আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী, আপনারা ভালো হয়ে যান, আমরা আর ব্যঙ্গচিত্র আঁকবো না

পাখি এক্সপ্রেস

একদিন হয়তো বাংলাদেশের কিছু লোককে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিঞ্চিত অপমানবোধের কল্যাণে তারা আমাদের দৃষ্টির অগোচরে চলে যাবেন। এরা শাসক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। যখন তারা বুঝতে পারবেন যোগ্য না হয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠ মেধাবী জাতি অংশকে শাসন করে গেছেন দীর্ঘদিন ধরে, তখন তারা লজ্জিত হবেন। ক্ষমতাকালীন সময়ে তাদের নামে যতো রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, পুল-কালভার্টের নামকরণ করা হয়েছে, নিজের থেকেই সবকিছু মুছে দিতে উঠেপড়ে লাগবেন -এসব আসলে এক ধরনের প্রত্যাশা।

এমনটি নাও হতে পারে। কিন্তু ঠিকই কষ্ট লাগে, যখন দেখি আমার চাইতে অযোগ্য লোক আমাকে শাসন করে। হাতের কাছে বর্তমান সরকার আছে। তাদেরকে নিয়ে একটু ভাবি। “ডিজিটাল” শব্দটিকে পুঁজি করে এবং রীতিমতো এ শব্দটিকে বালাৎকার করে আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১ সন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে আগ্রহী।

প্রধানমন্ত্রী পুত্রের পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন আর প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স যদি “ডিজিটাল” শব্দের প্রধান রূপ হয়ে থাকে, তবে আমরা ডিজিটালি কান্না করার সুযোগও আর পেলাম না। আসলেই হতভাগা জাতি, রাষ্ট্রে এখন ছাত্রলীগ হচ্ছে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। নিজস্ব যে যে বৈশিষ্ট্যের কাধেঁ ভর করে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, দখলবাজির কঠোর সমালোচনা করি, আমার সেসব গুনাবলী দিয়ে ছাত্রলীগের চাইতে ক্ষমতাশালী হতে পারি না। ওয়েবে সার্চ দিয়ে যে ছাত্রলীগের একটি লোগো পাওয়া যায় না, তারাই “ডিজিটাল” শব্দের মালিকানা ভোগ করে। বাজার কমিটির নির্বাচন থেকে শুরু করে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সবখানে কেবল ডিজিটালকরণের ইশতেহার।

“ডিজিটাল বৈরাগী বাজার নির্মাণে শমসের ভাইকে ভোট দিন” কিংবা “ডিজিটাল নোয়াখালী গঠনে একরাম ভাইকে ভোট দিন” এসব দেয়ালিকা, শ্লোগানযুক্ত পোস্টার আমাদের শান্তি হরণ করছে ভয়াবহভাবে। প্রতিদিন যে হারে মানুষের ক্রোধ, রাগ এবং প্রতিশোধের বোধ বাড়ছে এতে করে এদেশে অবিশ্বাস্যভাবে বক্ষব্যাধি চিকিৎসালয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু হবে না। কিছু সংখ্যক লোক আমার চোখের সামনে অসামঞ্জস্য, অপ্রয়োজনীয়, আনস্মার্ট সব কাজ করে যাবে; যা না চাইতেই আমাদের জন্য রম্যের বহর নিয়ে হাজির হয়, আর এর বিপরীতে আমাদের কিছুই করার থাকে না- কি ভয়াবহ অবস্থা! দেবতাতুল্য এসব মানুষের কু-কৃতকর্মের কোন প্রতিক্রিয়া করার সাধ্য আমাদের থাকে না। রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে যদি বন্ধু বান্ধবসহ একজন রাজনৈতিক নেতার সমালোচনা করি, তাহলে তার কর্মী সমর্থকদের হাতে লাঞ্চিত হওয়ার ভয়, যদি তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাই, তাহলে জীবন হারানোর ভয়। আবার আমরা বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে আমাদের ক্রোধ, ক্ষোভ, ঘৃণাকে উড়িয়ে দিতে পারি না।

তাহলে প্রকাশ কিভাবে হবে? প্রকাশের মাধ্যম কে নির্ধারণ করে দিবে? আমি কি আমার ক্রোধ কিংবা ক্ষোভের ইজারা দিতে রাজি হবো? কার কাছেই বা দিবো! যারা এসবের দখলদ্বারিত্ব নিতে হা করে বসে আছে তারাতো এর ভার বইতে প্রস্তুত নয়। তাদের সে যোগ্যতা নেই। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রম্য দেখা যায় সংসদ অধিবেশন চলাকালে। বিচিত্র সব উচ্চারণ, বক্তব্য, তথ্য, সম্ভাবষনের মিশ্রণে সংসদ অধিবেশন এ যোগ্যতা অর্জন করেছে। পাশাপাশি নান্দনিক সব গালাগাল দিয়ে মনের ভাবপ্রকাশের অনুশীলন বা প্রদর্শনী চলতে থাকে নাগরিক টেলিকাস্টে।

