আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুতের নাম ডিপ্রেশন।

. আমার নাইবা হলো পারে যাওয়া...
ক’দিন ধরেই বড্ড ঝামেলা যাচ্ছে। লিখবো লিখবো ভেবেও লেখার সময় সুযোগ করতে পারছিনা। লিখি তো এই সব অগাবগা আগডুম বাগডুম মার্কা আবোল তাবোল। কিছু কিছু ব্লগার তা পড়ে মন্তব্যও করেন। আর তাতেই তো আমি মাটির আঠারো ইঞ্চি উপর উঠে যাই।

আজ ভেবেছিলাম আমার এ কয়দিন না লেখার কারনটা বলবো। কিন্তু ঐ যে কথায় আছে, কয়লা ধুইলে ময়লা যায়না, তাই ধান ভানতে শিবের গীত না গাইলে কি আর হয়? আচ্ছা, অ-প্রাশঙ্গিক কথা বলা কে কেনো মানুষ বলে, ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া? ধান ভানার সময় সব সময় “ও ধান ভানিরে, ঢেকিতে পাড় দিয়া, ঢেকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া, ও ধান ভানিরে” এ ধরনের গীতই গাইতে হবে? অন্য গীত গাওয়া যাবেনা এমন কোন নিয়ম আছে কি? অবশ্য আমি কোন দিনও ঢেকিতে ধান ভানিনি। তবে যুদ্ধের সময় কিছুদিন গ্রামে থাকার সুবাদে ঢেকিতে উঠে এমনি এমনি পাড় দিয়েছি। আমার ফিচকিমি কথা বার্তায় পাঠক নিশ্চয়ই মাইনাসের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। প্লাবিত হওয়ার আগেই মূল কথায় যাই।

ক’দিন থেকেই শুনছি আমার এক আত্মিয়া অসুস্থ্য। তাকে দেখতে যাবো যাবো করে যাওয়া হচ্ছিলো না। সময়ের অভাবে নয়। আমার কুড়েমির কারনে। ঘরকুনো আমাকে আমি নিজেই খুব অপছন্দ করি।

তো তিন/চারদিন আগে সেই আত্মিয়ার স্বামী আমাকে ফোন করে রুগীর কথা বিস্তারিত বললেন। ডাক্তার, পীর ফকির সব খিচুরী বানিয়ে ফেলা হয়েছে। ডাক্তার বলছেন ‘ডিপ্রেশেন’। আর পীর ফকির বলেছে, তাবিজ কবজ কুফরি কালামের শিকার রুগী। রুগীর স্বামী খুব করে অনুরোধ করলো আমি যেনো সারাদিনের জন্য তার বাসায় যাই।

রুগীকে পর্যবেক্ষন করি। রুগীর পেট থেকে গোপন কথা বের করে আনি। কি তার মনোবেদনা যা সে একাকি বহন করে আজ অসুস্থ, তা যদি কোন মতে আমি বের করতে পারি। আমার উপর আমার আত্মিয়দের অনেক ভরসা। আমি ‘মুরুব্বী’ তাই মানা করি কি করে? যদিও কারো পেট থেকে কথা বের করার কোন কৌশল আমার জানা নেই।

এমনিতেই সবাই যে ভাবে তাদের মনের ভার আমার কাধে ঢেলে শান্তি পায়, তাতে সবার সেই দুঃখের ভার বহন করতে করতে আমার এখন খোড়া দশা। কবে যে হুমড়ি খেয়ে পড়ি এই ভারের বোঝায় আল্লাহ মালুম। মানুষের মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা সমান কথা। তাই এ গোনার বোঝা না বাড়িয়ে রাজি হলাম তার কথায়। গত দু’তিন দিন থেকেই সকালে উঠেই নিজেকে তৈরী করি যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

কিন্তু বিধি-বাম হলে আর কি করা? বৃষ্টি আর বৃষ্টি! কাল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বিকালে গেলাম তাদের বাসায়। রুগী দেখে খুব খারাপ লাগলো। সুন্দরী বলতে যা বোঝায়, মেয়েটি তাই। বিয়ের সময় বৌ দেখে সবাই অবাক! বানরের গলায় মুক্তোর হার কথাটার অর্থ যেনো সেদিনই ভালো করে বুঝতে পেরেছিলো সবাই। মডেল মৌ’এর জমজ বোন বলেই মনে হতো তাকে।

