আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কথামালার রাজনীতি বনাম কর্মের প্রত্যয়



কথামালার রাজনীতি বনাম কর্মের প্রত্যয় ফকির ইলিয়াস ======================================== কথার রাজনীতি বাংলাদেশে নতুন নয়। গণমানুষের জন্য কাজ করতে হলে প্রত্যয় থাকতে হয়। সে প্রত্যয় অনেকের থাকে না। যা থাকে, তা হচ্ছে কথার ফুলঝুরি। আর এ কথামালার রাজনীতির মাধ্যমে ব্যক্তিগত, দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করতে বরাবরই তৎপর থাকে একটি মহল।

বিএনপির রাজনীতিতে যুগ্ম মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন বেশ সরব। জাতীয় রাজনীতিতে তার একটি পারিবারিক পরিচয় আছে। পিতাও ছিলেন রাজনীতিক। তার চাচা মীর্জা গোলাম হাফিজ ছিলেন বিএনপি মনোনীত স্পিকার। সেই মীর্জা ফখরুল অতি সম্প্রতি একটি নতুন তত্ত্ব দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের 'স্বপ্নদ্রষ্টা' নাকি তারেক রহমান! মীর্জা ফখরুলের মতে, তারেক রহমানই বাংলাদেশের রাজনীতিতে 'ল্যাপটপ কালচার' চালু করেন। তিনিই ল্যাপটপে বিএনপির সব ডাটা (?) এন্ট্রি করে রাখতেন। মীর্জা ফখরুল আরও বলেছেন, তারেক রহমানই প্রথম ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বপ্ন কে, কোথায়, কি দেখেন তা বাংলাদেশের গণমানুষের জন্য মুখ্য কোন বিষয় নয়। এটা বাংলাদেশের অনেক মানুষই দেখেছেন, তারেক রহমান ব্যক্তিগত প্রয়োজনে, হাওয়া ভবন কন্ট্রোলিংয়ের প্রয়োজনে একটি ল্যাপটপ সঙ্গে রাখতেন।

তিনি ছিলেন একটি বিরাট নেপথ্য শক্তির প্রতিভু। তাই তাকে অনেক কিছুই কন্ট্রোল করতে হতো। কিন্তু তিনি বাংলাদেশকে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এ পরিণত করতে চান, তা কোথাও বলেননি। কোন রাজনৈতিক মতবাদ কিংবা দর্শনও চালু করেননি। তার ওই ল্যাপটপ দিয়ে নানা ধরনের অপকর্মের খোঁজখবর তিনি এন্ট্রি করে রাখতেন, তা সে সময়ও অনেক সমালোচক বলেছেন।

ল্যাপটপ সঙ্গে রাখা মানে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এর স্বপ্নদ্রষ্টা বনে যাওয়া এক নয়। এমন তত্ত্ব চর্বণ করে মীর্জা ফখরুল 'স্বাধীনতার ঘোষক' ছিনতাই নাটকের পুনরাবৃত্তিই করতে চেয়েছেন। তা নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার কারণ নেই। 'পবন' নাটকের মধ্য দিয়ে বিএনপি নতুনভাবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। সংসদীয় উপনেতা পদে মওদুদ আহমদ, মহাসচিব পদে মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ঢাকা মহানগরী বিএনপির সভাপতি পদে সাদেক হোসেন খোকা স্থান পাচ্ছেন তা প্রায় নিশ্চিত।

খোন্দকার দেলোয়ার শেষ পর্যন্ত বাদ পড়ছেন কিংবা কোন নিষ্ক্রিয় পদে আসীন হতে পারেন- এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এদিকে জামায়াতের সঙ্গেও সুসম্পর্ক যাচ্ছে না বিএনপির। আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী, খালেদা জিয়ার সঙ্গে ব্যক্তিগত মোলাকাত করেও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সায় পাননি। এর প্রধান প্রতিবন্ধকতা বিএনপির নতুন কার্যকরী কমিটির অধিকাংশ সদস্য। তারা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার গিবত আর নিতে চাচ্ছেন না।

কিন্তু এটাও স্পষ্ট বলা যায়, এ অভিমান তাদের বেশিদিন টিকবে না। বিএনপি-জামায়াতের মিত্রতা শেষ পর্যন্ত অটুটই থাকবে। কারণ তারা একে অন্যের অঙ্গে যে মনিহার, তা অন্য কোথাও মানাবে না। দুই. এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্র ফারুক হোসেন হত্যা মামলায় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে শিবিরের গ্রেফতারকৃত নেতা ইকরাম হোসাইন। তার মতে, জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের আদেশেই এ হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে এবং সে সময় পুলিশও বেশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।

রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দখলের পর এসব রগকাটা বাহিনী দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দখলও নিতে চাইছে। এ সংবাদ নতুন নয় এবং প্রশাসনেরও তা খুব ভাল করে জানার কথা। তারপরও পুলিশের নাকের ডগার ওপর দিয়ে ফারুক হোসেনের শবদেহ কীভাবে ম্যানহোলে রাখা হলো, সে প্রশ্নটি জরুরি ভিত্তিতে খুঁজে দেখা দরকার। যারা দায়িত্বে ছিল, তাদের কী কী গাফিলতির কারণে এমন নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সাধিত হলো, তার শ্বেতপত্র সরকারের প্রকাশ করা উচিত। মনে রাখা দরকার, এই যে মরণ কামড় দেয়ার জন্য একটি শক্তি সংঘবদ্ধ হতে চাইছে এদের শিকড় অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত।

তা সহজে উপড়ে ফেলা যাবে না। আমরা দেখছি, সরকার চন্দ্রিমা উদ্যানের নামটি পুনঃপ্রবর্তন করতে চাইছে। বিএনপির চাটুকাররা গোটা দেশকেই জিয়ার নামে লিখিয়ে নিতে পারলে শান্তি পেত! এমন একটা প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করেছি। এরা এখনও তৎপরতা বন্ধ করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না।

তাই নামবদলের প্রচেষ্টার মতো ক্ষুদ্র কাজগুলোকে বর্তমান সরকারের গুরুত্ব দেয়া উচিত নয়। কারণ এসব ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে তারা ঘোলা জলে মাছ শিকারের চেষ্টায় অতীতের মতো লিপ্ত হতে পারে। বর্তমান সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বারবার বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে প্রতীকী বিচার। এ প্রতীকী বিচারে দেশের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে কি? নাকি আবারও 'চিকন আলী' ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে বাংলাদেশে? বাংলাদেশ সেই দেশ যে দেশের মহান সংসদ চত্বরে এখনও কুখ্যাত রাজাকার, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী খান এ সবুরের কবর রয়েছে। এ কাজটি কারা, কেন করেছিল তা জাতির অজানা নয়।

জাতীয় সংসদ এলাকাকে এ কালিমা থেকে মুক্ত করার কথাটিও সরকারকে ভাবতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, এসব কাজ জামায়াত-বিএনপির জোট ক্ষমতায় গিয়ে অতীতে করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না। তাই বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোটকে এসব কাজ সাধন করতে ঐক্যবদ্ধ থাকা খুবই জরুরি। বাংলাদেশ সরকার, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, মন্ত্রিপরিষদ এবং এমপিদের বেতনও ৮৩ শতাংশ বাড়িয়েছেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এ বেতন বৃদ্ধি হতেই পারে। কিন্তু জনগণের যে চাহিদা তা পূরণেও সব রাজনীতিককে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ এমনই একটি দেশ যে দেশটি গেল প্রায় চার দশক কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সাধন করতে পারেনি। কেন পারেনি, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হওয়া দরকার। প্রয়াত ড. হুমায়ুন আজাদ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'এই দেশটিকে সবাই ভোগ করতে চায়।

দেশটিকে ভালবাসার মানুষ আসলেই খুম কম। ' এই যে দেশপ্রেম তা এখনও রয়ে গেছে সুদূর পরাহত বিষয়। প্রতিযোগিতা বেড়েছে ভোগের, ত্যাগের নয়। মুখে কথার ফানুস ওড়ালেও অনেকেই দল এবং শীর্ষ নেতা-নেত্রীর মনোরঞ্জনে ব্যস্ত। যে কথাটি না বললেই নয় তা হচ্ছে, ব্যক্তি বন্দনা বাদ দিয়ে রাষ্ট্র বন্দনায় রাজনীতিকদের মনোনিবেশের কোন বিকল্প নেই।

চাঁদকে ছেঁড়া কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদদের বিশ্বের সভ্য মানুষ কীভাবে সম্মান করেন তা শেখা দরকার বাংলাদেশের অনেক রাজনীতিবিদেরই। 'দেশকে ভালবাসি' মুখে নয়, কর্মে প্রমাণ করতে না পারলে প্রজন্ম তাদের প্রত্যাখ্যান করবে, সন্দেহ নেই। নিউইয়র্ক ৯ মার্চ, ২০১০। -------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ ।

ঢাকা । ১২ মার্চ ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- রব হীথ

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।