আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাংস্কৃতিক গণহত্যা

প্রজন্মের হাত ধরে জাগরণের পথে ১০, ৯, ৮, ৭, ৬, ৫, ৪, ৩, ২, ১ !! শুভ নববর্ষ এই গণনার মধ্যদিয়ে ঢাকা শহরে উন্মত্ত উৎযাপনের আরেকটি রাত্রি শুরু হয়। আমরা দেখি এর আগেরদিন প্রগতিশীল নামধারী সামান্য কিছু লোক খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়ে কিভাবে রাত্রটিকে সর্বাধিক পরিমাণ উপভোগ করবে। বর্তমান যুগে উপভোগ শব্দের অর্থ কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের প্রবৃত্তি বা খায়েশ পরিপূর্ণ করা। মানুষ মদ, বেয়ার ইত্যাদি মাদকদ্রব্যাদি গ্রহণ করে এমন এক পরিস্থিতিতে পৌঁছে যায় যে সে তখন বুঝতেই পারে না সে কত বড় ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে। শহরের হোটেল বা রেষ্টুরেন্টগুলোতে অসামাজিক কার্যক্রম উন্মুক্ত হয়ে পড়ে।

তথাকথিত “আধুনিকীকরণ”- এর এই পথে শীঘ্রই আমরা মনুষত্যের সব গুণাবলী হারিয়ে ফেলব। এখন প্রশ্ন উঠে কোথা থেকে আমরা এই ধ্বংসাত্বক সংস্কৃতি গ্রহণ করছি ? নিশ্চয়ই পশ্চিমাদের কাছ থেকে। মিডিয়াগুলো দেখাতে চায় পশ্চিমা দেশগুলো হচ্ছে দুনিয়াতে স্বর্গস্বরূপ, কিন্তু পরিসংখ্যান বলে অন্য কথা। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৯০৪২৭ টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের ভাষ্যমতে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ ধর্ষণ হয় তার বিপরীতে মাত্র ১৬ ভাগ মামলা হয়।

তাহলে সঠিক সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৬৫০০০০। একই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ১৬৯২৯ টি খুন, ৪৪৫১২৫ টি ডাকাতি, ২১৭৬১৪০ টি চুরি এবং ১৪০৮৩৩৭ টি সহিংসতার মামলা পুলিশের কাছে লিপিবদ্ধ হয়েছে। আমেরিকাতে ৫০ ভাগ বিয়ের সমাপ্তি ঘটে তালাকের মাধ্যমে। এই পরিসংখ্যান থেকে সহজেই বুঝা যায় যে পাশ্চাত্য সমাজে মানুষ কিভাবে তার সীমা লঙ্ঘনের মাধ্যমে নিজের মনুষ্যত্ব হারিয়েছে। কিন্তু এই পরিসংখ্যানটি তাদের স্বাধীনতার ধারণার আলোকে খুব বেশী বিষ্ময়কর নয়।

আমরা যদি এই ধারণাটি নিয়ে সূক্ষভাবে চিন্তা করি তাহলে দেখা যায় পাশ্চাত্য সমাজে “স্বাধীনতা” বলতে বুঝায় মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন, তারা সাধ্যের মধ্যে যা কিছু আছে তা করতে পারে এবং মস্তিষ্কপ্রসূত যে কোন উপায়ে তার ক্ষুধা, যৌন ও ধর্মীয় প্রবৃত্তিগুলো পূরণ করতে পারে। যেকোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষই একমত হবে যে স্বাধীনতার এই ধারণাটি যেকোন সমাজের জন্য ধ্বংসাত্মক। স্বাধীনতার এই ধারণাটির ফলস্বরূপ দেখা যাচ্ছে পরকিয়া, ব্যভিচার, অশ্লীলতা, মাদকসেবন, মা-বাবার অবাধ্যতা ইত্যাদি পাপাচারগুলো বাড়ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে তা বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে সাংঘাতিক ব্যাপার হচ্ছে আমরা আমাদের চিন্তা চেতনার বিসর্জন দিয়ে এই পাশ্চাত্য সংস্কৃতিগুলো গ্রহণ করছি। যেসব কাজ আমরা আগে ঘৃণা করতাম এবং সমালোচনা করতাম যেমন- রঙজ্বলা, ঢিলা, ছেঁড়া জিন্স পড়া; বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক ইত্যাদি কাজ এখন আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।

আমরা যে অন্ধভাবে পাশ্চাত্যের অনুসরণ করছি তা প্রমাণের জন্য এই উদাহরণগুলোই যথেষ্ট নয় কি? আমাদের অন্য সব কাজে যেমন কম্পিউটার, মোবাইল, কার কেনা বা জীবিকা নির্ধারণের ক্ষেত্রে যতবড় তারকাই বলুক না কেন, আমরা কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় আমাদের নিজস্ব চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাই। কোন একটি সংস্কৃতি গ্রহণের ক্ষেত্রেও কি আমাদের এরকম চিন্তা করা উচিৎ নয়? আমাদের কি পাশ্চাত্য সভ্যতা অনুসরণের ক্ষেত্রে এর উৎপত্তি, লক্ষ্য ও পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই? একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি হিসেবে স্বচ্ছ জ্ঞান অর্জন করার পরই আমাদের কোন সংস্কৃতি বা ধারণা গ্রহণ করা উচিৎ। একইভাবে ইসলামের ক্ষেত্রেও আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে তা গ্রহণ করব। একজন বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে আমরা সহজেই বুঝি যে আমাদের জীবন এবং আমাদের জৈবিক বৈশিষ্টগুলো আমাদের নিজেদের সৃষ্টি নয়। এগুলো আমাদের মধ্যে সৃষ্টি করে দিয়েছেন এক মহান স্রষ্টা।

