আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাইফাই ৪। আর কমপ্লেক্স

আমি তোমাকেই বলে দেব, কি যে একা দীর্ঘ রাত আমি হেটে গেছি বিরান পথে! আমি তোমাকেই বলে দেব, সেই ভুলে ভরা গল্প; কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়!

আর কমপ্লেক্স ১. ক্লাসের সবার মাঝে একটা চাপা গুঞ্জন। কিন্তু এসবের কোন কিছুতেই মনোযোগ নেয় রাসার। ক্লাসের এক কোনে একটা ছেলে হেসে উঠল। ব্যাপারটা কি জানার জন্য ক্লাসের সবাই কৌতুহলি হলেও রাসা আগের মতই তার যায়গায় বসে থাকল। ওর সামনে একটা ক্লিপবোর্ড রাখা, ক্লিপবোর্ডের ওপর একটা পোকা।

ক্লিপবোর্ডের মাঝে আঁকা একটা বৃত্তের বাইরে পোকাটা চলে আসতেই, রাসা হাতের পিন দিয়ে একটা ছোট্ট গুতো দিল। সাথে সাথে পোকাটা কুচকে পিছিয়ে গেল। রাসা এভাবে কয়েকটা ছোট ছোট গুতো দিয়ে পোকাটাকে বৃত্তের কেন্দ্রে নিয়ে গেল। এমন সময় ক্লাসে প্রবেশ করলেন মি. গোল্ড স্টোক। ক্লাসের সবাই খুশিতে একযোগে চিৎকার করে উঠল।

ছোট খাট এই মানুষটি তাদের ইতিহাসের ক্লাস নেন, কিন্তু সাহিত্য বা বিজ্ঞানেও সমান জ্ঞাণ রাখেন। মি. স্টোককে সবার পছন্দের কারন, তিনি খুব হাসিখুসি এবং অন্য স্যারদের মত তার ক্লাস করতে একঘেয়েমি লাগে না। আরেকটা কারন হচ্ছে তিনি প্রতিটি ছাত্রকে নাম ধরে সম্মধন করেন। ক্লাসের সবাই শান্ত হলে মি. স্টোক হাসিমুখে বললেন,“ছেলেরা তোমরা নিঃশ্চয় অবাক হয়েছ? আমি এই ক্লাসে কেন!? তোমাদের রিগান স্যার একটু অসুস্থ তাই আমাকেই আসতে হল। ” সামনে থেকে কে যেন বলে উঠল,“খুব ভাল স্যার!” মি. স্টোক একটু গম্ভির হয়ে বললেন,“এটা ঠিক না রিমন, কেউ অসুস্থ হলে তার সুস্থতা কমনা করতে হয়।

” রিমন অজুহাতের সুরে বলল,“রিগান স্যারের অসুস্থতাকে ভাল বলিনি, আপনার এই ক্লাসে আসাটাকে ভাল বলেছি। ” মি. স্টোক এবার হাসি মুখে বললেন,“তাই নাকি! তার মানে তোমাদের এনাটমির ক্লাস ভাল লাগেনা?” সবাই একযোগে বলে উঠল,“না স্যার একদম না। ” এমন সময় মি. স্টোক রাসাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বললেন,“এই যে রাসা কি কর?” রাসা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,“এ-এইতো কিছু না স্যার...। ” মি. স্টোক মুচকি হেসে বললেন,“আসলে তোমাকে প্রশ্ন করতে হত, কি ভাবছ?” “না স্যার কিছু ভাবছি না। ” এবার মি. স্টোক কিছুটা চিন্তিত হয়ে বললেন,“তবে তুমি কি অসুস্থ?” “না স্যার আমি সম্পুর্ন সুস্থ।