এসবেও যদি ক্ষোভের যথাযথ প্রকাশ না ঘটে, তবে ফাইল ছোঁড়া কিংবা চেয়ার ছোঁড়ার ঘটনাও ঘটে। নাগরিক হিসেবে এসব বেশি কিছু বলতে গেলেই আমি অবমাননার মামলায় ফেঁসে যেতে পারি। কারণ রাষ্ট্রের ইজারা গ্রহণকারীদের নিয়ে আমার এ ধৃষ্টতার কোন ক্ষমাই হতে পারে না। অথচ এসব তারকারাজি আমাদের মতো চুনোপুটি নাগরিকের বোঝা মাথায় নেয়ার জন্য বাংলাদেশের সবচে ব্যয়বহুল ওই ঘরে সংসার পেতেছেন। অতপর তারা তা ভুলে গেছেন।

“স্বাধীনতা” বলতে যে একটি শব্দ বা বিষয় আছে এবং তার সাথে যে ম্যাংগো পাবলিকের সংশ্লিষ্টতা আছে, তা স্বীকার করার কোন মানসিকতা শাসক শ্রেণীর থাকে না। তারা তা করতে চান না বা পারেন না। তথাকথিক নাগরিক অভিভাবকদের প্রতিপক্ষকেন্দ্রিক ক্ষোভের প্রকাশ করতে গিয়ে সংসদ ভবনের মতো মাজার শরীফে অকথ্য গালাগাল, চেয়ার ছোঁড়াছুড়ি এবং ভারী ভারী সব মিথ্যার ছুটোছুটি হলেও রাষ্ট্রের রেজিস্টার্ড নাগরিক হয়েও আমি আমার অভিভাবকদের অপকর্মসৃষ্ট ক্ষোভ বা রাগ এমনকি অভিমানেরও কোন প্রকাশ করতে পারি না। জ্ঞানীরা বলে এসব নাকি আইনেরই অংশ এবং রাষ্ট্রে বসবাস করলে আইন মেনেই বসবাস করতে হবে। “ডিজিটাল” বিষয়টাকে ইতিবাচকভাবে দেখি- বাংলাদেশকে উন্নত করার মানসে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ানো হবে এবং এভাবে করে রাষ্ট্রে বৃহতাকারে প্রযুক্তায়ন ঘটবে।

মূলত এ লাইনটাকেই ডিজিটালকরণের মূল নিয়ামক ধরা যেতে পারে। এরকম একটা দৃশ্যের জন্য আসলে কি কি দরকার? দরকারী অন্য সব কিছুকে এড়িয়ে প্রথমটাকেই ধরি। তথ্যায়নের পথে যতো বাধা আছে সব বাধা দূর করতে হবে। তা না হলে “ডিজিটাল” শব্দটি বাস্তবায়নের “ডিজি” গন বাই ডিফল্ট “টাল” হয়ে যাবেন। এবং এখন হচ্ছেও তাই।

পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে, কারণ সরকারের নীতি নির্ধারকরা তথ্য কি? এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নূন্যতম অবগত নন। শেষমেষ দেশের তরুণ প্রজন্ম বুঝে যাবে আনফরচুনেটলি আইটি সম্পর্কে কিছু জ্ঞানার্জনকারী শেখ জয়ের একটি শব্দ ব্যবহারের কাছে তারা ব্ল্যাকমেইল হয়ে গেছে! মানুষের রোষ এখন ব্যাঙ্গাত্মক ফটো বা কার্টুনে প্রকাশ পাচ্ছে। এ পথ বন্ধ করে দিলে তখন হয়তো পেশীগুলো নড়েছড়ে উঠবে। তখন মনে হয় ফল অতোটা মঙ্গলজনক হবে না। ওই ধরনের ফল আমার ছোট্ট নাগরিক মন চায় না, অনেকেরই না।

মত প্রকাশের মাধ্যমকে সংকুচিত করবেন না। সবগুলো দুয়ার জানালা খোলা রেখে গায়ের জামা কাপড় ঠিক রেখে গুমানোর অভ্যাস করুন। কেউ আর আপনাদের দিকে কু-দৃষ্টিতে তাকাবে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.