আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশেষজ্ঞদের অভিমত : মিডিয়াকর্মীদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। “সাভারের ঘটনা কয়েকটি চ্যানেল যেভাবে লাইভকাস্ট করলো তাতে হতাশ না হয়ে পারলাম না। একটি টিভি চ্যানেলের একজন রিপোর্টার বলছেন অনেকটা এ রকমÑ ‘আমরা একটি নারীর হাত দেখতে পাচ্ছি, তার হাতে মেহেদী লাগানো রয়েছে, তিনি সম্ভবত নতুন বিয়ে করেছেনৃ.তার পাশেই একজন পুরুষের হাত দেখা যাচ্ছে, মনে হচ্ছে এই দম্পতি এখানে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছিলেন। ওই রিপোর্টারই আবার কিছুক্ষণ পর বলছেনÑ ‘আমরা এখন কথা বলবো আটকে পড়া একজনের সঙ্গে.. আচ্ছা, আপনি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন, বলুন তো এখানে আপনারা কতোজন আটকা পড়েছেন?ৃ.দর্শকম-লী আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এলাকাবাসী ভেতরে আটকে পড়া লোকজনকে পানি সরবরাহ করছেন। আচ্ছা আপনি কি পানির বোতল পেয়েছেন? ইত্যাদি।

ভেতর থেকে কাতর কণ্ঠে এক নারীর আর্তনাদ, বাইগো পানি লাগবো না, আমাগো বাঁচান। ওই রিপোর্টার ও ক্যামেরা পারসনের জন্য দেখলাম উদ্ধারকর্মীরাও আসা-যাওয়ার জায়গা পাচ্ছিলেন না। দাপুটে রিপোর্টার বটে!” সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইটে স্মরণকালের ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ সাংবাদিকতা নিয়ে এভাবেই ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী। মর্মান্তিক এই ঘটনায় মিডিয়াকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম, সাহসিকতার পাশাপাশি নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে পেশাগত দায়িত্ববোধ নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত স্টার হওয়া বা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার মনোভাবের কারণে সাংবাদিকতার নীতিমালা মানছেন না অনেকেই।

বিশেষ করে টিভি চ্যানেল, ক্যামেরাম্যান ও ফটোগ্রাফারদের দৌরাত্ম্যে বাড়ছে দায়িত্বহীন আচরণ। আর এই বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে সাভার দুর্ঘটনায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা গেছে, মৃত্যু উপত্যকায় জীবিত বা মৃতের উদ্ধারে উদ্ধারকর্মীরা যখন ছুটে যাচ্ছেন তখন তাদের নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হচ্ছে। অন্যদিকে ধ্বংসস্তূপ থেকে কাউকে উদ্ধার করা হলে দলবেঁধে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন কোনো কোনো গণমাধ্যমের কর্মীরা। ঘটনার তিন দিন পর মৃত্যুপুরী থেকে উদ্ধারকৃত ভাগ্যবান কয়েকজন জীবিতকে যখন চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে তখন তাদের কাছে অনুভূতি জানতে চাইছেন অনেকেই।

ক্যামেরা নিয়ে স্ট্রেচারের সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। এতে মুমূর্ষু ব্যক্তিকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। দায়িত্বশীল সাংবাদিকদের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্বয়ং উদ্ধারকর্মীরাও। ফেসবুকেও এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। বিশিষ্ট এক সাংবাদিকের আচরণে ক্ষুব্ধ একজন লিখেছেন, ‘ৃ মহিলাটা সারাজীবন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়েই থাকবেন।

আড়াই দিন রানা প্লাজার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে অক্সিজেন বহির্ভূত মৃত্যুকূপে বন্দী থাকার পর কিছুক্ষণ আগে ফিরেছেন কয়েকজন অর্ধমৃত মানুষ। আর এই মহিলা চ্যানেলের মাইক্রোফোন হাতে দাঁড়িয়ে পড়লেন একজন অর্ধমৃত মানুষের সামনে। বেকুবের মতো জানতে চাইলেন এখন আপনার অনুভূতি কী?’ এ বিষয়ে ৭১ টিভির বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, এ ধরনের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া কোনো মানুষের কাছেই প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া উচিত নয়। এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের বলাও হয়েছে। কিন্তু স্পটে গিয়ে তারা এসব নির্দেশনা মনে রাখতে পারছেন না।