” মি. স্টোক রাসার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,“ তবে... আরে কি সুন্দর একটা মথ! এবার বুঝেছি, তুমি নিশ্চয় এটা পর্যবেক্ষন করছিলে। তা কি পর্যবেক্ষন করছিলে?” “কিছু না স্যার। ” মি. স্টোক তবুও হাসি মুখে বললেন,“কিছু না তো হতেই পারে না। । ” রাসা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,“আসলে আমি পোকাটাকে একটু কষ্ট দিচ্ছিলাম।

” রাসার কথায় মি. স্টোক পুরোপুরি চমকে উঠলেন, তার মুখের হাসি মুহূর্তে মিলিয়ে গেল। কিছুক্ষন স্থির দৃষ্টিতে রাসার দিকে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করলেন,“কেন..? একটা সুন্দর পোকাকে অহেতুক কষ্ট দিচ্ছ?” রাসা বোকার মত হেসে বলল,“এমনি স্যার , ক্লাসে একা একা বসে থাকতে ভালো লাগছিল না তো তাই। ” মি. স্টোক আরও অবাক হয়ে গেলেন,“তুমি ক্লাসে একা হবে কেন? ক্লাসে তোমার আর বন্ধুরা আছে না! ওদের সাথে কথা বলবে, গল্প করবে। ” সামনে থেকে রনি বলে উঠল,“স্যার রাসা খুব নিষ্ঠুর; ও সবাইকে কষ্ট দিয়ে মজা পায়। তাই ওর সাথে কারও ভাব হয় না।

” স্যার খুব আহত গলায় বললেন,“না রনি, কখনও ও কথা বলতে হয় না। মানুষ কখনও নিষ্ঠুর হতে পারে না। মানুষ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বন্ধুভাবাপন্ন প্রাণী। নিষ্ঠুরতা মানুষের মাঝে নেই। ” রনি তারপরও বলল,“কিন্তু স্যার এটা সত্য, হয়ত রাসা মানুষ নয়!” মি. স্টোক হঠাৎ রেগে গেলেন।

কেউ কখনও তাকে রাগতে দেখেনি, তাই সবাই ভয় পেয়ে গেল। ষ্যার হঠাৎ রাসার কান ধরে টান দিয়ে সামনে নিয়ে গেলেন, তারপর কানের পেছনে একটা দাগ দেখিয়ে বললেন,“দেখেছিস এইযে আর.সি.সি অপারেশনের স্পষ্ট দাগ আছে। তারপরও রাসা নিষ্ঠুর হয় কেমন করে। ” মি. স্টোক যেমন হঠাৎ রেগে গিয়েছিলেন ঠিক তেমনি হঠাৎ শান্ত হয়ে নিজের চেয়ারে বসে পড়লেন। রাসা হতভম্ব হয়ে স্যারের পাশে দাড়িয়ে থাকল।

স্যার ধিরে ধিরে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বিড়বিড় করলেন,“অসম্ভব এ কিছুতেই হতে পারে না। আমি রেগে গেলাম কিভাবে?” হঠাৎ করে রাসাকে তাঁর সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে বললেন, “তুমি এখানে দাড়িয়ে কেন? ডনজের সিটে যাও। ” রাসা দ্রুত নিজের সিটে ফিরে গেল। এরপর পুরো ক্লাসে মি. স্টোক নীরব হয়ে বসে রইলেন; ঘন্টা পড়লে কোন কথা না বলে ধিরে ধিরে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন। ছেলেরা খুব অবাক হয়ে পরস্পরের দিকে তাকাতে লাগল।

২. বাসায় ফিরে রাসা আরও অবাক হয়ে গেল, যখন কোয়ান্টাম নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে দেখল আর.সি.সি অপারেশনের ব্যাপার গুলো পঞ্চম মাত্রার নিরাপত্তা যুক্ত! রাসা যখন পাসওয়ার্ড ভাঙ্গার চেষ্টা করছে তখন তার সেল ফোনটা বেজে উঠল। রাসা ফোন রিসিভ করে বেশ অবাক হোল, ওপাসে মি. স্টোক ব,লেন,“হ্যালো রাসা কেমন আছ?” “জি স্যার ভালো আছি। ” “কোথায় আছ এখন তুমি” “বাসায় আছি স্যার” “তুমি কি এখন চিকিৎসা কেন্দ্রে আসতে পারবে?” “জ্বি পারব। কিন্তু . . .” “ঠিক আছে তুমি চলে আস। আমি অপেক্ষা করছি।

” রাসাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মি. স্টোক ফোনটা রেখে দিলেন। রাসা কিছুটা বিরক্ত হয়েই চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌছল। পৌছতেই মি. স্টোক তাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। তারপর তাকে একটা রুমের বাইরে বসিয়ে নিজে ভেতরে চলে গেলেন। বেশকিছুক্ষন পর বের হয়ে এসে রাসাকে নিয়ে গেলেন।

ভেতরের লোকটা হাসিমুখে রাসাকে দেখলেন; তারপর গম্ভির কন্ঠে বললেন,“কেমন আছ তুমি। ” রাসা কোন উল্টর না দিয়ে চুপচাপ বসে থাকল। লোকটা আবার প্রশ্ন করলেন, তোমার ট্রাকিয়েশন নাম্বার কত?” “এস ২৮১৭০০৪। ” “ধামি যখন প্রশ্ন করলাম কেমন আছ তখন তুমি উত্তর দাওনি; কেন জানতে পারি?” ঊ্যাপারটা কি ঘটছে বুঝতে না পারায় রাসা খুব বিরক্ত ছিল, তাই বিরক্ত ভরা কন্ঠে বলল,“মানুষ সুস্থ থাকলে নিশ্চয় চিকিৎসা কেন্দ্রে আসে না। মি. স্টোকের ধারনা আমি অসুস্থ।

” চিকিৎসা কেন্দ্রের লোকটি এবার নড়েচড়ে বসলেন, তারপর স্মিত হেসে বললেন,“ধামি কিন্তু অসুস্থ না, তোমার টিচারও অসুস্থ না এবং আমার ধারনা তুমিও অসুস্থ না। তারপরও মজার ব্যাপার দেখ, আমরা তিন জনেই কিন্তু চিকিৎসা কেন্দ্রের একটা রুমে বসে আছি। ” রাসা এবার আগ্রহ প্রকাশ করে বলল,“তারমানে আমার মাঝে কোন অস্বাভাবিকতা নেই?” “আমি এখনি তা বলছি না, তবে আমার ধারনা তোমার মস্তিস্ক স্ক্যান করার পর এ কথাটি জোর দিয়ে বলতে পারব। ” রাসা একটু দমে গিয়ে বলল,“ও...” তারপর প্রায় ১৫ মিনিট ধরে রাসার মস্তিস্ক স্ক্যন করা হল। এরপর পুনরাই রাসাকে বাইরের চেয়ারে বসতে বলে মি. স্টোক ভেতরে চলে গেলেন।

তিনি কোন ব্যাপারে খুব উত্তেজিত হয়ে আছেন বলে দরজাটা টেনে দিতে ভুলে গেলেন। ফলে রাসা ভেতরের আলোচনার কিছুটা শুনে ফেলল। মি. স্টোক উত্তেজিত ভাবে প্রশ্ন করলেন,“কি অস্বাভাবিকতাটা কোথায় ধরতে পেরেছেন?” “না মি. স্টোক আপনি শুধু শুধু উত্তেজিত হচ্ছেন। রাসার আর.সি.সি ঠিক ভাবেই পালসার পাঠাচ্ছে। এক বিলিয়ন রিডিং নিয়েছি, কোন বিচ্যুতি নেয়।

