আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাতীয় শিক্ষানীতি ও শিক্ষায় ভাষা মাধ্যম

Bangladesh: Dream

ভাষার মাস ফেব্র“য়ারি। এ মাসের আন্দোলনকে অনেকে বলেন ভাষা আন্দোলন। শুধু ভাষা আন্দোলন বললে ভাবটা পূর্নাঙ্গ হয়না, বলা উচিত রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলন। ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখকে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরন করি। এ বছরের একুশ তারিখ সবে গত হলো।

অবশ্য ফেব্র“য়ারি এখনও বিদ্যমান। ফেব্র“য়ারির সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা যে বাংলা পেয়েছি, সে সংগ্রাম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। একুশে ফেব্র“য়ারি ১৯৯৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বের সকল দেশ দিবসটি পালন না করলেও তারা জানে একুশে ফেব্র“য়ারিকে। অনেক দেশ দিবসটি পালনও করে।

এ ফেব্র“য়ারি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, চেতনা আর গর্বই নয়। আমাদের কন্ঠ, আলাদা জাতিসত্তার পরিচয়, স্বাধীন পতাকার সূতিকাগার ও বটে। মানুষ হিসেবে বেঁচে প্রত্যেককে কথা বলতে হয়। প্রয়োজন পূরনে ব্যবহার করতে হয় ভাষা। পরস্পরের ভাব আদান প্রদানে, যোগাযোগে, চলতে-ফিরতে সর্বত্র ভাষার প্রয়োজন।

ভাষা ব্যবহারের সবচেয়ে বড় যে ক্ষেত্র সেটি শিক্ষা। শিক্ষাগ্রহন ও প্রদানে ভাষার ব্যবহার অনস্বীকার্য। শিক্ষার উপাদান হিসেবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান, বই ইত্যাদিকে চিহ্নিত করা হয়। এর বাইরে ভাষা যে কত গুরুত্বপূর্ন তা অনেকেরই দৃষ্টি গোচর হয়না। ভাষার মাধ্যমেই একজন শিক্ষক শিক্ষাদেন।

এ ভাষার বিষয়কে শিক্ষাবিঞ্জানে বলা হয় ’মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশন”। এ মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশন বা শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে ভাষার সার্থক ব্যবহারের মাধ্যমেই শিক্ষায় সফলতা আসে। স্বাভাবিক ভাবেই এ ভাষা মাধ্যম শিক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আমাদের দেশে এ ভাষা মাধ্যম নিয়ে খুব কমই মাতামাতি হয়। ব্যতিক্রমটা ফ্রেব্র“য়ারি।

অর্থাত এ ফেব্র“য়ারিকে ঘিরে ভাষা মাধ্যম নিয়ে কিছু আলোচনা শোনা যায়। পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশেই নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা দেয়া হয়। আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। সংগ্রাম করে আমরা বাংলা পেয়েছি। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাই আমাদের শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত।

এ শিক্ষার মাধ্যম নিয়ে এবারের শিক্ষানীতির নির্দেশনা কী? এর বাস্তবতাই বা কতটুকু ইত্যাদি নিয়ে আলোচনার প্রয়াস চালাচ্ছি। (যদিও শিক্ষানীতি এখনও খসড়াই রয়ে গেছে। চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। ) শিক্ষানীতিতে ভাষা মাধ্যম বা মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশনের দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষাস্তর অনুযায়ী দেখা যাক। মোটাদাগে বললে শিক্ষাস্তর তিনটি প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষা।

অবশ্য প্রাথমিকের আগে প্রাক-প্রাথমিককে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের আগে বলে প্রাক-প্রাথমিকের আলোচনা প্রথমেই এসেছে। এ স্তরে ভাষার কথা স্পষ্ট না থাকলেও শিক্ষাদান পদ্ধতি এসেছে। শিক্ষানীতির দ্বিতীয় অধ্যায়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কৌশল শিরোনামে বলা হয়েছে, ”অন্যান্য গ্রহনযোগ্য উপায়ের সঙ্গে ছবি, রং, নানা ধরনের সহজ আকর্ষনীয় শিক্ষাউপকরন, মডেল, হাতের কাজের সাথে সাথে ছড়া, গল্প, গান ও খেলার মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হবে। ” আসি প্রাথমিক শিক্ষায়।

