আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর সিলেট বিভাগের ২য় শহীদ হাফিজ উদ্দিন, বরচর, হবিগঞ্জ জেলা_শহীদদের জীবন ও যুদ্ধ পর্ব ২


শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ উদ্দিন ও মহফিল হোসেনের জোড়া সমাধি। মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হাফিজ উদ্দিন শহীদ হন ৪ এপ্রিল ১৯৭১ সালে। তার বাড়ী সায়েস্তাগঞ্জ থেকে প্রায় দুইকিলোমিটার উত্তরে হবিগঞ্জ-সায়েস্তাগঞ্জ পাকা রাস্তার পশ্চিম দিকে অবস্থিত বরচর গ্রামে। হাফিজ উদ্দিন ছিলেন মোজাহিদ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর হবিগঞ্জে প্রতিরোধ যুদ্ধ প্রস্তুতীর সময় তিনি অন্যান্য মোজাহিদদের সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

ঐ যুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অবঃ) এম.এ.রব এবং কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, আর রণাঙ্গনের অধিনায়ক ছিলেন মেজর জেনারেল (অবঃ) সি.আর.দত্ত। ৪ এপ্রিল শেরপুরে কুশিয়ারা নদী অতিক্রম করে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করে পাকিস্তানী সৈন্যদলকে সাদীপুরে। দুদলের মাঝখানে ছিল একটি নদী। তুমুল যুদ্ধের মাঝে একদল অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা একটি নৌকা করে সাদীপুর যেতে চেষ্টা করে। তাদের কভারিং ফায়ার দেয়ার জন্য হাফিজ উদ্দিন পজিশন নিয়েছিলেন নদীতীর সংলগ্ন মসজিদের মিনারে।

শত্রুপক্ষ তাকে দেখে ফেলে এবং স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রদ্বার তার প্রতি গুলি বর্ষণ শুরু করে। হাফিজ উদ্দিন পাল্টাগুলি চালান। কিন্তু হঠাৎ একটি গুলি তাকে দীর্ণ করে চলে যায়। তিনি মসজিদের মিনারের পাদদেশে পড়ে যান এবং সেখানেই ত্যাগ করেন শেষ নিঃশ্বাস। হাফিজ উদ্দিনের ভায়রা লাল মিয়া জানান, যুদ্ধের আহ্বানে তিনি উড়ের ভাত (বাড়া ভাত) ফেলে মোজাহিদ বাহিনীতে যোগদানের জন্য চলে গিয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের অপর শহীদ মহফিল হোসেনের সাথে পাশাপাশি করে বরচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় হাফিজ উদ্দিনকে কবরস্থ করা হয়। উভয়ের কবর পাকা করে প্রতি বছর বিজয় দিবসে পুস্প অর্পণ করা হয়। শহীদ হাফিজ উদ্দিনের বাড়ী বরচর প্রাখমিক বিদ্যালয়ের উত্তর দিকে প্রায় ২০০ গজের মধ্যে। আধাপাকা এ বাড়ীর মূল মালিক ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত, তিনি ভারতে চলে গেলে হাফিজ উদ্দিনের শ্বশুড় আব্দুছ সোবহান চৌধুরী সেখানে বসবাস শুরু করেন। হাফিজ উদ্দিনের পিতা কমর উদ্দিন রেলে চাকুরীর সুবাদে সায়েস্তাগঞ্জ জংশনে কর্মরত থাকায় এ বাড়ীতেই বসবাস করতেন ভাড়াটিয়া হিসাবে।

এ সুত্রে হাফিজ উদ্দিন বিয়ে করে শ্বশুড় বাড়ীতেই থেকে যান। হাফিজ উদ্দিনের পৈত্রিক গ্রাম ছিল ভারতের আসাম রাজ্যের বদলপুরে। হাফিজ উদ্দিন শহীদ হওয়ার পর তার স্ত্রী নবাবের মা কিছুদিন পর মৃত্যুবরণ করেন। তাদের কোন সন্তানাদি ছিল না। বর্তমান ভিটায় হাফিজ উদ্দিনের ভায়রা মোঃ লাল মিয়া সস্ত্রীক বসবাস করছেন।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.