অনেক সময় অন্য চ্যানেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বা নিজের রিপোর্টকে বেশি আকর্ষণীয় করার জন্য তারা এসব করছেন। কিন্তু কোনোভাবেই এ ধরনের ছবি দেখানো বা সাক্ষাৎকার নেয়া উচিত নয়। কোনো সাক্ষাৎকার নিতে হলে চিকিৎসকের কাছ থেকে নিতে হবে। রাত-দিন পরিশ্রম করে যারা ওই স্পটের নিউজ করছেন তাদের মধ্যে পূর্ণ মমতার বিষয়টিও রাখতে হবে। আরেক বেসরকারি টেলিভিশনের এক রিপোর্টারকে দেখা গেলো তিনি উদ্ধার কাজের জন্য তৈরি করা একটি সুড়ঙ্গের ভেতরে দাঁড়িয়ে দর্শকদের উদ্দেশে বর্ণনা দিচ্ছেন।

এ সময় উদ্ধারকর্মীরা তার চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। এক পর্যায়ে তিনি তার মোবাইল ফোনটি এক উদ্ধারকর্মীকে দিয়ে অনুরোধ করলেন একটি ছবি তুলে দিতে। তার এই প্রতিবেদনের জন্য বেশ কয়েক মিনিট উদ্ধার তৎপরতা বন্ধ ছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু উদ্ধারকর্মীদের কাজেই ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে তা নয়, আটকেপড়াদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। গতকাল একজন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, টিভি সাংবাদিকদের উচিত সুরঙ্গের মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে টিভি রিপোর্ট করার অভ্যাস বন্ধ রাখা, তাদের কারণেও উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ভোরের কাগজকে বলেন, এগুলো মোটেই দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন কাজ নয়। সুড়ঙ্গে দাঁড়িয়ে রিপোর্ট করা তার জন্য যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি তিনি অত্যন্ত জরুরি কাজে বাধার সৃষ্টি করছেন। তিনি বলেন, রিপোর্টারকে গাইড করে স্পটে পাঠানো উচিত। রানা প্লাজার ঘটনা দায়িত্বশীল সাংবাদিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, একই বক্তব্য নিয়ে রিপোর্টারদের সারাক্ষণ কথা বলার বিষয়ে।

একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর মন্তব্য, ‘ৃএটা দুপুরের দিকের ঘটনা, আরো কয়েকটি চ্যানেলও একই রকম রিপোর্টিং নৈপুণ্য দেখিয়েছে। আমরা যে দৃশ্য টিভিতে দেখছি তার বর্ণনা দিতে গিয়ে রিপোর্টার আমাদের যেভাবে বলছেন, তাতে মনে হয় কোনো অন্ধকে পরিস্থিতি বোঝানো চেষ্টা করা হচ্ছে। এতো কথা বলতে পারাটাই কি তাদের পারফরমেন্স বলে বিবেচিত হয়?’ আরেকজন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এভাবে, ‘অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে রানা প্লাজার আশপাশে এক কিলোমিটারের পেরিমিটার করে সিভিলিয়ান নিষিদ্ধ করা হোক। এখন যা চলছে সেটাকে ক্যাওস বলে। সেনাবাহিনীর উচিত এই নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে তাদের পেশাদারি দক্ষতা ও বিশেষজ্ঞ কৌশলের সর্বোচ্চ প্রয়োগ।

অ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার, নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া ওখানে থাকার প্রয়োজন নেই কারো। ’ সংবেদনশীল বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের আরো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, সাংবাদিক সমাজের আয়না। দেশের প্রতিটি ক্রান্তিকালে মিডিয়ার রয়েছে অনবদ্য ভূমিকা। দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ঘটনার চিত্র তুলে ধরছেন তারা।

তবে আবেগ আর প্রতিযোগিতায় পেশাগত দিকটা যেন ভুলে না যান তারা। প্রয়োজনে গুরুত্ব অনুযায়ী দূর থেকে সংবাদ সংগ্রহ করা যেতে পারে, তবে কোনোভাবেই প্রয়োজনীয় কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে নয়। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, সাংবাদিকদের অবশ্যই সংবেদনশীলতার পাশাপাশি দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। সুত্র ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.