প্রাথমিক শিক্ষায় ও ভাষা মাধ্যম নিয়ে স্পষ্ট কিছু নেই। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য উদ্দেশ্যে শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং আদিবাসিদের ভাষা নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য এসেছে। সংশ্লিষ্ট তিনটি লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো- ক্স ”মানবিক বিকাশ এবং দেশজ আবহ ও উপাদান ভিত্তিক পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক রচনা এবং অনুসরন করা। ক্স কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে এবং অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী সবধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ানো বাধ্যতামূলক করা হবে। ক্স প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে আদিবাসি সহ সকল ক্ষুদ্্র জাতিসত্তার জন্য স্ব স্ব মাতৃভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।

এরপর প্রাথমিক স্তরে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবস্তু শিরোনামে কিছু নির্দেশনা দেয়া আছে, এখানে বাংলার কথা বলা না থাকলেও ইংরেজির কথা বলা হয়েছে, ”মানসম্পন্ন ইংরেজি লিখণ কথনের লক্ষ্যে যথাযথ কার্যক্রম শুরু থেকেই গ্রহন করা হবে এবং ক্রমান্বয়ে ওপরের শ্রেনী সমুহে প্রয়োজন অনুসারে জোরদার করা হ্েব। ” মাধ্যমিকের ব্যাপারে শিক্ষানীতির চতুর্থ অধ্যায়ে বিবৃত হয়েছে। এ স্তরের কৌশল শিরোনামে প্রথমেই এসেছে শিক্ষার মাধ্যম। বলা হয়েছে, ”শিক্ষার মাধ্যম এই পর্যায়ে মূলত বাংলা হবে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য অনুযায়ী নির্দিষ্ট পাঠ্যসূচী ইংরেজি মাধ্যমেও শিক্ষা দেয়া যাবে।

বিদেশীদের জন্য সহজ বাংলা শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা বাঞ্চনীয়। ” মাধ্যমিকের পর উচ্চশিক্ষা। উ্চ্চ শিক্ষায় ভাষা আলোচনা এসেছে উচ্চশিক্ষার কৌশল হিসেবে। অনেকগুলো কৌশলের মধ্যে দুটি কৌশল ভাষা সংক্রান্ত। এর একটি হলো, ”বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সকল ডিগ্রি কোর্স পর্যায়ে ১০০ নম্বরের / ৩ ক্রেডিট ইংরেজি বিষয় সকল শিক্ষাথীর জন্য বাধ্যতামুলক হবে।

” অন্যটি হলো-”উচ্চশিক্ষার শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি হবে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের। উচ্চশিক্ষায় বাংলা সম্প্রসারিত ও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ইংরেজিসহ অন্যন্য ভাষায় রচিত আধুনিক ঞ্জান-বিঞ্জানের ব্যবহারযোগ্য গুরুত্বপূর্ন রচনা বাংলা ভাষায় ভাষান্তরিত হওয়া প্রয়োজন। এই কাজকে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ গন্য করে ব্যবস্থা গ্রহন জরুরি। উচ্চশিক্ষায় ইংরেজির ব্যবহার চালু থাকবে। ” ভাষা বিষয়ক সুপারিশের কথা বললে গোটা শিক্ষানীতিতে এই ছিলো বর্ণনা।

এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বললেও স্পষ্ট করার বিষয় হলো সকল স্তরের ভাষা মাধ্যম হবে বাংলা। সকল স্তরে বাংলার সাথে যে ভাষার প্রয়োজন ছিলো তা বলা হয়েছে। যেমন আদিবাসিদের ভাষার কথা এসেছে, ইংরেজির ভূমিকাও কয়েক স্থানে বলা হয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, এসব ভাষা বিষয়ক সুপারিশ মালার মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে, শিক্ষার মাধ্যমের বিশেষ কোন গুরুত্ব এ শিক্ষানীতিতে নেই। কারন এ বিষয়ে যা বলা হয়েছে সবই এমন ঢিলেঢালা যার নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা করনীয় নির্ধারণ করা হয়নি।

