আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নডানা, ব্যাচেলর: কর্পোরেট চাতালে বাংলা সিনেমা

অন্যায়ভাবে সংঘটিত সকল বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাই । ।

বাংলা সিনেমার বেশ দুর্দিন চলছিল- অশ্লীলতায় ছেয়ে গিয়েছিল বাংলা সিনেমা। র‌্যাবের শুদ্ধি অভিযানে এখন হয়তো তুলনামূলক অবস্থা ভালো। অন্তত আগের মতো নেই।

হয়তো সুদিন আসেনি কিন্তু বাইরে থেকে বেশ পুরস্কার বাগিয়ে আনছে। নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলা সিনেমার রুচিতে বেশ বড় পরিবর্তন আসে। মধ্যবিত্ত আর তথাকথিত সুরুচির দর্শক সিনেমা হলগুলো থেকে উৎখাত হয়। এখন সেই মধ্যবিত্ত নাকি সিনেমা হলে ঢোকার পাঁয়তারা করছে। কিন্তু সমস্যা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।

সরকার, তা যে-ই ক্ষমতায় আসুক-না কেন সিনেমাকে তারা প্রমোদকর আদায়ের কারখানা হিসেবেই দেখে এসেছে। মাধ্যম হিসেবে সিনেমার সঙ্গে তাদের আচরণ সৎ মায়ের ছেলের মতোই। একের পর এক কালাকানুনে বিপর্যস্ত করে রেখেছে বাংলা সিনেমাকে। এই কালাকানুনের মাত্রা থেকে রেহাই পায়নি ফিল্ম সোসাইটিগুলো পর্যন্ত। ফিল্ম সোসাইটিগুলোর ফিল্ম প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ১৯৮৭ সালে সেন্সর প্রথা জারি করা হয়েছে।

কালোবাজারি মাফিয়াগোষ্ঠীর আখড়া এফডিসি তা আগেও ছিল এখনো আছে। নতুন ফিল্ম করিয়ে ছেলেমেয়েদের জন্য অগম্য করে রাখা হয়েছে এফডিসিকে। ফিল্মকে গণমাধ্যম হিসেবে সবসময়ই ভয় পেয়ে এসেছে আমাদের সরকাগুলো। নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতনের পরেও তথাকথিত গণতান্ত্রিক আমলেও এর কোনো হেরফের ঘটেনি। নব্বইয়ের পরপরই আমাদের অর্থনীতিতে বেসরকারিকরণের এক হিড়িক চলল।

লুটপাট-সন্ত্রাস-দুর্নীতি নতুন মাত্রা পেল। এই দুর্নীতির মাত্রা এফডিসিতেও পৌঁছাল। কাটপিস, ধর্ষণ দৃশ্য, আইটেম গানের জোয়ারে ভেসে যেতে থাকল এফডিসি। আমাদের মূলধারার মিডিয়াগুলোর পত্র-পত্রিকা এর প্রতিবাদে ক্রোড়পত্র পর্যন্ত বের করল। ....যেন সিনেমাকে বাঁচাতেই হবে! মজার ব্যাপার অশ্লীলতাকেই এমনভাবে শনাক্ত করা হলো – এর ধ্যান-ধারণা নির্মাণ করা হলো যেন এটাই বাংলা সিনেমার একমাত্র সমস্যা।

রাঙা বউ সিনেমার মাধ্যমে এই প্রচারণা শুরু হলো। সিনেমার ক্ষেত্রে বিদ্যমান কালাকানুন উৎপাদন ও পরিবেশনের সমস্যা, কালো টাকার দৌরাত্ম্য এসব এড়িয়ে শুধু অশ্লীলতাকেই সমস্যা হিসেবে হাজির করা হলো। এসময়েই মূলধারার মিডিয়াগুলো এবং তাদের বুদ্ধিজীবীরা সুস্থতা পরিমাপক মানদন্ড নির্ধারণে প্রয়াসী হলেন। সেই অশ্লীলতা- সুস্থতার যে বর্গ নির্মাণ করা হলো তা আমাদের সাম্প্রতিক সময়ে গড়ে ওঠা ভোক্তা সমাজের মতাদর্শ নিয়ণ্ত্রিত এবং তাই চালানো হলো ‘সিনেমা বাঁচানো’ উদ্ধার প্রকল্প নামে। তখন এফডিসির বাইরে বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে ছবি তৈরি হতে লাগলো।