” “তার মানে . . . কিন্তু কোনতো অসংগতি নিশ্চয় আছে। ওর ট্রাকিওশান রিডিং নিয়েছেন। ” “আপনি বললে সেটিও নিয়ে নিচ্ছি, কিন্তু মনে হয় না সেখানেও কোন অসংগতি থাকবে। ” এরপর চিকিৎসা কেন্দ্রের পরিচালক নেটওয়ার্কে নিজের পাসওয়ার্ড এবং রাসার ট্রাকিওশান নাম্বার প্রবেশ করালেন। মনিটরে রাসার ব্লাড গ্র“প, ব্লাড সুগার, রক্ত কণিকার অনুপাত ইত্যাদি একে একে আসতে লাগল।

একটা রিপোর্ট দেখার পর চিকিৎসা কেন্দ্রের পরিচালক ছোট্ট একটা শি্শের মত শব্দ করলেন। সাথে সাথে মি. স্টোক বলে উঠলেন, “কিছু পেয়েছেন?” “একটা ইন্টারেস্টিং তথ্য, তবে গুরুত্বপূর্ণ কিনা বুঝতে পারছি না। ” “কি তথ্য?” “রাসা মস্তিস্কে বিরাট টিউমার নিয়ে জন্মগ্রহন করেছিল। সেই টিউমার অপারেশন করার জন্য আর.সি.সি অপারেশন পিছিয়ে যায় দুই বছর। ” “আচ্ছা এমনটি হতে পারে না যে, আর.সি.সি অপারেশন পিছিয়ে যাবার জন্য ও পোকা-মাকড়দের কষ্ট দেয়; আর আমার কথায় ধরুন না।

আমি ঐ দিন ওভাবে রেগে গেলাম কেন? রাসার মত কিন্তু আমারও আর.সি.সি অপারেশন মূল সময়ের এক মাস পরে হয়। কারন ঐ সময় আমি ফ্লু আক্রান্ত হই। ” “আপনার ধারনা সত্য কিনা জানি না। তবে সামনে মাসে আমাদের সাধারন কনফারেন্সে আছে; ওখানে আমি আপনাদের ব্যাপারটা তুলব। ” “ঠিক আছে এখন তবে আসি।

” বাসা ফিরেই রাসা ছুটল ওর বড় ভাই ত্রাসার কাছে। “ভাইয়া তোমার কাছে একটা জিনিস চাইর। দেবে?” ত্রাসা মুচকি হাসে, কারন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার ভাইয়ের কাছে রাসা গেম্স এর চিটকোড ছাড়া কিছু চায় না। “কি ভাইয়া দেবে না?” “দেব না কেন কি লাগবে বল। ” রাসা উজ্জ্বল হয়ে বলল, “একটা পাসওয়ার্ড ব্রেকার সফটওয়ার!” ত্রাসা কিছুক্ষন তিক্ষ্ চোখে চেয়ে থেকে বলল, “তোর মাথায় তো শয়তানি বুদ্ধিতে ভরপুর।

পাসওয়ার্ড ব্রেকার দিয়ে কি করবি?” রাসা বলল, “পরে বলব, কিন্তু পাসওয়ার্ড ব্রেকারটাকে শক্তিশালি হতে হবে কিন্তু। ” “কতটা শক্তিশালি?” “এই ধর পঞ্চম মাত্রা। ” “সর্বনাশ; তারমানে তুই সিরিয়াস কিছু করবি! কি করবি বল? না হলে কিন্তু দেব না। ” “ভাইয়া বললামতো পরে বলব। আর তুমি কিন্তু কথা দিয়েছ।

” “প্রথমেই কথা দেয়া ভুল হয়ে গেছে। ” “ভাইয়া প্লিজ . . .” “ঠিক আছে দেব। এখন যা পড়তে বস। ” ৩. রাসার দুই দিন খুব অস্থিরতার মাঝে কাটল। পাসওয়ার্ড ব্রেকার পাওয়ার সাথে সাথে রাসা নেটওয়ার্কে বসে গেল।

