আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বোরকার পর হালাল ইসুতে ফ্রান্সে তোলপাড়

www.nationalnews.com.bd

বোরকার পর হালাল ইসুতে ফ্রান্সে তোলপাড় ফ্রান্সে ফাস্টফুড এর “কুইক” (Quick) ব্রান্ড ম্যাকডোনাল্ড এর মতই জনপ্রিয়। সারা দেশে এর ৩৬২-টি আউটলেট (ব্রাঞ্চ) আছে। সম্প্রতি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় আটটি আউটলেট হালাল ফাস্টফুড বিক্রি শুরু করেছে। এতে বিজনেস আগের তুলনায় বেড়েছে। মেনু আগের মতই, শুধুমাত্র পর্কের (শুকর) হ্যামবার্গার এর পরিবর্তে টার্কিবার্গার রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে যুক্ত হয়েছে।

এতেই কাজ সেরেছে (বিস্তারিত দেখুন) । ডান-বাম সব ধরণের পলিটিক্যাল পার্টি এবং মিডিয়া সেক্যুলারিজম গেল বলে সোচ্চার হয়েছে। এতে “Freedom of choice” এর ভিত্তি নাকি দূর্বল হয়ে গেছে। মন্ত্রী সভার মিটিং-এ কুইক এর নীতিকে নিন্দা করা হয়। কুইক এর পক্ষ থেকে বলা হয় যে, এ পর্যন্ত ঐ সব এলাকার কাস্টমার কোন অভিযোগ করেনি।

এরই মাঝে Roubaix শহরের পলিটিক্যাল পার্টির নেতারা আইনগতভাবে অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগের ভিত্তি হচ্ছে যে, কুইক এর উদ্যেগ নন-মুসলিমদেরকে ডিসক্রিমিনেইট (Discriminate) করে, কেননা ঐ সমস্ত এলাকার নন-মুসলিমরা তাদের পছন্দের পর্কের হামবার্গার খেতে পাচ্ছে না! খেতে হলে অন্য শহরতলীতে যেতে হয়। ধর্মের মাধ্যমে বিভাজন। অতএব, সেক্যুলারিজমে এটা গ্রহনযোগ্য নয়। অন্যদিকে, কশের (Kosher, জিউসদের হালাল) নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই।

ভেজিটারিয়ান, ইটালিয়ান বা চাইনিজ রেস্তোরায় ফ্রান্সের কোন জনপ্রিয় লোকাল মেনু থাকে না। এটা কোন আলোচনার বিষয়বস্তু নয়, কেননা মুসলিম ধর্মের কোন ইসু এতে জড়িত নয়। তার মানে কি সেক্যুলারিজম এবং ইসলামের অবস্থান পরস্পর বিপরীত মেরুতে? বাকী ধর্ম গুলো স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলায় সেক্যুলারিজমের প্রতিপক্ষ হিসেবে ইসলামকে গণ্য করা হয়। ফান্সের মুসলিমরাও তো পাল্টা প্রশ্ন করতে পারে, তারা কি কখনো নন-হালাল ফুডকে ইসু করে ডিসক্রিমিনেশনের অভিযোগ এনেছে? ফ্রান্সকে বিশ্বে সেক্যুলারিজমের মডেল হিসেবে গণ্য করা হয়। এই আইডিওলজি বা মতবাদের জন্ম এখান থেকেই।

ফরাসী বিপ্লবের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। ইউরোপে ফ্রান্স সর্বপ্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের হিজাব নিষিদ্ধ করে, যার ভিত্তি ছিল সেক্যুলারিজম। তারপর থেকে অনেক দেশ ফ্রান্সের এই নীতিকে অনুসরণ করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মুসলিম দেশেই প্রথম হিজাব নিষিদ্ধ হয়। ১৯৩৬ সালে ইরানে রেজা খান সেক্যুলারিজম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পুরুষদের জন্য ইউরোপিয়ান পোষাক নির্দিষ্ট করে ডিক্রি জারি করেন আর মেয়েদের হিজাব ও চাদর পরিধান নিষিদ্ধ করা হয়।

ইরানিয়ান বিপ্লবের পর থাকে মেয়েদেরকে হিজাব পরা বাধ্যতামুলুক করা হয়। পরবর্তীতে তুরস্ক এবং তিউনেসিয়া সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠার লক্ষে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়। এ দু দেশের সেক্যুলারিজম আবার ফ্রান্সকেও হার মানায়। সেক্যুলারিজমের যথাযত প্রয়োগের জন্য মিলিটারি হস্তক্ষেপ করে। তিউনেসিয়ায় মিলিটারি সরকার নিয়ে উন্নত বিশ্বের কোন মাথা ব্যথা নেই, কেননা এখানে সেক্যুলারিজম কায়েম আছে।

পশ্চিমা বিশ্বে ইদানিং পর্ক বা শুকর কে সেক্যুলারিজমের ব্যারোমিটার হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। তুরস্কে ইসলামিক রুটেড এ কে পি (AKP) পার্টি সরকার পরিচালানায় বেশ সফল। এর জনপ্রিয়তা ক্রমাশ বাড়ছে। এটি সেক্যুলারিস্টদের প্রচন্ড উদ্বেকের কারণ। পশ্চিমা বিশ্ব থেকে প্রচারনা চালানো হচ্ছে যে, এ কে পি পার্টির কারণে তুরস্কে পর্ক ফার্মিং কমে যাচ্ছে (এখানে দেখুন)।

