আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৯৭১ এর পরবর্তী রহস্যজাল



বি:দ্র: এটি একটি সিরিয়াস পোস্ট। দয়া করে সিরিয়াস কমেন্ট দেবেন। দলীয় রাজনৈতিক কমেন্ট কাম্য নয়। আমার জন্ম ১৯৮৯ এ। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক নানা পট পরিবর্তনের ঘটনা জানতে হয়েছে বই পড়ে এবং বড়দের কাছ থেকে শুনে।

দুর্ভাগ্য অথবা সৌভাগ্য নিজ চোখে গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত অনেক ঘটনা দেখার সুযোগ হয়নি আমার এবং আমার প্রজন্মের অনেকের। কথা না বাড়িয়ে মূল প্রসঙ্গে আসি। আমি যতটুকু জেনেছি বুঝেছি তাতে আমার মনে হয়েছে ১৯৭১ এর চেয়ে তার পরের বছরগুলির ইতিহাস অনেক বেশি রহস্যাবৃত এবং বিতর্কিত। প্রকৃত ঘটনা বর্ণনা করার মত ব্যক্তি সমাজে বিরল এবং নিভৃতচারী। বেশিরভাগ মানুষই ইতিহাস বর্ণনা করেন আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপির দৃষ্টিকোণ থেকে।

ব্লগ যেহেতু একটি মুক্ত আলোচনার জায়গা এবং এখানে পরিচয় গোপন রেখে মত প্রকাশ করার সুযোগ আছে সেহেতু '৭১ এর পরবর্তী ঘটনাগুলো যারা জানেন তাদের কাছে জানতে চাইছি। আমার জানামতে, শেখ মুজিবর রহমান ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং অসাধারণ সাংগাঠনিক ক্ষমতাসম্পন্ন একজন নেতা। '৭১ এর আগে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সব মানুষের নেতা ছিলেন তিনি। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

এখানে তার নেতৃত্ব বলতে যুদ্ধে তার নেতৃত্ব নয় বরং রাজনৈতিক অভিভাবকত্বের কথা বলা হচ্ছে। যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না কেননা যুদ্ধকালীন পুরোটা সময়ে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দী ছিলেন। সত্তরের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত এমপিদের অধিকাংশই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পশ্চিম বঙ্গে আরাম-আয়েশে দিন পার করেছেন আর মাঝেমধ্যে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বর্ডারের নিকটবর্তী মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তখনও তিনি সমান জনপ্রিয়।

রাষ্ট্রক্ষমতা নেয়ার পর থেকে তার জনপ্রিয়তায় চির ধরতে শুরু করে। যে গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখিয়ে তিনি বাংলার মানুষকে উজ্জীবিত করেছিলেন সেই গণতন্ত্র তিনি প্রতিষ্ঠা করেন নি। আওয়ামী লীগ সমর্থিত চারটি জাতীয় পত্রিকা রেখে বাকি সব পত্রিকা তার সরকার বন্ধ করে দেয়। তার দলের নেতাকর্মীদের অবাধ লুটপাট ও ক্ষমতার অপপ্রয়োগে তিনি বাধা দেননি ক্ষমতা হারানোর ভয়ে। আইনের শাসন হুমকির ভেতরে পড়ে।

যুদ্ধ পরবর্তী একটি বিধ্বস্ত রাষ্ট্রে প্রচুর বিদেশি ত্রাণ আসে। আওয়ামী নেতাকর্মীরা তা লুটপাট করেন। তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নি বরং অনেকক্ষেত্রে প্রশ্রয় দিয়েছেন। একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে তিনি অনেককিছু করতে পারতেন তা তিনি করেননি। তিনি ক্ষমতা হারানোর ভয়ে দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

যুদ্ধ পরবর্তী সংকট এবং তার দলের লোকদের লুটপাটের ফলে '৭৪ এ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা যায় দেশে। মানুষ যখন না খেয়ে রাস্তায় পড়েছিল, ডাস্টবিনের পাশে দিনযাপন করছিল তখন ধানমণ্ডি বত্রিশ নম্বরে তার পুত্ররা বিলাসবহুল গাড়ি হাকিয়ে চলেছিল। সুলতানা কামালকে জোরপূর্বক বিয়ে করেন শেখ কামাল। অথচ সেই সময়ে সুলতানা কামালের সাথে অন্য এক ব্যক্তির বিয়ে ঠিক হয়ে ছিল। বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেননি, তিনি বাকশাল গঠন করে আজীবন ক্ষমতসীন থাকার পথ সুগম করতে চেয়েছিলেন।

