আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বোরকার তলে খেমটা নাচে

জুলেখা বেগম বারান্দার রেলিংয়ের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আমসত্ত্ব খাচ্ছিলেন। বারান্দাটা যেহেতু কলাভবনের, আর কলাভবন ভর্তি পরপুরুষে, তাই স্বাভাবিক(!)ভাবেই তাঁর আগাগোড়া ঢাকা ছিলো কালো বোরকা’য়। ভালো কথা, নারীদের বোরকা তথা পর্দার একটা নতুন নাম হলো গিয়ে ‘হিজাব’। নাম হিসেবে এটা নতুন না হলেও, উঠতে-বসতে এর ব্যবহারের চল শুরু হয়েছে বছর ক’য়েক হলো। সে যাই হোক, কালো দস্তানা-মোড়া হাতে আমসত্ত্বের আধখোলা প্যাকেটটা ধরা।

কালো কাপড়ের টুকরোটার তল দিয়ে হাতটাকে মাঝে মাঝে ভেতরে সেঁধিয়ে দিচ্ছেন। কমন সেন্স বলে, ওই কাপড়ের তলে একটা মুখ রয়েছে। আর ওই আমসত্ত্বের টুকরোগুলো ওই মুখের ভেতর গিয়েই অদৃশ্য হচ্ছে একে একে। তার থেকে খানিক দূরেই একটা ছোট্ট আড্ডার আসর। তানিয়ার বন্ধুরা আজ খুব করে ধরেছে- ওকে গাইতে হবে।

এমনিতে লাজুক, তবে বন্ধুদের পীড়াপিড়িতে নিমরাজি হয়ে সে গান ধরলো- ‘একটা ছেলে মনের আঙিনাতে ধীর পায়েতে...’। ‘উফ! দোস্তো, এই গান শুনলে অর্ণব তোরেই বিয়া কইরা ফালাইতো!’- ফোড়ন কাটে শুভ। একটু স্মিত হাসে তানিয়া। মিষ্টি হাওয়া দিচ্ছে, সে হাওয়ায় দুলে দুলে গেয়ে চলে। হালকা সবুজ রঙের জামা, মাথার খোঁপায় একটা লাল ক্লিপ।

ছোটখাটো গড়নের শ্যামলা মেয়েটা- কারো ভালোবাসায় অধীর হয়ে এমন গান গাওয়া, ওরই সাজে! ইদানিং বোরকা নিয়ে রীতিমত মহাযুদ্ধ শুরু হয়েছে ব্লগে, ফেসবুকে, পেপার-পত্রিকায়। প্রথমে এই হাজাম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছলো। ইদানিংকালের নবী-রাসুলদের লেখাটেখা পড়ে ‘কী করি আজ ভেবে না পাই’ দশা। ‘ইভ টিজিং এর শিকার? একমাত্র সমাধান! হিজাব! আপনার ফিগার ঢেকেঢুকে রাখুন, কার সাধ্য আপনাকে টিজ করে?’ আপনি কি মুসলমান? তাহলে মাথা ঢাকেন না কেন? জানেন, মুসলমান হওয়ার পূর্বশর্ত কী? হিজাব! আর জানেন, হিজাব করার সবচাইতে ভালো উপায় কী? বোরকা!! আপনি বোরকা পড়েন? মাশাআল্লাহ! আপনাকেই তো খুঁজছে পাকবাংলা! বোরকাটাকে ভালো করে পেঁচিয়েপুঁচিয়ে রাখুন। রোজহাশরে যখন সবাইকে উলঙ্গ করে কবর থেকে তুলবে, আপনাকে তুলবে ওই বোরকা পড়িয়েই।

বোরকার অশেষ গুণ। হাশরের সূর্যের তাপ ফিজিক্সের সূত্র উপেক্ষা করে আপনার বোরকায় ঠিকরে বেরিয়ে যাবে। সবাই যখন হাশরের সমুদ্রে হাবুডুবু খাবে, তখন আপনার বোরকাই লাইফ সেভিং কিট হয়ে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে। পুলসিরাত সবাই হেঁটেহেঁটে পার হয়, আপনি হবেন উড়ে উড়ে। ওই বোরকাই হবে আপনার পাখা! বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে মালাউনরা, আর মালাউনদের দোসররা।

ওই কাজে বেপর্দা নারীরাও শামিল ছিলো। শাড়ি পড়ে, তাও আবার কোমরে গুঁজে, পেট দেখিয়ে সবাই রাস্তায় নেমেছিলো মিছিল করতে। সেই ছবি আজও ফেসবুকে শেয়ার করে লোকজন। আরে বাবা! স্বাধীন হয়েছে ভালো কথা, এখন আর পেট দেখানোর কী দরকার? এখন একটু বোরকা পড়লে কী হয়? শুধু আমেরিকা-ইংল্যান্ড দেখলেই কি হবে? আমেরিকায় তো রেপ হয়, মেয়েরা বিয়ের আগেই পেটে বাচ্চা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। অন্যদিকে ইরান দেখুন, সৌদি দেখুন! মাশাল্লাহ! বোরকার কত গুণ! একটা নারীরও টিজিং হয়না।

রেপ? ছিহ! কী বলেন? কারো মনে কোনো নারীকে দেখে বাসনা জাগলে তো তাকে বিয়ে করেই নিয়ে আসে! রেপ জিনিসটাই তো ইসলামে হারাম। কী বললেন? রেপ হয় তো? দেখেন ভাই, সব মানুষ তো আর একরকম হয় না... কিছু কিছু মেয়ে আছে, স্বভাবেই পতিতা। তারা বোরকা পড়েও ছেলেদেরকে গলত ইংগিত দেয়। ছেলেরা তো ছেলেমানুষ। ওরা ইশারা পেয়ে দিশাহারা হয়ে সাড়া দেয়।

এইসব মেয়েমানুষের জন্যই তো পাথর মারার শাস্তি আছে... শোনেননি? আমার চৌদ্দগুষ্টিতে বোরকাওয়ালীর অভাব নাই। বোরকা পড়ে অনেকে ফষ্টিনষ্টি করে বেড়ায়, স্কুল পালিয়ে বোটানিকাল গার্ডেনে কিংবা রমনাতে গিয়ে হাত-চালাচালি করে আসে- এমন দেখি প্রতিদিন। আমার সালোয়ার-কামিজ কিংবা জিন্স-ফতুয়া পড়েও মেয়েরা আঁতেল হয়, এমনটাও কম দেখিনি। ইসলামে কী আছে, কী নাই জানিনা। ধর্ম বুঝিনা, মানুষ বুঝি।

ইসলাম বুঝি না, বাংলাদেশ বুঝি। আমার কথা পরিষ্কার। বোরকা পড়বি- পড়। যত খুশি তত পড়। তবে বোরকা নিয়ে জ্ঞান কাউকে দিতে আসিস না, তাহলে তোদের প্যাকেট করে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেবো... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।