মানুষ আগের তুলনায় ইসলাম সচেতন হচ্ছে। যার ফলে পর্কের গোশত বিক্রি কমে গেছে। বলে রাখা দরকার, তুরস্কে ৯৯% মানুষ মুসলিম। সেকুলারিস্টদের বা “প্রগ্রেসিভ” মুসলিমদের অনেকেই পর্ক খেতে ভালবাসে। টার্কিশ আটোম্যান সম্রাজ্য ইসলামের মূলনীতির উপর ভিত্তি করেই প্রায় আটশত বছর রাজত্ব কায়েম করে।

বিশ্বে ইসলামের প্রসার ঘটাতে আটোম্যান সম্রাজ্য অনেক অবদান রয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে আব্দুল্লাহ গুল প্রেসিডেন্ট হওয়ার ফলে প্রেসিডেন্ট প্যালেসে সর্বপ্রথম জায়নামাজ প্রবেশ করে (আরো জানতে এখানে দেখুন)। সর্বপ্রথম সেক্যুলারিস্ট প্রেসিডেন্ট কামাল আতাতুর্ক তুরস্কে সেকুলারিজমের সফল প্রয়োগ করেন। উনার গড়া বাসভবনে জায়নামাজ প্রবেশ করবে তা সেকুলারিস্টদের প্রচন্ড মনঃকষ্টের কারণ। এ মনঃব্যথা লাগঘের জন্য সেক্যুলারিস্টরা কামাল আতাতুর্কের মাজারে তুরস্কের এই অধঃপতনের জন্য নালিশ করে।

অন্যদিকে মিশরে সেকুলার সরকার সোয়াইন ফ্লু’র শুরুতে কায়রো সিটিতে শুকর নিধণ করে। সরকারের দাবী হচ্ছে যে তারা সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধ কল্পে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে (এখানে এবং এখানে দেখুন)। পশ্চিমা বিশ্বে এটা নিয়ে অনেক তোলপাড় হয়। অভিযোগ করা হয় ইসলামিস্ট জনসাধারণকে খুশী করতে সরকার এটি করেছে। আমাদের দেশে ইদানিং সেক্যুলারিজম কায়েম নিয়ে বেশ জোড়তোড় হচ্ছে।

সেক্যুলারিজম মানে যদি বাস্তবিকই “ধর্ম নিরপেক্ষতা”-কে বুঝায়, আমাদের দেশে ব্যবহারিক অর্থে সেক্যুলারিজম কায়েম আছে। এ প্রসঙ্গে দেখা যায় পশ্চিমা বিশ্বে বড়দিন উপলক্ষে ছুটি থাকে কিন্ত ঈদ বা পুজা উপলক্ষে কোন ছুটি নেই। বাংলাদেশে যদিও সেক্যুলার দেশ নয় কিন্ত সব ধর্মাবলম্বীদের জন্য সরকারি ছুটির দিন ধার্য করা আছে। সেক্যুলারিস্টদের এত জোড়তোড় দেখে সাধারণ মানুষ হিসেবে সন্দেহের উদ্রেক করে। বর্তমান সরকারের একজন প্রভাবশালী নীতি নির্ধারক সেক্যুলারিজম কায়েমের লক্ষে বিস্তারিত পরিকল্পনা ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছেন।

সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারণ হিসেবে মেয়েদের ইসলামিক পোশাকের প্রতি আকর্ষণকে উল্লেখ করা হয়। এটা বন্ধ করতে হবে সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। প্রস্তাবিত পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটার ভিত্তি হচ্ছে টার্কিশ মডেল। তুরস্কের সেক্যুলারিজম টিকিয়ে রাখতে সেকুলার মিলিটারি ব্যবহার করা হয়। আর আমাদের দেশের প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় এই অপশন গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়েছে।

তুরস্কে ধর্মীয় শিক্ষা নিষিদ্ধ। বর্তমান বিশ্বের ভিন্ন প্রেক্ষাপট আর জনসচেনতার কারণে আমাদের দেশের মেইনস্ট্রীম শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষাকে সরাসরি নিষিদ্ধ করতে পারবে না বিধায় ধীর চলো নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। প্রথম প্রদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষাকে অবমুল্যায়নের উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। অপর দিকে নাচ-গান, যাত্রা, সিনেমা, ভাস্কর্য তথা ললিতকলাকে ধর্মীয় শিক্ষার চেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয়া (এখানে এবং এখানে দেখুন) হয়েছে। অনেকেই যুক্তি দেখায় যে আমাদের দেশে সেকুলারিজমের আসল রুপ বাস্তবায়ন করতে পারবে না।

ভুলে গেলে চলবে না যে অতি রক্ষনশীল তার্কিশ সমাজে সেক্যুলারিজমের আসল রুপ প্রকাশিত হয়েছে যেখানে প্রস্টিটিউশনকে (prostitution) সরকারী বা আইনগতভাবে প্রটেকশন দেয়া হয়, অন্যদিকে হিজাব পরিধানকে সংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের দেশের ইসলাম বিদ্বেষী সেকুলারিস্ট বা “মুক্তমনারা” সুযোগের হাত ছাড়া করবে না। তারা দেশের উন্নয়নের চেয়ে তাদের সংকীর্ণ আইডিওলজি বাস্তবায়নকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। এজন্য সবাইকে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।