নব্বইয়ের দশকে আরেকটি বড় ঘটনা হলো স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার। দেশের বিকাশমান ভোক্তা মধ্যবিত্তের রুচি তৈরিতে এবং তার সরবরাহে এই টিভি চ্যানেলগুলো অবিরত ভূমিকা পালন করে চলছে। এসব প্রণোদনার নতুন এক ক্ষেত্র তৈরি করলো। মুক্তি পেতে থাকলো বিভিন্ন সিনেমা। ব্যাচেলার, চন্দ্রকথা, মেড ইন বাংলাদেশ, স্বপ্ন ডানায় ইত্যাকার ছবি।

আমাদের কথা, শ্লীল-অশ্লীলতার যে বয়ান নির্মিত হচ্ছে এবং এই প্রেক্ষিতে আমাদের সিনেমা যে পাল্টে যাচ্ছে তা নিয়ে। এই পরবর্তী সিমোগুলোর বিষয়-আশয় পরীক্ষা করে দেখতে হবে তার পাল্টানোর ধরন। আর সে কিভাবে নির্মাণ করছে নিজেকে। এখানে স্বপ্ন ডানায় এবং ব্যাচেলার সিনেমা নিয়ে এই বিষয়গুলো আলোচনার চেষ্টা করা হবে। স্বপ্ন ডানায় গোলাম রব্বানী বিপ্লবের প্রথম ছবি।

এ ছবি নিবেদন করেছে বহুজাতিক কোম্পানী ওরাসকম টেলিকমের এদেশীয় মুখোশ বাংলালিংক। এ ছবির গল্পটা এরকম: লোকে ফজলুকে কবিরাজ বলে জানে। আসলে সে কবিরাজ নয়, মলম বিক্রেতা। গ্রামের হাটে হাটে ক্যানভাস করে মলম বিক্রি করে। তার সহযোগী তারই দশ বছরের ছেলে রতন।

একদিন হাট শেষে পুরনো কাপড়ের দোকান থেকে রতনের জন্য প্যান্ট কিনে ফজলু। ফজলুর বউ প্যান্ট ধুতে গিয়ে কিছু বিদেশী নোট পায়। এ বিদেশী নোটগুলোকে ঘিড়ে জেগে ওঠে তাদের নানা উৎকন্ঠা আর স্বপ্ন। নোট ভাঙানোর জন্য সহযোগিতা নেয় তারই ছোটবেলার বন্ধু সিরাজ মেম্বারের। এ নোটকে ঘিরেই দুই বন্ধুর সঙ্গে স্বপ্ন ডানায় ভেসে চলে কবিরাজের বউ, মেম্বারের বউ, মেম্বারের তরণী শ্যালিকা।

তাদের সম্পর্কগুলো পাল্টে যায়, পাল্টে যায় গ্রামীণ পটভূমির গল্প। ফজলুর বউ: নোট ভাঙানোর জন্য ব্যাংকে যাইতে অইব না? ফজলু: হ্যাঁ। ফজলুর বউ: তুমি কি কখনো ব্যাংকে গেছ? ফজলু: কখনো না। ফজলু কখনো ব্যাংকে যায়নি। যায় সিরাজ মেম্বারের কাছে।

গল্পের ফজলু কবিরাজ যে আর্থ-সামাজিক কাঠামোর মধ্যে টিকে থাকে, বাঁচে-মরে সেখান থেকে পিঠটান দিয়ে চলে যায় ব্যক্তিগত কাসুন্দি তৈরির দিকে। এরপর থেকে নোটগুলো গল্পের মূল উপাদান না হয়ে গৎবাঁধা ফিকশনাল এলিমেন্টের দিকে ছোটে। আর এভাবেই গল্প এগুতে থাকে। গরিব মানুষ, টাকা পাওয়ার সম্ভাবনায়ই ভেসে চললো, এ সিনেমার কোনো চরিত্র বাস্তবের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন-সংকল্প দ্বারা চালিত হয় না। বিদেশী নোট পাওয়ার পর পরই অবাস্তব কল্পনা, আশা তাদের পেয়ে বসে।

আর গল্প পাক খেতে থাকে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় ক্যামেরা প্যান করার মধ্য দিয়ে। বিদেশী নোট পাওয়ার খবর শোনামাত্রই সবাই ছোটে যে যার মতো তার ভাগ নিতে। ফজলু কবিরাজ নোটগুলো পায় তাই তাতে তার অধিকার। আর সিরাজ মেম্বার তাকে সাহায্য করার বদলে আশ্বাস পায় কিছুটা। কিন্ত সিরাজের শ্যালিকা যার কিছু দিয়েই এক্ষেত্রে সুবিধা পাবার আশা নেই সেও পুঁজি করে নিজের রূপলাবণ্যকে।

