আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অতঃপর হোটেল সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ ফুটবল দল --- তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদন + ইন্টারভিউ

আজি হতে শতবর্ষ পরে কে তুমি পড়িছো বসি আমার ব্লগখানি কৌতুহল ভরে

১....... স্টেডিয়াম গেটে মোটরসাইকেল নিয়ে অনেক্ষণ অপেক্ষা করছে , "আমার বিদেশ" পত্রিকার স্পোর্টস রিপোর্টার আরিফ । সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হয়ে গেছে বেশ অনেক্ষণ আগে , কিন্তু বাংলাদেশ দল কেন যেন স্টেডিয়াম ছেড়ে বের হচ্ছে না কিছুতেই । আরিফের হাতে সময় কম , রাত ১ টার আগেই অফিসে ম্যাচ রিপোর্ট পাঠাতে হবে । হঠাৎ করেই টিম বাসটা চোখে পড়ে আরিফের । টিনটেন গ্লাস ভেদ করে খেলোয়াড়দের চেহারা বুঝবার জো নেই ।

আরিফের ইচ্ছে হোটেল সোনারগাঁ গিয়ে ম্যাচ পরবর্তী দু'একটা প্রতিক্রিয়া জেনে তবেই পত্রিকায় রিপোর্ট পাঠানোর । সুমনকে মোবাইলে কল করে আরিফ । "সুমন কোথায় তুমি ? তোমার না আমার বাইকে চড়ে হোটেলে যাবার কথা ? টিম বাস তো ছেড়ে দিয়েছে , শিগগির আসো , আমি ৩ নং গেটে আছি" --"আরিফ ভাই , আপনি চলে যান , আমার আর আজ হোটেলে যাওয়া হবে না , আমি সরাসরি অফিসে যাব" । কারণটা বুঝতে বাকি থাকে না আরিফের । সুমন হল , আলু পত্রিকায় উট-পালের চ্যালা ।

উট-পাল এখন বিশ্বকাপ নিয়ে বিজি বলে সাফ ফুটবলে দেখার সময় নেই তার , তাই দায়ভার এসে পড়েছে সুমনের উপর । আরিফ ভেবেছিল , এদ্দিনে উট-পালের জ্বালা থেকে রেহাই পাওয়া গেল , কিন্তু সুমন আরেক কাঠি বাড়া । প্রথম আলুর সাংবাদিকরা বদলালো না ..... রাগে একটু গরগর করে আরিফ । এরা ম্যাচ রিপোর্ট লিখে ফেলে ম্যাচের আগেই , সবার পকেটে থাকে একটা কবিতার পকেট বুক , সেখান থেকে কিছু লাইন নিয়ে রিপোর্টের মাঝে ঢুকিয়ে দেয়া হয় । আজ সুমন ভুল করে রিপোর্টটা ওর পাশে ফেলে গিয়েছিল , সেই সুযোগে আরিফ অনেকটাই দেখে ফেলেছে ।

মোটামুটি ৮/৯ প্যারার রিপোর্টের প্রথম ৪ প্যারা জুড়ে ডিসেম্বর মাস এবং মুক্তিযুদ্ধের দুর্বার চেতনায় খেলোয়াড়দের তেতে ওঠার বর্ণনা , পরের ৪ প্যারায় বাংলাদেশ দলের চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্সের দুর্বার বর্ণনা । আগের দিন আলু এনামুলকে দুঙ্গা বানিয়েছে , আজকের রিপোর্টে ওয়ালি ফয়সালকে বানানো হয়েছে দানি আলভেজ , আর নাসিরের মাঝে খুঁজে পাওয়া গেছে জাভি আলোনসো কে । সুমনের জন্য মায়া হয় আরিফের । "আহারে বেচারা , অফিসে গিয়ে পুরো রিপোর্টটা কেটে আবার নতুন করে লিখতে হবে"...... ভাবতে ভাবতে বাইকে স্টার্ট দেয় আরিফ ২....... হোটলে লবি যতটা নীরব থাকবে ভেবেছিল আরিফ , ততটা নয় । একপাশে মালদ্বীপের ফাজিল কে দেখা গেলে মোবাইলে কথা বলতে ।

