আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় নৌকায় ভোট দিন

জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস মোকাবিলায় আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মিয়ানমারের মতো সমুদ্র বিরোধে ভারতের সঙ্গে চলা মামলার রায়ও আমাদের পক্ষে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে দিনভর ব্যস্ত সময় কাটান। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কারাবন্দী বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সংসদীয় এলাকা ফটিকছড়িতে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জনসভা করে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আর কোনো রাজাকার নয়, নৌকায় ভোট দিয়ে শান্তি ও উন্নয়নের পথে অবস্থান নিন। যদি শান্তি চান, উন্নয়ন চান, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস না চান তবে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে যোগ দিন।

এদিকে চট্টগ্রামে দুটি টহল বিমান ও তিনটি যুদ্ধজাহাজের কমিশনিং অনুষ্ঠানে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত করতে নৌবাহিনীর জন্য ভবিষ্যতে ডুবোজাহাজ কেনার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ 'বানৌজা বঙ্গবন্ধু'কে ১২ বছরের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি হিসেবে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করেন তিনি। একই সঙ্গে তিনটি যুদ্ধজাহাজের অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন। এর পর প্রধানমন্ত্রী বানৌজা বঙ্গবন্ধু ঘুরে দেখেন এবং সমরাস্ত্র পরিদর্শন করেন।

ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পেলাগাজী দীঘি এলাকায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের মাঠে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টে মা, বাবা, চাচা, ভাই, ভাইয়ের বউসহ পরিবারের ১৮ জনকে হারানোর হৃদয়বিদারক ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।

আমি সব হারানোর বেদনা ও জীবনের ঝুঁকি নিয়েও আপনাদের পাশে রয়েছি। কারণ একটাই, আমার বাবা আপনাদের জন্য, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন। আপনাদের মাঝেই আমি মা-বাবাকে খুঁজে পাই। আমি মানুষের জন্য কাজ করি। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আপনারা আবার নৌকা মার্কায় ভোট দিন।

ইনশাআল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশে পরিণত হবে। বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

গতকাল বিকালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ইসহাক মিয়া, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, সংসদ সদস্য আবুল কাসেম মাস্টার, মঈনউদ্দিন খান বাদল, চেমন আরা তৈয়ব, শাহিদা তারেক দীপ্তি, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সাইফুজ্জামান শেখর, কেন্দ্রীয় নেতা এনামুল হক শামিম, আমিনুল ইসলাম আমিন, শাহজাদা মহিউদ্দিন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, জহিরুদ্দিন লিপটন, ফখরুল আনোয়ার, এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো প্রধানমন্ত্রীর ফটিকছড়ি সফর উপলক্ষে জনপদটিতে উৎসবের ছোঁয়া লাগে। জোরদার করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় প্রায় তিন হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। জনসভাস্থলে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়।

কোকোর টাকা আনার বিষয়ে বিরোধী দল এটিকে 'নাটক' বলার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে টাকা ফেরত আনা কি নাটক হতে পারে? বিএনপি নেত্রীর ছেলের দুর্নীতির টাকা যাতে ফেরত আনা না যায় সে জন্য তিনি দুবার সিঙ্গাপুর গিয়ে ষড়যন্ত্র করেছেন। কিন্তু সিঙ্গাপুর সরকার তার কথা শোনেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত হত্যা, নির্যাতন ছাড়া দেশবাসীকে কিছুই দিতে পারেনি।

বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ঘরে থাকতে পারেননি। একাত্তরে পাকিস্তানি ও তাদের দোসররা যেভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করেছিল, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে একইভাবে হত্যা-নির্যাতন চালিয়েছে।

৫ মে ঢাকায় হেফাজতের তাণ্ডব প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে দোকানে আগুন দিয়ে কোরআন শরিফ ও জায়নামাজ পোড়ানো হয়েছে। মসজিদে আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা কীভাবে ইসলামের হেফাজত করবেন? কোরআন শরিফ পোড়ানো কোন ধরনের রাজনীতি? ইসলামের হেফাজত শুধু আওয়ামী লীগই করে।

এর পরও মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়। যার যার ধর্ম সে স্বাধীনভাবে পালন করবে_ এটাই আওয়ামী লীগের নীতি। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য বিএনপি-জামায়াত ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাদের প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর মাত্র সাড়ে চার বছরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন বাড়িয়েছি।

কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। সারের দাম কমিয়েছি। ১০ টাকায় কৃষকদের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছি।

তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের মামলার রায় কার্যকর করেছি।

যুদ্ধাপরাধ বিচার শুরু করেছি। ইনশাআল্লাহ সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাংলার মাটিতেই হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চ শিক্ষার জন্য শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট করেছি। এক লাখ ৩২ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে মাধ্যমিক পর্যায়ে উপবৃত্তি দিয়েছি। প্রতিটি জেলায় একটি করে স্টেডিয়াম করার উদ্যোগ নিয়েছি।

জনসভার মাঠটিকেও স্টেডিয়াম করার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগে ঘরবাড়ি বিক্রি করে মানুষ বিদেশ যেত, এখন মাত্র ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিদেশ যেতে পারছে।

এর আগে নেভাল একাডেমিতে মধ্যাহ্নভোজের পর বেলা ২টায় হেলিকপ্টারে ফটিকছড়ি যান শেখ হাসিনা।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে নয়টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও চারটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এসব প্রকল্পের মধ্যে আছে_ হালিশহরে ৮৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৯১টি খাদ্য গুদাম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবনির্মিত পাঁচতলা ডেন্টাল ভবন, চট্টগ্রাম কলেজের নতুন প্রশাসনিক ভবন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বহিঃবিভাগ ভবন, ডেন্টাল ভবন, ছাত্রী হোস্টেল, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, লোহাগাড়া উপজেলা ট্রমা সেন্টার, ফটিকছড়ি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, রফিকুল আনোয়ার-মোরশেদা ট্রাস্ট, সিডিএ স্কয়ার (আবাসিক) ফ্ল্যাট প্রকল্প।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম পৌঁছার পর প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান নৌবাহিনী-প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব। এর পর জহুরুল হক বিমানঘাঁটিতে বোতাম টিপে দুটি টহল বিমানের নামফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুরে নেভাল জেটিতে বানৌজা নির্মূল, দুর্জয় ও সুরমা যুদ্ধজাহাজের কমিশনিং অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তিনটি যুদ্ধজাহাজের অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র বিরোধের অবসানে বঙ্গোপসাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একান্ত অর্থনৈতিক এলাকার আইনগত অধিকার লাভ করেছি।

' ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার মামলার যে রায় হবে, তাতেও বাংলাদেশ জয়লাভ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হয়েছিল ত্রিমাত্রিক ক্ষমতাসম্পন্ন বানৌজা বঙ্গবন্ধু। এবার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০১১ সালে নৌবাহিনীতে সংযোজিত হয় ইতালি থেকে কেনা দুটি মেরিটাইম হেলিকপ্টার। আজ নেভাল এভিয়েশনে যুক্ত হলো জার্মানি থেকে কেনা দুটি টহল বিমান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিশাল সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা বিধান অপরিহার্য।

নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করছে। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দক্ষ ও আধুনিক ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী উপহার দিতে সরকার বদ্ধপরিকর।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.