আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসংগঃ আস্তিকের ধর্মকথা-৩

ওয়াঁ...ওয়াঁয়াঁ...ওয়াঁয়াঁয়াঁ...!!!
ধর্মীয়, বৈষয়িক এবং সামাজিকতার প্রেক্ষিতে সম্পূর্ন ব্যাক্তিগত উপলব্ধি, কারো সাথে মিল বা অমিলে কিছু আসে যায় না। প্রসংগঃ আস্তিকের ধর্মকথা-১ প্রসংগঃ আস্তিকের ধর্মকথা-২ যারা কোরান মানে বুঝে পড়েন এবং ইসলাম পূর্ব আরব নিয়ে গবেষনা করেন, তারা এই সিরিজ লেখার বিষয়ের সত্যতা কম-বেশী জানেন। আর যারা এখনও জানেন না, তাদের জন্য এই পর্বের লেখা। কোরানে বেশ কিছু আয়াত থেকে এই সব বিষয়ে জানা যায়। বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ কিছু আয়াতের নীচে {(ব্র্যাকেটের)} ভিতরের সব লেখাই আমার সীমিত জ্ঞানের ব্যাক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গী।

তবে মূল বিষয়ঃ চন্দ্রদেবতা-হুবাল-আল্লাহ, আল-উয্‌যা, লাত, মানাত; শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে প্রায়ই অন্যদিকে মোড় নিতে চেয়েছে। এই লেখায় আগের লেখার ধারাবাহিকতা কতটা বজায় আছে, তা নিয়ে আমি নিজেই সন্দিহান। কারো কাছ থেকে যেমন উত্তর আশা করছিনা, তেমনি কারো কাছে কোন প্রশ্নও করছি না। এবং কোন কিছু প্রমান করার চেষ্টাও করছি না। বিষয়টি অনেকটা অন্ধদের হাতী দেখার মতো।

আমি আমার মতো করে দেখছি। আর যেহেতু যার যার ধর্ম তার তার কাছে (১০৯:৬), তাই সবকালের সমস্ত দায়িত্ব আমার নিজের। কোরানের অবমাননা বা নাস্তিকতা’র প্রচার চালানো আমার উদ্দেশ্য নয়। তারপরও বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর হেতু, আশা করছি পাঠকরা সহজভাবে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। ----------------------------------------- ----------------------------------------- সূরা স্বাফ্‌ফাত(৩৭): আয়াত ১৪৯- সুতরাং তাদের জিজ্ঞাসা করো- তোমার প্রভূর জন্য কি কন্যাসন্তান রয়েছে, আর তাদের জন্য পুত্রসন্তান? {ইসলাম পূর্ব যুগের আল্লাহ’র শুধু মেয়ে আর সেই আল্লাহ’র অনুসারীদের নিজেদের শুধু ছেলে? অথবা আল্লাহ নিজের জন্য কন্যাদের রেখে দিয়ে, তার উপাস্যদের পুত্রসন্তান (সম্ভবত ঈসা এবং তার অনুসারীদের) দিয়েছে?} ------------------------------------------ ------------------------------------------ সূরা স্বাফ্‌ফাত(৩৭): আয়াত ১৫২- আল্লাহ জন্ম দিয়েছিলেন? আর তারা তো নিশ্চই মিথ্যাবাদী।

{ইসলাম পূর্ব যুগের আল্লাহ জন্ম দিয়েছিল কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন। কিন্ত কিভাবে বুঝবো তারা মিথ্যাবাদী? আমরা এখন কথায় কথায় (ব্লগের পোস্টে পোস্টে) রেফারেন্স খুঁজি/চাই। তারা মিথ্যুক বা আমি সত্য, এর রেফারেন্স কই? তাদের আল্লাহ’কে নিয়েই নতুন দৃষ্টিভঙ্গীতে সত্য বলা হয়েছে। ব্যাপারটা এমন, ইসলাম পুর্ব যুগের মানুষেরা তাদের আল্লাহ’র সন্তান আছে মেনে নিয়ে, আল্লাহ এবং তার তিন কন্যার পূজা করতো। কিন্তু নতুন ধর্মে ঐ আল্লাহ’কেই নিঃসন্তান হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, মূল উপাস্য কিন্তু তাদের আল্লাহ’ই।

