আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জার্ণী টু চায়নাঃ(বেইজিং)-১৫

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

জার্ণী টু চায়নাঃ(বেইজিং)-১৫ মেগা সিটি বেইজিং' এ আজ আমরা দেখতে যাব তিয়েনএনমেন স্কয়ার(Tiananmen Square), চায়না ন্যাশনাল মিউজিয়াম, টেম্পল অব কনফুসিয়াস, বেইজিং হ্যাপী ভ্যালী, ফ্রাগন্যান্ট হীল পার্ক, সামার প্যালেস, এন্সিয়েন্ট অব্জারভেটরী, ফরবিডেন সিটি সহ অনেক কিছু-অর্থাৎ যতটা সময়ে কুলায়। পাঠক, বেইজিং সিটির বিশালত্ব বোঝাতে আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি-বেইজিং সিটি পুর্ব-পশ্চিমে ১৬০ কিঃমি; এবং উত্তর-দক্ষিনে ১৮০ কিঃমিঃ দৈর্ঘ। মোট ১৮টি ডিস্ট্রিক নিয়ে বেইজিং সিটি গঠিত। এই সিটির সব দর্শনীয় স্থান ১০/১৫ দিনে দেখা মোটেই সম্ভব নয়। আমি আগেও অনেক বার এইসব বিখ্যাত দর্শনীয়স্থান দেখেছি-সেই অতীত এবং বর্তমান আলোকে এই বিষয়ে কিছু আলোকপাত করছি।

প্রথমেই আমরা যাই তিয়েনযেনমেন স্কয়ার। বেইজিং সিটির প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত বিশাল এলাকা নিয়ে তিয়েনএনমেন স্কয়ার। এর আয়তন ৪৪ বর্গ কিঃ মিঃ যেখানে একসাথে ১৫ লক্ষ মানুষের সমাগম ধারন করতে পারে। এই স্কয়ারেই চীনের জাতীয় প্যাড়েড অনুষ্ঠিত হয়। চীনের অনেক অনেক ঐতিহাসিক সৃতি বিজরিত এই তিয়েনএনমেন স্কয়ার।

১৯৮৯ সনে এখানেই চায়নার ইতিহাসে সব চাইতে ভয়াবহ সরকার বিরোধী মহাসমাবেশ ঘটিয়েছিলেন চায়নীজ স্টুডেন্ট ইউনিয়নের নেতৃত্বে সাধারন মানুষের সহযোগীতায়। যা আমরা সেই সময় দেশ বিদেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখেছিলাম। চায়না পিপলস আর্মীর হাজার হাজার সৈন্য যখন মেশিনগান আর শত শত ট্যাংক নিয়ে ছাত্র জনতার উপর ঝাপিয়ে পরেছিল তখন সাধারন একজন ছাত্র(যার নামটা এই মুহুর্তে মনে করতে পারছিনা)খালি হাতে হাত আগলিয়ে ট্যাংক এর সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোড়নের ঝড় তুলেছিলেন-সেই শান্তিবাদী ছাত্রটিকেও মেশিনগানের গুলিতে ঝাজড়া হয়ে প্রান দিতে হয়েছিল আরো কয়েক হাজার ছাত্র জনতার সাথে। সরকারি হিসেবে তখন মাত্র ২/৩ শত মানুষ মারা যাবার কথা স্বীকার করা হলে চায়নীজ স্টুডেন্ট ইউনিয়ন এবং রেড ক্রসের হিসাব মতে প্রায় ৩০০০ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল। তিয়েনএনমেন স্কয়ার এলেই আপনি দেখতে পারবেন Tiananmen Tower, Monument to the People's Heroes, Great Hall of the People, Mao Zedong Memorial Hall যা সবই তিয়েনমেন স্কয়ার সংলগ্ন।

তিয়েনএনমেন স্কয়ারের একদম উত্তর দিকে রয়েছে বিশাল উচ্চতার একটি টাওয়ার যার নাম Tiananmen Tower। এই টাওয়ার ১৪১৭ খ্রীস্টাব্দে মিং রাজা নির্মান করেছিলেন। ১৯১১ সনে রাজশাসনের পতনের পুর্ব পর্যন্ত এই টাওয়ার শুধু মাত্র রাজ পরিবার এবং খুব উঁচুস্তরের অথিতিদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত ছিল। তিয়েনএনমেন স্কয়ারের ঠিক মাঝখানে চায়নীজ ন্যাশনাল হিরোজ মেমোরিয়াল টাওয়ার অবস্থিত। মহান নেতা মাও সে তুং এই টাওয়ারের পাদদেশে নিজ হাতে চায়নীজ ভাষায় লিখেছেন যার অর্থ ইংলিশে লেখা আছে-"The People's Heroes are Immortal"।

