আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাশের তিনি কে ছিলেন?

কোন একদিন.. এদেশের আকাশে... কালেমার পতাকা দুলবে, সেদিন সবাই ... খোদায়ী বিধান পেয়ে দু:খ বেদনা ভুলবে..

বেরুতে বেরুতে বেশ দেরীই হয়ে গেল। বারোটায় ক্লাশ সময়মত ফিরে আসতে হলে অবশ্যই ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে বেরুনো উচিত ছিল। শেষ পর্যন্ত ১০টা নাগাদ ঘর ছাড়লাম। মামাত ভাইয়ের হোস্টেলে যেয়ে কিছু টাকা দিয়ে ফিরতে হবে বারটার মধ্যেই। দশ মিনিট হেঁটে বাড্ডা লিংক রোডের বাস কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়ালাম।

দিলনা, টিকেটওয়ালা বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট এর টিকিট দিলনা। প্রচন্ড ভীড়, গাড়ি আসছেই পুরো ভরে। টিকেট কেটে কে আর বাসে উঠতে পারবে, এই ভেবে কাউন্টারম্যান টিকেট ছাড়ছে না। উল্টো দিকে হাঁটা দিলাম। ভাবলাম ঠিক আগের কাউন্টারে গেলে হয়তো কোনমতে বাসে উঠা যাবে।

হাঁটতে হাঁটতে কিছুতেই আর কোন কাউন্টার খুঁজে পেলামনা। তবু থামলাম না, যেতে যেতে বনশ্রী চলে এলাম। গা ঘেমে একাকার। ওখানে একটা টিকেট কাউন্টার পেলাম, টিকেট নিলাম, কিছুক্ষন পর বাসে চড়ে দাঁড়ালাম। প্রায় দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে সিট পেলাম।

চলতে চলতে বাস লিংক রোড এসে থেমে দুএকজন যাত্রী নিল। এদিকে বই বের করে ক্ষানিক মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছিলাম, কয়েক পাতা উল্টিয়েই বন্ধ করে রাখলাম। মাথাটা কেমন যেন ব্যাথা করছিল। চোখ বন্ধ করে, মাথাটা সামনের সিটের পেছনটার সাথে ঝুঁকিয়ে রাখলাম। বেশ আরাম অনুভব হচ্ছিল।

কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর, একটু চোখ খুললাম, দেখলাম এক জোড়া জুতা। সৌখিন জুতার মালিকের পা-ও দেখতে পেলাম। জুতোটা মেয়েদের, মালিকও নিশ্চয়ই কোন মেয়েই। উনার পোষাকটার নিচের অংশ দেখেই বুঝলাম পোষাকটা একটু ওয়েস্টার্ন। সে যাই হোক, আমি পুরুষ হয়ে বসে আছি, আর আমার পাশে একজন নারী দাড়িয়ে থাকবে এটা অশোভন দেখতে।

অন্তত: এমন ঘটনা আমার জীবনে দুএকবার ঘটেছে কিনা মনে নেই। আজ কেন যেন সিটটা ছাড়তে ইচ্ছে হলনা, মাথা ঝুঁকিয়ে রেখেই স্বার্থপরের মত বসে রইলাম। আরো পাঁচ মিনিট পর আমার ডান পাশের যাত্রী উঠে পড়ল। তাঁকে বেরুতে সাহায্য করলাম। উল্লেখ্য আমি বাসের ডান পাশের সিটে বসেছি, আর এ সিটগুলোতে তিনজন করে বসতে পারে।

মাঝখানটা খালি, সরে গিয়ে ফাঁকা জায়গা পুরন করলাম। অর্থাৎ আমার বাম পাশটা খালি, তবে কয়েক সেকেন্ড পরই ঐ জুতার মালিক বসে পড়লেন সেখানে। জুতাটা আর দেখা যাচ্ছে না। তিনি একটা কালো স্কার্ট পরেছেন, আর খুব সম্ভব সাদা টিশার্ট। অবশ্য টিশার্ট পরেছেন না অন্যকিছু পরেছেন এটা আমার অনুমান মাত্র, কারন আমি একটু মাথাটা বাঁয়ে ঘুরিয়ে তাঁর রূপ দেখার সাহস করতে পারলামনা।

মাথাটা আগেরমত ঝুঁকিয়ে রাখাটাও মুশকিল হয়ে গেল, তাই বইটা আবার খুললাম। পুরো রাস্তায় (যতক্ষন তিনি বাস থেকে না নামলেন ততক্ষন) বইয়েই মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করলাম, চেষ্টাটা সফল ছিল, পুরো এক চাপ্টার পড়া হয়ে গেছে। পাশের উনিও একটা বই পড়ছিলেন, বই ধরা হাতটার কনুই প্রায়ই বাসের নড়াচড়াজনিত কারনে আমার পেটে মৃদু আঘাত করছিল। সেই আঘাত প্রত্যেকবারই আমার হৃদপিন্ড পর্যন্ত পৌছে যাচ্ছিল। হার্টবিটেও বেশ গন্ডগোল হতে লাগল।

