কত আজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই দূরকে করিলে নিকট,বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।
ঃ হ্যালো---
ঃ ফোন ধরছো না কেন? গত পরশু থেকে ফোন করে যাচ্ছি। আমাকে কষ্টো দিতে তোমার এত ভাল লাগে? আমি অবাক হয়ে যাই! তুমি আমাকে কষ্টো দিচ্ছো বলছো চলে যেতে? মাপ করে দিতে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আদিবাসীদের মতো তুমি আমাকে আগুনের মধ্যে বেঁধে রেখে আনন্দে নৃত্য করছো। কি খুশী আমাকে পুড়তে দেখে?
ঃ তার মানে কি? এত্ত কঠিন কথা তুমি আমাকে বলছো কেন?! আমি কিন্তু কেঁদে ফেলবো?
ঃ আমি কঠিন কিছুই বলিনি।
আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে সেটাই বলেছি।
ঃ আমার বুকে কি পরিমান কান্না জমে আছে তুমি জানো?
ঃ তুমি একবার চিন্তা করে দেখো তুমি আমার সাথে গত এক সপ্তাহে একদিন ও ভালো ব্যাবহার করেছ। আমি তোমাদের বাসায় গেলে তুমি আমার সাথে দেখা করো না। ফোন করলে বলো ব্যাস্ত পরে কথা হবে, সেই পর আর আসে না। আবার ফোন করলে সামান্য কথা নিয়ে ঝগড়া রাগারাগী করো।
কি পরিমান যন্ত্রনা আমার হয় তা তুমি বোঝো? আমি এখন অফিস, বাসা সব কিছু নিয়ে কি এক সমস্যার মধ্যে আছি। এর মাঝে তুমিই আমার একমাত্র শান্তি। সকাল থেকে রাত বারটা পর্যন্ত কাজ আর কাজ এর যেন শেষ নেই। তীর্থের কাকের মত সময়ের সুযোগে থাকি তোমাকে ফোন করবার। যাও একটু সুযোগ পাই তুমি এমন ব্যাবহার করো যেন আমার ফোন পেয়ে তুমি খুবই বিরক্ত।
কিন্তু আমি তো না করে পারি না।
ঃ কেন তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করি তুমি বোঝ না?
ঃ তুমি আমাকে সেটা বুঝতে দিয়েছো? শুধুই তো ঝগড়া আর ঝগড়া।
ঃ কেন ঝগড়া করি সেটা বুঝো না? কি জ্বালা এই বুকে তা বুঝো? কি কষ্ট আমার?
ঃ কষ্ট কি শুধুই তোমার? আমার নাই? এত স্বার্থপর ভাবো কেন? কিন্তু তুমি আমার কাছেই থাকো সব সময়। খালি কষ্ট হয় যখন তুমি আমাকে ভুল বোঝো।
ঃ সারাদিন তোমার কাছে যেতে চাই পারিনা? তোমার কাছ থেকে পালাতে চাই পারি না? ছুঁতে চাই পারি না।
নাই আমার সীমার মাঝে তুমি নাই। আমি কি ক্ষতি করেছি তোমার যে আমাকে এভাবে কষ্ট দাও এই ভাবে কেন তুমি আমার জীবনে ফিরে এলে ? চলেই তো গিয়েছিলে? এলেই যদি তবে কেন পুরাণো প্রেমের দাবী নিয়ে এলে?
এক বারও কি আসতে পারনা আমার কাছে? এই পোড়া দুই চোখের মাঝে? এই পোড়ামন কিছুই বোঝে না? আমি বিবাহিত তুমি বিবাহিত তবুও কেন এমন হলো? কেন সুর তুললে আবার এই মনে?
ঃ চুপ করো ? আমি তোমার কাছেই আছি। আমি সব সময় তোমাকে আমার খুব কাছেই অনুভব করি। আমি তোমাকে সেই ভাবেই পাই সেই প্রথম দিনের ইউনিভার্সিটির বারান্দায় দাঁড়ানো ভীত মেয়েটি বাইরের গোলাগুলির শব্দে ভয়ে যে এক অপরিচিত যুবকের হাত চেপে ধরেছ। আমি সেই সময় তোমার গায়ের গন্ধ পেয়েছিলাম, সেই গন্ধ আজও পাই।
মনে হয় আমি তোমার হাত ধরেই আছি। আমি তোমার কাছ থেকে পালাতে চাই না। এই জন্য হয়তো আমার কষ্ট কম হয়। তুমি আমার মত ফিল করে দেখো। তোমার কষ্ট অনেক কম হবে।
তুমি যদি এমন করো তা হলে আমার জন্য তোমাকে ছেড়ে থাকা আরও কষ্টকর হয়ে যাবে। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবোনা। সব ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে আমি তোমাকে নিয়ে চলে যাব। তোমার জন্যই তো আমি পারি না তোমাকে একেবারেই আমার কাছে নিয়ে আসতে। নতুন করে সব শুরু করতে।
এটা বুঝো প্লিজ। কি হলো ? কিছু বলো?
