আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়ান ইলেভেন (অষ্টম পর্ব)

যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর।
নখ দন্তহীন বাঘটিকে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ন্যয় খাচায় বন্দী করে ট্রাক রওনা হয়েছে। রক্তাক্ত বাঘটি খাচার ভেতর নির্জীব শুয়ে আছে। ট্রাকের গন্তব্যস্থল এখন সংসদ ভবন।

ওখানে বাঘটির ভাগ্য নির্ধারিত হবে। ইতিমধ্যে ট্রাকে বাঘের খাঁচার পাহারায় দায়িত্বরত কেউ কেউ বলা শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশে বাঘ থাকার প্রয়োজন নেই। বাঘটিকে নিয়ে নির্মম রসিকতা শুরু হয়েছে। কালো পোশাকে আবৃত প্রহরীটি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের বাইরে বাঘের মাথা বরাবর রাইফেল তাক করে রসিকতা করে- স্যার, দেবো নাকি ক্রসফায়ারে ফেলে? সামরিক উর্দিপরা প্রহরী রসিকতা করে- পলাশীর প্রান্তরে দুই ঘন্টার হে বীর নায়ক, তোমায় লাল সালাম। বাঘ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রসিকতা করে- অশিক্ষিত ব্যঘ্রকুলের যন্ত্রণায় দেখছি কোথাও নিরাপদে থাকার জো নেই।

কালো কুচকুচে টাকা ভর্তি ব্রিফকেস হাতে তুলতুলে দেহের সেই লোকটি রসিকতা করে- বাঘের ক্ষমতা খাচার ভেতর, আমাদের ক্ষমতা হাজার বছর। পাঞ্জাবীর উপর কালো কোট চাপানো লোকটি রসিকতা করে- এ নিশ্চয়ই বিরোধীদলের কারসাজি। সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য দিনে দুপুরে কেউ পলাশীর মোড়ে বাঘ ছেড়ে দিয়েছে। সাফারি পরিহিত মধ্যবয়সী নেতাগোছের লোকটি তীব্র প্রতিবাদের সুরে রসিকতা করে- জনগণের দৃষ্টিকে অন্য দিকে ফেরানোর জন্য এটি সরকারি দলের অপকৌশল। সরকার বাঘ নিয়ে গেম খেলছে।

ক্যামেরা কাঁধে ফটো তোলার দায়িত্বরত লোকটি রসিকতা করে- টক শো আর রিপোর্টিংয়ের জন্য হট নিউজ পেলাম। বাঘ মামা তোমায় সেলাম। আরে! আরে!! সফেদ দাড়িওয়ালা গুম্ফো এই লোকটি কে? শায়েস্তা খাঁর তোরণের ভিতর প্রবেশ করতে চাচ্ছে। স্বয়ং শায়েস্তা খাঁ নয়তো? যাকে স্বাগত জানাবো বলে আমি ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে এই তোরণের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। ১৬৬৪ সাল থেকে ১৬৮৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৪ বছর তিনি বাংলা শাসন করে গেছেন।

বাংলা ছেড়ে যাওয়ার প্রাক্কালে নগরীর পশ্চিমে একটি তোরণ স্থাপন করে তাতে বাণী উৎকীর্ণ করে গেছেন- "পণ্যদ্রব্যের সস্তা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শনকারীরা এই তোরণ উন্মুক্ত করবেন। " এই তোরণের পাশে দাঁড়িয়ে থাকার আরেকটি কারণ হচ্ছে শায়েস্তা খাঁ নামক ব্যক্তিটির প্রতি কৌতুহল। দুনিয়াতে এত গভীর জ্ঞানের কথা, তত্ত্বের কথা, রাজতোষণের কথা না লিখে তিনি এরকম সস্তা একটি লেখা তোরণে উৎকীর্ণ করেছেন কেন? পণ্যদ্রব্যের সস্তা বিক্রয়মূল্য প্রদর্শনকারী কে হতে পারে? দাড়িওয়ালা গুম্ফো লোকটি শায়েস্তা খাঁর তোরণ দিয়ে প্রায় প্রবেশ করেই ফেলেছে। কি ভেবে আবার এক কদম পিছয়ে আসে। আমি এই গুম্ফো লোকটিকে একদম দেখতে পাইনি।

পলাশীর মোড়ে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া নখ-দন্তহীন বাঘবন্দী কাহিনী নিয়ে ভাবছিলাম। বাঘের সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে ভাবছিলাম। ওয়ান ইলেভেন (সপ্তম পর্ব) বাঘবন্দী ঘটনার পরিসমাপ্তির পরও এর রেশ রয়ে গেছে পলাশীর মোড়ে। দূর্ঘটনার ফলে রক্তে ভেসে যাওয়া জায়গাটি ইট দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। চারিদিকে ইতস্তঃত ভাঙ্গা কাচের টুকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

বাঘ বন্দী করে নিয়ে যাওয়ার পর সরকারি দল এবং বিরোধী দলের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। কারণ যে লোকটি গাড়ি চাপায় মারা গেছে সে সরকারি দলের সমর্থক নাকি বিরোধী দলের সমর্থক তা নিয়ে দুই দলের ঝগড়া। লাশ টানাটানি । এ নিয়ে উত্তেজনায় কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর হয়েছে। গুম্ফো লোকটি তোরণের ওপাশে কেউ আছে কিনা দেখে নিচ্ছে।