পাসওয়ার্ড ব্রেক করতে অনেক্ক্ষন লেগে গেল। নেটওয়ার্কে যেন আই.পি এডড্রেস না যায় তার জন্যও রাসাকে বেশ কিছুক্ষন কাজ করতে হল। সব শেষে রাসা আর.সি.সি সার্চ দিলে পর্দায় বেশ বড় বড় লাল অক্ষরে লেখা দেখতে পেল, ‘রেপ্টাইল কমপ্লেক্স কন্ট্রোলার’ এবং তার নিচে একটা প্রবন্ধ কিছুটা এরকম . . . ‘মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী তার কারন মানুসের মস্তিস্ক। মানুষের মস্তিস্কের গঠন অত্যান্ত জটিল যা গড়ে উঠেছে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে তথ্য ধারনের মধ্য দিয়ে। . . . মস্তিস্কের বিকাশ শুরু হয়েছে স্পাইনাল কর্ডের স্ফীত উর্ধ্বাংশের মধ্য দিয়ে, যার সব চেয়ে পুরাতন অংশ মস্তিস্ক কান্ড।

এই মস্তিস্ক কান্ড পরিচালনা করে মূর বায়োলোজিক্যাল কর্মকান্ড। মস্তিস্কের উচ্চ ক্রিয়া কলাপের অংশগুলোর উদ্ভব ঘটেছে তিনটি ধারাবাহিক পর্যায়ে। প্রথম অংশটা হল রেপ্টাইল কমপ্লেক্স সংক্ষেপে আর কমপ্লেক্স যা মস্তিস্ক কান্ডকে ঘিরে রাখে এবং এর উদ্ভব ঘটেছিল মানুষের সরীসৃপ জাতীয় পূর্ব-পুরুষে। মানুষের মস্তিস্কের একেবারে ভেতরের দিকটা হল কিছুটা কুমিরের মত। . . . দ্বিতীয় অংশ লিম্বিক সিস্টেম যার উদ্ভব ঘটেছিল এমন প্রাণীর মধ্যে যারা স্তন্যপায়ী ছিল কিন্তু প্রায়মেট ছিল না।

এরপর লক্ষ লক্ষ বছর পূর্বে মানুষের প্রাইমেট পুর্ব-পুরুষের মধ্যে অবশেষে গড়ে উঠেছিল সেরেব্রাল কর্টেক্স, যেখানে পদার্থ রুপ নেয় চেতনায়। . . . হত্যা, ধর্ষকামিতা প্রর্ভতি অশুভ প্রবৃত্তি গুলো মানব মস্তিস্কের গভিরে প্রাচীন সরিসৃপীয় অংশ আর. কমপ্লেক্স-এ প্রোথিত। অপর পক্ষে শুভবৃত্তি থাকে অপেক্ষাকৃত সা¤প্রতিক বিকশিত স্তন্যপায়ীদের মানবিক অংশ লিম্বিক সিস্টেম ও সেরেব্রাল কর্টেক্স-এ। . . . মানুষের আদিম ইতিহাস যুদ্ধেও ইতিহাস। বিভিন্ন সময় যুদ্ধে পৃথিবীর অনেক মানুষ মারা গেছে।

সর্বশেষ যুদ্ধে পৃথিবীর প্রায় ৬০% সাধারণ মানুষ মারা যায়। ফলে বিজ্ঞানীরা আর কমপ্লেক্সকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন। প্রায় আটশত বছর পূর্বে কিছু তরুণ বিজ্ঞানী একটি বায়োচিপ্ আবিষ্কার করেন, যা প্রতি দুই মিলি সেকেন্ড পর পর মস্তিস্কে পালসার পাঠায়। এই পালসার আর কমপ্লেক্সে চেতনা তৈরি করতে বাধা দেয়, ফলে মানুষের অশুভ প্রবৃত্তিগুলো বাধা পায়। এর পর আর.সি.সি (রেপ্টাইল কমপ্লেক্স কন্ট্রোলার) এর মেকানিজম ও আর.সি.সি অপারেশনের বিষদ বিবরণ দেওয়া আছে।