ঃ আর কি বলবো? আমি ফিরে যাই আমার আলয়ে তুমি তোমার ঘরে।
ঃ যেও না প্লিজ।
ঃ আমি ঘুমাবো। বাই।
ঃ যেও না।
ঃ কাল কথা হবে হয়তো।
ঃ আর একটু থাকো। যেও না প্লিজ। প্লিজ কথা বলি।
ঃ নাহ্ থাকলে কষ্ট বারে। ঘুম আসে না।
ঃ প্লিজ থাকো। কিসের কষ্ট? আমার তো ভাল লাগে। তোমার কন্ঠো আমার সমস্ত হৃদয়টা জুড়িয়ে দেয়।
সারাটা দিন ভালো যায়। কিছু বলো। একেবারে চুপ করে আছ।
ঃ তোমাকে আমি খুব সুস্পষ্ট ভাবে একটা কথা বলছি। মন দিয়ে শোন।
আমার দুর্বলতার জন্যই আমি তোমার সাথে এই কয়েকদিন ভাল ভাবে কথা বলেছি। হঠাৎ করে তোমাকে দেখে ভুলেই গিয়েছিলাম আমি আর নেই সেই আমি। আমাতে এখন অনেকের বাস। আমার আছে সংসার। আমি প্রথমেই তোমাকে যা বলতে চেয়েছি তা না বলে বলেছি উল্টোটা।
আমি কোন প্রশ্ন শুনবার জন্য কথাটা বলছি না। যে সব প্রশ্ন তুমি করবে তার উত্তর তোমার কাছেই আছে।
এবারে কথাটা শোন। তুমি আমাকে আর কখনও ফোন করবে না। আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগের চেষ্টাও করবে না।
এখন থেকে যদি কখনও কোথাও তোমার সাথে আমার দেখা হয় মনে রেখো তোমাকে আমি চিনি না বা তুমি আমাকে চিনো না। যদি তুমি আমাকে সত্যি সত্যিই ভালবেসে থাকো তবে আমার এই অনুরোধটা তুমি রাখবে। আমি এখন ঘুমাবো। বাই।
ঃ না প্লিজ না, এভাবে তুমি বলতে পার না।
প্লিজ যেও না। প্লিজ তুমি কথা বল, প্লিজ তুমি কথা বল, যেও না। দয়া কর। আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমার কাছে কিছু চাইবো না শুধু এটুকু দয়া কর।
আমি অনেক খুঁজে তোমাকে পেয়েছি । তোমাকে হারিয়ে আমি একটা মুহুর্ত ও ভালো ছিলাম না। প্লিজ।
রাখি ফোনটা রেখে দেয়। মনে পরে ঠিক এভাবেই সেদিন রাখি অনুরোধ করেছিল মিনতি জানিয়েছিল --সে ফিরে যাবে না সে থাকবে সাব্বিরের সাথে।
কি চরম নিষ্ঠুরতার সাথে সাব্বির সেদিন তার অপারগতার কথা বলে ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো।
মাথা নিচু করে যে বাড়ি থেকে সে বের হয়ে গিয়েছিল সেই বাড়িতে ফিরে এসেছে। অথচ সাব্বির তখন ভাল চাকরী করে। ও রাখিকে ফিরিয়ে দিয়েছে ওর বাড়ির কথা বলে । ও কিসের নেশায় তখন মত্ত ছিল? সাব্বির তাকে ভালবাসে কিন্তু তখন রাখিকে সে বিয়ে করতে পারবে না।
তার সময় দরকার।
দু’মাস আগে ক্লিনিকে ওর সাথে আবার দেখা প্রায় তিনবছর পর। সন্তান সম্ভবা রাখি রেগুলার চেকাপের জন্য গিয়েছিল ক্লিনিকে। সেখানেই কার সাথে দেখা করতে এসেছিল সাব্বির। সাব্বিরই আগে দেখতে পায় রাখিকে।
রাখি পরিচয় করিয়ে দেয় মামুনের সাথে সাব্বিরের। সেই শুরু। আবার সাব্বির রাখির জীবনে ঝড় তোলে। রাখি ভুলে যায় তার বর্তমান। প্রতিদিন ফোন ও মাঝে মাঝে বাড়িতে আসা।
আর ফোন মানেই পুরাতন প্রেম ঝালাই করা।
সে শুধুই বারবার বলে আমি ভুল করেছি আমি পারিনি তোমাকে ভুলতে। রাখি কি পেরেছে ভুলতে? রাখিও তো প্রতিরাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে সাব্বিরের মঙ্গলকামনা করে এসেছে।
কিন্তু রাখির বর্তমান তিলতিল করে গড়েছে সে মামুনের সহযোগিতায়। সেই বর্তমান এত নরম ভীতের উপর স্থাপিত নয় যে একটু বাতাসেই টলে পরবে।
হায়রে ভালবাসা। এর হাত থেকে রেহাই নেই। কেউ হয়তো রেহাই পেতে চায় না, চায় না মুক্তি পেতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।