আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাতাসে লাসের গন্ধ!!!!!!!!!

আগামী প্রজন্মের জন্যে স্বপ্নের বাংলাদেশ রেখে যেতে চাই।

গত শুক্রবার ময়ালার বাগাড়ে বস্তাবন্দী মানুষের হাড় উদ্ধার হয়েছে। ঠিক কত সংখ্যাক মানুষের হাড় এনিয়ে বিভ্রন্তি চারদিকে? উদ্ধারকারী টুকাইদের মতে লাশের সংখ্যা ১০ এর বেশী হলেও পত্রিকা ওয়ালারা গননা শুরু করে ২ থেকে সর্বোচ্চ গিয়ে শেষ হয় ৭-৮এ। যেন সংখ্যা যত কম দেখানো যায় তাতেই যেন মঙ্গল। কিন্তু এ হাড় গুলি কিভাবে এখানে এলো বা কিভাবে মারা গিয়েছে এরা বা তারা গুপ্ত হত্যার শিকার কিনা এরকম গুরুত্বপুর্ন প্রশ্নের উত্তর খোজার দায়িত্বশীলতা কারো নাই।

এ দায়িত্বশীলতা না থাকার দুটা কারন থকতে পার। এক হতে পারে এ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে তারা সরকারকে বিব্রত করতে চায় না। দুই হতে পারে বাংলাদেশের জন্যে এটি স্বাভাবিক কোন ঘটনা যা পত্র পত্রিকায় লেখা লেখির প্রয়োজন নাই। কারন যদি দ্বিতীয়টা হয় তবে তবে নিঃসন্দেহে বলা চলে বাংলাদেশ বর্বর যুগে ফিরে গেছে। আর যদি প্রথমটা হয় তবে বলা চলে রাষ্ট্রের বাকী তিনটা স্তম্বের মত এটিও ভেঙ্গে চুড়ে মাটিতে মিশে গেছে।

আমার মতে বাংলাদেশ বর্বর যুগে ফিরে গেছে। কারন বাংলাদেশের গনমাধ্যম কিছুটা হলেও তাদের দায়িত্ব পালন করছে। গনমাধ্যম তখনই দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ হয় যখন সংবাদটা সরকারকে বিব্রত করবে। ৭২-৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের সময়েই গুম-গুপ্তহত্যা আতংকে ভুগছে দেশ। হারিয়ে যাচ্ছে চির চেনা মুখ গুলি, আবার যেখানে সেখানে মিলছে লাশ।

হায়েনার হিংস্র ছোবলে ছিন্ন ভিন্ন মানব দেহটি কার চেনা মুসকিল। তাই প্রতিদিনই বড় হচ্ছে বেওয়ারিশ লাশের মিছিল। গুম-গুপ্তহত্যার আশংকা থেকে আমরা কেউই মুক্ত নই। কিংন্তু প্রতিকার কে করবে? কারন যাদের (সরকারী দল) প্রতিকার করার কথা তারাইতো স্বউদ্যোগে গুম-গুপ্তহত্যার পুনঃপ্রবর্তন করেছে। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত দলীয় নেতা কর্মীদের ঢালাও দায়মুক্তি দিয়েছে।

দায় মুক্ত করেছে বিভিন্ন হময় এক বা একাধিক হত্যার দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত ২২ জনকে। সেই সাথে বেড়েছে কারাগারে পুলিশ হেফাজতে মৃতের সংখ্যাও। রোমানা মঞ্জুর কারগারে থাকা অবস্থায় পুলিশি নির্যাতনে নিহত হন শমিক নেতা বিএম বাকী। পুলিশে হেফাজতে নারী নির্যাতনের মামলায় গ্রেফতার হওয়া হাসান সাঈদ নিহত হয়েছে। এ মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়া হয়।

মনে রাখতে হবে ১০ থেকে ৩০ খুনের মামলার প্রধান আসামীর ক্রসফায়ার আর শ্রমিক নেতা বা সাধারন নাগরিকের পুলিশ হেফাজতে নিহত হওয়া এক না। ১ফেব্রুয়ারী ২০১০ ঢাবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের হালুয়া রুটির লড়াইয়ে নিহত হয় সাধারন ছাত্র আবু বকর। সারা দেশ চেয়েও পায় আবু বকরের বিচার পায় নি। কারন খুনিরা আওয়ামী লীগের কর্মী, ঐ যে শুরু আর বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে বর্বর যুগে প্রবেশ করে ২০১০ সালের ২৫ জুন।

বিরোধী দল বিএনপির আহবানে ডাকা হরতালের দুদিন আগে সিটি কমিশনার চৌধুরী আলমকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায় তার বাসার খুব কাছ থেকে। শুরু হয় বাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুম গুপ্তহত্যার কালো অধ্যায়। পুলিশের সাথে এই হত্যাযজ্ঞে শামিল হয় আওয়ামী দলীয় সন্ত্রসীরাও। চলে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য হত্যাযজ্ঞ। বিএম বাকের, আবু বকর, সানাউল্লাহ নূর বাবু, সাগর-রুনি, ইলিয়াস আলী, বিশ্বজিৎসহ নাম না জানা হাজারো ব্যাক্তি প্রকাশ্য কিংবা গুপ্তহত্যার স্বীকার হয়েছেন।

