আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জার্ণী টু চায়নাঃ(হংকং)- ৩

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

জার্ণী টু চায়নাঃ(হংকং)- ৩ হোটেলে ফ্রেশ হয়ে কম্পিমেন্টারি জুস এবং বুফে ব্রেকফাস্ট সেরে নিলাম। আমার ছেলে বলছে-তাকে সিঙ্গেল রুম দিতে হবে। আমি বললাম-এখানে আগে থেকেই আমাদের জন্য আলাদা ২ বেডওয়ালা(টুইন ডিলাক্স বেড)এক রুম রিজার্ভ করা হয়েছিল-এখন আর সম্ভব নয়। তবে বেইজিং গিয়ে তোমাকে আলাদা রুম দেয়া হবে। লাঞ্চ টাইমের পর মিজ সুখসুখ আমাদের নিতে আসবেন।

আমি আমার ব্যাবসায়ীক কাজ সেরে নেবো। সাজিদ সুকসুক'র সাথে শহরের দ্রস্টব্য স্থান দেখতে যাবে। এখানে আমার দু'একদিনের কাজ। তারপর আমি নিজেই সাজিদকে সময় দিতে পারবো। শাওয়ার করে আমরা ঘুমালাম বেলা ১ টা পর্যন্ত।

আমরা লাঞ্চে কি খাব-তা হোটেল রুমে বসেই অর্ডার দেই। ডাইনিং থেকে আমাদের লাঞ্চ টাইম এবং টেবিল নম্বর কনফার্ম করে দেয়া হয়। দেড়টার সময় লাঞ্চ করতে যাচ্ছি। রুম থেকে বের হয়েই দেখি বিশাল দেহী খেমা আবাচা দাঁড়িয়ে-সাথে একজন হাস্যময়ী সাদা লেডী। হাতে ল্যাপটপ ব্যগ।

লেডীকে দেখিয়ে বলল-মিজ (কিছুটা বিদ্গুটে নামটা মনে নেই), আমার সেক্রেটারী। মিজ --- আমার দিকে হাত বাড়ালো হ্যান্ড শেখ করতে...। আমি ওদেরকে দেখে মোটেই খুশী হইনি বরং প্রচন্ড বিরক্ত! মিঃ খেমা আমার সাথে হ্যান্ড শেক করে বললোঃ- Mr. Kabir, I have some important talk with you. আমিঃ-We are going for lunch now. খেমা:- I haven't take my lunch yet .Lets have it altogether. আমি খুব বিরক্ত হয়ে বললাম- I don't even know you So there is no necessity to talk with you. Leave us alone as I want to pass some moments with my son. নাছোরবান্দা খেমা বললো- Give me sometime then you can understand whether I can come any use to you or not. কথা বলতে বলতে আমরা ১৬ তলা থেকে ১০ তলায় চলে আসি "রিং লে" ডাইনিং হলে। আমাদের জন্য নির্ধারিত মুখোমুখি দুই সীটের একটা টেবিলে বসে। খেমা চলে যাচ্ছেনা।

সে তার সেক্রেটারীকে নিয়ে কিছুটা দূরে অন্য একটা খালি টেবিলে বসেছে। আমরা খাবারের অপেক্ষা করছি-এমন সময় খেমা আমার জন্য একটা দামী ইটালীয়ান/ব্রাজিলিয়ান ওয়াইনের বোতল(Vinho Verde pair) নিয়ে এলো। আমি বিনয়ের সাথে জানালাম-আমরা এল্কোহোলিক নই। খেমা জিব্বাহ কামড়িয়ে লজ্জা পাবার ভান করে "সরি, সরি ব্রাদার, আই মুস্লিম, ইউ মুস্লিম...ওয়াইন ইজ ভেরী ব্যাড"-বললো! লোকটা যে মুসলিম নয়-তা আমি বুঝেছি ওর গলায় ক্রুশ দেখে। মিঃ খেমা অনেক বার সরি বলে ওয়াইনের বোতল নিয়ে গেলো।

