আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কী ভয়ংকর দৃশ্যঃমারমুখী সাংসদরা গালিগালাজ করে পরস্পরকে তেড়ে এলেন



মারমুখী সাংসদরা গালিগালাজ করে পরস্পরকে তেড়ে এলেন নিস্পৃহ, নির্জীব সংসদ ভবনকে কবিতার প্রতিপাদ্য করে শামসুর রাহমান আক্ষেপ করে লিখেছিলেন : দেখতে পাচ্ছো না সংসদ ভবন নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। শামসুর রাহমান এখন যদি বেঁচে থাকতেন, গতকালের সংসদ কক্ষের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতেন তাহলে তিনি আঁতকে উঠতেন। বলতেন, এই জাগ্রত সংসদ আমরা দেখতে চাই না। গতকাল সংসদ জেগেছিল। ভয়ঙ্করভাবে জেগেছিল।

বিরোধী ও সরকারদলীয় এমপিরা গতকাল রাতে মারমুখী হয়ে পরস্পরের প্রতি যেভাবে ধেয়ে গিয়েছিলেন, যেভাবে অশোভন ভাষায় গালিগালাজ করেছিলেন তাতে সংসদীয় রীতিনীতি, সৌজন্য ধুলোয় মিশে গেছে। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, আল্লাহ রক্ষা করেছেন, এর চেয়ে খারাপ ঘটনাও ঘটতে পারত। এহেন অভাবনীয় পরিস্থিতিতে ডেপুটি স্পিকার ছিলেন সম্পূর্ণ অসহায়। সাংসদরা পরস্পরকে গালাগালি করার সময় যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা সংবাদপত্রে প্রকাশেরও অযোগ্য! অনেকের মুখ থেকে 'তুই-তোকারি', 'চুপ ব্যাটা বস', 'শালা' এবং 'শালী' ইত্যাদি আক্রমণাত্মক অশ্লীল-আপত্তিকর শব্দও অবলীলায় বেরিয়ে আসে। এক সময় উভয় দলের বেশ কিছু সদস্য নিজেদের আসন ছেড়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নেন।

কেউ কেউ পরস্পরের দিকে উত্তেজিত হয়ে তেড়ে আসেন। উত্তপ্ত পরিবেশের মধ্যে বিরোধী দল রাত ৮টা ৫ মিনিটে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সময় অধিবেশন কক্ষে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন না। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং এম কে আনোয়ারসহ সিনিয়র সদস্যরা অধিবেশনে থাকলেও তারা ছিলেন হতভম্ব ও নিশ্চুপ। বিএনপির শাম্মি আখতার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে 'ফেরাউন'-এর সঙ্গে তুলনা এবং বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর কেউ 'ইন্নালিল্লাহ' শব্দ পড়েননি বলে দাবি করলে সংসদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

তার এই অসংসদীয় ও কটূক্তিমূলক বক্তব্যের পরপরই সরকারদলীয় সাংসদরা উত্তেজনায় ফেটে পড়েন। শুরু হয় তুমুল হট্টগোল, বাকবিতণ্ডা। এ সময় চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ ডেপুটি স্পিকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, বিরোধী দলের একজন সদস্য বঙ্গবন্ধুকে ফেরাউনের সঙ্গে তুলনা এবং তার মৃত্যুর পর কেউ ইন্নালিল্লাহ পড়েননি বলে চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। একজন মুসলমানের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এ ধরনের অশোভনীয় ও আপত্তিকর কথা বলা যায় না। তিনি শাম্মি আখতারের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান।

এ সময় বিরোধী দলের সদস্যরা একযোগে হৈচৈ করে ওঠেন। পাল্টা জবাব দেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদ সদস্যরা। তারা একযোগে দাঁড়িয়ে শাম্মি আখতারের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। ডেপুটি স্পিকার প্রচণ্ড হৈচৈয়ের মধ্যে বলেন, বক্তৃতার সময় উত্তেজিত হলে আপত্তিকর বক্তব্য চলে আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অসংসদীয় বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হবে।

সরকারি দলের সদস্যরা ডেপুটি স্পিকারের এই বক্তব্য মেনে নিতে পারেননি। তারা আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে একযোগে সমস্বরে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এ পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার জানান, অসংসদীয় সকল বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হবে। এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে থাকেন বিরোধী দলের সদস্যরা। তারাও আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হৈচৈ, টেবিল চাপড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

তুমুল হৈচৈয়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের ইকবালুর রহীম রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তৃতা শুরু করেন। তিনি বিএনপির শাম্মি আখতারের বক্তব্যের জবাব দিতে গেলে বিএনপির কয়েকজন মহিলা সদস্য টিপ্পনী কাটতে থাকেন। এ সময় আওয়ামী লীগের জয়নাল আবেদীন উত্তেজিত হয়ে নিজ আসনে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলের সদস্যদের উদ্দেশে বেশ কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করেন। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ বিরোধী দলের কয়েকজন সদস্য নিজেদের আসন ছেড়ে এক জায়গায় জটলা তৈরি করেন এবং জয়নাল আবেদীনের দিকে ছুটে যান। বিশেষ করে এ্যানীর ভূমিকা ছিল মারমুখী।

