আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাংস্কৃতিক অভিব্যাপ্তিতার সঞ্জীবন

মনের জানালায় দাঁড়িয়ে ভাবনাগুলোর মিলিয়ে যাওয়া দেখি। গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ হয়ে, ঐ দূর দিগন্ত পানে...

ওরি্‌ উরিব্বাস। এই বাংলা শিরোনামের চাইতে ইংরেজিটা বোধ করি আরো সহজ । Cultural Diffusion Fusion এর বাংলা করছিলাম "সাংস্কৃতিক অভিব্যাপ্তিতার সঞ্জীবন" । কদ্দুর হয়েছে সে ভাষাবিদ রায় বলতে পারবেন তবে এই গালভরা নাম দিয়ে আমি সন্তুষ্ট।

মনে হচ্ছে বেশ কি একটা যেন আছে এই নামের আড়ালে। আসলেই আছে বৈকি! আমার জীবনে দেখা সেরা একটি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং তাঁর মনোমুগ্ধকর বৈচিত্র্যময় সব নৃত্যকলার স্বাক্ষর বহর করছে এই নাম। নাচের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত আমি বেশ কবছর থেকেই। Zee এবং Sony টিভিতে দেখানো নাচের উপর রিয়েলিটি শো গুলোও নৃত্যকলার প্রতি আমার অনুরাগ বাড়াতে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে Zee টিভিতে দেখানো Dance India Dance।

সেদিন ছিল এই Dance India Dance বা DID-র ফাইনাল। আমার হাতে অপশন ছিল অফিস থেকে ফিরে হয় আয়েশ করে এর ফাইনাল উপভোগ করবো, নয়তো ইউনিতে যেয়ে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় সময় কাটিয়ে আসবো। একটু যে দ্বিধায় ছিলাম না তা নয়, কারণ ইউনির আয়োজিত সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা যে সবসময় মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যা হয় তা নয়। তবে একটা কথা মনে পড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম ইউনিতেই যাব। কথাটা কি ছিল ঠিক মনে নেই তবে এইটুকু মনে পড়ছে, "যদি তোমাকে বেচে নিতে বলা হয় অভিজ্ঞতা সঞ্চয় বা তোমার পছন্দের কোন টিভি শো দেখা তবে অভিজ্ঞতাকেই বেচে নিও"।

আমিও তাই অভিজ্ঞতাকেই বেচে নিলাম। এবং শো শুরু হওয়ার মিনিট দশেকের ভেতরেই নিজের সুবুদ্ধি কে বারে বারে ধন্যবাদ দিতে থাকলাম। এমন অভিজ্ঞতা যে এর আগে আমার জীবনে ঘটেনি। এইবার তাইলে একে একে আমার সেই অভিজ্ঞতার অবগুণ্ঠন খোলা যাক। উপস্থাপক এসে হরেক রকমের জোকস শুনিয়ে প্রথমেই শুরু করলো Native American দের ড্যান্স ফর্ম দিয়ে।

বাহারি রঙের পোশাক আশাক পরে শুরু হল তাদের চিৎকার এবং লাফানো ঝাপানো। একজন পাশে দাঁড়িয়ে শব্দ করছিল এবং লাঠি দিয়ে ঢোলের মত কি একটা পেটাচ্ছিল এবং বাহারি পোশাক ওয়ালা তার তালে তালে নাচছিল। শুধু কস্টিউম দেখার জন্য হলেও এই নাচ দেখা দরকার। এত সুন্দর সাজে তারা সেজেছিল যে তাক লেগে যায়। একে একে তারা তাদের সমাজের নানান উপলক্ষ্যের নৃত্য করে দেখালো।

ছবিগুলো সব ক্যামেরা ফোন দিয়ে তোলা তাই কিছুটা ঝাপসা। এরপর আসলো বেলি ড্যান্স। উপস্থাপক যখন এর নাম ঘোষণা করলো আমার বুকের মাঝে ঢাক বাজতে শুরু করেছিল। কারণ ব্যালি ড্যান্সের মাধ্যমে নারীর শরীরের শৈল্পিক উপস্থাপন আমাকে বরাবরেই বিমুগ্ধ করে রাখে। এই নৃত্য হাত কয়েক সামনে থেকে উপভোগ করতে পারবো জেনেই বুকের ভেতর এই ঢাক।