আর একেই পরিচালক বলছেন স্বপ্নডানা। টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা মাত্রই ফজলু কবিরাজ ছোটে সিনেমা হলে মেম্বারের শ্যালিকাকে সঙ্গে নিয়ে, নিজের খোঁড়া মেয়েটাকেও তার খেয়াল করার সময় হয় না। এরকম পলায়নবৃত্তির নামও স্বপ্ন! বরেন্দ অঞ্চলের মনোরম দৃশ্য বারবার প্যান করে সে মনোহর দৃশ্য দেখানো হলো, কিন্তু এ ঐশ্বর্যের মাঝে ফজলুরা এত গরিব কেন? তার কোনো আলাপ পাওয়া যায় না এ সিনেমায়। এমনকি এ পরিবারগুলো যে পরিবেশে থাকে সে সম্বন্ধেও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ক্যামেরার সফট টাচ আর লংশটের বাহুল্য ‘বাস্তবতার ফ্যাটিশ’ (সাধারণভাবে প্রায় মূল্যহীন কোনো কিছুর অতিমূল্যায়নকেই ফ্যাটিশ মনোভাব বলা হয়।

) মনোভাবকে জোরদার করে। আবার একই সঙ্গে পয়েন্ট অব ভিউ শটের ব্যবহার এত কম যা চরিত্রগুলোর সিনেমাটিক গুরুত্বকে খাটো করে এবং পরিচালকের স্পেসকে বড় করে দেয়। আবার পরিচালক এমনভাবে বিভিন্ন ক্যামেরা- কোণ তৈরি করার দিকে নজর দিয়েছেন (গাছের পতার ফাঁক দিয়েও) যেন গোপনে তিনি ক্যামেরা ব্যবহার করে দুই পরিবারের কান্ডকারখানা দেখছেন এবং দর্শকদের দেখাচ্ছেন। এতসব ব্যাপার স্যাপারের মধ্যেও মোবাইল কোম্পানির প্রমোশনের জন্য ঠিকই পরিস্থিতি তৈরি করে নেন। সিরাজ ফোন করতে যায় বাজারের টিএন্ডটি লাইনে।

বারবার তা কেটে যায়। সিরাজ কথা বলতে পারে না। তবুও তাকে দুই কলের জন্য ষাট টাকা দিতে হয়। এ নিয়ে বচসা হয় দোকানদারের সঙ্গে। এসময় যে টেনশন তৈরি হয় (ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৭ সালে) তখন যে কারো মোবাইল ফোনের কথা মনে পড়বে।

এভাবেই মোবাইলের অনুপস্থিতি দর্শক চেতনার মধ্যে মোবাইলকে অস্তিত্বমান করে তোলে। মনে রাখা দরকার বাংলালিংক এ ছবির অন্যতম প্রোডিউসার। এ ছবির কাহিনীর সঙ্গে খানিকটা মিল পাওয়া যায় ওসমান সেমবেনের মানি অর্ডারের। ইব্রাহীম দিয়েঙ সহজ সরল লোক। প্যারিস থেকে তার ভাতিজা তার নামে মানি অর্ডার পাঠায়।

সে মানি অর্ডার ভাঙাতে গিয়ে ইব্রাহীম দিয়েঙ এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। সহজ সরল ইব্রাহীম কোনো মতেই ঔপনিবেশিক যুগে প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে ঢুকতে পারে না। কারণ সে নিরক্ষর। এহেন ইব্রাহীম দিয়েঙ প্রতারিত হতে হতে মানি অর্ডারের টাকা তো পায়ই না বরঞ্চ তার শেষ সহায়-সম্বলও হারায়। এ সিনেমায় কোনো রহস্য তৈরি হয় না।

