আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাহসী ঝরনার সঙ্গে এমন আচরণ কেন!

‘পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও আমাকে চাকরি দিতে চেয়েছিলেন। গত চার মাসে আমি সাত-আটবার ঢাকায় এসে সারা দিন বসে থেকে খুব কষ্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেয়েছি। তিনি ফোনে কাদের যেন নির্দেশও দিয়েছেন, লিখিত নির্দেশও দিয়েছেন। কাজ হয়নি। ’ এ কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর সেই সাহসী কন্যা ঝরনা বেগম।

গত ১ এপ্রিল রাজশাহীতে একজন পুলিশ কর্মকর্তার ওপর জামায়াত-শিবিরের নির্মম হামলার সময় তাঁকে উদ্ধারে এগিয়ে এসেছিলেন এই ঝরনা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম নামের ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে সাহায্য করেছিলেন তিনি। নিজের ওড়না দিয়ে ওই কর্মকর্তার মাথা পেঁচিয়ে রক্ত আটকানোরও চেষ্টা করেন ঝরনা।
এ ঘটনা তখন সারা দেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। সাহসী কন্যা হিসেবে ঝরনা বেগম সব মহলে প্রশংসিত হন।

তাঁকে ঘটা করে সংবর্ধনাও দিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর, রাজশাহী মহানগর পুলিশ এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়। মানবতার খাতিরে ও বিবেকের তাগিদে যে ঝরনা সেদিন ঝুঁকি নিয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তাকে রক্ষা করতে ছুটে গিয়েছিলেন, সাহসিকতার জন্য যে ঝরনাকে স্বীকৃতি স্মারক ও সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়েছিল, সেই ঝরনা এখন চাকরির আশায় ঘুরছেন। ‘চাকরি হবে’ বলে যাঁরা কথা দিয়েছিলেন, তাঁরা কেউ কথা রাখেননি।
ঝরনার সঙ্গে গতকাল দেখা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তিনি বলেন, ‘রাজশাহী পুলিশ কমিশনারের কাছে গেলেই তিনি বলেন, “তোমাকে কী চাকরি দিব?”
একবার পুলিশ লাইনস স্কুলে চাকরি দিতেও চেয়েছিলেন।

কিন্তু আজ পর্যন্ত আমার চাকরি হয়নি, আর হবে বলে মনেও হয় না। ’
হতাশ ঝরনার জিজ্ঞাসা, ‘চাকরির আশ্বাস দিয়ে কেন আমাকে এভাবে হয়রানি করা হচ্ছে?’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে গতকাল সকালে পাঁচ বছরের শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসেন ঝরনা বেগম। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেখা মেলে তাঁর।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বেলা সোয়া তিনটায় খাওয়ার জন্য বাসায় রওনা হলে তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় দেন ঝরনা। বলেন, ‘আমি সেই ঝরনা বেগম।

’ দর্শনার্থীদের ভিড়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর দিকে তেমন নজর না দিলেও নাম শুনে তাঁর দিকে তাকান। এরপর জানতে চান, কী খবর? চাকরি হয়েছে? পুলিশ কর্মকর্তারা কী বলেছেন?
ঝরনা জবাব দেন, চাকরি হয়নি, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কার্যালয়ে ঘুরতে ঘুরতে তিনি হয়রান হয়ে গেছেন। দ্রুত একটা কিছু করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান তিনি।
‘চাকরি হবে, দেখি কী করা যায়’ বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা তখন ঝরনাকে জানান, ‘মন্ত্রী আবার আসবেন।


ক্লান্ত ঝরনা এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষাগারে বসে পড়েন। ক্ষুধার্ত শিশুটি তখন কাঁদছিল, মায়ের চোখেও পানি।
ঝরনা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আর পারছি না আপা। রাতেই আবার রাজশাহী ফিরে যাব। ছেলেকে একা রেখে এসেছি।

আসতে-যেতে খুব কষ্ট। রাজশাহী মহানগর পুলিশের কার্যালয় আমাকে বলে, আজ আসেন, কাল আসেন, পরশু আসেন। ’ এর আগেও ঝরনা সাতবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, আমার সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ দেবেন। আমাকে চাকরি দেবেন।

তিনি অনেকবার আন্তরিকভাবে ফোনে কমিশনারকে বলেও দিয়েছেন। যখনই মন্ত্রী ফোন করেন, পরদিনই আমাকে রাজশাহীতে গিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়। মন্ত্রী প্রতিবারই আমাকে বলেন, “কাল থেকেই তুমি যোগদান করতে পারবা। ” কিন্তু চাকরি আর হয় না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একবার লিখিতও দিয়েছেন।

কিন্তু সেই লেখা নাকি কেউ বোঝেও না। ’
সন্ধ্যা ছয়টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সচিবালয়ে ফিরে এলে ঝরনা আবারও অনেক কষ্টে দেখা করেন। শেষ পর্যন্ত কী হলো, জানতে চাইলে ঝরনা বলেন, ‘মন্ত্রী তাঁর লাল ফোন দিয়ে কমিশনারকে ফোন করে আমাকে চাকরি দিতে বলেছেন। প্রতিবারের মতো মন্ত্রী এবারও বলেছেন, আমি রাজশাহী ফিরে গেলেই চাকরি হয়ে যাবে, কাজে যোগ দিতে পারব। ’
তবে ঝরনা এবার আর আশাবাদী নন।

বলেন, ‘আমি জানি, এবারও আমার চাকরি হবে না। কেননা আজই পুলিশ কমিশনার বদলি হয়েছেন। চাকরির আশ্বাস দিয়ে এভাবে হয়রানি করা হবে জানলে আমি এ পথে পা বাড়াতাম না। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।