এক বিশ্বব্যাপী সমর্থকগোষ্ঠী। ম্যারাডোনা মানুষকে আবেগে ভাসাতে পারেন তার স্বকীয় আবেগ দিয়ে। তার কান্না মানুষকে কাঁদিয়েছে, যখন আনন্দ করেছেন তার আনন্দে আপ্লুত হয়েছে মানুষ। বর্ণিল এই চরিত্রকে তাই এখনও খুঁজে ফেরে মিডিয়ার তীক্ষ্ণ চোখ। মেসি যদি আজকে নাও খেলতেন, তাতেও আর্জেন্টিনার ভক্তের অভাব হতো না।

কেননা আর্জেন্টিনাকে ভালোবাসার আগে মানুষ ভালোবেসেছে দিয়েগো ম্যারাডোনাকে! তার অনবদ্য ফুটবল শিল্পকে। সেই সূত্রে মানুষটাকেও। তিন তিন বার ম্যারাডোনাকে বিশ্বকাপ বিদায় দিয়েছিল কঠিন বেদনায়। ’৮২ বিশ্বকাপে চিরপ্রতিন্দ্বন্দী ব্রাজিলের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরে যাওয়া দ্বিতীয় রাউন্ডের শেষ ম্যাচের ৮৫ মিনিটে লালকার্ড দেখে বিদায় নিলেন। ৯০ বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর ম্যারাডোনার কান্না জর্জরিত মুখ মানুষকে না কাঁদিয়ে পারেনি।

’৯৪ বিশ্বকাপের বিদায়ও কাঁদিয়েছে তার ভক্তদের। যে বিশ্বকাপ তাকে নন্দিত করেছিল, সেই বিশ্বকাপ থেকেই তিনি নিন্দিত হয়ে বিদায় নিলেন ১৯৯৪ সালে! কিন্তু ডোপপাপী হয়ে বহিষ্কৃত হলেও মানুষ তাকে ভুলতে পারেনি। পাপকে তারা ঘৃণা করেছে; কিন্তু পাপীর স্থান একটুও পরিবর্তন হয়নি ভক্ত-হৃদয়ে। ভুলবে কী করে? হেসেছেন শুধু ঐ ’৮৬ বিশ্বকাপেই, তবু তো এই মানুষটাই তাদের অসংখ্য বেদনাকে পায়ের জাদুকরী দোলায় ভুলিয়ে দিয়েছিলেন চারটি বিশ্বকাপেই! ৩০ জুন ১৯৯৪। বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ৬ ঘণ্টা আগে তাকে বহিষ্কার করা হলো বিশ্বকাপ থেকে।

তাই ২৫ জুন নাইজেরিয়ার বিপক্ষে খেলা ম্যাচটাই হয়ে থাকল ‘প্রিয়’ বিশ্বকাপে তার শেষ ম্যাচ। ’৮২ থেকে ’৯৪; রেকর্ড ২১ ম্যাচ খেলেই থেমে যেতে হলো মানুষের ‘মহাতারকা’কে। বিদায় বেলায় বলেছিলেন, ‘তারা (ফিফা) আমাকে ফুটবল থেকেই বিদায় করে দিল। আমি কোনোদিনই ভাবিনি আমাকে আবারও প্রতিশোধের মুখে পড়তে হবে। আমার হূদয় ভেঙে গেছে।

’ সেই দিনটি প্রতিবারই আসে। কিন্তু ১৬ বছর পর এবার এলো অন্যভাবে। কেননা বিশ্বকাপ যে আবার ফিরে পেয়েছে তার সেই ‘পাগল’ ছেলেকে। সেই ম্যারাডোনা যে এবার কোচ হিসেবে রঙ ছড়াচ্ছেন বিশ্বকাপে। আর সেই ‘পাগল’ ছেলের ২৩টি ছেলে লড়ছে তাদের ‘ফুটবল ঈশ্বর’কে আরেকটা বিশ্বকাপ উপহার দিতে।

আবার কবে আসেন কে জানে। সেজন্যই এই বিশ্বকাপটা ম্যারাডোনার জন্য কলঙ্ক মোচনেরও বিশ্বকাপ! ভালবাসার প্রতিদান ফিরিয়ে দেওয়ারও কি নয়?
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.