শিক্ষানীতির এসব সুপারিশের আলোচনা বাস্তবতার আলোকে দেখা যেতে পারে। প্রাক-প্রাথমিকের ভাষার কথা বলি আর বইয়ের কথা বলি, এখানে বলা হয়েছে ছবি,রং, সহজ শিক্ষা উপকরন আর ছড়া গল্পের কথা। মূলত: এ স্তরটিকে দেখানো হয়েছে প্রাথামক শিক্ষার প্রস্তুতির স্তর হিসেবে। শহরে বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় প্রাথমিকের আগেই তিনটি শ্রেনী কেজি, নার্সারী ইত্যাদি নামে এসব ক্লাসে শিক্ষানীতিতে বিদ্যমান কৌশল গুলো তো বস্তবায়ন হয়ইনা বরং অনেক বোঝা শিক্ষার্থীদের মাথায় চাপিয়ে দেয়া হয়। আড়াই থেকে তিন বছরেই স্কুলে যাচ্ছে শিশুরা।

বাংলাতো বটেই ইংরেজির নানা বই ও শিশুদেও পড়ানো হয়। শিক্ষানীতি এ স্তরের জন্য কোন কারিকুলাম করেনি। খেলাধূলা বা মজার মাধ্যমে বিদ্যালয়ে আসার অভ্যাস করানো উদ্দেশ্য হলেও বাস্তবতা তো আমরা দেখছিই। প্রাথমিক শিক্ষায় আসা যাক। এখানে ভাষা মাধ্যম হিসেবে বাংলার কথ স্পষ্ট না হলেও “দেশজ আবহ” বলে একটা শব্দ এসেছে।

এর দ্বারা শুধু বাংলাকেই অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি, সাথে সাথে বাংলাদেশের সংসকৃতির বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি আবার ইংরেজি বলা ও লেখার জন্য কার্যক্রম নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর সাথে আদিবাসিদের মাতৃভাষায় শিক্ষাকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রভাষা ও মাতৃভাষা দুটি ভিন্ন বিষয়। প্রত্যেক মানুষেরই মাতৃভাষায় ঞ্জান অধিকার আছে।

আমাদের শিক্ষানীতি আদিবাসিদের তাদের মাতৃভাষায় ঞ্জান চর্চার সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে সে অধিকার্েকই স্বীকৃতি দিচ্ছে। তারা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা শিখবে মাদতৃভাষা হিসেবে নিজেদের ভাষা্েতা আছেই। শিক্ষানীতি যে দেশজ আবহ ও উপাদান ভিত্তিক পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক রচনা এবং অনুসরন করার কথা বলেছে, তার সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে, আমাদেও দেশে গড়ে উঠেছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। একেতো বাংলার বা বাংলা ভাষার ছোঁয়াতো এখানে নেইই, পাশাপাশি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ-সংস্কৃতি সবই শেখানো হচ্ছে বাইরের বিশ্বের। শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে বসেই লালন করছে অন্যদের সংস্কৃতি।

একটি বাস্তব ঘটনার কথা বলা যেতে পারেÑ বঙ্গবন্ধু(যমুনা) সেতুর উপর দিয়ে যাচ্ছে বাবা আর ইংলিশ মিডিয়ামে পড়–য়া ছেলে। বাবা ছেলেকে সেতুটা দেখিয়ে বলছে , এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেতু আর যে নদীটা দেখছো এটি দেশের অন্যতম বড় নদী। ছেলে বাবার কথা শুনে বলেছে, নদীটি নিশ্চয়ই নদীর চেয়ে বড় হবে না?। অর্থাৎ ছেলে যে টেমস নদী পড়ে এসেছে সেটাই তার কাছে বড়, টেমস যমুনার চেয়ে যতই ছোট হোক না কেন। এ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ব্যাপারে শিক্ষানীতির ভূমিকা নিরব দর্শক বৈ কিছু নয়।

