আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পৃথিবী যেদিন ধংস হবে

চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা

আবিদ কল্পনাও করতে পারেনি যে পৃথিবীকে এই বিকট চেহারায় পাবে। ওরা যখন পৃথিবী ছেড়েছিল তখন পৃথিবী ছিল সবুজ শ্যামল। হয়তবা ওরা যে জায়গায় ল্যন্ড করেছে কেবলমাত্র ওই জায়গাটিই ওরকম। মরুভুমির চাইতেও বিবর্ণ আর প্রানহীন। তোমার ধারনা আছে কত বছর আগে আমরা পৃথিবী ছেড়েছিলাম।

সহকারি জামিলের দিকে তাকিয়ে আবিদ জিজ্ঞেস করল। "২০০ বছর হবে। " ষ্পেস মিশনে ওরা সব মিলিয়ে ১০ জন সামিল হয়েছিল। মিশনটি ছিল অনেক মিলিয়ন মাইল দুরের একটি গ্রহে যেখানে ওরা আশা করেছিল জীবনের সন্ধান পাবে। ওদেরকে আশাহত হতে হয়নি।

জীবনের সন্ধান না পেলেও একজাতীয় উদ্ভিদ আর তরলের সন্ধান পেয়েছে ওরা। ওদেরকে এসকর্ট করে নিয়ে যাওয়া হল একটি কক্ষে, দেখতে অনেকটা প্রিজন সেলের মত। পরিচিত কাউকে পাওয়া গেল না। ওরা আশা করেছিল হাজার হাজার লোকের আগমন ঘটবে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাতে। বেশ কয় ঘন্টা পর একজনকে কাছে পেয়ে বাইরে ঘুরে বেরোনের ইচ্ছে প্রকাশ করল আবিদ।

উত্তর এল নিষেধ আছে। "কেন?" "আপনারা আমাদের বন্দি। " "মানে। প্রায় চিতকার করে উঠল আবিদ। " পরের দিন আদালতের মত একটা জায়গায় ধরে নিয়ে আসা হল ওদেরকে।

বিচারকের চেয়ারে বুড়োমত একজন লোক বসে আছে। ওদেরকে হতবাক করে দিয়ে জুরিদের সামনে বিচার কাজ শুরু হল। আমরা ত মিশন সফলভাবে সেরেই ফিরে এসেছি, আমাদের অপরাধ, ক্ষিপ্ত আবিদ চেচিয়ে বলল। ওদেরকে পাঠিয়েছিল বিশ্ব মহাকাশ সংস্থা। যারা কাজ করে পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলো অনুমোদিত ফরমুলা অনুসারে।

তোমরা গ্রহটি আক্রমন করে কেবল ক্ষান্ত হওনি ধংস করেছ সামনে যা পেয়েছ তাই। বিচারকের কথা শুনে চক্ষু ছানাবড়া হওয়ার জোগাড় আবিদের। গোটা ১০ বছর দিনরাত পরিশ্রম করে পৃথিবীর মানুষের বসবাসযোগ্য একটি ক্ষুদ্র কলোনি গড়তে গিয়ে ওদের জান বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, আর এব্যাটা কিসব আবোল তাবোল বকছে। আমাদের গ্রহটার সাথে তোমরা ভাল আচরন করনি। এবার সবকিছু স্পষ্ট হতে শুরু করল আবিদের কাছে।

তোমরা তাহলে মানুষ নও এলিয়ান। আমাদের গ্রহের সর্বত্রই আমাদের উপস্থিতি ছিল। আমাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল যে আমরা সহজেই অন্য কিছুতে ট্রান্সফরম করতে পারি আর একটি বৈশিষ্ট্য হল যে তোমাদের চাইতে দ্রুত সবকিছুই আমরা সহজেই শিখে নেই। অন্যভাবে বললে শুধুমাত্র একটি ফর্মে নয় অনেকগুলো ফর্মে আমরা আমাদের প্রকাশ ঘটিয়ে থাকি। তাই কলোনি গড়তে গিয়ে তোমরা যা কিছু নষ্ট করেছ পাহাড়, উদ্ভিদ কিংবা মাটি, তার সাথে সাথে আমাদেরও বিনাশ ঘটেছে।

