আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রকৃতির অনামিকা

কবিতা লিখি, প্রবন্ধ লিখি, গল্প লিখি, রম্যরচনা লিখি, মানে লেখার চেষ্টা করি আর কী!

মোরগের ঝুঁটি বেয়ে নেমে আসা সূর্য যখন পূরন্ত লাল, আরও লাল অনামিকা দেখি মিশে যাচ্ছে শস্যের বাদামী করিডরে। মোরগের লেজের উদ্দাম পালক, অনামিকার হাতে ধরা কাস্তে, এত মিল, যে মনে হয়, এই তো পেয়ে গেছি আলপথের প্রকৃত ফলক। প্রকৃতি জানে না স্থবিরতা। সে তার কাঠামোতে, “আমি ডানপিটে, দেখ তো আমায় চিনতে পারো কি না” বিজ্ঞাপন ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় অনামিকার চারপাশে, আর সাময়িক অন্যমনস্ক আমি তখন “পথের পাঁচালি” না দেখেও মনে মনে দূরে রেলগাড়ির দাগ ধরা ছবি ভাবি, শস্যের বাদামী বীজ ভাবি, নিজেকে আড়াল রেখে। আসলে অনামিকাকে না দেখলে, প্রকৃতির অনেকটাই আমার কাছে অনাবিষ্কৃত থেকে যেত।

অনামিকা আমাকে আলাদা আলাদা করে টিলা, পাহাড়, পর্বত চিনিয়েছে, নদী, উপনদী, শাখানদী, সব ভেঙে ভেঙে বুঝিয়েছে। আমি তবু অনামিকাকে বলতে পারিনি, যে পাহাড় নয়, আমি ভালোবাসি তার শৃঙ্গ, বলতে পারিনি, নদী নয়, তার জোয়ার-ভাঁটাই আমার কাছে জীবনের প্রতিশব্দ। ভোরের দরজায় কড়া নেড়ে ফিরে গেলে কুয়াশা শব্দ, অনামিকার বাসন্তী শাড়ির টিলায় ফুটে থাকে অসংখ্য বুনো ফুল। মনে হয়, হিম এই শীতলেও বুঝি এল বসন্ত। তারপর প্রকৃত সাঁতার চেয়ে হেলে যাওয়া উত্তুরে বাতাস অনামিকার কাঁধ ঘেঁষে যখন প্রায় পাহাড়ের কাছাকাছি, আমি শিকে ছেঁড়া বেড়ালের ধূসরে প্রতিবিম্বিত বোতামে অপেক্ষা করি।

অনামিকা কি জানে সেই কুয়াশার গভীরে লুকিয়ে থাকা এক জোড়া লোভী চোখের কথা! গাছের পাতারা ধুলোয় ঢেকে গেলে, আমি আঙুল তুলিতে আঁকি অনামিকার মুখ, পাতা উলটে দেখি, কী কী পড়া রয়ে গেল বাকি। আমি নদীর নির্জনে অনামিকার নূপুরের শব্দে খুঁজে পাই বীজের চঞ্চলতা। তারপর ফসলে সোনালি রঙ এলে অকাল বৃষ্টিতে ভেজে পাহাড়ের চূড়া আর নিষেধকে সাক্ষী রেখে আমরা দুজনেই নদীর আয়নায় স্পষ্ট দেখি প্রকৃতির চলাচল। সন্ধ্যা নেমে এলে, এই যে নদী, সে তখন আতরদান। জলযাত্রী আমি সে আতরদানে ডুবতে দেখি আকাশের চাঁদকে।

তার পিছু পিছু হেঁটে যায় অনেক বাঁশিওয়ালা, যাদের শরীরগন্ধে উত্তাল হয়ে ওঠে প্রকৃতি আর আমি সেইসব জলীয় শাসন পেরিয়ে গিয়ে খুঁজি অনামিকার ঋদ্ধ আগুন। আমার অক্ষে এই যে চিরায়ত বোধ, এসব জানে প্রকৃতি। তাই রবাহুত জেনেও নিত্য রঙিন পুঁতি দিয়ে মালা গাঁথে আকাশের তারা, আর ভিন চরে আমি ও আমার অনুভূতি শিরোনামে রাখি এক অনন্ত বিশ্বাস, যার একদিকে বালুচর, অন্যদিক চলে গেছে সাগরের দিকে। তারপর রাত। শরীরী বাঁক মেলে দিয়ে ঘুমোয় বারান্দা, পাখিহীন দীর্ঘশ্বাসী বিষণ্ণতা অভিমান হয়ে ঝরে পড়ে তপ্ত কপালে।

আমি চাঁদের নিটোল জ্যোৎস্নায় ভেসে যাওয়া প্রকৃতিকে দেখি, অনামিকাকে দেখি, আর অস্ফুটে বলি, তুমি অনন্ত, তুমিই সম্ভাবনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।