আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেদিন বন্ধু চলে যাব

shamseerbd@yahoo.com
২০০১ সালের কথা। ভার্সিটি জীবনটা সবে ভাল লাগতে শুরু করেছে। কাছের বন্ধুরা এক একজন এক এক জায়গায়। নতুন বন্ধু হচ্ছে, সিনিয়র ভাইয়াদের সাথেও বন্ধুতা গাঢ় হচ্ছে। ১৮ই জানুয়ারী আর কিছুক্ষন পরেই শেষ হয়ে যাবে।

তারপরেই ১৯শে জানুয়ারী, আমার জন্মদিন। এই দিনটা আমার অনেক প্রিয় একটা দিন, একান্ত নিজের মনে হয়। রুমমেটদের কারো খেয়াল আছে কিনা জানিনা। এশার এর নামায শেষ করে উঠলাম তখন পোনে বারোটা হবে। হঠাৎ বাসার দরজায় নক- এত রাতে কে আবার।

সুবীর ভাই এসে ঢুকল, আমিত অবাক এত রাতে। ঘটনা কি, বলল আড্ডা দিতে ইচ্ছা করছে তাই চলে আসলাম। দরজা লাগাতে গেলাম, বলল মুন্নারা আসতেছে । কথা বলতে বলতে আমিও ভুলে গেছিলাম জন্মদিনের কথা। বারটা বাজার অল্প আগে হইহই করে ঘরে ঢুকল মুন্না, রনি, বিশ্ব,হীমু ভাই।

সবাই এক সাথে বলে উঠল শুভ জন্মদিন। আমার রুমমেটদের ও মনে পড়ল। ভাইয়ারা বলল কিরে তোরা কেক টেক আনিস নাই। আসলে ওমন কোন প্রিপারেশনও ছিলনা। মুন্না ভাই বলল ব্যাপারনা আমরা নিয়ে এসেছি।

কেকের প্যাকেট এগিয়ে দিল। আমি আসলে আমার তখনকার অনুভূতিটা বলে বোঝাতে পারবনা। সবাই মিলে কেক কাটলাম। হীমু ভাই বাঁশী বাজিয়ে শুনালেন। আড্ডা দিয়ে রাতে আবার তারা চলে গেলেন।

এর আগে আসলে কখনো আমি জন্মদিনে কেক কাটিনি। জন্মদিনে বাসায় যেটা হত তা হল আমাদের ভাই বোন সবার জন্মদিনে আম্মু বিরিয়ানী রান্না করেন আর সন্ধ্যায় নিজ হাতে কেক বানিয়ে সেটা পরিবেশন করেন। কলেজ লাইফে ঐ দিন কাছের বন্ধুদের নিয়ে কোন ফার্স্টফুডে গিয়ে বার্গার খাওয়া - এত দিন এই ছিল বিশেষ এই দিনটার রুটিন। এইবারই প্রথম বাসার বাইরে। বাসার বাইরে প্রথম জন্মদিনটি যে আমার কাছে এত বেশী আবেগপূর্ণ হয়ে থাকবে আমার কল্পনায়ও তা ছিলনা।

আরজু সবসময় একটা কথা বলে বাস্তব কল্পনার ও আগে চলে, এ যেন তাই হল। সত্যি কথা বলতে গেলে আমার সিলেট জীবন ভাললাগা শুরুর পিছনে ছিলেন ঐ ভাইয়ারা । জন্মদিনে তারা যে আমাকে অতটা অবাক করে দিবেন, আমার মাঝে অমন ভাললাগা মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিবেন আমি সেটা কল্পনাও করিনি। তারপর থেকে প্রতিটা জন্মদিনে সে অনুভূতিটাই যেন ফিরে ফিরে আসে। সিলেটে আমরা দশ বন্ধু হলে না থেকে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম।

প্রতিমাসে একটা করে স্পেশাল খাওয়া দাওয়া আর বছরে দশটা জন্মদিনে আমরা ব্যাপক মজা করতাম। প্রতিটা জন্মদিনের জন্য আমরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম, সে দিন রাতের হইচই এ বাড়ীওয়ালাও কিছু বলতেননা। সন্ধ্যায় কাছের সব বন্ধুদের নিয়ে চলত খানাপিনা। জুনিয়র ব্যাচ ও হয়ে গিয়েছিল কয়েকটা তখন, তখন এই আয়োজনের ব্যাপ্তি ছিল আরও মজার। আমার সময়জ্ঞান, অলসতা এগুলি এমনিতেই আমার বন্ধুদের মাঝে বিরক্তির পাশাপাশি ব্যাপক বিনোদনের উৎস হয়ে গিয়েছে ততদিনে।

