আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিনা টু মক্কা আমি ও এক চ্যাটার একাউন্টেন্ট এবং বাংলাদেশে নতুন এক ধর্মের আবির্ভাব



খুব সম্ভব ১৪২৭ হিজরীর কথা। ১২ই জিলহজ্জ মীনাতে হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছি। পড়ন্ত বিকেলে মীনা থেকে মক্কায় ফিরছি। যে বাসে চড়েছি তার আরোহী সবাই বাংলাদেশের হজ্জযাত্রী। আশপাশের কারো সাথে পূর্ব পরিচয় নেই।

পাশে উপবিষ্ট লোকটি বিড়বিড় করে হজ্জযাত্রীদের সাথে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে। কথাবার্তায় পরিস্কার বুঝা যায় তিনি প্রবাসী। কোন হাজী হোটেলে প্রহরীর কাজ করেন। তার গালগপ্পের মূখ্য বিষয়- শিয়াদের নানান গৌরব গাঁথা, তাদের কাছ থেকে পাওয়া বড় মাপের বখশিশ, শিয়া বিশ্বাস ইত্যাদি। বৈষয়িক স্বার্থের টোপে পড়ে তিনি যে শিয়া মতবাদের প্রতি অনুরক্ত তাতে সন্দেহ নেই।

আমার পাশের সিটে বসে আছেন বাংলাদেশের একজন নামকরা চ্যাটার একাউন্টেন্ট। ভদ্রলোক নিজেই কথা পাড়লেন- বয়স তো মনে হয় অনেক কম; আপনি কী হজ্জে এসেছেন? সবিনয়ে জানালাম, সৌদিতে পড়াশুনা করি, সে সুবাদে হজ্জে আসা। জ্যামে পড়ে গাড়ীও থেমে থাকে কথার পিঠে কথাও বাড়ে। উঠে এল শিয়াদের প্রসঙ্গ। ভদ্রলোক শিয়াদের প্রতি অতি বেশী অনুরক্ত।

প্রসঙ্গতঃ শিয়াদের কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাসকে আলোচনায় আনলাম। প্রত্যুত্তরে ভদ্রলোক নিজের অবিশ্বাস ও সন্দেহপূর্ণ বিশ্বাসের খবর দিয়ে আমাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিলেন। ভাবলাম চোর তাড়াতে গিয়ে বুঝি ডাকাতের পাল্লায় পড়লাম। বললেন, কে ঠিক আর কে বেঠিক, কে জান্নাতে যাবে আর কে দোযখে যাবে তাতো আল্লাহ ভাল জানেন। বরঞ্চ আমি তো মনে করি হিন্দুরাও জান্নাতে যাবে।

ইহুদীরাও জান্নাতে যাবে। আপনি কী জানেন হিন্দুরাও রোজা রাখে। বরঞ্চ তাদের রোজা আমাদের রোজার চেয়েও কঠিন। তারাও হজ্জ করে। মাথা ন্যাড়া করে।

কোন ধর্ম ঠিক তা আল্লাহ ভাল জানেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে আপনি হজ্জে এলেন কেন? তিনি বললেন, আমি এসব পালন করে আনন্দ পাই। আর হিন্দুরা ঐ সব করে আনন্দ পায়। জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কী অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরকে কাফের মনে করেন না!? কাফেররা তো জাহান্নামে যাবে এটা ইসলামের ঘোষণা, আপনি কি তা মানেন না। তিনি বললেন, আপনি এ কথা বলতে পারেন না।

এটা আল্লাহই ভাল জানেন। বাস গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ায় নেমে পড়লাম। আমার বুঝতে বাকী রইল না, এ ব্যক্তি ধর্মনিরপেক্ষ, মুসলিম নয়। মুসলিম নামের আড়ালে তিনি চুরি করে পবিত্র মক্কা নগরীতে ঢুকে পড়েছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি মক্কায় প্রবেশের অধিকার রাখে না।

মক্কা মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত নগরী। বোধহয় আমার দেখা ইনিই প্রথম কোন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি। সেদিন ভেবেছি বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের আড়ালে হাতেগোনা দু/এক জন ধর্মনিরপেক্ষ অমুসলিম হয়তো গা ঢাকা দিয়ে আছে। কিন্তু, না আজ দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের কাউকে আর মুসলিম থাকতে দেয়া হবে না। আগে হয়তো পাঠোদ্দেশ্যে ইউরোপআমেরিকায় পাড়ি জমিয়ে গোটাকয়েক শিক্ষিতজন ওরিয়ান্টালিস্টদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ধর্মনিরপেক্ষ হতেন।

কিন্তু না আজ রাষ্টযন্ত্র তার খড়গ দেখিয়ে আমাকে ধর্মনিরপেক্ষ বানাবে। আমাকে মুসলিম থাকতে দেয়া হবে না। আমাকে আমার ধর্ম পড়তে দেয়া হবে না। যেন আমি ধর্মজ্ঞানহীন হয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা মেনে নেই। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাবে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম থাকবে না। বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। রাষ্ট্র ধর্মের ঘরে ধর্মনিরপেক্ষতা লেখা হবে। তবে কি ধর্মনিরপেক্ষতা একটি নতুন ধর্ম নাকি ধর্মের শত্রু? তা না হলে বাংলাদেশের রাষ্ট ধর্ম ইসলাম এর পরিবর্তে ধর্মনিরপেক্ষতা লেখা হবে কেন?! আর যদি ধর্মনিরপেক্ষতা নতুন কোন ধর্ম না-ই হয় তাহলে বাংলাদেশের রাষ্টধর্ম ইসলাম থাকতে আপত্তি কোথায়। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরাশক্তি আমেরিকান ডলারের গায়ে যদি লেখা থাকতে পারে 'ইন গড উই ট্রাস্ট' তাহলে আমাদের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম থাকতে আপত্তি কেন।

আমেরিকাতে কি ধর্মনিরপেক্ষ ও নাস্তিকরা বাস করে না?!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.