ভারতের তিন/চারজন খেলোয়াড়কেও দেখা গেল ছোটখাট জটলা করে কথা বলতে । আরিফের চোখ বাংলাদেশীদের খোঁজে । "সবাই কি রুম বন্ধ করে শুয়ে পড়ল নাকি" ..... মনে মনে ভাবতেই দেখা মেলে রজনী আর জাহেদের । রজনীর মুখটা দেখে হঠাৎ মনে হয় কেউ রজনীকে বুঝি মাত্রই বোমা মেরেছে । জাহেদের মুখেও যেন রাজ্যের মেঘ ।

এক পা এগোয় আরিফ , কিন্তু ওদের মুখ দেখে কথা বলার সাহস হয় না । পেছনেই ফিরতেই হঠাৎ যেন ভাগ্যদেবী আরিফের দিকে ফিরে চায় । বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় সিরাজীকে দেখে ওর দিকে হেঁটে আসতে , ছেলেটা আজ মাঠে নামেনি , কিন্তু ওর পেট থেকে অনেক কথা বের করা যাবে , আরিফ জানে । আরিফকে একপাশে টেনে নিয়ে কোনার সোফাটায় বসে সিরাজী । "কি ব্যাপার সিরাজী , জরুরী অবস্থা নাকি ? কি অবস্থা তোমাদের , রজনীকে দেখলাম মন খারাপ করে কান্নায় ভেঙে পড়ার দশা , পরাজয়ের শকটা মনে হয় সিভিয়ার হয়ে গেছে?" মুখ চেপে ধরে হাসি থামায় সিরাজী ।

"আরিফ ভাই , এদ্দিন সাংবাদিক হয়ে এই চিনলেন আমাদের রজনী ভাইদের ? ঐসব পরাজয় টরাজয় কিছু না , জীবনে যত পরাজয় দেখসে রজনী ভাই , জয় দেখসে তার চেয়ে অনেক কম । এইসব পরাজয়ে কোন প্রতিক্রিয়া হয় না এখন আর" "তাহলে ঘটনাটা কি ?"...... সন্দিগ্ধ চোখে আরিফ জিজ্ঞেস করে । "স্টেডিয়াম ছেড়ে আসার আগে সবাই বেশ ফূর্তিতে ছিল , আগামী ৩ দিন সোনারগাঁয়ে থাকা , পুলে সাঁতার , বুফে ... এসব করা যাবে ইচ্ছেমতন ভাবতেই সবাই ফুরফুরে হয়ে গেসিল। আর সবার প্রতি কড়া নির্দেশ চরম মন খারাপ করে থাকতে হবে , কিন্তু কেউ জোর করে কাজটা করতে পারেনি বলে ম্যানেজমেন্টের ডিসিশন ,কালই সোনারগাঁ ছেড়ে যেতে হচ্ছে" "ওহহ , এই তবে ঘটনা , রজনীর সেজন্য মন খারাপ"..... আরিফ বিজ্ঞের মতন মাথা নাড়ে । ---"না না , রজনী ভাইয়ের ব্যাপার অন্যরকম ।

