আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নামহীন শিরোনাম

আমার মন খারাপের পরেও, আমি আছিরে তোর পাশে...

মাত্র তিন সপ্তাহ চারদিন হলো সামহোয়ারইন ব্লগে আমার বয়স। এরই মধ্যে আমি এই ব্লগের নেশায় আসক্ত। এমনই নেশা, অফিসের বা অন্য কাজে বিজয় এর পরিবর্তে ইউনিজয়-এ লিখতে আরম্ভ করি। পড়তে আমি এমনিতেই ভীষন ভালবাসি। তার উপর ব্লগারদের লেখা, সেই সাথে কমেন্টস, ভাল লাগায় পাগল হয়ে যাই।

অফিসের ব্যস্ততার ফাঁকে ঢুকে পড়ি বিভিন্ন ব্লগারদের এরিয়ায়। আবার যখন অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকি, আমার মন পড়ে থাকে ব্লগে। বন্ধুরা যারা ইয়াহু বা ফেসবুকে আমার সাথে চ্যাট করে তারা ক্ষিপ্ত দেরীতে রিপ্লাই করি বলে। ব্লগে একবার ঢুকলে আমি ভুলে যাই সব। ফেসবুক এখন আর আমাকে টানেনা।

অন্যদের লেখা পড়তে পড়তে আমারও ইচ্ছা করে লিখতে। কিন্তু লেখালেখির হাত একদম নেই আমার। যাই শুরু করি কেমন যেন প্যানপ্যানানি প্যাচাল হয়ে যায়। তবু লিখতে ইচ্ছা করে। মন চায় সিনিয়র সব ব্লগার আমার ব্লগে এসে মন্তব্য করবেন; এটা সেটা পরামর্শ দেবেন।

তাই ভাবলাম কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করিনা কেন? আমি আবার যা ভাবি তাই করে ফেলি.. .. .. .. ২০০৫ এর ডিসেম্বরে জয়েন করি একটি সুপার মার্কেটের হিউম্যান রিসোর্স সেকশনে। সঙ্গত কারণেই নামটা বলছিনা। যেহেতু আমি সেল্স এর নই, ফ্লোরে যাওয়া হোতনা কাজ ছাড়া। ওখানে জয়েন করার পর ’চোর’ ধরার বহু গল্প শুনতাম। কোন গল্প হেসে গড়িয়ে পড়ার মত; কোনটা মন বিষন্ন হওয়ার মতো; কোনটা আবার শিউরে ওঠার মতো।

গল্প শুনতে শুনতে আমার খুব ইচ্ছা হলো এর পরের বার ’চোর’ ধরা হলে আমাকে যেন ডাকা হয়। আমার টেবিলের উপর ইন্টারকম বেজে উঠলো। ’চোর’ ধরা পড়েছে। দৌড়ে নামলাম নিচে। ওমা! এ দেখি একেবারে চ্যাংড়া পোলা।

শুধু তাই নয়, দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভদ্র, সম্ভ্রান্ত (?) কোন পরিবারের ছেলে। যাই হোক, এখানে আমার কিছু করনীয় নেই। সেলস ম্যানেজার, ফ্লোর সুপারভাইজার সবাই মিলে বিচার করছে তাই দেখতে লাগলাম। সিসি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে ছেলেটির সাথে একটি মেয়েও ছিল। আমাদের একজন সরস কলিগ ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো ”তোমার পেয়ারী নাকি?” ছেলেটি কিছু বলেনা।

যখন কঠিন করে ধমক দিল তখন স্বীকার করলো সে তার পেয়ারী। বলা হলো ”ফোন করে ওকে এখানে আসতে বলো। চুরি তো দুজন মিলেই করছিলে। তোমাকে বিপদে ফেলে সে পালালো, কেমন ভালবাসে তোমাকে বুঝতে পারছো তো?” ছেলেটি মেয়েটিকে ফোন দিল- ফোন বন্ধ। ছেলেটির কাছে দামী আফটার শেভ, পারফিউম এসব পাওয়া গিয়েছে।