তাই যদি আমরা ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে একটি শান্তি-পূর্ণ জীবন অতিবাহিত করতে চাই এবং নিজের প্রবৃত্তি সঠিকভাবে পূরণ করতে চাই তাহলে আমাদের জীবন পরিচালনা করতে হবে সেই স্রষ্টা, আল্লাহ সূবহানাহু ওয়া তায়ালার দেয়া বিধান অনুযায়ী। নিশ্চিতভাবে এটিই একমাত্র সঠিক ও নিখুঁত পথ এবং ইতিহাসই এর উজ্জ্বল সাক্ষী। একজন মুসলিম হিসেবে আমরা যদি আমাদের বিশ্বাসের বিপরীত কোন জীবনাদর্শ অনুসরণ করি তাহলে তা দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় ক্ষেত্রে আমাদের মূর্খতার পরিচয় বহন করবে। পশ্চিমা বিশ্ব স্বাধীনতা বলতে যা বুঝায়, প্রকৃতপক্ষে তা আসলে কিছু হলিউড তারকা ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের দাসত্ব করা। ইসলাম মানুষকে সৃষ্টির দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে স্রষ্টার দাসত্বে নিয়োজিত করেছে।

ইসলামও মানুষের বিনোদন ও আনন্দের অনুমোদন দেয়, কিন্তু তা হতে হবে একটি পরিপূর্ণ পথনির্দেশ অনুযায়ী। ইসলাম পাশ্চাত্য সভ্যতার মত প্রবৃত্তি পূরণের পথ স্বাধীন করে দেয়নি, যাতে আমরা নিজের যেভাবে খুশি সেভাবে চলতে পারব। তাই একটি পরিপূর্ণ ইসলামিক সমাজে অস্বাভাবিকতা দেখাই যায় না। তাই পশ্চিমারা পরিকল্পিতভাবে তাদের সংস্কৃতিগুলো আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। থার্টি ফার্ষ্ট নাইট, ভ্যালেনটাইন্স ডে, ফ্রেন্ডশীপ ডে, নববর্ষ ইত্যাদির মাধ্যমে তারা আমাদের একটি চিন্তাহীন জাতিতে পরিণত করতে চায় যাতে আমরা তাদের কার্যক্রমগুলো অন্ধভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি।

এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পশ্চিমা ও তার সহযোগীরা মুসলিম তরুণদের বিশেষ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। তাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের সাহায্যে তারা তরুণদের মধ্যে এমন চিন্তা ঢুকিয়ে দিচ্ছে যে স্বাধীনতা, ভোগ ও ঈন্দ্রিয় তৃপ্তি এগুলোই জীবনের সবকিছু। যদি থার্টি ফার্স্ট নাইট আমাদের জীবনের সবচেয়ে মজাদার, উপভোগ্য, শ্রেষ্ঠ রাত হয় তাহলে পরের দিন আমাদের ঘুম থেকে উঠার লক্ষ্যটা কি? এখনই আমাদের মৌলিক বিষয়গুলোতে ফিরে যাওয়া উচিৎ যেমন- কোন কিছু করার আগে চিন্তা করা। আমাদের নিজেদের পরিচয় সবার সামনে তুলে ধরতে আমাদের সেই সোনালী অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া উচিৎ। একজন চিন্তাশীল ব্যক্তি হিসেবে, আমরা শুধু মিডিয়ায় বিজ্ঞাপণ দেখে কোন অহেতুক জিনিস গ্রহণ করব না।

আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা আমাদের মস্তিস্ক দান করেছেন এবং আমাদের উপহার দিয়েছেন এক মহান শক্তি - চিন্তাশক্তি। তাই আমাদের এটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিৎ। হে তরুণ! ১। আমাদের সমাজ চিন্তাহীন মানব সমাজে পরিণত হওয়ার আগে নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করঃ ২। ইসলামিক ও পাশ্চাত্য সমাজের ভেতর-বাহির জান।

৩। ইসলামিক ও পাশ্চাত্য সমাজের বিশ্লেষণ ও তুলনার মাধ্যমে ইসলামিক সমাজের সৌন্দর্য ও পাশ্চাত্য সমাজের অন্তঃসারশূণ্যতা খুঁজে বের কর। ৪। আমাদের সত্যের পক্ষে কথা বলার ও ন্যায়সঙ্গত কাজ করার সাহসিকতা অর্জন করতে হবে। ৫।

আমরা কোন সংস্কৃতি অন্ধভাবে গ্রহন না করে সম্পূর্ণ বিচার বিশ্লেষণের পর তা গ্রহণ করব। ৬। সূক্ষ পর্যবেক্ষণের পর আমরা যে সিদ্ধান্ত গ্রহন করব তা সবার কাছে নিয়ে যাব এবং তা সমাজে বাস্তবায়ন করব। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.