আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুনর্পাঠ : নির্মল হালদারের কবিতা

সাহিত্যের ছোটকাগজ

নির্মল হালদার গরামথান চৈতু মাহাত-র ছেলে তুই কি সুন্দররে দেখতে আমাকে ভালোবাসবি? কে বলছে কাকে, পাখি কী বললো গাছকে, গাছ কী বললো মাটিকে, যে যা-ই বলুক, সবাই সুন্দর। তাই তো চৈতু মাহাত-র চোখে ধান-গম, আলু-বেগুন বাছুরের হামলে-ওঠা, মুর্গির লাফানো ছাগল-ছানার তিড়িং-বিড়িং আমিও কী আছি, কে জানে ৩. ফুটলো ঝিঙা ফুল সাঁঝ বেলায় ফুটলো ঝিঙা ফুল। আমার ফুল আমার ঘরে থাক তোর ফুল তোর ঘরে থাক আমার গরব আমারই তোর গরব তোর- আমার গা থেকেও গন্ধ ওঠে ফুলের, তোর গা থেকেও ফুলের গন্ধ আমরা আনন্দ ৪. সেই চন্ডীমণ্ডপ, বটতলা তো আর নাই হুঁকাও নাই আমাদের খানিক রাস্তার মোড়ে, খানিক পান-দোকানে আরে বাপু কথা তো বলতে হবে পান খেয়ে হোক বিড়ি ধরিয়েই হোক, কথা যে বলতে হয় জিরিয়ে নিতেও হয় কোনো নিশান নাই আমাদের শুধু পুব আর পশ্চিম আলো জ্বলা আর আলো নিবা তার ভিতরেই সুখ-দুঃখ, তার ভিতরেই শুয়ে-পড়া অবিকল এক মানুষ প্রায় নুয়ে-পড়া রোদ থেকে বাঁচতে ছায়া খুঁজছে ৫. লাঙলে মরচে পড়লে জমিও অফলা- লাঙল ও জমি দুই-ই দেবতা আমাদের আমরা গড় করি আমরা ধার দি লাঙলের ফলায় মাটিকেও মাটি রাখি গোবর দিয়ে ৬. নুনা কাঁদছে ঘরে। নুনার মা বাসন মাজছে ঘাটে কান্নার কাছে এসে দাঁড়ায় একটা শালিক একটা চড়–ই। কান্না থেমে যায় ওদিকে ডাকছে কেউ, নুনার মা নুনার মা... পাখি উড়ে যায় শুরু হয় আরও কান্না একটা কাক উড়তে থাকে কান্নাকে ঘিরে ৭. ধান এসেছে ঘরে ঝাড়াই-পেটায় হলো, বাঁধাও হলো।

কতক ধান সিদ্ধ হচ্ছে, নতুন চালে পিঠে গড়া খেদও শোনা যায় পিসির মুখ থেকে সবইতো হলোরে, ধানের ছড়া দুয়ারে দুয়ারে বাঁধলি না এবার আসতে-যেতে মাথায় ঠেকবে আসতে-যেতে আশীর্বাদ ওই আমাদের দুয়ারে বাঁধা ভগবান ৮. মাগো মা সরষে বুনেছি ভাইরে ভাই সরষে বুনেছি ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিব ভালোবাসায় ভরিয়ে দিব কলসি কলসি তেল মাগো, পিঠা ছাঁকবি লুচি ছাঁকবি বহিনরে, ফুর্তিতে খাবি বাপগো, মজাসে খাবি ভাইরে, সরষে ফুলে আঁধার ঘুচাবো ৯. ধানগাছের তো আয়না নাই আমাকেই দেখাতে হয় সে কত বড় হলো আমাকেই দেখতে হয় তার রোগজ্বালা আশ্বিন-কার্ত্তিকের হাওয়াতে দুধ জমে ধানে আমাকেই বলতে হয় সে তখন লজ্জাবতী মুখ নামায় মাটিতে এ কথাগুলি শুনতে শুনতে মনে হলো, ধানগাছের হয়ে-ওঠার ভিতরে আমি যদি থাকি মাখামাখি করবে কী আমার হৃদয়? ১০. সুপারি কাটতে জাঁতিটা লাগে পিতলের জাঁতিটা কই পানের বাটা তো কবেই গেছে দোক্তা ভাজার পাট কবেই চুকেছে পানের রঙে রাঙানো ঠোঁট কেউ দেখে না আর জাঁতিটা তো লাগবেই আশালতা যে দেখাতে চায় মনটা কেটে কেটে মনের কাছেই রাখা ১১. আকাশে দু-একটি তারা তখনও জেগে কুকুরও ডাকছে এদিক সেদিক অঘ্রানের অন্ধকার-কুয়াশা ঠেলে এগিয়ে আসছে খোল-কীর্তন হারমোনিয়ামের সুরে: রাই জাগো রাই জাগো শুকসারি বলে...। পরের পংক্তিটি মনে মনে গেয়ে ওঠে অনিলের মা দোহারের মতোই; কত নিদ্রা যাও গো রাধে শ্যামনগরের কোলে...। অনিলের মায়ের বাঁ-হাতে জলের ঘটি ডানহাতে গোবর ভোরের মাডুলি দিতে হবে দুয়ারে পুনর্বার তুমি অশ্র“চ্যুত হলে আর আমি অশ্র“পীড়িত। পীড়িতের কাছেই ভিক্ষা চাও, পুনর্বার আঁখিজলে হও জীবিত ভিখিরি ভিক্ষে দিলেই ভিক্ষে পাই যা চাইবো জল মাটি আগুন যা চাইবো আলো হাওয়া, কল্যাণ তোকে পাবো বলে দশ গাঁয়ে যাওয়া, যদি আমার ঝুলিতে পড়ে এক মুঠো তুই জ্যৈষ্ঠ কেহ থাকে না এ সকালে পাখি বসিয়াছে শুকনো ডালে রোদ আসিয়াছে উঠানে তোমার মন কি জানে এই রৌদ্রের নাম যদি বলি ঘাম তুমি কি পাইবে সুগন্ধ এই জ্যৈষ্ঠেরও আছে থরে থরে ছন্দ অন্বয় দিনের আলো ফুরিয়ে এলে একটি কলসি ভেসে ওঠে হাড়াই নদীতে তখন নদী ঝলমল ঝলমল তখন নদীর নয়নে কাজল কে থাকে হাড়াইয়ের পারে আমি আঁধার খুঁজি আঁধারে আঁধারের ভূমিকা বাঁশি বাজায় আর নদীর দিকে যায় জীবনের স্বাদ কেন যে আসিল সে কান্না এলো অবশেষে এই কান্না অনেক দূর যায় সাগরে মিলায়। সাগরও উথলে ওঠে জীবনের স্বাদ লাগে ঠোঁটে আমার উদ্দেশে নীরবতা, তাহার নীরবতা।

আকুলতা, আমার আকুলতা। আমি কল্পনির্ঝর আমারই জ্বর জ্বরের ভিতর রামধনু উঠিল কে একজন মুঠি খুলিল আমলকি তো নাই আমি যাই সমুদ্রের তলদেশে আমার উদ্দেশে আমি তোমাকেই চাই ___________________ অর্কিড ৪-এ প্রকাশিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.