এবার সে বড় সাইজের দুটো ফরাসী "স্পা" ব্রান্ডের ড্রিংকিং ওয়াটার বোতল নিয়ে এলো। আমি এবার বিরক্ত হয়ে বললাম- Mr Khema, Don't disturb us while we are eating. খেমাঃ Ok, no problem. I will be waiting for you. আমরা খাচ্ছি আর লক্ষ করছি খেমাকে। খেমা আমাদের দিকে বার বার তাকাচ্ছে-আর পিপাসার্ত মানুষের মত ঢকঢক করে পানির বদলে মদ গিলছে। মাঝে কয়েক বার মিঃ খেমার সাথে একজন লোক (চেহারা এবং পোশাক দেখে পাকিস্তানী মনে হয়)কথা বলে দূরে চলে যাচ্ছে। আমার ছেলে চিকেন, শ্রীম্প খেতে লাইক করে, অনেক খেতেও পারে-কিন্তু সে কিছুই খাচ্ছেনা, শুধু খাবার নিয়ে নাড়াচরা করছে।

আমি মনে মনে কিছুটা ভয় পাচ্ছিলাম-কোন অজানা আশংকায়! ছেলে হঠাত বললো-"আব্বু, তুমি কি পারবে ঐ লোকটার সাথে শক্তিতে"? আমি বুঝতে পারলাম-আমার ছেলেও ভয় পাচ্ছে মনে মনে। কোন ভাবে আমাদের খাবার শেষ হবার সাথে সাথে খেমা আবাচা তার সেক্রেটারীকে নিয়ে দু'টো চেয়ার টেনে আমাদের টেবিলে জয়েন করলো। অনেক্টা জোড় করে আমাদের খাবারের বিল দিতে চাইলো। আমি তাকে জানতে চাইলাম- Mr. Khema, what's your problem? Why don't you leave us alone? খেমা বল্লো-"মাই মুস্লিম ব্রাদার" Let's go to your room. I've many secrets to tell you...... আমি বললাম- I won't go to room if you have something to tell me plz tell me here. আমি হংকংস্থ্য আমাদের বিজনেস এজেন্টকে কল করলাম। ওখান থেকে মিঃ টমি ইয়াংবো জানালো-মিজ সুকসুক অলরেডি তোমাদের নিতে তোমার হোটেলে চলে গিয়েছে......।

আমি কিছুটা সাহস পেলাম। আমি খেমাকে আমার রুমে নিতে চাইনা বলে সে কিছুটা মন খারাপ করল। ব্যার্থ মনোরথ হয়ে ডাইনিং হলে বসেই আমাকে সে যা বলেছিলো-তার মর্মার্থ হলোঃ- খেমার ভাই জেনারেল ফেড্রিক আবাচা একজন নাইজেরিয়ান সেনাবাহিনীর জেনারেল এবং সেনা সরকারের মন্ত্রী। ব্যাগ থেকে একটা ফটো এল্বাম বের করে জেনারেলের পোষাক পরা কয়েকজনের ছবির সাথে নিজের ছবি দেখালো। বিশাল বাড়ির ছবি দেখিয়ে কোনোটা তার বাসস্থান, কো্নোটা তার অফিস হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিল।

কয়েকজন সাদা চামড়ার মানুষের ছবির সাথে নিজের ছবি দেখিয়ে নানান পরিচয় দিতে থাকলো! খেমা বল্লো- তার ভাই জেনারেল ফ্রেড্রিক আবাচা... তেল রপ্তানীর কমিশন বাবদ প্রচুর অবৈধ টাকা(খেমার ভাষায় প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার প্লাস) উপার্যন করেছে। ইন্টারন্যাশনাল মানি ল্যন্ডারিং'এর তত্বাবধানে বর্তমানে নাইজেরিয়ান সরকার সেই অবৈধ টাকা বাযেয়াপ্ত করতে শুরু করেছে। টাকাগুলো রক্ষা করার একমাত্র উপায় ভিন দেশে বিনিয়োগ। নাইজেরিয়াতে বিনিয়োগের যথেষ্ঠ সুযোগ নেই এবং বিনিয়োগ নিরাপদ নয়। বাংলাদেশের মানুষ খুব ভালো।

এখানে বিনিয়োগের যথেষ্ঠ সুযোগও আছে। সে বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে এসেছে। কিন্তু তেমন কাউকে চিনেনা বলেই বিনিয়োগ বিশয়ে এগুতে পারেনি। আমাকে তার খুব পছন্দ হয়েছে"। মিঃ খেমা'র লেডি সেক্রেটারী আগ-বাড়িয়ে আরো জানালো-ইতোমধ্যেই তারা দুবাই এবং লন্ডনে কয়েক বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করেছেন।