শিক্ষানীতি প্রথম শ্রেনীথেকেই যে ইংরেজি বিষয়টি পড়ানোর কথা বলেছে তা নিয়ে অনেকেরই দ্বিমত রয়েছে। শিক্ষাস্তরের প্রথম থেকেই মাতৃভাষার বাইÍে এসে অন্য একটি ভাষা শিক্ষার্থীদের মাথায় উঠিয়ে দেয়া, একেতো বোঝা তারওপর ভিনদেশি ভাষা। উন্নত বিশ্বের কোন দেশে প্রাথমিক স্তরেই মাতৃভাষার বাইরে অন্যভাষা এভাবে শিখানো হয়না। জাপান, ফ্রান্স, স্পেন, রাশিয়া যার পকৃষ্ট উদাহরন। যারা সাধারন শিক্ষায় ইংরেজিই মেনে নিতে পারছেন না, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল মেনে নেয়ারতো প্রশ্নই উঠেনা।

এসব স্কুলের ব্যাপারে শিক্ষানীতির একটি দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন ছিলো। অন্তত ইংরেজি ভাষায় আমাদের প্রাথমিকের সিলেবাসগুলো অনুবাদ করে বাধ্যতামূলকভাবে সকল প্রতিষ্ঠান পড়াবে। ( এখন ও কিছু কিছু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে এ পদ্ধতি চালু আছে। ) আর বাংলা বিষয়টা বাংলাই পড়াবে। এক্ষেত্রে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুওলা যে আন্তজাতিক মান আনুসরন করে আমাদের পাঠ্যপুস্তক গুলোও সে মানেই তৈরি হবে।

মাধ্যমিক স্তরে এসে স্পষ্টভাবে প্রখম বাংলার কথা এসেছে, ”শিক্ষার মাধ্যম এই পর্যায়ে মূলত বাংলা হবে, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য অনুযায়ী নির্দিস্ট পাঠ্যসূচি ইংরেজি মাধ্যমে ও শিক্ষা দেয়া যাবে”। অর্থাৎ এ নীতি অনুযায়ী এ স্তরের মাধ্যম বাংলা। কিছু বিষয় ইংরেজিতে শিক্ষাদেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য বলতে কি বুঝাতে চেয়েছে শিক্ষানীতি তা স্পষ্ট নয়। তবে এর দ্বারা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল যে বুঝানো হয়নি তা স্পষ্ট।

নির্দিষ্ট পাঠ্যসূচি বলতে প্রাথমিক স্তর থেকে যেসব বিষয় ইংরেজিতে পড়ে আসছে সেগুলোই বুঝাবে এর সাথে হয়তো কিছু বিষয় বাড়তে পারে। এর মাধ্যমে বলা যায় মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষানীতি স্বীকৃত ভাষা মাধ্যম দুটি বাংলা এবং ইংরেজি। উচ্চশিক্ষায় ভাষা মাধ্যম হিসেবে মাধ্যমিকের মতো বাংলাটা এতো স্পষ্ট নয়। তবে বাংলার কথা এসেছে আন্যভাবে। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ লেভেলের উচ্চশিক্ষায় ইংরেজি্েত নির্দিষ্ট ক্রেডিট পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়ছে।

কিন্তু বাংলার ব্যপারে এমন কোন ক্রেডিট বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তবে বাংলাকে সম্প্রসারিত ও সমৃদ্ধ করতে ইংরেজি সহ অন্যান্য ভাষার গুরুত্বপুর্ন রচনা বাংলায় ভাষান্তরিত করতে সুপারিশ এসেছে। উচ্চশিক্ষায় মোটাদাহে দুটি ভাগ দেখা যায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়াম অব ইন্সট্রাকশন বাংলা ধরা হলেও বিভাগ আনুযায়ী ভিন্নতা দেখা যায়।