রাসা এই মারাত্মক আবিষ্কার আর.সি.সি এর মেকানিজম দেখে খুব অবাক হল। একেবারেই সিম্পল একটা মেকানিজম যা কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে খুব সহজেই জ্যাম করে দেয়া যায়। আর এই কারনে এরকম একটা বড় ব্যাপার সাধারণ মানুষের কাছে গোপন করা হয়। সমাজের বিশেষ শ্রেণীর লোক ব্যাতিত আর কেউ আর.সি.সি এর নামও জানে না। সরকার পাঁচ বছর বয়েসী সকল শিশুর মস্তিস্কে অপারেশন করা বাধ্যতামূলক করেছে, প্রগঐতিহাসিক যুগে শিশুর টিকা দানের মত।

কিন্তু পিতা কখনও প্রশ্ন করতে পারে না, কিসের অপারেশন এবং কেন করতে হবে? পুরো প্রবন্ধটা পড়তে পড়তে রাসার মাথায় অদ্ভুত এক বুদ্ধি এল। সে তার আর.সি.সি-টা বন্ধ করে দেখতে চাইলো কি হয়। কজটা যত সহজ হবে ভেবেছিল ততটা সহজ হল না। তারপরও রাসা খুজে খুজে বের করল কোয়ান্টাম নেটওয়ার্কের কোন সার্ভারটা হ্যাক্ করলে আর.সি.সি বন্ধ হয়ে যাবে। তারপর রাসা যখন সার্ভারটা হ্যাক করে ফেলল, তখন মানব দেহের মাঝে থাকা ট্রাকিওসান গুলো কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

ফলে পুরো পৃথিবীর সবগুলো আর.সি.সি একসাথে বন্ধ হয়ে গেল। রাসা জানতেও পারল না ও কত বড় ভুল করে ফেলেছে। ঠিক এমন সময় ত্রাসা ওর রুমে প্রবেশ করেই রেগে গেল, “তোর লেখাপড়া নেই? সবসময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকিস?” রাসা তার প্রতিবাদ করল, ফলে এই সামান্য ব্যপারটা নিয়ে তাদের তুমুল ঝগড়া বেধে গেল। একসময় ত্রাসা রাসাকে ধাক্কা দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিল। রাসার অনুশোচনাবোধ জন্মানোর পূর্বেই ডেড় হাজার ফুট নিচের কংকৃটের মেঝে তাকে আলিঙ্গন করল।

পরিশেষ আর.সি.সি আবিষ্কারের পর মানুষের আর কমপ্লেক্সকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য সেরেব্রাল কর্টেক্সকে কাজ করতে হত না, ফলে হঠাৎ করে আর কমপ্লেক্স নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেল। কয়েক বছর পর শহরের শেষ প্রান্তে একটা দূর্বল ছেলেকে ঘিরে কয়েকটা ছেলে লাফালাফি করছে। কেউ কেউ হাতের ছড়িটা দিয়ে দূর্বল ছেলেটাকে আঘাত করছে, আর প্রতিটি আঘাতের সাথে সাথে দূর্বল ছেলেটি চিৎকার করে উঠছে। দূর্বল ছেলেটি চিৎকার ক লে তাকে ঘিরে থাকা ছেলেগুলো খুশি হয়ে আরও আঘাত করতে এগিয়ে যাচ্ছে। ছেলেগুলোর মাঝে একটা নোংরা আনন্দবোধ করছে, যা তৈরি হয় রেপ্টাইল কমপ্লেক্সে।

(এই সাইফাইটি সায়েন্স ফিকসান সংকলন ২০০৯ এ নতুন গল্প হিসাবে প্রকাশিত। এর সাথে আরও একটি সাইফাই প্রজেক্ট এলিয়ান প্রকাশিত হয়। তারপরও আবার ব্লগে পোস্ট করলাম, কারন আমি পাঠকদের কাছাকাছি থাকতে চাই। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।