আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের সংবিধান, আমাদের গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতা



আমাদের সংবিধান, আমাদের গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতা ফকির ইলিয়াস ========================================== একই কথা বেগম খালেদা জিয়াও বলেছিলেন। সেটা ছিল ২০০৬ সাল। বেগম জিয়া বারবার বলা শুরু করলেন, সংবিধান থেকে একচুলও নড়বেন না। এমনটি এর আগেও করেছিলেন তিনি। সেই ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা কেউ ভুলে যায়নি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাগলের প্রলাপ। এটা ছিল তার কথা। এই সংবিধানের দোহাই দিয়েই রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকেই তত্ত্বাবধায়ক প্রধান করেছিলেন বেগম জিয়া। তারপর কি হয়েছিল? সে কথা দেশবাসীর মনে আছে। বাংলাদেশের কোন প্রধানমন্ত্রী জরিমানা দিয়ে কালোটাকা সাদা করেছিলেন, এই প্রশ্নটির উত্তর বাংলাদেশের মানুষের অজানা নয়।

তিনি বেগম খালেদা জিয়া। বলেছিলেন ‘শিশু এবং পাগল’ ছাড়া আর কেউ নিরপেক্ষ হতে পারে না। অথচ গ্রামবাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘নিজের বুঝ, পাগলেও বোঝে’। খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এভাবেই কটাক্ষ করেছিলেন। কারণ বাংলার মানুষকে তিনি অবিশ্বাস করেছিলেন।

বিশ্বাস করতে পারেননি। তিনি ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন দিয়েছিলেন সেই অবিশ্বাস থেকেই। বিএনপি বাংলাদেশে এমন একটি রাজনৈতিক দল, অবিশ্বাসই যাদের আজন্ম পাপ। এই অবিশ্বাসের ওপর ভর করেই মধ্যস্বত্বভোগী জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন। তারই প্রধান রাজনৈতিক রক্ষক কর্নেল তাহেরকে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে ফাঁসি দিয়েছিলেন।

কারণ জিয়া জানতেন তিনি তার নিজ সতীর্থদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেই বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন। জিয়া বাংলার মানুষকে অবিশ্বাস করেছিলেন বলেই চিহ্নিত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। খান এ সবুর আলীম খান রাজী, মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মতো চিহ্নিত দালাল, রাজাকার চক্রকে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করেছিলেন। জিয়া বাংলার মানুষকে অবিশ্বাস করেছিলেন বলেই নিজে ধার্মিক না হয়েও ধর্মের তবক এবং মোহর লাগিয়ে দেশে ধর্মীয় তমদ্দুন প্রতিষ্ঠার নামে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবাষ্প ছড়িয়েছিলেন। জিয়া বাংলার মানুষকে অবিশ্বাস করেছিলেন বলেই প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের লেবাস পরে সরাসরি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন।

সেই চেতনা ও আদর্শের ১৯ দফা বাস্তবায়নের উত্তরাধিকারী খালেদা জিয়ার বিএনপি। কোনো প্রধানমন্ত্রীর কালোটাকা সাদা করার পর নৈতিকভাবেই আর তার পার্টির প্রধান হওয়ার অধিকার থাকার কথা নয়। তারপরও তিনি দলের চেয়ারপারসন। একজন প্রধানমন্ত্রীর কালোটাকা সাদা করার দরকার পড়লো কেন? এই প্রশ্নটি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে বারবার করা উচিত। বিএনপির তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি তারেক রহমান।

সেই তারেক রহমানও বাংলার মানুষকে অবিশ্বাস করেন। তার প্রমাণ হচ্ছে ২০০৬-২০০৭-এর শাসনকাল। তারেক রহমানের হাওয়া ভবনের ছায়া শাসনের কারণেই বাংলাদেশে ওয়ান-ইলেভেন জন্ম নেয়। খালেদা-তারেক ২০০১-২০০৫ শাসনামলে সরাসরি জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। তার তথ্য, ছবি, সংবাদ বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়া আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে।

বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই এটা ছিল তাদের মুখ্য সেøাগান। খালেদা-তারেক চক্র কয়েকটি বলয় তৈরি করেছিলেন যাতে তারা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিততে পারেন। এই আলোকেই নানা টালবাহানা করে সংবিধান রক্ষার দোহাই দিয়ে যিনি রাষ্ট্রপতি তিনিই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান এই ফরমান তারা জারি করেন। এবং তাদের একান্ত অনুগত ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে রাষ্ট্রপতি রাখার পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানান। তাদের ইচ্ছে ছিল বাংলাকে আফগানিস্তান, পাকিস্তানের মতো তালেবানি চক্রের হাতে তুলে দেয়া।

কেন তারা এটি করেছিলেন, কারণ তারা বাংলার মানুষের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস রাখেন না। তারা চান, যে কোনোভাবে রাজাকার ও অশুভ চক্রকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় টিকে থাকতে। কিন্তু তাদের স্বপ্ন ভেঙে খান খান করে দেয় ওয়ান-ইলেভেন। আমরা প্রায়ই শুনি, খালেদা জিয়া ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিন বলে নানা ভর্ৎসনা করেন। কিন্তু ইয়াজউদ্দিন যে তার নিজের ইয়েসউদ্দিন ছিলেন সেই বিষয়ে খালেদা কিছুই বলেন না।

কেন বলেন না? তার কারণ তিনি ইয়াজউদ্দিনকে বিশ্বাস করেছিলেন। বাংলার মানুষকে অবিশ্বাস করেছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জিতে হিংসাত্মক, নগ্ন উল্লাসে মেতেছিলেন এসব অবিশ্বাসী নেতাকর্মী। তা বাংলাদেশের মানুষের খুব ভালো মনে আছে। পূর্ণিমা রানীর মতো শত নারী তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিল।

সংখ্যালঘুদের প্রতি তাদের এই অবিচার, নির্যাতন হার মানিয়েছিল মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ছাব্বিশ হাজার এমন পাষ- নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছিল। এর মধ্যে নাটের গুরু যেসব মন্ত্রী, এমপি ছিল তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার বলেই গোটা রাষ্ট্রের মানুষ মনে করেছিলেন। খুবই হতাশার কথা এই সরকারের মেয়াদ শেষ হয়েই গেলো। আমরা ঐ পাষ-দের বিচারকাজ শেষ হতে দেখলাম না।

তাছাড়া সরাসরি জঙ্গি নেটওয়ার্ককে যারা ম“ দিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন নেয়া হয়নি সে জিজ্ঞাসাও দেশবাসীর। বেগম জিয়া এবং তার দল যে এই দেশ ও জাতিকে চরমভাবে অবিশ্বাস করেন তার সর্বশেষ প্রমাণ যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি তাদের পক্ষপাত। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের কণ্ঠ দিয়ে বেগম জিয়া বলিয়েছেন, এই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বাতিল করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। বাহ! কী চমৎকার নিজের খোলস থেকে বেরিয়ে এসেছে বিএনপি।

কথা হচ্ছে বিএনপিও তো নিজেদের মুক্তিযোদ্ধাদের দল দাবি করে। তারা ঘাতক রাজাকার দালালদেরও বিচার করেনি কেন? কেন শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় জড়ানো হয়েছিল। মনে পড়ছে, শহীদ জননী বলেছিলেন, বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নগ্ন বিষফোঁড়া। সে কথাটি আবারো প্রমাণ করছেন বিএনপির চেয়ারপারসন। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের নামে তারা এই প্রজন্মের চেতনার সঙ্গে আগুন নিয়ে খেলতে শুরু করেছেন।