যে বিষয়টি প্রয়াত অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ তার বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙলা ভাষা শিরোনামের প্রবন্ধে তুলে ধরেছেন, ” সাধারন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও বাঙলার স্থান প্রায় নেই। অর্থনীতি বা হিশেব বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা বিঞ্জানের বিভিন্ন বিভাগ কিছুটা বেশি শক্তিমান, তাই সেগুলোতে বাঙলার স্থান প্রায় নেই”। আর আমাদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে তো বাংলা পাওয়াই দুষ্কর। ইংরেজি বলতে পারুক না পারুক অন্তত বাংলা চলে না। অবার ও হুমায়ুন আজাদ ”বাঙলাদেশের অসাধারন বিশ্ববিদ্যালয় বা মহাবিদ্যালয় গুলো অবস্থিত অনেকটা বাংলা ভাষা এলাকার বাইরে; সেখানে বাঙলার অধিকার নেই; কারন সেগুলো খুবই শক্তিমান”।

পড়ার বিষয় হিসেবে বাংলা প্রাইভেট বিশ্ববির্দালয়ে নেই। কর্পোরেট মার্কেট চাহিদার বিষয়টি মাথায় নিয়ে বিবিএ ইংরেজি এমন দু একটি বিষয় নিয়েই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষানীতির এ ব্যাপারে তেমন কোন মাথা ব্যাথা পরিলক্ষিত হয়নি। ভাষা মাধ্যম নিয়ে চূড়ান্ত কোন কখা বলা না গেলেও, বলা যায় এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন নীতি নেই। প্রাথমিক স্তর থেকেই শিক্ষার্থীরা বাংলা পড়ে আসছে, তার সাথে ইংরেজির লেজতো লাগানো আছেই।

এরপরও শিক্ষার্থীরা মান বাংলা ব্যবহার করতে জানেনা, ইংরেজিতো অনেক দূরে। এর অর্থ ভাষা নিয়ে আমাদের পরিকল্পিত কোন চিন্তা নেই। গল্প কবিতার সিলেবাস বাস্তব ময়দানে কোন কাজ দেয়না। ভাষার যে চারটি দক্ষতা আছে শোনা, বলা, পড়া এবং লেখা এগুলোর আলোকে বাস্তবধর্মী সিলেবান প্রনয়ন করা দরকার। এ লক্ষ্যে কয়েক বছর ধরে ষষ্ঠ শ্রেনী থেকে কম্যুানকেটিভ পদ্ধতিতে ইংরেজি বিষয়টি চালু হয়েছে।

এ পদ্ধতিতে ইংরেজি ভাষার দক্ষতাগুলো আয়ত্ত আসার কথা থাকলেও কাংখিত ফল কিন্তু আসেনি। সমস্যাটা শিক্ষাদানে। আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষকরা পাঠদেন, তাদের অধিকাংশেরই ইংরেজির এসব দক্ষতা বলতে গেলে শুন্য। ফলে পরীক্ষায় পাশ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য হাসিল হয়না। আবার বাংলায় শিক্ষকরা শ্রেনীকক্ষে মানভাষা ব্যবহার করেননা।

শিক্ষার্থীরাও শিখেনা। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের মতো শুধু আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলাকে এ পর্যায়ে এসে একমাত্র শিক্ষার মাধ্যম করা সম্ভব নয়। তবে অনেকে এ কথা মানতে নারাজ, বাস্তবতা হলো, বর্তমান প্রযুক্তির পৃথিবীই বলি আর বিশ্বায়নই বলি ্ এগ্লোবাল ভিলেজে শুধু বাংলা নিয়ে বেচেঁ থাকা বা সামনে এগিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন। জাপান, ফ্রান্স, রাশিয়া বা অন্যান্য দেশ কিভাবে সম্ভব করেছে? প্রশ্নটা অস্বাভাবিক নয়। এসব দেশ তাদের মাতৃভাষাকে নিয়ে বিশেষ টার্গেটে এগিয়েছে।

