আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নৌকায় ভোট দিন, বিএনপি এলে দেশ অন্ধকারে যাবে

মজিবর রহমান, আড়াইহাজার থেকে

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয়। বাকি উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাই। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ অন্ধকারে যাবে। গতকাল বিকালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে শহীদ মঞ্জু স্টেডিয়ামের স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার ভিন্ন ধারার রাজনীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা ক্ষমতায় গেলে হাওয়া ভবন করে, হাওয়া ভবনের পরিবর্তে নতুন ভবন করে, দেশের চলমান উন্নয়নগুলো বন্ধ করে নতুনভাবে দুর্নীতি শুরু করবেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করা করা হয়েছে, আগামীতে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে তাহলে এসব কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেবে। কমিউনিটি ক্লিনিক, ভাতা বন্ধ করে দেবে। আর এ রাজনীতির মধ্যে আরও থাকবে হাওয়া ভবনের মতো নতুন ভবন খুলে তার ছেলেদের দিয়ে দুর্নীতি আর দেশকে জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাবে। দেশের জনগণের টাকা বিদেশে পাচার আর মানি লন্ডারিং করবে।

বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে ধর্ষণ আর খুনের রাজনীতি শুরু হবে। দেশে ১৭ আগস্টের মতো আবারও ৫০০ স্পটে বোমাবাজি হবে। সেটাই হবে বিএনপি নেত্রীর ভিন্নধর্মী রাজনীতি। আর সেটাই হবে বিএনপি দলীয় চেয়ারপারসনের ভিন্ন ধরনের রাজনীতি।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়েই দেশ অভিশাপমুক্ত হবে। ঠিক যেমন জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। যারা ইসলামের নামে রাজনীতি করে তাদের সমর্থন দেন বিরোধীদলীয় নেতা। যারা মসজিদে আগুন দেয়, পবিত্র কোরআন পোড়ায় তাদের তিনি সমর্থন দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা সারা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।

আড়াইহাজারেও সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয়েছিল। ২০০১ সালের ১৬ জুন চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসে বোমা হামলা করে ২১ জনকে হত্যা করিয়েছিল বিএনপি। সারের দাবি করায় বিএনপি কৃষকদের গুলি করে মেরেছিল, বিদ্যুৎ চাওয়ায় গুলি করেছিল। তাদের সেই চরিত্র এখনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে জনগণ কিছু পায়, দেশের উন্নয়ন হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলায় কী কী উন্নয়ন করা হয়েছে তা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, সব উন্নয়নের কাজ হবে যদি আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেন। যারা যারা ভোট দেবেন তারা হ্যাঁ বলুন। জনগণও তাদের দুই হাত তুলে সাড়া দেয়। বেলা ২টায় জনসভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১১টা থেকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল সহকারে নেতা-কর্মীরা জনসভাস্থলে হাজির হতে থাকেন।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়। ৫৮ মিনিটের ভাষণে সরকার প্রধান তার সরকারের বিদ্যুৎ, শিক্ষা, কৃষি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের কথা স্মরণ করেন। ১৫ আগস্ট নিহতের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিরোধীদলীয় নেতার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তার (বেগম জিয়া) নামে এতিমদের অর্থ আত্দসাতের মামলা আছে।

তিনি এ মামলায় হাজিরা দেন না। কারণ তিনি জানেন, হাজিরা দিলে বিপদ আছে। খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য উন্মাদ হয়ে গেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের প্রতি তার এত দরদ কেন? তাদের রক্ষার জন্য তিনি এত মানুষ হত্যা করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেউ ঠেকাতে পারবে না বলেও জানান তিনি।

বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকার একটি ইংরেজি পত্রিকায় উনি চিঠি লিখেছেন, যাতে দেশের পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এভাবে কেউ দেশের সর্বনাশ চাইতে পারে, তা মেনে নেওয়া যায় না। অথচ বিরোধী দলের নেতা তা-ই চান।

প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, যখনই বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসেছে, তখনই মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। বিএনপি দেশে আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম করেছে। দেশের মানুষ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়।

কিন্তু বিএনপির দুঃশাসনের কারণে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা দেওয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে। তাদের অত্যাচার, নির্যাতনের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি।

মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তদের হাত থেকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। মাদকের কারণে এখন মা-বাবাকেও হত্যা করা হচ্ছে।

এটা একটি জঘন্যতম অপরাধ। এ জন্য মসজিদের ইমামকে আরও সজাগ থাকতে হবে।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ সরকারের আমলে যতগুলো আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তার প্রত্যেকটি বাস্তবায়ন হয়েছে। তিনি বলেন, আড়াইহাজার উপজেলায় যে কাজ হয়েছে তার এলাকা কিশোরগঞ্জেও এত কাজ হয়নি।

বক্তব্যের আগে ওই মঞ্চেই আনুষ্ঠানিকভাবে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন করেন।

তখন প্রধানমন্ত্রী সুইচ টিপে ও বেলুন এবং পায়রা উড়িয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার হরিপুরে ৪১২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কম্বাইড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, আড়াইহাজার উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা এস এম মাজারুল হক অডিটরিয়াম ও কমিউনিটি সেন্টার, নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউস এবং সোনারগাঁয়ে জ্যোতি বসু স্মৃতি পাঠাগার ও সেমিনার হল উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী আড়াইহাজারে বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রধান কার্যালয়, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষক ইনস্টিটিউট, আড়াইহাজার উপজেলা কমপ্লেঙ্ সম্প্রসারণ প্রকল্পের সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন, রূপগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেঙ্ সম্প্রসারণ প্রকল্পের সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন, মুড়াপাড়া ফেরিঘাট রাস্তায় শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর ৫৭৬ দশমিক ২১৪ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার ব্রিজ, এগ্রিকালচারাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং সিদ্ধিরগঞ্জের ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজালাল মিয়ার সমাবেশে সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এনামুল হক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সুবিদ আলী ভূইয়া এমপি, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি নাসিম ওসমান, শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ। মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সিটি করপোরশেনের কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ প্রমুখ।

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.