বরং উন্মোচিত হয় ইব্রাহীম দিয়েঙ, তার পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা, উত্তর ঔপনিবেশিক যুগের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, আফ্রিকান কালচার, চক্ষু-কর্ণের বিবাদে (শিক্ষিত-অশিক্ষিত দ্বন্ধ) আকীর্ণ সমাজের ক্ষমতা কাঠামো, ক্ষমতাহীন মানুষের বেঁচে থাকার বিড়ম্বনা.....। ঠিক এরকম সম্ভাবনা কী স্বপ্ন ডানায় ছিল না? পরিচালকের পলায়নী মনোভাব আবার একই সঙ্গে মোবাইল কোম্পানীর প্রমোশনাল কাজে সিনেমাকে ব্যবহার করতে দেওয়া- এ দুয়ের যোগসূত্র নিয়ে ভেবে দেখা দরকার। স্বপ্ন ডানায় যেমন গ্রামীণ পটভূমিতে তৈরি ঠিক উল্টোদিকে মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর ব্যাচেলর শহুরে পটভূমিতে তৈরি। এ দুটি ছবি মুক্তি পাওয়ার পরই মূলধারার মিডিয়াগুলো তাদের পক্ষে এক ধরণের প্রচারণায় নামে। সুস্থ ছবির সার্টিফিকেট দেয়।

কিন্তু এ ছবিগুলি বিশেষ করে ব্যাচেলর কী যৌনতা ছড়ায় না? কি ধরনের যৌনতার ধারণা নির্মাণ করে আর এর গল্পের উপাদান বাস্তবতার কোন উপকরণ থেকে নেওয়া হয়? আর এসবের মধ্য দিয়ে কোন শ্রেণীর পক্ষপাতই বা জাহির করা হয়? এসব প্রশ্নে যথার্থ পর্যালোচনা ছাড়া এ ছবিগুলোর আলোচনা অসম্ভব। ঢাকই ছবির কড়ালিকারের যৌনতার বিপরীতে এ যৌনতার ধরন আলাদা। প্রকাশভঙ্গি ভিন্ন। এই যৌনতার মতাদর্শও ভিন্ন। ফাহিম: (সেলফোনে ফিসফিসিয়ে) ইস তুমি যদি এখানে থাকতে... সাথী: (সেলফোনেই) ওরে বাবা! ফাহিম: এই শোন না, তোমাকে না আমার কবুতর কবুতর মনে হয়।

সাথী: কি, হি হি হি। ফাহিম: এখন থেকে তোমাকে আমি পায়রা বানু ডাকব। পায়রা বানু পায়রা বানু... আমার কিছু ভাল্লাগে না। সাথী: ওরে আমার গুডি গুডি বাবু... একা একা লাগে? বিয়ে করে ফেল। ফাহিম: একটা কথা বলি, তুমি আমাকে বিয়ে করে ফেল।

অনেক মজা হবে। সাথী: ও মাই গড! তিরিশ দিন একটা মানুষের সঙ্গে থাকা-এবসার্ড! এটা আমার কাছে সিকনেস মনে হয়... রিলেশনশিপে আমার আস্থা নাই। ফাহিম: ঠিক আছে, তাহলে আরেকটা প্রপোজল-যতদিন না আমি আরেকটা পায়রা বানু খুঁজে না পাই অর ইউ চেঞ্জ ইউর মাইন্ড রিগার্ডিং রিলেশনশিপ- আমরা প্রক্মি দেব। সাথী: মানে? ফাহিম: মানে প্রক্সি লাভ, আমরা প্রেমিক-প্রেমিকার মতো আচরণ করবো। রেসপন্সিবিলিটি শেয়ার করবো।

তুমি হবে আমার প্রক্সি গার্ল, আমি হবো তোমার প্রক্সি বয়। এই যে প্রক্সি গার্ল, প্রক্সি বয়- এ সম্পর্কের আসলে ধরন কী? প্রেম? বন্ধুত্ব? কোনোটাই নয়। এই ছবির চরিত্রের কোনো বিকাশ নেই। স্থিরতা নেই। কোনো চরিত্র স্থিরতা পাওয়ার আগেই পিছলে যায়।

কিন্তু কোনো কিছুর যদি সংহত নির্মাণ থাকে তা হচ্ছে যৌনতার নির্মাণ। তবুও এ ছবি নাকি অশ্লীল নয়? কেন এ ছবিকে আমাদের অশ্লীল মনে হয় না? ঠিক যে ‘বুকে আমার আগুন জ্বলে-যৌবন ভরা অঙ্গে’ যে যৌনতা প্রকাশ করে এ ধরন আলাদা। কারণ এ অনেক পরিশীলিত। এ যৌনতা নির্মিত হয় ভাষাকে কেন্দ্র করে, দেহকে নয়। যাকে আমরা বলি ‘সিওডোসেক্স’।