আমি সময় দিলে তারা জানে এর সাথে আধাঘন্টা যোগ করে নিতে হবে। ২০০৩ সালে সেটা নতুন মাত্রা পেল। জন্মদিনে জুনিয়র ফ্রেন্ডরা অনেকে উইশ করল মোবাইলে। আলাদা আলাদা ভাবে করাই জানলামনা যে তারা এক জায়গা থেকেই করেছে। পরে ম্যাসেজ পাঠাল ভাই পার্টি কখন।

আমি সবাইকে রিপ্লাই দিলাম ওয়ান এ এম এ চলে আসিস সবাই। রাত দেড়টার দিকে পোলাপান এসে দরজা ধাক্কা দিল। দরজা খুলেই বললাম কিরে তোরা আসার কথা দুপুরে এখন কেন হাজির হইছস, একসাথে এতগুলা থাকবি কিভাবে। একজন মোবাইলে ম্যাসেজ বের করে দেখাল কি লিখস পড়। ওয়ান এএম লিখস তাকাইয়া দেখ !!! আমিত পুরা টাসকি !!! ওয়ান পিএম লিখতে গিয়ে ওয়ান এএম !!! তোরা একবারও ফোন দিয়া জানবি না ?? ভাই তুমি লিখছ, আমরা ভাবলাম এখন পার্টি, তাই চলে আসছি !!! তারপর থেকে যা হল আমি কাউরে কোন টাইমে আসতে বললে আগে জানতে চাই ভাই এ এম, না পি এম !!!! তবে জীবনে অনেক বড় পাওয়া আমার এই সব বন্ধুরা (সিনিয়র-জুনিয়র সহ) ।

সময় আমাদের কাছে কোন বিষয় নয়। আড্ডা দিতে ইচ্ছা করছে। অথবা ভাল লাগছেনা- সবসময় জানি কেউ না কেউ আছেই পাশে , শুধু বলার বাকী চলে আয় অথবা আমি আসছি। অবাক হইনা যখন দেখি সুইডেন থেকে মাইনুল বন্ধুটি ঠিক রাত বারটায় ফোন দিয়ে উইশ করে, কানাডা থেকে বাংলাদেশ আসার পথে কুয়েতে যাত্রা বিরতীর সময় চান্স পেয়ে সুবীর ভাই বলে শুভ জন্মদিন। হাজার ব্যস্ততার মাঝে বন্ধুরা যখন উইশ করতে ভোলেনা, তখন শুধু আমার লোভ বেড়ে চলে, এই লোভ বেঁচে থাকার ,আরও অনেক দিন এই প্রিয় মানুষ গুলিকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে।

বড় হবার সাথে সাথে বাবা মার জড়তাও যেন কেটে যেতে থাকে। এখন প্রতিটি জন্মদিনে আম্মু নিয়ম করে উইশ করেন, পাশে থেকে বাবাও তাই। যখন শুনেন বন্ধুরা সহ কেক কাটছি, জানি ভাল লাগাটা তাদেরও ছুঁয়ে যায়। ছোট ভাই বোনের পাঠানো গিফট টা পরম মমতায় গায়ে জড়ায়, আর মনে মনে আওড়ে উঠি লাইফ ইজ বিউটিফুল। জীবন মানেই পাওয়া আর না পাওয়ার এক বিরাট সরল অংক।

স্কুলে থাকতে দেখেছি যে সরল অংকটি যত বেশী জটিল আর কঠিন মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত দেখা যায় তার ফলাফল হয় এক অথবা শূণ্য। একটাইত জীবন, ফলাফল এক ধরে নিয়েই আগানো যাক- মনে মনে সবসময় এই ভাবনাটাকেই প্রশ্রয় দিতেই ভাল লাগে। ভাললাগাটা আরও বেড়ে যায় প্রিয় হয়ে উঠা ব্লগ বন্ধুদের মজার মজার সব উইশ এ আর শুভ কামনায়। অবাক হওয়ার সাথে আপ্লুত হই যখন দেখি ব্লগের সূত্রে বন্ধু হয়ে উঠা মানুষটি যখন ফোন করে, এসএমএস করে শুভ কামনা আর শুভেচ্ছা জানান। আমার অনেক পছন্দের জেমসের একটা গান: যেদিন বন্ধু চলে যাব চলে যাব বহুদূরে ক্ষমা করে দিও আমায় ক্ষমা করে দিও মনে রেখ কেবল, একজন ছিল ভালবাসত শুধুই তোমাদের ।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।