তোমাদের অলক্ষেই তোমাদের কাছ থেকে সবধরনের জ্ঞান জড়ো করা শুরু করি আমরা। তোমাদের মতই স্পেসশীপ গড়ে তুলে পাড়ি জমাই তোমাদের গ্রহে। তোমাদের অনেক আগেই পৌছে যাই প্রথিবীতে। "তারপর কি হল? পৃথিবীর মানষগুলো, শহরগুলো আর সবকিছুর?" উত্তেজিত হয়ে পড়ে আবিদ। তারপর ক্রোধে দুঃখে ফেটে পড়ে আবিদ, চিতকার করে বলতে থাকে, তোমরা ওদের কি করেছ? দীর্ঘস্বাস ফেলল বুড়ো মানুষটি অর্থাত এলিয়ানটি।

জান, যখনই পৃথিবীর ফুল, পাখি, শিশু আর সুন্দর সব নৈসর্গের ব্যপারে আমরা জানতে পারলাম তখনই তোমাদের সুন্দর পৃথিবী দেখার ইচ্ছে জেগে উঠে, পাশাপাশি মানবিক গুনগুলিরও বিকাশ শুরু হয় আমাদের মাঝে। সংগীনির হাত ধরে পুর্নিমার রাতের চাদের দিকে তাকিয়ে থাকা, মায়ের কোলে শিশুর হাসি, রাত জেগে অসুস্থ কোন আপন জনের সেবা ইত্যাদি মানবিকগুনগুলো প্রচন্ড নাড়া দেয় আমাদের। একসময় পৃথিবীর পথে যাত্রা শুর করি আমরা। যতই কাছে আসছিলাম ততই ভাবছিলাম যে জায়গায়টায় নামব সেখানে দিন হবে নাকি রাত্রি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ আমাদের স্পেসসীপ যখন পৃথিবী স্পর্শ করল পৃথিবীতে তখন দিন।

উন্মুখ হয়ে পড়লাম আমরা পৃথিবীর প্রথম সৌন্দর্য দেখার জন্য। পৃথিবীর চেহারা দেখে চমকে উঠলাম, একি চেহারা পৃথিবীর, চারিদিকে ধংসযজ্ঞ, ফুল, পাখি, শিশু কোথাও কিছু নেই। কোথাও সবুজের সামান্য ছোয়াটুকুও নেই। সকাল, বিকাল কিংবা সন্ধায় পৃথিবীর একই চেহারা কেবল রাত্রিবেলায় বিষাদময় চাদ আকাশে ঝুলে থাকে। কি ধরনের হতাশ আমরা হয়েছিলাম বুঝতে পার।

যাহোক এই ধংসস্তুপের মাঝেই আবাস গড়ে তুলে পর কি ঘটেছিল জানার জন্য আমরা কাছে লেগে পড়লাম। কিছুদিনের মধ্যে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যায়। নানান অজুহাতে দেশে দেশে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল শেষে শুরু হয় হয়েছিল নিউক্লিয়ার ওয়ার। মাত্র কয়টা দিনেই পৃথিবী ধংস হয়ে গিয়েছিল। তোমাদের পরষ্পরের প্রতি হিংসা, বিদ্বেশ, মাত্রাতিরিক্ত লোভ লালসা সবকিছুই ধবংস করে দিয়েছে।

আমি অবাক হয়েছি শিশুর, ফুল কিংবা প্রিয়জনের প্রতি তোমাদের ভালবাসা তোমাদের পৃথিবীকে বাচিয়ে রাখতে পারেনি। অথচ একটি ফুলের প্রতি ভালবাসাই যথেষ্ট ছিল পৃথিবীকে বাচিয়ে রাখার জন্য। হঠাত করেই বুড়ো বিচারকটি পকেট থেকে কি জানি বার করে সবার সামনে মেলে ধরে। ইলেক্ট্রিক এলবাম। ওদের অলক্ষে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

ওটা আবিদের। অন করতেই আবিদের তিন বছরের মেয়েটির ছবি ভেসে ওঠে। বাবা তুমি ভাল থেক.........অডিও বেজে উঠে। অনবরত চোখের জল পড়তে থাকে আবিদের চোখ বেয়ে। একসময় বুড়ো বিচারকও চমকে উঠেন চোখে হাত দিয়ে, পানিতে তার চোখও ভিজে গেছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.