তবে এখানে একটি প্যাঁচ আছে। অনেকে ভাবতে পারেন, সব দেব-দেবীদের’ই যেহেতু আল্লাহ বলে ডাকা হতো, সেহেতু তাদের আল্লাহ আলাদা আর নতুন ধর্মের আল্লাহ আলাদা। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখবেন, আলোচনা হয়েছে তাদের আল্লহ’কে নিয়েই। বলা হয়নি নতুন ধর্মের আল্লাহ নিঃসন্তান, বলা হয়েছে তাদের আল্লাহ নিঃসন্তান। } --------------------------------------------- --------------------------------------------- সূরা স্বাফ্‌ফাত(৩৭): আয়াত ১৫৩- তিনি কি কন্যাদের পছন্দ করেছেন পুত্রদের পরিবর্তে? {ইসলাম পূর্ব যুগের আল্লাহ’র অনূসারীদের জন্য সাধারন একটি প্রশ্ন।

সেই আল্লাহ’র তিন মেয়ে কিন্তু ছেলে নেই কেন? অথবা ছেলে থাকলেও মেয়েদের পছন্দ করেছে কেন?} ---------------------------------------------- ---------------------------------------------- সূরা স্বাফ্‌ফাত(৩৭): আয়াত ১৫৮- আর তারা তাঁর মধ্যে ও জিনদের মধ্যে একটা সম্পর্ক দাঁড় করিয়েছে। আর জিনরা তো জেনেই ফেলেছে যে তাদের অবশ্যই উপস্থাপিত করা হবে। {ইসলাম পূর্ব যুগের আল্লাহ’র সঙ্গে জিনের সম্পর্ক বা শরিক করার কথা জানা যায়। কিন্তু জিনরা জানে যে শেষ বিচারে তাদেরও উপস্থিত করা হবে, এটা কোথা থেকে জানা গেল? রেফারেন্স কই?} ------------------------------------------------ ------------------------------------------------ সূরা ‘আন’আম(৬): আয়াত ১০০- তথাপি তারা আল্লাহ’র সঙ্গে শরিক করে জিনকে, যদিও তিনিই ওদের সৃষ্টি করেছেন, আর তারা কোন জ্ঞান ছাড়াই তাঁতে আরোপ করে পুত্র ও কন্যাদের। তাঁরই সব মহিমা! আর তারা যা আরোপ করে সে-সব থেকে তিনি বহু ঊর্ধ্বে।

{ইসলাম পূর্ব যুগের আল্লাহ’র সঙ্গে জিনকে শরিক করা এবং তার ছেলে এবং মেয়েদের কথা এখান থেকে জানা যায়। (সেই আল্লাহ’র কথাই বলা হয়েছে যাকে ইসলাম পূর্ব যুগের আরবরা জিনের সাথে শরিক করতো, কিন্তু নতুন দৃষ্টিকোন থেকে বলা হয়েছে জিনকে “ঐ” আল্লাহ’ই সৃষ্টি করেছে। ) কিন্তু সকল মহিমা “ঐ” আল্লাহ’রই। ইসলাম পূর্ব যুগের আল্লাহ’কে উপাসনা করা মানুষেরা আল্লাহ’কে নিয়ে যা কল্পনা করে, তিনি তা নন। তার থেকেও বড় কিছু।

(“ঐ” আল্লাহ’রই প্রশংসা করা হয়েছে শুধু আরো ব্যাপক শক্তি যোগ করে, দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করে। )} ----------------------------------------------- ----------------------------------------------- সূরা ‘আন’আম(৬): আয়াত ১০১- মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবীর আদিস্রষ্টা! কোথা থেকে তাঁর সন্তান হবে যখন তাঁর কোন সহচরী নেই। আর তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, আর তিনিই তো সব-কিছু সম্বন্ধে সর্বজ্ঞাতা। {ইসলাম পূর্ব যুগের আল্লাহ’র সন্তানদের অস্তিত্বের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। (ইসলাম পূর্ব : ইসলাম পর= আল্লাহ উপাসনা হয়েছে সন্তান/কন্যা প্রতিকৃতিসহ : আল্লাহ উপাসনা হয় নিরাকার, একক হিসেবে।