আমি খেমাকে প্রশ্ন করলাম- Mr. Kheyma, what's the reason behind selecting me?? খেমা বললো- "You are in good terms with Station Manager of the Dragoon Air as well as Flight Captain. Certainly you are a big merchant. So I have decided to make business with you. You are my business partner. Take my money as soon as possible. I am issuing you a bank cheque. I will go to Dhaka along with you"-ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বললাম- Listen Khema, I have been hearing dozens of story like your one since many years from the Nigerians. In our country so many businessmen lost there everything being greedy. I don't wanna be a billionaire within a short span of time. I'm a hardworking businessman. I'm happy whatever I earn by dint of my hard work. Neither I know the amount of taka of 9 billion dollar nor my 14th generation knows it.. find your own way. আমি চোখ মুখে দৃঢ়তার সাথে এবং কিছুটা উত্তেজিত ভাবে বললাম-" Khema, don't even dare to do such mischief to any Bangladeshi. You will have to pay in the long run. "। আমার কথা শুনে কুঁচকুঁচে কালো বর্ণের বিশালদেহী মিঃ খেমা ঘেমে যাচ্ছেন! কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে হঠাত উঠে চলে যেতে শুরু করল। আমি পিছনে ডেকে বললাম-মিঃ খেমা তোমার পানির বোতল... নিয়ে যাও। খেমা পানির বোতল নিয়ে হনহন করে চলে গেলো।

পাঠক, অনেক নাইজেরিয়ান প্রতারক বহুদিন যাবত আমাদের দেশে এমন বিলিয়ন ডলারের কাহিনী ফেঁদে প্রতারনা করে যাচ্ছে। এরা প্রথমে কারো ইমেইল এড্রেস সংগ্রহ করে যে কাউকে ইমেইল করবে একই কাহিনী বলে। দুর্বল চিত্তের এবং যারা হঠাত বড়লোক হতে চায়-তারা বিশয়টা নিয়ে খুব গোপনে প্রতারকদের সাথে যগাযোগ করে। প্রথমে প্রতারক ঢাকায় আসে। দামী হোটেলে ওঠে।

ব্যাবসায়ীক নিয়ম মত হোটেল বিল,খাবার বিল ট্রান্সপোর্ট সব লোকাল ব্যাবসায়ী পে করে। প্রতারক বিভিন্ন দুতাবাস, ব্যাংক সহ বিভিন্ন যায়গায় ঘোরাঘুরি করে। স্থানীয় ব্যাবসায়ীর অফিস থেকেই ইমেইল সেন্ড করে লন্ডন, নাইজেরিয়া, দুবাই, হংকং সহ বিভিন্ন যায়গায়। লোকাল ব্যাবসায়ীর ই-মেইল এড্রেসে ই-মেইলে রিপ্লাই আসে-সব কিছু রেডি। বিশ্বাস পোক্ত করার জন্য ঢাকাতে বিদেশী ব্যাংকে জয়েন্ট একাউন্ট করে, কখোনো সিঙ্গেল নামেই একাউন্ট ওপেন করায়।

কিছুদিন থাকার পর বলে কাগজপত্র সব রেডি-এবার টাকা আনতে হবে। কিন্তু ইতোমধ্যেই নাইজেরিয়ান প্রতারকের পকেটের টাকা ফুরিয়ে যাবে। প্রতারক লোকাল ব্যাবসায়ীকে বলবে-হংকং/ দুবাই কিম্বা অন্য যেকোন ব্যাংক থেকে বিলিয়ন ডলার রিলিজ করতে ২০/৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিতে হবে সেই টাকা লোকাল ব্যাবসায়ীকেই দিতে হবে-যা পরবর্তীতে এডজাস্ট করা হবে। প্রতারক নিজে কোন টাকা নিবেননা-সব কোন এক বিদেশী ব্যাংক একাউন্টে জমা করতে হবে। অতিলোভী ব্যাবসায়ী নাইজেরিয়ানকে অনেকগুলো ডলার দেবে-তারপর “খেমা আবাচারা” উধাও হয়ে যাবে।

এই হলো খেমা আবাচাদের বিলিওন ডলার ইনভেস্টমেন্ট কাহিনী। আমাদের দেশে অনেক উঠতি দুর্বল চিত্তের অতি লোভী ব্যাবসায়ী নাইজেরিয়ান্দের হাতে ধরা খেয়েছে। এধরনের কতিপয় নাইজেরিয়ান প্রতারকদলের সাথে কিছু পাকিস্তানী, নেপালী এবং হংকং’র অধিবাসী জড়িত। পরের কিস্তির জন্য অপেক্ষা করুনঃ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।