আর তাই ব্যাচেলরের নারী নির্মাণও হয় ফ্লাইং বার্ড, পায়রা বানু, কবুতর আকারে। তা সে আর্কিটেক্টই হোক আর যেই হোক। অন্যদিকে পুরুষ নির্মিত হয় পুরুষতান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী খাদক আকারে। কিন্তু আগের সঙ্গে তফাৎ মতাদর্শগত। এই নির্মাণ সম্পন্ন হয় ভোক্তা-বাজারের মতাদর্শের নিয়ম অনুসারে।

এ সিনেমার আরেকটি প্রধান চরিত্র হচ্ছে ফোন। ফোন আর প্রপস হিসেবে থাকে না। ফোনই আনন্দ, ফোনই বেদনা, ফোনই প্রেম, ফোনই শুরু, ফোনই শেষ। ফোনের যে কত রকমারি ব্যবহার ঘটতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছেন পরিচালক। মুঠোফোন, ইন্টারনেট, চেটিং এসব প্রযুক্তিগত মাধ্যম আমাদের মধ্যে যে আনন্দ, বেদনা, ক্ষয়, শূন্যতার অনুভূতি তৈরি করে এবং আমাদের প্রথাগত সাংস্কৃতিক জীবনে যে ধরনের মূল্যেবোধ পুনরুৎপাদিত হয় তা গ্রেফতার করার আন্তরিক প্রচেষ্টা ব্যাচেলরে দেখা যায় না।

কোনো চরিত্র তাই মেরুদন্ড নিয়ে দাঁড়ায় না। বুড়ো ব্যাচেলর আবার আড্ডা দিতে দিতে বলে, ‘পলিটিক্যালি আমাদের যে লিগেসি সেটা পরিবর্তন না হলে কোনো লাভ নাই। ’ ঠিক এই কথাগুলো বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ দাতা রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রদূতরা, সিভিল সোসাইটির কর্তারা হরহামেশাই বলেন। কিন্তু কি লিগেসি আমাদের পরিবর্তন করতে হবে? ব্যাচেলরই বা কি মেসেজ বহন করে এক্ষেত্রে? ব্যাচেলরের আরেকটি সিকোয়েন্সের বর্ণনা দিচ্ছি। হাসান রেস্টুরেন্টে বসে আছে।

স্ন্যাকস কর্মী তাকে এসে কি খাবে জিজ্ঞাসা করে। সে ইউরো ল্যামন দিতে বলে এবং শায়লাকে ফোন করে বলে, ‘আই নো হাউ টু কিপ মাই প্রমিজ....আমি তোমারে কথা দিছিলাম যে কোনো অ্যামেরিকান প্রোডাক্ট ইউজ করবো না। তাই আমি এখন ইউরো ল্যামন খাচ্ছি। ঠান্ডা। ’ এই ব্যাচেলর সিনেমার অন্যতম প্রোডিউসার ইউরো কোলা কোম্পানি।

আর এ কোম্পানির মার্কেট প্রমোশনের কাজে সিনেমাকে এভাবেই ব্যবহার করা হয়। যা পণ্যের সরাসরি বিজ্ঞাপনের চাইতে শক্তিশালীভাবে দর্শক মনে প্রতিক্রিয়া করে। এই প্রমোশনাল কাজের সঙ্গে দেশাত্মবোধ, এন্টি ওয়ার্ক ক্যাম্পেইন, ব্যক্তির রাজনৈতিক দায়িত্ববোধ সব মিলেমিশে একাকার করে দেওয়া হয়েছে। যা কর্পোরেট চৈতন্যের শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য। এই যে সিনেমাগুলো কখনো ব্যবহার হচ্ছে মার্কেট প্রমোশনের কাজে, শক্তিশালী করছে মুনাফাকামী বাজারি মতাদর্শ।

উল্টোদিকে এফডিসির ছবিগুলোকে অশ্লীলতার লেবেল ছড়িয়ে এক পরিসর তৈরি করা হয়। যে পরিসরে এ ছবিগুলো প্রশংসিত হয় সুস্থতার মাপকাঠিতে। সিনেমার মতো শক্তিশালী মাধ্যমকে এভাবে ব্যবহার করার নজির আমাদের দেশের সিনেমা ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি। লেখক: হাসান জাফরুল সূত্র/সংগ্রহ: সাপ্তাহিক বুধবার(সমাজ ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ) -১৫তম সংখ্যা;২৩ডিসেম্বর ২০০৯ এর আগে ও কর্পোরেট বানিজ্যের এরকম আরেকটি ছবির রিভিউ দেয়া হয়েছে। সেটার লিংক- Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।