কারণ এই প্রজন্মের ৮০ ভাগই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় তা বিভিন্ন জরিপ ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। অবিশ্বাসের ঘোর নানা ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিতে খালেদা জিয়া তার পেটোয়া বাহিনীকে লেলিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন প্লাটফর্মে। আমাদের মনে আছে, অবিশ্বাসের কারণেই বারবার বাংলাদেশে সামরিক অফিসারদের হত্যা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তারপরও তার ক্ষমতা চিরস্থায়ী হয়নি। কারণ অবিশ্বাস করে রাজনীতিতে টিকে থাকা যায় না।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প- করার নামে বিএনপি গোটা দেশবাসীর ইচ্ছের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এর জবাব তাদের দিতে হবে নীতিগতভাবেই। কথা হচ্ছে, সেই একই কায়দা অনুসরণ করছেন কি শেখ হাসিনা? বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন বর্তমান সংবিধান মোতাবেকই হবে এবং এ থেকে এক চুলও ব্যত্যয় ঘটবে না বলে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেনÑ ‘জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। সংবিধান সংশোধন করেছি।

যা হবে সংবিধান মোতাবেক হবে। তা থেকে একচুলও নড়া হবে না, ব্যাস। যথাসময়ে সংবিধান মোতাবেক বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ’ দেশবাসী জানেনÑ এই সংবিধান মেনে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনের পর এই প্রথম একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে যেটি হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই। উচ্চ আদালতের একটি রায়ের পর বাংলাদেশের সংবিধানে সর্বশেষ যে সংশোধনী আনা হয় সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান বিলোপ করা হয়।

কথা হচ্ছে, সংবিধান পরিবর্তন তো এই মহাজোটই করেছে। এটা তো দৈব কোনো নীতিমালা নয়। অন্যদিকে আমরা দেখছি যে এরশাদ বারবার সংবিধান কাটছাঁট করেছিলেন তিনিও দাঁড়াচ্ছেন কেয়ারটেকারের বিরুদ্ধে। উগ্র মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সংগঠন হেফাজতে ইসলামসহ একাধিক ইসলামপন্থী দল ও ইসলামী চিন্তাবিদদের নিয়ে পৃথক রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এই জোটের নেতৃত্বে থাকবে এরশাদের দল জাতীয় পার্টি।

এ ছাড়াও নতুন এই রাজনৈতিক জোটে বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ (জেএসডি) আরো কয়েকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে ভেড়ানোর চেষ্টা চলছে। আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই পৃথক জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেই পৃথক জোট গঠনের তোড়জোড় এখন জাপায়। এরশাদের তত্ত্বাবধানে দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জোট গঠনে উল্লিখিত দলগুলোর সঙ্গে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছেন। এরশাদ ধর্মীয় মৌলবাদ পছন্দ করেন।

তার মন্ত্রী ছিল রাজাকার মওলানা মান্নান। একই কারণে হেফাজতের প্রতি জাপার দুর্বলতা। এরশাদ মনে করছেন, হেফাজতে ইসলামের সারা দেশে বিশাল জনসমর্থন রয়েছে। হেফাজত নিয়ন্ত্রিত মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্ররা এলাকাবাসীর কাছে সুপরিচিত। নানা কারণে তাদের সঙ্গে এলাকাবাসীর রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।

তারা যদি ভোটের প্রচারে মাঠে নামেন, তা হলে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে বাদ দিয়ে জাপাকে ভোট দেবেন ভোটাররা। তাই ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে হেফাজতকে প্রধান মিত্র হিসেবে বিবেচনা করছে জাতীয় পার্টি। এই হলো বাংলাদেশে সংবিধানের প্রতি দলগুলোর বিবেচনা। তারা এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি, পারবেও না।

কাটছাঁট যাই হোক না কেনÑ তা নিজেদের পক্ষে না গেলে দলগুলো খুশি হয় না। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবেÑ তেমন আশা আমি এ মুহূর্তে করতে পারছি না। বিদেশী মুরব্বিদের ছায়া তো থাকছেই, নিজেদের পক্ষে না গেলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না তা খুব স্পষ্ট। আর বিএনপি নির্বাচন না করলে দেশে আরেকটি ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচন হবে।

যা কোনো কাজে আসবে না। কথাটি মনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী সামনে এগোবেন বলে আশা করবো। ---------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০১৩

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.