উপস্থাপক ঘোষণা করলেন, যে নাচবে তার নাম আয়েশা। আয়েশা যখন পর্দা সরিয়ে মুখে উড়না পেঁচিয়ে মঞ্চে উপনীত হলেন তাকে এবং তার পোশাক আশাক দেখে মনে হল বুঝি আমি স্বর্গে বসে আছি। এবং অপ্সরীর নৃত্য দেখছি। আয়েশার রুপ এবং তার এমন মাতাল করা নৃত্য আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখে গেল। তার নাচের ছিটেফোঁটা আমার ক্যামেরা ফোনে যা বন্দী হয়েছে সেগুলো নীচে দেয়া হল।

প্রথমে সে নেচেছিল তার উড়না দিয়ে। পরে তলোয়ার নিয়ে এবং শেষে সোনালী রঙের যে জিনিসটা দেখা যাচ্ছে সেটা দিয়ে। শেষের দিকে তাকে সত্যি সত্যি মনে হচ্ছিল যেন ডানাওয়ালা এক পরী। স্বর্গ থেকে যেন পৃথিবীতে নেমে এসেছে। তারপর শুরু হল আফ্রিকানদের জংলী নাচ।

পেছনে দুজন বাদক ঢোল বাজাচ্ছিল। সেই বাজনার তালে তালে নৃত্য। এরপর এল জাপানীজরা। পেছনে একজন যন্ত্র বাজাচ্ছিল সেই যন্ত্রের মোহিনী সুরে দুইজন জাপানীজ নেচে নেচে বেড়াচ্ছিল। এই সুরের এবং এই নৃত্যের যে কি যাদু সেটি যে না দেখেছে তাকে বুঝানো সম্ভব নয়।

সুর আর নৃত্যের ছন্দ আমাকে যেন শূন্যে ভাসিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিল। জাপানীজদের সংস্কৃতির প্রতি আমার ভক্তি ছিল অনেক আগে থেকেই। এই নৃত্য দেখে এবং সুর শুনে সেই শ্রদ্ধা আরো অনেক গুণ বেড়ে গেল। সেই দুজনের সাথে পরে আরেকজন যোগ দিল। এই ছেলের নাচ আমাকে সামুরাইদের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল।

পাঞ্জাবীরা এল এরপর Bhangra নাচ নিয়ে। বরাবরেই মতই স্টেজ কাঁপিয়ে ফেললো তাদের নাচ দিয়ে। পুরো অডিটরিয়াম কেঁপে কেঁপে উঠছিল তাদের নৃত্যের ছন্দে এবং দর্শকদের উল্লাসে। বিরতিতে ফ্রী খাওয়া দাওয়া হল। এক পাকিস্থানী সুন্দরী মেয়েকে দেখে চেষ্টা করছিলাম তাকে ফোনে বন্দী করা যায় কিনা, ভাগ্যিস সে লক্ষ্য করেনি ।

লাইনে দাঁড়িয়ে এরপর তার হাত থেকেই নানরুটি নিলাম। যে যখন তরকারী দিচ্ছিল তখন তার চোখে চোখ রেখেছিলাম। কি সুমিষ্ট সেই মুখ দুইজন লম্বুকে দেখা গেল নাচতে বিরতির পরে Tango নাচ নিয়ে এল দুইজন। এই নৃত্য এক কথায় বলতে গেলে আহেম আহেম । সেনসুয়াল নাচ বলে বোধহয় একেই।

দুজনেই বলিহারি নর্তক। এরপর আমেরিকান Break Dance দিয়ে আমার চোখ বিস্ফারিত করে দিতে এল দুজন Break Dancer। তাদের নাচের নানান কলা কৌশল হাত কয়েক সামনে বসে দেখতে দেখতে আমার চোখদুটো সত্যি সত্যিই যেন ফেটে বেড়িয়ে পড়তে চাইছিল। এরপর আরেক শৈল্পিক নাচের উপস্থাপনা নিয়ে এল চাইনিজরা। যার নাম Peacock Dance।

শুরুতে মেয়েটা বুঝিয়ে দিচ্ছিল এই নাচ যে চাইনীজ দের একটা অহংকার এবং কিভাবে করা হবে সেটি। পেছনে মেয়েটা ময়ুর আঁকবে আর সে ময়ুর নাচ নাচবে। এই নৃত্যও আমাকে মুগ্ধ করে রেখে গেল। মেয়েটার নাচও শেষ হল আর সাথে পেছনে মেয়েটার ময়ুর আঁকাও। তারপরে Domican-দের নৃত্য।

এই নৃত্যে মেয়েটার পোশাকটা ছিল তাকিয়ে থাকবার মতোন। নাচটাও ভালো লেগেছে। এরপরে সালচা নাচ। এবং সবশেষে কার্নিভাল। আমাদের দেশের অনুষ্ঠানের শেষে ব্যান্ড দলের বাজনার মতোন বেশ কিছু বাজনা বানিয়ে শুনালো তারা।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.