আবু বকর থেকে বিশ্বজিৎ রাজনীতিক, সাংবাদিক, সাধারন মানুষ সবার একই দশা বিচার পান নি কেউই। ১৮ এপ্রিল ২০১২ দেশের অন্যতম শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যাক্তত্ব ইলিয়াস আলী রাজধানী থেকে নিখোজ হলে টনক নড়ে মিডিয়ার। শুরু হয় ইনভেস্টিগেশন এনটিভি এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে পুরো দেশ দেখে আশুলিয়া মহাসড়কের দুই ধারে পড়ে থাকা বেওয়ারিশ লাশের চিত্র। "গত পাঁচ বছরে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের হিসেবে বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা আট হাজার। রাজধানীর তুরাগ, ধলেশ্বরী, বুড়িগঙ্গা, বিভিন্ন ডোবা, মহাসড়কের পাশ থেকে বেশীর ভাগ লাশ সংগ্রহ করা হয়।

পৈশাচিক কায়দায় খুন করার কারনে চেহারা সনাক্ত করা যায় না বলেই এদের শেষ পরিচয় বেওয়ারিশ লাশ"। চিত্র ১১আগস্ট২০১২ প্রথম আলো ৫০ গুপ্ত হত্যা মুন্সি গঞ্জের যেখানে সেখানে পাওয়া যাচ্ছে লাশ। মানব জমিন ১৭ এপ্রিল ২০১৩ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন: মানব কন্ঠ ২ জানুয়ারী ২০১৩: বিদায়ী বছরের শেষ দিনে ১৪ হত্যাকান্ড, রাজধানীতে ৪। বংলা নিউজ ১৫ জুন ২০১৩: এ সরকারের ৪বছরে গুম ৮৭ অধিকার। মানব জমিন ২৪ ডিসেম্বর ২০১১: ৬ মাসে খোজ মিলেনি ব্যাবসায়ী তপন দাসে।

প্রথম আলো ২২ জুলাই ২০১২: যশোরে ৮০ দিনে খুন ৩৭। ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ দিনকাল: গুম-অপহরন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদে সই করতে বাংলাদেশের গড়িমশি। প্রথম আলো ২০ এপ্রিল ২০১২: সাতাশ মাসে নিখোজ ১০০- আইন শালিস কেন্দ্র। প্রথম আলো ২১ এপ্রিল ২০১২: বিএনপি নেতাদের একা চলতে মানা। প্রথম আলো ২২ এপ্রিল ২০১২: গুম হত্যার কিছু ঘটনায় আইন শৃংখলা বাহিনীর সম্পৃক্ততা পেয়েছি- মিজানুর রহমান।

মানব জমিন ২০ জুলাই ২০১২: কর্নফুলীতে ছয়মাসে ৪০ লাশ। আমার দেশ জানুয়ারী ২০১৩: দীর্ঘ হচ্ছে গুম-গুপ্তহত্যার তালিকা দীঘ হচ্ছে। ৬সেপ্টেম্বর ২০১২ মানজমিন: ঢাকার কিলিং জোন শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের অংশ বিশেষ "অজ্ঞাত লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। গত জানুয়ারী থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ৭ মাসে ৬৫৯ টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এর সবগুলিই আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দফন করা হয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখ্যোগ্য লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ঢাকার উপকন্ঠের বিভিন্ন স্পট হতে। সাভারের প্রস্তাবিত ট্যানারী এলাকা, মিরপুর বেড়ীবাধ, বিমানবন্দর হতে টঙ্গী পর্যন্ত রেল পথের দুইপাশ, কামরাঙ্গীর চর, বুড়িগঙ্গা, তুারগ ধলেশ্বরী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে। এলাকা বাসী এসব পয়েন্টকে কিলিং জোন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে"। মানুষে প্রথম অধিকার তার বেচে থাকার অধিকার, এরপর আসে মৌলিক পাঁচ অধিকার। একজন যদি বেচে থাকারই অধিকারই না পায় তবে অন্যান্য অধিকার নিয়ে কথা বলে লাভ কি? বাংলাদেশে বেচে থাকার অধিকার যে কতটা সংকীর্ণ তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়া লাগে না।

প্রয়োজন নিজের ভেতরের পশুত্বকে ঝেড়ে ফেলা মানুষের মত আশেপাশের তাকিয়ে দেখা এর বেশী কিছু না। এখানে প্রতি নিয়তই কেউ না কেউ বাতাসে মিশে যান। হায়েনা হিংস্র থাবায় দেশের মানুষ বাচতে চায়। রাজনীতিক, ব্যাবসায়ী, সাংবাদিক, শিল্পপতি, সাধারন মানুষ সবার এক দাবী "চাই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি"।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।