আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভর্তি যুদ্ধ : বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা যেন একটা ভীতির নাম

আমার আগের লেখায় আমি বলেছি কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয় “মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং” বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হবার জন্য। আমাদের সমাজ, আত্নীয়-স্বজন, বাবা-মা এমনভাবে আমাদেরকে মানসিকভাবে দীক্ষা দেয় যেন “ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার” না হতে পারলে জীবন বৃথা। কিন্তু তারা বুঝে না যে তাদের এই অত্যধিক চাপ প্রয়োগের ফলে শিক্ষার্থীদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। যে ছেলেটা/মেয়েটার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিয়ে স্বপ্ন বুনার কথা, সেই দেখা যায় চরম হতাশায় ভুগে। কেন এমন হয় ? সমস্যা কি শুধু আমাদের চাওয়া-পাওয়ায় নাকি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নাকি শুধুই আমাদের বা শিক্ষার্থীদের ? প্রথমেই আসা যাক মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে।

বেশ কয়েকবছর ধরে সরকারীভাবে সারাদেশের সরকারী-বেসরকারী মেডিকেলগুলোতে ভর্তির জন্য শুধু একটাই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। ১ ঘন্টায় ১০০ নম্বরের পরীক্ষা। নৈর্বক্তিক পদ্ধতিতে নেওয়া পরীক্ষার বিষয় হচ্ছে বাংলা, ইংরেজী, সাধারণ জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের বিষয় সমূহ (গণিত বাদে)। বুঝাই যাচ্ছে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পরিক্ষার্থীদের এই বিষয়গুলোর উপর বিশদ পড়াশুনা করতে হয়। বইয়ের প্রতিটা লাইন তাদেরকে অন্তত একবার হলেও পড়তে হয়, নাহলে পরীক্ষার সময় দেখা যায় যে, কিছু না কিছু বাদ থেকেই যাচ্ছে !! কয়েকমাস ধরে এককথায় যুদ্ধ করে নিজেদের মুখস্থবিদ্যাকে ঝালিয়ে নিয়ে ভর্তি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরে শিক্ষার্থীরা।

১ ঘন্টায় শিক্ষার্থীদের জানার সীমানা আর তাদের অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগ করার ক্ষমতার পরীক্ষা হয়। অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষাগুলো হয় শিক্ষার্থীর প্রায়োগিক জ্ঞান কতটুকু তার উপর। ২/৩ ঘন্টা ব্যাপী পরীক্ষার বিষয়বস্তু হচ্ছে ইংরেজী,গণিত, পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নবিজ্ঞান। প্রতিটা বিষয়ে শিক্ষার্থীর জ্ঞান কতটুকু গভীর বা শিক্ষার্থীর বেসিক জ্ঞান কতটুকু তাই এখানে মুখ্য, মুখস্থবিদ্যা এখানে কোন কাজে আসে না। তাহলে দেখাই যাচ্ছে যে, যারা শুধু মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিবে তাদের গণিত চর্চা প্রায় হয় না বললেই চলে।

আর যারা শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিবে তাদের পক্ষে জীববিজ্ঞানের মত গভীর বিষয়ে বেসিক জ্ঞান অর্জন প্রায় অসম্ভব। এখন যদি কেউ শুধু মেডিকেল/ ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিল কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে মেডিকেল/ইঞ্জিনিয়ারিং এ টিকল না তার কি হবে? যে শুধু মেডিকেলের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে তার পক্ষে ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা কোনমতেই সম্ভব নয়, কারণ সে বেশ কয়েকমাস গণিত চর্চা থেকে দূরে থাকবে। এখানে খেয়াল করতে হবে যে, গণিত এখানে “চর্চা” করার কথা বলা হয়েছে, অন্যান্য বিষয় পড়ার ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝে গণিত বইয়ের পাতা উল্টানোকে “গণিত চর্চা” বলে না। গণিতের জন্য আলাদা বিশেষভাবে সময় দেওয়া প্রয়োজন যেটা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে করা প্রায় অসম্ভব। (এর ব্যতিক্রম আছে তবে তা উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক হবে না।

) অন্যদিকে যারা শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে তাদের পক্ষে জীববিজ্ঞান সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান অর্জন করা অনেক কঠিন। এমন না যে এটা অসম্ভব, কিন্তু মোটিভেশনের অভাবে কিংবা বলা যায় প্রয়োজনীয়তার অভাবেই ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা জীববিজ্ঞানের ধারে কাছে দিয়েও যায় না। এখন এই যে প্রস্তুতির মাঝে একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে এটাই পরিক্ষার্থীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে আরও ভীত করে তোলে। কারণ সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় সব বিষয়ের উপরই পরীক্ষা নেওয়া হয়। তার উপর আবার মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার আগে সময় কম থাকায় তাদের ভীতিতো দুর হয়ই না, বরং আরও চেপে বসে !! (বিঃদ্রঃ এখানে শুধু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কথা বলা হচ্ছে।

মানবিক/বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও চাপে থাকে। তবে তাদের চাপ একটু ভিন্ন, সেটা অন্য কোন লেখায় আলোচনা করা হবে। ) চলবে…………… ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.