চায়নার বিভিন্ন আন্দোলনে যে সব বীর জীবন দিয়েছে তাঁদের স্মরণে এই টাওয়ার নির্মিত। একটা জিনিশ লক্ষণীয়। তাহলো-এই টাওয়ার কয়েকশ বছর পুর্বে নির্মিত হলেও এই টাওয়ার বিভিন্ন গোষ্ঠী, সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন উপলক্ষে সম্মান জানায়। যেমন এখানে স্বাধীনতাকামী প্রানউতসরর্গকারী বীরদের জন্য সম্মান যানায় সাধারন মানুষ থেকে সরকারী সকল স্তরের মানুষ। আবার ১৯৮৯ সনের স্টুডেন্ট ইউনিয়নের আন্দোলনে নিহতদের স্মরণেও এই টাওয়ারে সম্মান জানায় দেশ বিদেশী সকল স্তরের মানুষ।

স্কয়ারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত Great Hall of the People যা ১৯৫৯ সনে নির্মিত হয়েছিল। গ্রেট হলের বর্ধিত অংশে আছে Central Hall, The Great Auditorium and a Banqueting Hall সেন্ট্রাল হল ১০,০০০ আসন বিশিস্ট এবং ব্যাংকুয়েট হল ৫০০০ আসন সংবলিত। এই হল গুলো অত্যন্ত দামী মার্বেল এবং গ্রানাইট পাথরের এবং সিলিং বিলাশবহুল ক্রিস্টাল ঝাড় বাতিতে সাজানো। চীনের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি এই হলে অনুষ্ঠিত হয়। অনেকটা আমাদের চীন-বাংলাদেশ মত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের মত।

Mao Zedong(মাও সে তুং) Memorial Hall স্কয়ারের একেবারে দক্ষিন দিকে অবস্থিত। এই হলেই মাও সে তুং এর মর দেহ একটা ওপেন কৃস্টাল কাঁচের ঘরে(কবর) রাখা আছে। মাও'র মরদেহের মুখ খানা বের করা, শরিরের অন্য সবঅংশ চীনের জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে রাখা। মনে হয় সাধারন মানুষের নেতা মাও সে তুং ঘুমিয়ে আছেন-এক্টু পরেই জেগে উঠবেন। কাঁচের ঘরের চারি দিকে নানান রঙের ফুলে শোভিত এবং সবুজ ঘাস বিসতৃত।

যদিও অনেক দূর থেকে নিস্প্রান মাও'কে দেখেও আমি তৃপ্ত। এমন একজন মহান নেতার নিস্প্রান মুখখানা অন্তত দেখতে পেরেছিবলে নিজেকে ধন্য মনে করছি। তিয়েনেনমেন স্কয়ারের ঠিক উলটো দিকে ফরবিডেন সিটির অবস্থান। ফর্বিডেন সিটি হলো প্রাচীণ চীনা সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞীদের ধংশাপ্রাপ্ত রাজপ্রাসাদ কম্পলেক্স। যা পৃথিবীর সর্ববৃহত কম্পলেক্স বলে ধারনা করা হয়।

এই প্রাসাদ ৯,৯৯৯ টি কক্ষের। যা অনেক ধংশপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানেও ৮০০০ কক্ষ সম্পুর্ন অক্ষত আছে। এই কক্ষগুলোতে সুপ্রাচীন চায়নীজ প্রত্নতাত্বিক সৌন্দর্য্য আর ঐতিয্যের প্রমান পাওয়া যায়। এই প্রাসাদের ওয়ালের উচ্চতা সাড়ে ছয় মিটার থেকে দশ মিটার পর্যন্ত। পঞ্চম শতাব্দীতে এই প্রাসাদ চীন সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক দপ্তর হিসাবেও ব্যবহৃত হতো।

১৩৬৮ খ্রীস্টাব্দ থেকে ১৬৪৪ খ্রেস্টাব্দ পর্যন্ত মিং রাজবংশ এবং ১৬৪৪ খ্রীস্টাব্দ থেকে ১৯১১ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত কুইং রাজবংশের লোকেরা এইসব প্রাসাদে বসবাস এবং রাস্ট্রীয় প্রশাসনিক কার্য্যক্রম এখান থেকে পরিচালনা করত। চায়নাতে বিশেষ করে বেইজিং যত দেশী বিদেশে পর্যটক আসেন তারা অবশ্যই ফরবিডেন সিটি দেখবেনই। আপনি যদি পয়শা খরচ করে গাইড নিতে না চান তাহলেও কোন অসুবিধা নেই। এই সিটিতে ঢোকার সময় দশ আরএমবি সিকিউরিটির বিনিময় বিভিন্ন ভাষার কিছু অডিও টেপ দেয়া হয় যা থেকে আপনি নিজেই ফরবিডেন সিটি সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন। পরের কিস্তির জন্য অপেক্ষা করুনঃ


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।