) এই প্রশংসাগুলোর কোন রেফারেন্স নেই, কিভাবে, কবে, কোথা থেকে। মরিয়মের সন্তান ঈসা জন্ম হয় সহচর ছাড়া আল্লাহ’র ইচ্ছায়, আর আল্লাহ নিজের ইচ্ছায় নিজের জন্য সহচরী কেন বানাতে পারবে না তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। } ------------------------------------------------ ------------------------------------------------ সূরা ‘আন’আম(৬): আয়াত ১০২- এই হচ্ছেন আল্লাহ, তোমাদের প্রভু! তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই, তিনি সব-কিছুরই সৃষ্টিকর্তা, কাজেই তাঁরই উপাসনা করো, আর তিনি সব বিষয়ের উপরে কর্ণধার। {আল্লাহ’কে নতুন করে, নতুন আঙ্গিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। } ------------------------------------------------ ------------------------------------------------ সূরা নাজ্ম(৫৩): আয়াত ১৯- তোমরা কি তবে ভেবে দেখেছ লাত ও ‘উয্‌যা, সূরা নাজ্ম(৫৩): আয়াত ২০- এবং মানাত,-তৃতীয় আরেকটি? সূরা নাজ্ম(৫৩): আয়াত ২১- তোমাদের জন্য পুত্রসন্তান আর তাঁর জন্য কন্যা! {মানুষ জাতীর জন্য পুত্রসন্তান(সম্ভবত ঈসা) আর আল্লাহ’র নিজের জন্য কন্যাসন্তান কেন তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে।

} সূরা নাজ্ম(৫৩): আয়াত ২২- এ তো বড়ই অসংগত বন্টন! {এখান থেকে ইসলাম পূর্ব যুগের আল্লাহ’র মেয়েদের নাম জানা যায়। তবে বন্টনের অসংগতি নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না, যারা বোঝেন বুঝে নেন, না বুঝলেও দোষ নেই। ) ---------------------------------------------------- ---------------------------------------------------- সূরা নাজ্ম(৫৩): আয়াত ২৩- তারা নামাবলী বৈ তো নয়, যা তোমরা নামকরণ করেছ- তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষরা, যাদের জন্য আল্লাহ কোন সনদ পাঠান নি। তারা তো শুধু অনুমানে এবং যা তাদের অন্তর কামনা করে তারই অনুসরণ করে। অথচ তাদের প্রভূর কাছ থেকে তাদের কাছে পথনির্দেশ অবশ্যই এসে গেছে।

{ইসলাম পূর্ব যুগের আল্লাহ’র মেয়েরা সত্যিই আছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ করা হয়েছে। বলা হয়েছে তারা নাম ছাড়া কিছুই না এবং সেটা ইসলাম পূর্ব যুগের আল্লাহ’র উপাসকরা এবং তাদের পূর্বপুরুষরা নিজেরাই বানিয়েছে। তাদের জন্য ইসলাম পূর্ব যুগের আল্লাহ কোন ওহী বা কিতাব পাঠায় নি। (কিন্তু জানা মতে তওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ছাড়াও নবীরা কম-বেশী ওহী পেয়েছিল। দাবী করা হয় সবই আল্লাহ’র।