ওয়ান ইলেভেনের পর সামরিক উর্দিপরা প্রহরী তোরণের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে চলে গেছে। তারপর কালো পোশাকে আবৃত এক প্রহরী কিছুদিন দায়িত্বে ছিল। তারপর সাদা পোশাক, খাকী পোশাকের লোকজনের আনাগোনাও দেখেছি। এখন তোরণটি একেবারে উন্মুক্ত। ওয়ান ইলেভেনের দিন আমাকে হল্ট বলে থামিয়ে দেওয়ার পর থেকে আমি আশায় আছি স্বয়ং শায়েস্তা খাঁ একদিন এই তোরণ দিয়ে প্রবেশ করবেন।

কিন্তু শায়েস্তা খাঁর চেহারার সাথে একদম অমিল এই লোকটি চুপিসারে এখানে এল কি করে? বাংলাদেশের ১০ কোটি লোকের বায়োমেট্রিক আইডি কার্ডের সমস্ত তথ্য এবং ছবি সংরক্ষিত আছে আমার স্থায়ী মেমোরিতে। এক পলকে সবার ছবির সাথে মিলিয়ে নেই। নাহ্, দশ কোটি লোকের কারও সাথেই মিলছে না। কিন্তু রহস্যজনক আচরণের লোকটির পরিচয় আমাকে উদ্ধার করতেই হবে। প্রয়োজনে পুরো পৃথিবীর সবার ছবির সাথে মিলাবো।

এই গুম্ফোধারী ব্যক্তিটির পরিচয় জানার জন্য আমি ইমেজ সার্চ দেই। আমার স্থায়ী মেমোরিতে সংরক্ষিত বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ছবির সাথে মিলাতে থাকি। একসময় আমার সার্চ ইঞ্জিন সংকেত দেয় ছবির মিল খুঁজে পাওয়ার। আরে নাহ্! আমি ভুল দেখছি নাতো? এ যে দেখছি বিশ্ববিশ্রুত জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ও কমিউনিজমের প্রবক্তা কার্ল মার্কস স্বয়ং। পলাশীর মোড় নামক এই জায়গাটায় শায়েস্তা খাঁর এই তোরণ দিয়ে স্বয়ং কার্ল মার্কস প্রবেশ করছেন! আমি একপলকে মার্কসের জীবনী দেখে নেই।

আমার স্থায়ী মেমোরিতে মার্কসের সংক্ষিপ্ত যে প্রোফাইল আছে তাতে বলা আছে- কার্ল হাইনরিখ মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩)। একাধারে দার্শনিক, পণ্ডিত, লেখক এবং রাজনীতির শিক্ষক ৷আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রাণপুরুষ৷তার ধ্যান-ধারণার ওপরই আধুনিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। জীবিত অবস্থায় সেভাবে পরিচিত না হলেও মৃত্যুর পর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবীদের কাছে তিনি অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বিংশ শতাব্দীতে সমগ্র মানবসভ্যতা মার্কসের তত্ত্ব দ্বারা আলোড়িত হয়। মার্কস বিশ্বাস করতেন পুঁজিবাদ আগের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার মতো শুধু অস্থিরতাই সৃষ্টি করতে পারে, যার চরম পরিণতি ধ্বংসের মধ্য দিয়ে।

কার্ল মার্কস ছিলেন ইহুদি বংশোদ্ভূত। তার বাবার নাম হাইনরিখ মার্কস। তার পূর্বপুরুষেরা ছিলেন রাব্বি। মার্কসের মা হেনরিয়েটা প্রেসবার্গ ছিলেন ওলন্দাজ বংশোদ্ভূত। মার্কসের স্ত্রী জেনি ফন ওয়েস্টফালেন ছিলেন একজন শিক্ষিত রমণী।

মার্কসের আয়ের একটি প্রধান উৎস ছিল আরেক বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের দেয়া অর্থ। এ ছাড়াও মার্কস নিউইয়র্ক ডেইলি ট্রিবিউন পত্রিকায় সাপ্তাহিক নিবন্ধ লিখতেন। এটুকু তথ্য পড়েই ভাবছি কমরেডকে একটা স্যালুট ঠুকে দেবো নাকি! ওমা! ব্যাটা দেখি আমাকে আগেই চিনে ফেলেছে। তোরণের এ পাশে পিছিয়ে এসে একেবারে আমার পাশে বসে পড়ল। তারপর আমার বুকের উপর রাখা কি বোর্ডের বাটনগুলো চেপে কতগুলো সংখ্যা লিখে সেন্ড বাটন চাপতেই অটোমেটেড টেলার মেশিনের মুখ দিয়ে একগাদা চকচকে টাকা বের হল।

জালিয়াতি! জালিয়াতি!! আমি প্রায় চীৎকার করে উঠি। মার্কস জালিয়াতি করছে। ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টাকা তুলছে...। চলবে...
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.