হাতে বা শপ-এর বাস্কেটে নয়, তার কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ এর মধ্যে। শেষমেষ আর পুলিশি ঝামেলা না করে ছেলেটিকে অনেক অপমান করে বের করে দেয়া হলো। যদিও সেটাও করা হলো তার অনেক অনুনয়-বিনয় এর পর। আরেকটি ঘটনা আমাকে ভীষন অবাক করেছিল, আহত করেছিল। একদিন বাচ্চা একটা ছেলে-কে ধরে আনা হলো।

তার কাছে পাওয়া গিয়েছে সেক্স উত্তেজক একটা লোশন, যার দাম ১০০০ টাকার উপর। ছেলেটির বয়স খুব বেশি হলে ১২ বছর। ওকে ধরে আনার পর থেকে ও যে মাথা নিচু করে বসে আছে আর মাথা তোলেনা। বাচ্চা ছেলে, তাকে কে কি বলবে? তারপরও আমাদের সেই সরস কলিগ ওকে জিজ্ঞেস করলো ”বাবু, এটা দিয়ে কিভাবে কি করে তুমি আমাকে বুঝাও। যতক্ষন পর্যন্ত না বুঝাবা তোমাকে ছাড়া হবেনা।

” ছেলেটা মাথা তোলেনা। ছেলেটির মা-বাবা কে ডেকে আনা হলো ফোন করে। মা-কে আমার সাথে বাইরে পাঠানো হলো। ভেতরে বাবা। ভদ্রমহিলা বারবার আমাকে জিজ্ঞেস করছেন ”মা, আমার ছেলে কি করেছে?” আমি কিছু বলতে পারিনা।

উনি নিজ থেকেই বলেন ”আমাদের একটাই ছেলে। আজ পর্যন্ত ওকে চোখ গরম করে একটা কথা বলিনি, ধমক বা মার তো অনেক পরের কথা। তুমি ছাড়া তুই বলে কোনদিন ডাকিনি। সেই ছেলে আমার কি করতে পারে?” উনি জোড় করেন আমাকে বলার জন্যে। আমি বলতে পারিনা।

সেলসের আরেকটি মেয়ে ছিলো সাথে। সে তখন একটু রাগ নিয়েই মহিলা-কে বলে ”ধমক দিয়ে কথা বলেননি বলেই আপনার ছেলে আজ এতখানি নিচে নামছে। ” ভদ্রমহিলা ঘটনা শুনে আমাদের দিকে এমনভাবে তাকান যেন উনি বুঝতে পারছেন না আমরা কি বলছি। ভিতরে থাই দরজার এপাশ থেকে আমরা দেখি ছেলেটির বাবা মাথা যতখানি নীচু করা যায় তার থেকেও নীচু হতে চাচ্ছেন। কোন কথা বলছেন না তিনি।

যা বলার আমাদের ম্যানেজার একাই বলছেন। একটু পর ভদ্রলোক বের হয়ে এলেন। পেছনে ছেলেটি। তার অতি আদরের একমাত্র ছেলে, যার দিকে তিনি একটিবারও ফিরে তাকাচ্ছেন না। অন্যদিন হলে হয়তো ছেলের কাঁধে বাবা-র একটি হাত থাকতো।

তাঁরা চলে গেলেন। আমরা তাদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শুধু দীর্ঘশ্বস ফেললাম। এরকম বহু চোর ওখানে আমি দেখেছি। পুলিশের আইজি-র বউ, যে চুরি করে ধরা পড়ে আবার আমাদেরকেই শাষায় তাকে ধরা হয়েছে বলে। অনেক বড় ঘরের বয়স্ক কোন মহিলা, যাকে দেখলেই মা-এর রুপ চোখে পড়ে তাকেও দেখেছি গরম মসলা, আনাজপাতি চুরি করে ব্যাগের মধ্যে ঢুকাতে।

অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। চোর ধরার পরে ওখানে বিভিন্ন রকমের শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। সেসব আর বলছিনা। তাহলে ধরা খেয়ে যেতে পারি কোন সুপারশপ এর কথা বলছি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।