আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রমিকদের সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ১০কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে বিএসবিএ হাসপাতাল- (পর্ব-৫)


বহু কাংখিত বিএসবিএ হাসপাতালের নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ফলে স্বস্তি নেমে এসেছে জাহাজ ভাঙ্গাা শিল্পের অর্ধলক্ষ শ্রমিকের মনে। এ কথা মানতেই হবে যে শ্রমিকদের জন্য অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ কর্মস্থল জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প। দারুন ঝূঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করার কারণে এ শিল্প গড়ে উঠার পর থেকে এখানে দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে অসংখ্য শ্রমিক। যার কোন সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছেই নেই।

তবে বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, জাহাজ ভাঙ্গা শুরু হওয়ার পর থেকে এখানে প্রায় ৩ হাজার শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় জাহাজগুলি কাটা হয়ে থাকে সীতাকুণ্ডের ইয়ার্ডগুলিতে। এখানে কাটা হয় অনেক ঝুঁকিপূর্ণ বিষাক্ত বর্জ্য ও গ্যাসবাহি জাহাজও। শিপ-ব্রেকার্স এসোসিয়েশনের মতে একাজে নিয়োজিত রয়েছে স্থায়ী অস্থায়ী ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক। একথা মানতেই হবে যে, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প দেশের সবচেয়ে গুরুত্ব ও সম্ভাবনাময় শিল্প।

আর এ শিল্পকে আজকের এই অবস্থান আনার পেছনে যাদের অবদান গর্ব করার মত সেই ইয়ার্ড মালিকরাই আবার বেশি সমালোচিত শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ে। অবশ্য এ বিতর্কের ও যথেষ্ট কারণ আছে। শ্রমিক নিরাপত্তা ও অধিকার প্রশ্নে জাহাজ ভাঙ্গা উঠানের অতীত ইতিহাসে দেখা যায়, এই শিল্প গড়ে উঠার পর এখানে কাজ করতে গিয়ে দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছে প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক এবং আহত হয়েছে ১০ হাজারের ও বেশি। এদের মধ্যে ১ হাজারের ও বেশি লোক স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে মঙ্গাপীড়িত অসহায় পরিবার গুলোর উপর মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে বেঁচে আছে। আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রীনপিস সহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্টে দেখা যায় শিপ ইয়ার্ডে কাজ করতে গিয়ে সপ্তাহে অন্তত ১জন শ্রমিক নিহত এবং গড়ে প্রতিদিন একজন শ্রমিক গুরুতর আহত হয়।

এই সংস্থা গুলো এখানে দুর্ঘটনার যে কারণ গুলো চিহ্নিত করেছে তাহ হলঃ- বিদেশ থেকে আনা জাহাজ গুলো সম্পূর্ণ গ্যাস ফ্রি না করা, অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজ করার আগে শ্রমিকরা কোনো প্রশিক্ষণ না পাওয়ায় জাহাজ কাটার সঠিক নিয়ম কানুন না জানা সর্বপরি জাহাজ কাটার সময় হাতে গ্লাভস, গামবুট, রশ্মি প্রতিরোধক চশমা এবং অনেক উচুঁ স্থানে কাজের সময় লাইফ জ্যাকেট প্রভূতি ব্যবহার কম করায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আশ্চর্য্য হলে সত্যি যে জাহাজ ভাঙ্গা এমন একটি ঝুকিপূর্ণ শিল্প হলেও এই শিল্প এলাকার ১৫ কিঃমিঃ মধ্যে কোন হাসপাতাল গড়ে উঠেনি বিগত ৪০ বছরেও । তাই দীর্ঘদিন দিন ধরেই শ্রমিক সহ বিভিন্ন দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনের দাবী ছিল এ এলাকায় ১টি হাসাপাতাল গড়ে তোলা। আর শিপ ব্রেকিং শিল্প উদ্দ্যোক্তরাও হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে দেরিতে হলেও শ্রমিকদের সু-চিকিৎসার জন্য বিএসবিএ (বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এসোসিয়েশন হাসপাতাল) হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার ভাটিয়ারি ষ্টেশানের কাছে ৩০ শতক জায়গার উপর ৬ তলা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি গড়ে তোলা হচ্ছে বলে এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান।

সরেজমিনে এই হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিশালাকার এই হাসপাতালটির ভবন নির্মাণের কাজ শেষের পথে। শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় কোন হাসপাতাল না থাকায় এতদিন ইচ্ছে থাকলেও শ্রমিকদের দ্রুত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছিল না। এখন হাসপাতাল নির্মাণ হলে শ্রমিকরা উন্নত চিকিৎসা পাবে। আগামী জুন-জুলাইয়েই হাসপাতালটি নির্মাণের আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবী এ হাসপাতালটির কাজ এগিয়ে চলায় শ্রমিকরাও খুশি।

তারাও মনে করছেন এই একটি হাসপাতাল অসংখ্য শ্রমিকের অকাল মৃত্যু ঠেকাবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি চালু করা উচিত বলে সচেতন মহল মনে করেন।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.