যে রাতে তিনি নৃশংসভাবে সপরিবারে খুন হন তার পরের দিন নাকি তাকে আজীবন প্রেসিডেন্ট এবং তার পুত্র শেখ জামালকে নৌবাহিনীর উচ্চপদে আসীন করার ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল। স্বেচ্ছাচারিতার জন্য বাংলাদেশের মানুষ এদেশকে স্বাধীন করেনি। আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি এবং শোষণ সাধারণ জনগণকে মুজিববিদ্বেষী করে তোলে। স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্র সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ধারণা করা হয় পাকিস্তান, আমেরিকা এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের সামরিক বাহিনীর এক বিশাল অংশ এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

এ হত্যাকাণ্ডে যারা সরাসরিভাবে জড়িত '৭৫ এর আগে মুজিব সরকার দ্বারা নিপীড়িত। তাদেরকে ব্যবহার করাই কৌশলগতভাবে কার্যকরী ছিল। একটি দেশে যখনই রাজনৈতিক সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত এবং পথভ্রষ্ট হয় তখনই চরম ক্ষমতাধর সামরিক বাহিনী রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে বা করতে চায়। চারদলীয় ঐক্যজোট সরকারের সেরকম কাজের কারণেই ১/১১ পরবর্তী সময়ে সামরিক বাহিনী রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিল। সেধরণের ঘটনাই ঘটেছিল ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে।

শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর বাংলাদেশের অনেক সাধারণ মানুষ নাকি আনন্দ প্রকাশ করেছিল। তাদের অনেকে নাকি রোজাও রেখেছিল। ৭১ থেকে ৭৫ পর্যন্ত সংঘটিত নানা অন্যায় অনাচার থেকে মুক্তির স্বপ্নে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে একাজ করেছিল। সাধারণ মানুষ সর্বদাই শোষণের শিকার। বিশ্বাসঘাতক এবং পাকিস্তানপন্থী নেতা খন্দকার মুশতাক আহমদ তখন পুতুল হিসেবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়।

প্রকৃতপক্ষে তখন সামরিক শাসন শুরু হয়। এরপরে বিচারপতি সায়েমও ছিলেন লোক দেখানো রাষ্ট্রপতি। ক্ষমতা দখলের প্রথম দিকে সব সামরিক শাসকই জনসমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে একধরণের কৃত্রিম গনতান্ত্রিক ফ্লেভার সৃষ্টি করেন। ইতিহাস অন্তত তাই বলে। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত্যুবরণ করে।

'৭৭ জিয়া বিএনপি গঠন করেন। সামরিক শাসকদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল গঠন করাও একটা ফ্যাশন কিনা। জিয়াউর রহমানের আমলে দেশে পাকিস্তানের ভূত আবারও ভর করা শুরু করে। শেখ মুজিবের আমলে রাজাকাররা ক্ষমা লাভ করলেও রাজনৈতিক অধিকার পায়নি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার কারণে। কিন্তু জিয়া পাকিস্তানি দোসরদের রাজনৈতিক দল করার অধিকার ফিরিয়ে দেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বৈধ করে।

নিজের দল ভারী করার কৌশল তিনি ভালই জানতেন। শিক্ষাঙ্গণে ঐতিহ্যবাহী ছাত্ররাজনীতিকে দলীয় লেজুরবৃত্তির রাজনীতিতে রূপান্তরিত করার কাজটিও তিনিই করেন। ছাত্র সংগঠনগুলোকে রাজনৈতিক দলের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বানিয়ে দেন তিনি। তবে লোকমুখে শোনা যায়, জিয়ার আমলে নাকি দেশের অবস্থা ভালই ছিল। অর্থকরীর ব্যাপারে জিয়া সৎ ছিলেন।

খাল কেটে দেশের উপকার করেছেন। ছেলে তারেককে সেন্ট জোসেফ স্কুল থেকে বের করে দেয়ার পরও তিনি কোন সুপারিশ করেন নি। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর দেখা যায় তার লুঙ্গি ছেঁড়া ছিল এবং সুটকেসও নাকি ছিল ভাঙা। তার সময়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নও হয়েছিল। আবার স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাদের অবস্থান পাকা করে ধর্মের নামে গণমানুষের মনে প্রবেশ করার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান, ভাতা, মর্যাদা শেখ মুজিবের সময়ে সমুন্নত থাকলেও জিয়ার আমলে তা ব্যাহত হয়। জিয়ার সময়ে গোপন আদালতে জিয়া বিরোধীদের বিচার হয়েছে। গোপন বিচার নিশ্চয়ই ন্যায়বিচর হতে পারে না। সবশেষে বলব, এরশাদ হচ্ছে সবচাইতে চালাক লোক।

মুজিব, জিয়া নৃশংসভাবে খুন হলেও সে দিব্যি দেশকে শোষণ করে, দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে, সামরিক শাসক থেকে গণতান্ত্রিক নেতা হয়ে আজও প্রেসিডেন্ট পার্কে প্রমোদ করে যাচ্ছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।