এ সময় সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা পরস্পরের সঙ্গে ব্যাপক বাকবিতণ্ডা ও তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তখন অনেকের মুখে 'তুই-তোকারি', 'চুপ ব্যাটা বস', 'শালা' ও 'শালী' ইত্যাদি নানা আপত্তিকর ও অসংসদীয় শব্দ শোনা যায়। চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ নিজের আসন ছেড়ে জয়নাল আবেদীনের আসনের কাছে গিয়ে তাকেসহ সরকারি দলের সদস্যদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। বিরোধী দলের সদস্যদের শান্ত করার চেষ্টা করেন জাতীয় পার্টির দুই সদস্য নাসিম ওসমান ও অ্যাডভোকেট মজিবুল হক চুন্নু। এরপরও বিএনপির ক'জন সদস্য নিজেদের আসন ছেড়ে নানা উত্তেজক মন্তব্য ছুড়তে থাকেন।

শাম্মি আখতার আঙুল উঁচিয়ে নানা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে সরকারি দলের সদস্যদের রীতিমতো শাসান। জবাবে সরকারি দলের কয়েকজন সদস্যও আপত্তিকর ভাষায় বিরোধী দলের কটূক্তির জবাব দেন। তীব্র বাকবিতণ্ডার মধ্যে আওয়ামী লীগের ইকবালুর রহীম বিএনপির শাম্মি আখতারের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে বলেন, আজ সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকলে তিনিই ভালো বলতে পারতেন বঙ্গবন্ধু ফেরাউন নাকি ফেরেশতা ছিলেন। কারণ মুক্তিযুদ্ধের পর জিয়াউর রহমান তার স্ত্রী খালেদা জিয়াকে ঘরে নিতে চাননি। বঙ্গবন্ধুই জিয়াউর রহমানকে বুঝিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘর-সংসার করতে রাজি করেছিলেন।

এই বক্তব্যে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিরোধী দলের সদস্যরা একযোগে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এক পর্যায়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে বিরোধী দলের সদস্যরা রাত ৮টা ৫ মিনিটে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন। প্রায় ১০ মিনিট তুমুল হট্টগোল ও বিরোধী দলের ওয়াকআউটের পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সরকারি দলের অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, জাতির জনক স্বাধীনতার ঘোষক ও স্থপতি।

তাকে নিয়ে কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। বিরোধী দল 'ধর শালা, চুপ শালা, তুই-তোকারি'সহ যেসব অসংসদীয় ভাষায় কথা বলেছে, তা আমরা শিখতে চাই না। হট্টগোলের আগে ও পরে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্য রাখেন প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন, আওয়ামী লীগের আতিউর রহমান আতিক, জোবেদা খাতুন, শাহরিয়ার আলম, হোসেন মকবুল শাহরিয়ার ও জাতীয় পার্টির নাসিম ওসমান। বিএনপির প্রেস ব্রিফিং পরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী নিরপেক্ষভাবে সংসদ পরিচালনা এবং বিরোধী সাংসদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করে বিএনপি। দলের নেতারা বলেন, স্পিকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না নিয়ে মুখে হাত দিয়ে বসেছিলেন।

তিনি একজন দলীয় সংসদ সদস্যের ভূমিকা পালন করেছেন। সরকারি দলের সাংসদরা তাদের মারতে তেড়ে আসার ঘটনা এবং স্পিকারের ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে নেতারা বলেন, এ নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সংসদে বিরোধী দল আসবে কি-না তা দলের চেয়ারপারসনসহ দলীয় ফোরামে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বক্তব্য রাখেন। মওদুদ আহমদ বলেন, শাম্মি আখতার ১৫ আগস্টের ঘটনার পর লন্ডনে অবস্থানরত স্পিকারের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। এরপর আওয়ামী লীগের মেহেরপুর-১ আসনের সাংসদ জয়নাল আবদীনের নেতৃত্বে অন্যান্য সাংসদ অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে মারতে তেড়ে আসে।

নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। এম কে আনোয়ার বলেন, আজকের ঘটনার পর এ বয়সে তারও সংসদে আসা ঝুঁকিপূর্ণ। ডেপুটি স্পিকারের কাছে তিনি এবং বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ফ্লোর চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি দেননি। নিরপেক্ষভাবে সংসদ চালাতে না পারলে ডেপুটি স্পিকারকে বিদায় নেওয়ার আহ্বান জানান এম কে আনোয়ার। রাতে দলের সিনিয়র নেতারা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।

স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে খালেদা জিয়াও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে সূত্র জানায়। সূত্রঃ সমকাল

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.