আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাচতে হলে সাহস করে বলতে হবে



বাল্যবিয়ে নিজেই রুখে দিয়েছিলো পপি আক্তার। পপির ন্যায়সঙ্গত যুক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে বাবা-মা। পপি এখন নুরুন্নাহার মির্জা কাশেম মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। পপির কারণে সহপাঠী সাবিনাসহ অনেকেই বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে রক্ষা পেয়েছে। পপি তখন জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার অজপাড়া বানিকুঞ্জ গ্রামের একটা স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী।

এসময় তার বিয়ের আয়োজন করা হয়। কৃষক বাবা শামছুল ইসলাম ‘ভালো পাত্র’ পাওয়ায় অল্প বয়সে মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পপি বিয়ে করতে চাননি। বিয়ে না করার কথা কীভাবে বাবাকে বলবেন, সে ভাবনায় দু’রাত কেটেছে তার। শেষ পর্যন্ত সাহস নিয়ে বাবাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলেন।

কম বয়সে বিয়ে হলে একটি মেয়ের কী কী সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, সব কিছু খুলে বলেন বাবাকে। কৃষক শামছুল ইসলাম মেয়ের কথা শুনে আশ্চর্য হন। নিজের মেয়ে এতোকিছু জানে! ভেবে খুশিও হন তিনি। মা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা এতো বড় হইছি অথচ কিছুই জানি না। আমার মেয়ে সব জানে।

শুধু পপি একাই নয়, বানিকুঞ্জ গ্রামের কিশোরীরা সচেতন হয়েছে কিশোরী কাবের মাধ্যমে। গ্রামের কিশোরীদের সচেতন করতে বছর তিনেক আগে গঠিত হয় কিশোরী কাব। সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার দু’ঘণ্টার জন্য গ্রামের কিশোরীরা এখানে একত্রিত হয়। গল্পের বই পড়া, গান, নাচ, দাবা, লুডু খেলা হয় এখানে। পাশাপাশি বাল্যবিয়ের কুফল, এইচআইভি/এইডস, স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার, মেয়েলি সমস্যাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

গ্রামের ৪০ জন কিশোরী এ কাবের সদস্য। যে যেখানেই থাকুক না কেন, সপ্তাহের দু’দিন সবাই উপস্থিত হয়। কাবটি সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। ১১ থেকে ১৯ বছরের মেয়েরা কিশোরী কাবের সদস্য হতে পারে। উপজেলার ৬ ইউনিয়নে মোট ১৮টি কাব পরিচালিত হচ্ছে।

এছাড়া প্রতিমাসে একবার বাবা সভা এবং দুইমাসে একবার মা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয় এসব নিয়ে সভায় আলোচনা হয়। কিশোরী কাবের মাধ্যমে সচেতন হওয়া মেয়েরা পরিবারের অন্য সদস্যের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। বানিকুঞ্জ গ্রামের নাসের মোল্লা (৬০) বলেন, আমাদের সময় ছেলেরাই বিয়ের বিষয়ে কিছু বলতো না। আর এখন ছোট ছোট মেয়েরা কম বয়সে বিয়ের কুফল সর্ম্পকে সব জানে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র দে বলেন, বাল্যবিয়ে নারী জীবনের অভিশাপ। কম বয়সে বিয়ে এবং গর্ভধারন খুবই ঝুকিপূর্ণ। একমাত্র সচেতনার মাধ্যমে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সচেতনার কারণে বানিকুঞ্জে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। ৫ বছর আগেও বানিকুঞ্জ গ্রামে অহরহ বালবিয়ে হতো।

কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। গত বছরে এখানে কোনো বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেনি। সচেতনতাই পারে জীবনকে সুস্থ রাখতে। মাদারগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ পরিবার স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। মানুষ অনেক সচেতন হওয়ায় এটা সম্ভব হয়েছে।

স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার করায় বানিকুঞ্জে গ্রামে রোগীর সংখ্যাও কম। জনগণের সহযোগিতার কারণে উপজেলার ২ লাখ ৯২ হাজার ২৩৪ জন শিশুর মধ্যে ২ লাখ ৯০ হাজার ৮৬ জনকে পোলিও টিকা খাওয়ানো সম্ভব হয়েছে। বানিকুঞ্জ গ্রামের মতো লেখাপড়াতেও এগিয়ে উপজেলার ছাত্র-ছাত্রীরা। মাদারগঞ্জ উপজেলায় স্কুলে ভর্তির হার ৯৪.৭৬ শতাংশ। ঝড়ে পড়া হার ১৯.৭১ শতাংশ।

এবছরের মধ্যে সব গ্রামে একটি করে স্কুল স্থাপন করা হবে। এসব স্কুল চালু হলে সব শিশুকে স্কুলে আনা সম্ভব হবে। কিশোরী কাবের সদস্য সুমিতা রানী জানান, শারীরিক পরিবর্তনের সময় বেশ সমস্যায় হয়েছিল তার। মাসিকের বিষয় নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করতে তার লজ্জা লাগতো। কিন্তু কিশোরী কাবে মাসিক নিয়ে আলোচনা হওয়ায় সেই ‘লজ্জা’ এখন কেটেছে।

কাবের সব কিশোরী মাসিকের ব্যাপারে অনেক সচেতন। এসময় তারা বেশি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। ‘ভাঙ্গিস না আর বসত ভিটা বাপের বাড়ি ঘর’ কাবের কিশোরীরা বাড়ি ফেরার আগে প্রায়ই এ গান গায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।