তবে সেগুলো কি এলাকাভিত্তিক ধর্ম ছিল? সমগ্র মানবজাতির জন্য নয়? আরব এলাকায় ঘিরেই তো প্রায় সকল নবী রাসূল এর জন্ম, তাদের কোন অবদান নেই না তাদের অস্বীকার করা হলো?) তারা নিজে যেভাবে চায় সেভাবে প্রার্থনা করে। এখন তাদের আল্লাহ’র কাছ থেকেই নতুন ধর্মে তাদের সঠিক পথ দেখাতে ওহী/কিতাব এসে গেছে। বলা হয়নি নতুন ধর্মের নতুন/আমাদের আল্লাহ। ) ------------------------------------------------- ------------------------------------------------- সূরা নাজ্ম(৫৩): আয়াত ২৭- নিঃসন্দেহ যারা পরকালে বিশ্বাস করে না তারা ফেরেশতাদের নাম দেয় মেয়েদের নামে। {এখানে আল-উয্‌যা, লাত এবং মানাত কে ফেরেশতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

(যদি ছেলেদের নামে তাদের নামকরন হতো তবে কী হতো এটা সহজেই অনুমান করা যায়। )} ------------------------------------------------ ------------------------------------------------ সূরা নহল(১৬): আয়াত ৫৭- আর তারা আল্লাহতে আরোপ করে কন্যাসন্তান! সমস্ত মহিমা তাঁরই!- অথচ নিজেদের জন্য যা তারা কামনা করে। {এখানে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে যে ইসলাম পূর্ব যুগের আল্লাহ’র মেয়ে কেন? সমস্ত মহিমা “ঐ” আল্লাহ’রই। (ইসলাম পূর্ব : ইসলাম পর= আল্লাহ উপাসনা হয়েছে সন্তান/কন্যা প্রতিকৃতিসহ : আল্লাহ উপাসনা হয় নিরাকার, একক হিসেবে। ) ইসলাম পূর্ব যুগের আল্লাহ’র উপাসকরা নিজেরাই কন্যাসন্তান চায়।

(প্রচার করা হয়েছে যে, জাহেলিয়াতের যুগে কন্যাসন্তান জ্যান্ত পুঁতে/মেরে ফেলা হতো। মেয়েদের কোন সম্মান ছিলনা। অথচ বোঝা যায় যে তারা কন্যা সন্তান কামনা করতো এবং আল্লাহ’র কন্যাদের চরিত্র তৈরী করে দেবী বানিয়েছিল। অন্যভাবে বলা যায় কন্যাসন্তান কামনা করতো তাই আল্লাহ’র কন্যা তৈরী করে তাদের পূজা করতো। ) ------------------------------------------------- ------------------------------------------------- রাসূল মুহাম্মদের জীবনীগ্রন্থে ইবন হিশাম বর্ণনা করেছেঃ যুদ্ধের(ওহুদ বা বদর) ঘটনাস্থল ত্যাগের প্রাক্যালে আবু সুফিয়ান পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিজেদের দলকে চিৎকার করে বলেছিল “খুব ভাল কাজ করেছ, যুদ্ধজয়ের মোড় ঘুরে গেছে।

আজ দিন বদলের দিন (বদর)। তোমার ক্ষমতা দেখাও হুবাল। সত্যি বলতে ইসলাম পূর্ব যুগের আরবের ইতিহাস খুব বেশী এবং গভীর ভাবে জানা যায়নি। সম্ভবত ইসলামের শুরুতেই পূর্বের সকল ধর্ম, সংস্কৃতি, নথি ধ্বংস করা হয়। একমাত্র সহজলভ্য উৎস কোরান।

তারপরেও অন্যান্য সামান্য কিছু উৎস থাকলেও সেগুলি পক্ষপাতদুষ্টে দুষ্ট। একজন আস্তিক হিসেবে নিজের বিশ্বাসকে জোড়দাড় করতেই আমার এই অনুসন্ধানী প্রয়াস। এই সিরিজের ১ম এবং ২য় পর্বের তথ্যের উৎস এবং ৩য় পর্বে কোরানের আয়াতগুলো খুজতে উইকিপিডিয়া (wikipedia.org) এবং তাতে অবস্থিত অন্যান্য লিঙ্কের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। বাংলা কোরান পেয়েছি http://www.qurantoday.com/bangla.htm থেকে। পাঠকদের ইচ্ছা থাকলে চলবে।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।