সেই মেয়ের একি দশা!? ডাক্তার বলেছে, ডিপ্রেশন। কিন্তু ডিপ্রেশন কেনো? সংসারে কোন ঝামেলা নেই, বিয়ের আগেই শাশুড়ি গত হয়েছিলেন। শ্বশুরও গত হয়েছেন বছর পাঁচেক আগে। স্বামী, সন্তান, অর্থ প্রাচুর্য্য কোন কিছুই কম নেই। তবে কিসের চিন্তা? কিসের হতাশা? শুধু এ নয়, আরও কয়েকজন এমন আছেন আত্মিয় মহলে।

আমি ভেবে দেখলাম এরা সারাটাদিন কি করে? রান্না-বান্না ঘরের কাজের জন্য মানুষ আছে। বিয়ের পর পড়াশুনা বাদ। না, কেউ আপত্তি করেনি, তারাই নিজের ইচ্ছেতে ঐ পাঠ বন্ধ করে দিয়েছেন। চাকুরী বা অন্য কোন কাজ করেন না। তাতে অবশ্য স্বামীদের সায় আছে।

স্বামীদের রোজগার কি কম? যে বউকেও রুজি করতে হবে? বাচ্চাকে স্কুলে আনা নেয়া। এটাও অন্য মানুষ দিয়ে অনায়াসে করাতে পারে। কিন্তু তারা নিজেরাই যায়। কারন স্কুলে তাদের একটা আলাদা বন্ধু দল গড়ে উঠেছে। এটা ভালো।

বন্ধু-বান্ধব থাকাটা খুব জরুরী। কিন্তু ঐ বন্ধু মহলে তারা কি করেন? ‘পিএনসিসি’ অর্থাৎ পরনিন্দা পরচর্চা। এই শব্দটা কোন পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে যেনো পড়েছিলাম। মজাই লেগেছিলো। এই পিএনসিসি যা কিনা সেই অনাদিকাল হতে চলে এসেছে।

এ যেন এক অব্যার্থ দাওয়াই যা মাঝে মাঝে পরিমিত পরিমানে সেবন না করলে বিপদ অনিবার্য্য। জীবনের আঁচে ঘটনার হাড়িতে মানুষের কত কথা টগবগিয়ে ফুটছে! গরমাগরম সেসব কথাই হট এন্ড সাওয়ার বর্ণনায় মাখিয়ে, ইঙ্গিতের নুনমরিচ ছিটিয়ে পরিবেশন করা আবার বিনিময়ে ঐ রকমই আরও কিছু টিপ্পনিশোভিত, অর্থবহ, স্বুসাদু বৃত্তান্ত পেট ভরে না খেলে জীবনটাই বৃথা। কিন্তু বাকি সময়টুকু কি করা? অবসরে কোন কাজ খুঁযে পাননা বলেই তারা ডিপ্রেশনে ভুগছেন। আমি কিন্তু এখানে সমাজের সব ডিপ্রেশনের রুগীদের কথা বলছিনা, আমি শুধু আমার দু’তিনজন আত্মিয়এর কথাই বলছি। শুধু আপনি আর কোপনি করে চল্লে তো ডিপ্রেশন ধরবেই।

যত আছে তত চাই। এই চাহিদার আগ্রাশী আক্রমন ঠেকাতে হলে নিজেকে বিভিন্ন রকম কাজে ব্যাস্ত রাখা প্রয়োজন। শুধু নিজের কথা ভাবলেই কি হয়? হয়না। অন্যদের কথা ভাবলে যে আনন্দ পাওয়া যায়। তা একবার তাদের চেখে দেখা উচিত।

তবে রোগব্যাধি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামশ নেয়া উচিত। সেই সাথে নিজের চেষ্টাও থাকতে হবে সুস্থ্য হবার। মনের জোর বড় জোর। এ কথা ডাক্তারেরা প্রায়ই বলেন। তাই আমিও বলে নিলাম।

ওঝা বৈদ্দ্যের প্রয়োজন কি? ডিপ্রেশনের ভুতকে নিজেই ঝেটিয়ে বিদেয় করুন।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।