আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিডনি রোগী বাড়ছে আশংকাজনক হারে, ভেজাল ও কেমিক্যাল মিশ্রিত খাবার অনেকাংশে দায়ি

সত্যের চেয়ে অপ্রিয় আর কিছু নেই

দেশে কিডনি রোগী আশংকাজনক হারে বাড়ছে। এর মধ্যে ক্রনিক রোগী ও শিশু রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক। দেশে প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন কোন না কোন কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিন্তু কিডনি রোগ চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত অপ্রতুল। শিশু কিডনি রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো নগণ্য।

দেশে প্রতি ২৫ লাখ লোকের জন্য আছেন মাত্র একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ। থাকা উচিত প্রতি ৫০ হাজারে একজন। আমাদের দেশে কিডনি রোগ জনস্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম বড় ঝুঁকি। ব্যাপক হারে কিডনি রোগী বাড়ার কারণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, কিডনি রোগের প্রধান কারণ নেফ্রাইটিস। এটা জীবাণুর কারণে হয়ে থাকে আবার অজ্ঞাত কারণেও হতে পারে।

প্রস্রাব দিয়ে এলবুমিন নির্গত হওয়া এবং শরীর ফুলে যাওয়া নেফ্রাইটিসের লক্ষণ। ভেজাল খাদ্য এবং বিষাক্ত দ্রব্যের সংমিশ্রণে তৈরি খাদ্যসামগ্রীর কারণে এই রোগ দ্রুত বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সম্প্রতি এই প্রতিনিধিকে জানান, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় দ্বিগুণ হারে কিডনি রোগী চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে আসছে। ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যসামগ্রী বাংলাদেশে কিডনি রোগ বৃদ্ধির প্রধান কারণ বলে তারা মনে করেন। বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে কিডনি রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।

বাংলাদেশের লোকজনের জন্য এ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি উপদেশ হচ্ছে, রোগ থাকুক আর না থাকুক, প্রতিদিন কমপক্ষে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা হাঁটুন। তহলে দীর্ঘদিন সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবেন। শিশু কিডনি রোগীদের চিকিৎসা সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসমূহে আলাদা শিশু কিডনি ইউনিট চালু করার লক্ষ্যে ৪৮টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ সৃষ্টির আদেশ জারি করা হয়েছে। সরকারি ১৮টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিটিতে একটি করে শিশু কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকের পদ থাকছে। বাকি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসমূহে থাকছে সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকের পদ একটি করে।

সীমিত সম্পদের মধ্যে যুগান্তকারী সরকারি এই পদক্ষেপের ফলে ঢাকার বাইরে গ্রামাঞ্চলের শিশু কিডনি রোগীরা সুচিকিৎসা পাবে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগেরই চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসার আর প্রয়োজন হবে না বলে শিশু কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান। চাহিদার তুলনায় দেশে কিডনি রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা সীমিত। আক্রান্তদের মধ্যে ৯০ ভাগের পক্ষে এই ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব হয় না। বেশির ভাগই চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।

অপরদিকে কিডনি রোগীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে ৯০ ভাগ পরিবার জায়গা জমি বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়ে যায় বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তথ্যানুযায়ী দেশে ২ কোটি লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত। বছরে ৪০ হাজার রোগী মারা যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, যখন একজন রোগী কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়, তখন ধরে নিতে হবে প্রায় ২শ রোগীর কিডনি অকেজো হওয়ার পথে। দেশের বিশিষ্ট কিডনি বিশেষজ্ঞ, কিডনি ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের কোন উপসর্গই পরিলক্ষিত হয় না।

বছরের পর বছর তারা ডাক্তারের শরণাপন্নও হয় না। যখন লক্ষণ দেখা দেয়, তখন তাদের মধ্যে ৭৫ ভাগেরই কিডনি অকেজো হয়ে যায়। ঐ সময় কিডনি নিয়মিত ডায়ালাইসিস কিংবা সংযোজনের প্রয়োজন হয়। নেফ্রাইটিসের পরে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্ত চাপ কিডনি রোগের অন্যতম কারণ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণকে দায়ী করা হয়।

৫১ ভাগ লোক জানেই না তাদের ডায়াবেটিস রয়েছে কিনা, ৬৫ ভাগ জানে না তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে কিনা এবং ৯৪ ভাগ জানে না তাদের প্রসাবের সাথে এলবুমিন নির্গত হচ্ছে কিনা। উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে যাদের, তাদের মধ্যে ৭৫ ভাগের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই। একইভাবে ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে ৫০ ভাগের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এইসব কারণে কিডনি রোগ ভয়াবহ হারে বাড়ছে বলে উক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, ৯০ ভাগ রোগী ডায়ালাইসিস করে কিডনি সচল রাখতে শুরু করলে তিন মাস পর আর্থিক সমস্যার কারণে তা বন্ধ করে দেয়।

ফলে তারা মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মোট জনসংখ্যার ১৮ ভাগই কোন না কোন কিডনি রোগে আক্রান্ত বলে তিনি জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও শিশু কিডনি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, শিশুদের মধ্যে নেফ্রোটিক সিনড্রোম বেশি। তাদের শরীরে পানি এসে ফুলে যায়। প্রকৃত কারণ পাওয়া না গেলে এলার্জি, ঘন ঘন ইনফেকশন, প্রস্রাব দিয়ে এলবুমিন নির্গত হওয়ায় ঐ শিশুদের শরীর ফুলে যায়।

মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ছয় মাসে ২টি ও দেড় বছর আগে ১টিসহ মোট তিনটি শিশুর কিডনি সংযোজন করা হয়। তারা সুস্থ রয়েছে। আগামী ১১ মার্চ বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে শিশুদের কিডনি রোগ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ৪৮টি শিশু কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের রোগীরা উপকৃত হবে বলে তিনি জানান। শেরে বাংলা নগর ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এআর খান বলেন, শিশু হাসপাতালে কিডনি বিভাগে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক রোগী আসছে।

চাহিদার তুলনায় এই হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা সীমিত। তবে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে পরিচালক জানান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, যাদের বয়স ৪০ বছরের উপরে তাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ প্রস্রাবে এলবুমিন নির্গত হচ্ছে কিনা তা বছরে একবার পরীক্ষা করে দেখা উচিত। যাদের বংশে কিডনি রোগী আছে, তাদের পরিবারের সকল সদস্যের প্রস্রাব ও রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ। ----------------------------- সুত্র: আবুল খায়ের, ইত্তেফাক।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.