আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুতের ভয়

শান্ত ও নওশিন দু'ভাই বোন। পারুলিয়া প্রাইমারি স্কুলে পড়ে। শান্ত ক্লাস থ্রি আর নওশিন ওয়ানে। দু'জনই মেধাবী। নওশীন খুব লক্ষ্মী মেয়ে।

পাড়ার সবাই ওকে ভালোবাসে। সে বাবা মার কথা মেনে চলে। ওকে পড়াশোনার জন্য কখনো বলতে হয় না। নিজের মতো করে নিজেই পড়তে বসে। কিন্তু শান্ততো ঠিক শান্ত নয়, ও ঠিক ওর নামের বিপরীত অশান্ত।

স্কুলে সে ঠিকই যায় কিন্তু দুষ্টামিতে সে সবার সেরা। সে মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও সময়মতো পড়তে বসে না। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে খেলা করে। পুকুরে ছিপ দিয়ে মাছ ধরে। ঘুড়ি ওড়াতে যায়।

আর স্কুল থেকে ফিরে প্রতিদিন দুপুরে পুকুরে নেমে অনেকক্ষণ সাঁতার কাটা শান্তর নিত্য অভ্যাস।

শান্তর যে কোনো পড়া এক দুবার পড়লেই শেষ। আর পড়তে হয় না। পারলে সে বইখাতা গুটিয়ে ছবি অাঁকতে বসে। ও যখন খাতা পেন্সিল নিয়ে ছবি অাঁকে ওই সময় নওশিনের সঙ্গে তার খুনসুটি হয়।

ওর কোনো জিনিসে নওশিন হাত দিলেই বেজায় চেতে ওঠে। কখনো সে ধমক দেয়, কখনো ধম করে কিল। নওশিন চিৎকার কান্নাকাটি করে। আর শান্ত খাটের তলায় গিয়ে চুপটি করে লুকিয়ে থাকে।

বিকাল হলে আর রক্ষে নেই।

শান্তকে খেলতে দিতেই হবে। কারও কথায় কান না দিয়ে চোখের নিমিশে সে উধাও হয়ে যায়। তারপর, ওদের রাস্তার পাশে আমতলায় পাড়ার দুরন্ত ছেলেরা মিলে খেলা করে। কখনো অন্যের টিনের ঘরে ঢিল মেরে বসে। অন্যের গাছের পেয়ারা, লেবু ইত্যাদি পেড়ে সবাই মিলে মজা করে খায়।

এ নিয়ে ওর মাকে বেশ বকুনি শুনতে হয়। কিন্তু কে কার কথা শোনে। ওদের বেজায় দুষ্টামি পাড়ার অনেকে ভালোভাবে নেয় না। শান্তর বাড়িতে এসে নালিশ দিয়ে যায়।

শান্ততো দমবার পাত্র নয়।

বাড়িতে যদি তাকে বেশি বকা দিয়ে বসে অমনি নানুর বাসায় ফোন করে। সে আর বাড়িতে থাকবে না। এক্ষুনে নানু বাড়ি চলে যাবে। এই সব ছোটখাটো হুমকি সবার সয়ে গেছে। শান্তর মা ওকে ভয় দেখায়, সন্ধ্যার সময় অন্যের বাড়ি থাকলে, মাঠে খেললে ভুত ধরবে।

এই ভুতের ভয় নিয়ে শান্ত উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ে। ও শুনেছে ভুত নাকি দুষ্ট ছেলেদের ঘাড় মটকে দেয়। শান্ত একটু ভয় পায়, ভুত যদি ওকে চিনে ফেলে তাহলে তো ওর নিজের ঘাড়টাও মটকে দেবে। সে এসব কথা ভাবতে থাকে।

এবার ঈদের সময় শান্ত তার নানু বাড়ি বেড়াতে আসে।

স্কুল ছুটি তাই পড়াশোনার চাপ নেই। ও সারাদিন নানু বাড়ির পরিচিত ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সে খেলাধুলা করে। সে ভুতের কথা ভুলে যায়। তারপর রাতেরবেলা ও যখন টম অ্যান্ড জেরি কার্টুন দেখতে বসে ঠিক তখন ভুতের কথা মনে পড়ে। তারপর কোনো রকম চোখ বন্ধ করে ঘুমানো চেষ্টা করে।

সেদিন অনেক দেরিতে ওর ঘুম আসে। তিন দিন পর শান্ত আবার বাড়িতে চলে যায়। কিন্তু ভুতের ভয় ওর মন থেকে যায় না।

সে দিন সোমবার। শান্ত স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ভাত খেয়ে একটু ঘুমিয়ে দ্রুত হোমওয়ার্ক শেষ করে।

বিকালে ঠিকই সে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে খেলা করে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরল। তারপর রাতের খাবার খেয়ে পড়াশোনা করে দিব্যি ঘুম দিল। গভীর রাতে শান্ত ঘুমের মধ্যে দেখতে পেল সে ওই খেলার মাঠে গিয়েছে। পাড়ার সব দুষ্ট ছেলেরা ওর সঙ্গে আছে। এক পাঁকে ও লেবু গাছে উঠল লেবু পাড়তে, কিন্তু গাছে একটি লেবু নেই।

মনে হলো এটি নারিকেল গাছ। এরপর পেয়ারা গাছের দিকে গেল, দেখলো গাছে ইট ঝুলছে। ও গাছের মগ ডালের উঠতে চাইল অমনি পাশ কে যেন গম্ভীর স্বরে বলল, হালুম; আমি তোর ঘাড় মটকে দিব। শান্ত ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। ও ভাবল এই বুঝি ভুত এসে গেছে।

শান্ত গাছ থেকে তাড়াহুড়া করে নেমে পড়ল। দ্রুত পালানোর চেষ্টা করল, মা মা করে চিৎকার দিল। অমনি ওর মা শান্তর গায়ে হাত দিয়ে ডাকল। ওর ঘুম ভেঙে গেল। তার কাছে জানতে চাওয়া হলো কি হয়েছে।

শান্ত চোখ মোটা করে বলল, ঘরে ভুত ঢুকেছে। এক্ষুনি নানুকে ফোন দাও। সেই গভীর রাতে সে ওর নানুর সঙ্গে কথা বলল।

শান্তর নানু বলল, 'পড়ার সময় পড়াশোনা, খেলার সময় খেলাধুলা না করলে ঘরে ভুত চলে আসে। আর যে বেশি দুষ্টামী করে ভুত তার ঘাড় মটকে দেয়।

আমাকেও একবার ভুত ঘাড় মটকে দিয়েছিল। '

তারপর থেকে শান্ত সময়মতো পড়াশোনা করে। স্কুলের পরীক্ষায় সে প্রথম হয়ে তিনটি বই উপহার পায়। সে পাড়ার দুষ্ট ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা করলেও ঠিক সময়ে ঘরে ফিরে আসে। কাউকে মারে না, এমনকি ওর ছোট বোন নওশিনকেও না।

ওরা একসঙ্গে পড়তে বসে। শান্ত এখন পাইলট হতে চায়।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।