নিজেদেও ভাষায় যেমন আধুনিক বিশ্বেও আপডেট গ্রন্থ রচনা করেছে । তদের ভাষা ছাড়াও বিষেক্ষর অন্য যে ভাষাতেই উন্নত কোন বই বা প্রকাশণা এসেছে সাথে নিজেদের ভাষায় অনুবাদ কওে ফেলেছে। তাদের শিক্ষার্থীরা গোটা পৃথিবীর আপডেট ঞ্জানকে নিজের ভাষায় পেয়েছে। মাতৃভাষার মাধ্যমেই উন্নতি করেছে। আমাদের বাংলায় সমৃদ্ধ সাহিত্য বা বইয়ের আভাব নেই বটে কিস্তু এর বাইরে এর চেয়ে অনেক প্রকাশনা রয়েছে।

যা আমরা বাংলায় অনুবাদ করতে পারিনি। পৃথিবী যত দ্রুত এগুচ্ছে সকল ঞ্জান ভান্ডারকে বাংলায় অনুবাদ করে মাতৃভাষায় শিক্ষাদান সম্ভব নয়। উচ্চশিক্ষায় কৃষির কথা বলি, যারা দেশের মাটি, ফসল, খাদ্য নিয়ে গবেষণা করছে তাদের ইংরেজিতে রচিত বই পড়তে হয়। চিকিৎসা বিঞ্জানে উচ্চশিক্ষায় বাংলায় কয়টা বই আছে? প্রকৌশলে কিংবা অন্যন্য বিষয়ে বাংলার কয়টা বই আমরা পাব? মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে অনেকেই জোর গলায় কথা বলেন। সেটা হলে ভালোও হতো, আমরা নিজেদের ভাষায় পড়ে দ্রুত উন্নতি করতে পারতাম।

বিশ্বপরিক্রমায় বর্তমান পর্যায়ে সৎসাহস নিয়ে এ কথা বলাটা কঠিন। এ সাহস দেখানো যেতে পারে এখন থেকেও যদি পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হওয়া যায়। রিস্ক থেকেই যাবে,তবুও চ্যালেঞ্জ নেয় যেতে পারে। প্রথম কাজটা হতে পারে ব্যুরো অব ট্রান্সলেশন অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অনুবাদ সংস্খা গড়ে তোলা। যেটি আধুৃনিক বিশ্বের জ্ঞান ভান্ডারকে অনুবাদ করবে।

দ্রুত গতিতে এ কাজকে এগিয়ে নিতে আমাদের মেধাবীদের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে কিংবা প্রবাসী বাঙ্গালীদের কাজে লাগানো যেতে পারে। অনুবাদ বা ভাষান্তরের বিষয়টি শিক্ষানীতিতে ও এসেছে,” উচ্চশিক্ষায় বাংলা সম্প্রসারিত ও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ইংরেজি সহ অন্যান্য ভাষার রচিত আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের ব্যবহারযোগ্য গুরুত্বপূর্ন রচনা বাংলা ভাষায় ভাষান্তরিত হওয়া প্রয়োজন। ” এছাড়া আমাদের বিদ্যমান ব্যবস্থায় ও অগ্রসর হওয়া যায়। বাংলা এবং ইংরেজি যেভাবে শিক্ষার্থীরা একসাথে শিখছে সেটা থাকবে, তবে কারিকুলাম হবে বাস্তবমুখী। প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্তর শেষ করার পর উচ্চশিক্ষায় ইংরেজি পড়তে যাতে কাউকে হোচট খেতে না হয়।

সে কারিকুলাম শিক্ষার্থীর বয়স, মনন, বুদ্ধিও আলোকে বাস্তবমুখী হবে। এরসাথে যোগ্য শিক্ষকমন্ডলীর ও সমাবেশ ঘটানো যেতে পারে। ২১ তারিখ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট উদ্বোধন করেছেন, এ ইনস্টিটিউট সত্যিকারার্থে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা নিয়ে গবেষনা করে, বাংলাকে বিশ্বেও দরবারে পৌছাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। শিক্ষানীতি আমাদের ভাষা মাধ্যমে যে কৌশল নির্ধারণ করেছে সেগুলোর বাস্তবায়ন এবং এনীতি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে বাস্তবমুখী কিছু ব্যব¯থা নেয়ার মাধ্যমে শিক্ষার মাধ্যমকে শক্তিশালী করা যায়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.