কেন জানি মেয়েদের চেহারার দিকে তাকালে আমার খুব ভয় লাগে। আসলে ওটা বোধহয় ভয় না, সাহিত্যে কাঁচা বলেই এমন করে বলছি। ঐ অনুভূতিটাকে মনে হয় অস্বস্তি বলে। নতুন কারো সাথেতো আমি কখনোই কথা বলতে পারিনা। আমার ক্লাশমেট মেয়েদের সাথে প্রথমবার কথা হয়েছিল টানা আড়াইবছর একসাথে ক্লাশ করার পর।

এখনো এদের সামনে আমি তেমন পড়িনা, প্রয়োজন হলে ওরা সাহায্য চেয়ে নেয় এই যা। আধঘন্টা পেরিয়ে গেছে বাসে। মাথাটা নিচু করে রাখতে হচ্ছে এখনো। অসহ্য, আর ভাল্লাগেনা, কে বলেছিল উনাকে আমার পাশে বসতে। বাসে কোন মেয়ের পাশে বসার অভিজ্ঞতা এটা আমার দ্বিতীয়।

তবে এর আগেরবারের সেই সহযাত্রীনী পাশে বসার সাথে সাথেই আমার গন্তব্য হাজির হয়ে গেছিল, এবার আর তেমন হচ্ছেনা। আমার কেমন যেন বন্দী বন্দী লাগছিল নিজেকে। এরমধ্যে বিব্রত হবার জন্য উপযোগী একটা ঘটনা ঘটল। হঠাৎ মাথা উঠিয়ে দেখিয়ে একটা ছোট্ট ফুলওয়ালা মেয়ে আমার ঠিক চোখের সামনে এনে কত্তগুলা গোলাপ ফুল ধরে রেখেছে। আর বলছিল, “ভাইজান, ভাইজান, ফুল নেন।

“ আমার মাথায় কিছুতেই ধরলনা, এত্তবড় বাসে এত যাত্রী থাকতে পিচ্চি আমার কাছে কেন ফুল বিক্রি করতে এল। এমনিতেই আমি গাছ থেকে ফুল ছেড়া পছন্দ করিনা, আর তা কেনার তো প্রশ্নই আসেনা, অথচ পিচ্চি কিনা আমার কাছে ফুল বিক্রি করতে এসেছে! আমার মনে হয়, পিচ্চি মনে করেছে আমার পাশেরজন আমার পরিচিত এবং তার সাথে আমার ফুল দেয়াদেয়ির কোন সম্পর্ক আছে। ব্যাপারটা মনে হতে লজ্জায় আরো এতটুকুন হয়ে গেলাম। কতক্ষন পিচ্চির দিকে চেয়ে থাকলাম, আর এদিকে ক্ষীন একটা হাসির শব্দ শুনলাম। শব্দটা উনারই ছিল।

মানে ঐ আলোচ্য সহযাত্রীনীর। হাসি শুনে আমার অস্বস্তির মাত্রা কয়েকগুন বেড়ে গেল। অনেকটা অস্ফুট স্বরে বাচ্চাটাকে ধমক দিলাম। আমার মনে হয়েছে ওটা ধমক, কিন্তু পিচ্চি ফুলওয়ালি নিশ্চয় ওটা একটা ফিসফিস শব্দ ছাড়া অন্য কিছু মনে করেনি। আর এদিকে ক্ষীন শব্দের হাসি মৃদু শব্দে পরিণত হল।

অস্বস্তির মাত্রা কোথায় পৌছেছে ততক্ষনে আমার পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর কিছুক্ষন বাদেই উনি তাঁর বইপত্র, হেডফোন, হাতব্যাগ সব গুছিয়ে উঠে পড়লেন এবং আমাকে বাচালেন। তাঁকে বাস থেকে নেমে পড়া পর্যন্ত সময় দিয়ে তারপর মাথা উঠালাম, নিজেকে মুক্ত মনে হল। মুক্তি খুবই আনন্দদায়ক। তবে পাশের তিনি কে ছিলেন, কেন জানি এখন একটু একটু জানতে আগ্রহ হচ্ছে।

সেই বাড্ডা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত একসাথে পাশাপাশি বসেছিলাম, কতগুলো যানজট সহ্য করলাম, মজার একটা পরিস্থিতি ফেইস করলাম অথচ তাঁর চেহারাটাও একবার দেখলামনা, কি অস্বাভাবিক। নাহ, কাজটা ঠিক হলনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.