এসব তাঁর গায়ে লাগে নাকি ? আরে এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন নাকি , প্র্যাকটিরস না করার দাবীতে ডিডোর বিরুদ্ধে যখন বিদ্রোহ হল , তখন রজনী ভাই তো লিড দিল, শেষমেশ ডিডোরে কি করল দেখসেনই তো , তাঁর খুঁটির জোর অনেক। অন্যরা রুম আটকে থাকলেও বিদ্রোহী ৬ জন ঠিক করসিল , সারা রাত ফূর্তি করা হবে, কে জানে আবার কবে সোনারগাঁয়ে আসা হবে । কিন্তু আসার পরেই রজনী ভাইয়ের লুজ মোশন , বারবার বাথরুমে দৌড়াচ্ছে , খেতে পারবে না , এটা বুঝতে পারতেই রেগে টং হয়ে আছে " প্রসঙ্গ বদলে খেলার কথা তোলে আরিফ---- আজকের ম্যাচ নিয়ে ভাবনা কি তোমাদের ? অপরাধবোধ হচ্ছে না তোমাদের ? জাতিকে তো তোমরা লজ্জা দিলে ... আরিফের স্ট্রেট কাট আক্রমণে সিরাজীর মুখের রঙ খানিক বদলে যায় --- "শুধু বাংলাদেশ দলের দোষটাই দেখেন , তাই না ? কই , ইন্ডিয়া টিমের বিরুদ্ধে কিছু তো লেখেন না" "ইন্ডিয়া টিমের বিরুদ্ধে আবার কি লেখার আছে ?" "কেন , ওরা যে বলতেসে ওদের খেলো্যাড়দের বয়েস ১৯/২০ এইটা তো ডাহা মিথ্যা , সাউথ এশিয়ায় সব দেশই বয়েস নিয়ে বিশাল চাপাবাজী করে । সারাক্ষণ ১৯ বছর , ২৩ বছর নিয়ে ওদের সে কি ভাব!!মোট্টেও ২৩ না ,ওদের বেশির ভাগ খোলোয়াড়ের বয়েস ২৪ , আমি নিজে জানি । ব্যাটারা আস্ত কালপ্রিট" "আচ্ছা আচ্ছা "...... এটা নিয়ে কথা বলা বৃথা ভেবে আরিফ বয়েস প্রসঙ্গটার ইতি টানে ।

হঠাৎ করেই আবার ৩৫ বছর বয়েসী রজনীর কথা মনে পড়ে আরিফের । সিরাজীর কথা মত , বয়েস লুকানো রজনীর আসল বয়েসটা ৩৭/৩৮ হবে । আজ খেলার শেষদিকে রজনীকে শামুকের মত নড়াচড়া করতে দেখা গেছে । এই বয়েসে কোন সাহসে প্র্যাকটিস না করার দাবীতে বিদ্রোহে রজনী নেতৃত্ব দিয়েছিল , আরিফের ছোট মাথায় কুলোয় না । ডিডোর কথা মনে পড়ে যায় আরিফের ।

ডিডোর গেমপ্ল্যান কি হত , সে ভাবনাটা মাথায় আসতেই জিজ্ঞেস করে "গেমপ্ল্যানটা কি ছিল তোমাদের ?"" ----সেরকম কোন প্ল্যান ছিল না , কোচ বলেছিলেন , ওরা অ্যাটাক করলে শক্ত করে ডিফেন্স করতে হবে । মিডফিল্ড থেকে বেশি করে উপরের ফ্রন্টে বল যোগান দিতে হবে, আর স্ট্রাইকারদের গোল করতে হবে" "হাহ !! , এর মাঝে নতুন কি ? বাচ্চাও তো জানে এসব , তো যখন কিছু কাজ করছিল না , প্ল্যানে কোন চেইনজ আসেনি ? এমিলি এনামুলের কি হল , ম্যান মার্কিংয়ের শিকার হয়ে ওরা তো বল নিয়ে ঘুরতেও পারছিল না " ----"এমিলি ভাইয়ের কাছে আশা করেন কেন? সে ইনজুরড ছিল , ইনজেকশন নিয়ে খেলসে । আর এনামুল ভাই সকাল পর্যন্ত ঠিকই ছিল , সকালে আলু পত্রিকায় যখন দেখল তার নাম দুঙ্গা , আর সেই দুঙ্গার দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশ , তখন থেকেই সে শেষ । আর যাই হোক , গন্ডায় গন্ডায় গোল দিলে , সেই খেলোয়াড় তো দুঙ্গা হতে পারবে না, সে হবে ফ্যাবিয়ানো , নিদেনপক্ষে লিওনার্দো । কাজেই দুঙ্গার কাজ দুঙ্গা করসে " "ঠিক আছে , কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে এমিলি ইনজুরি গোপন করে সেকেন্ড হাফ খেলল কেন ? এই ক্রাইমের তো পানিশমেন্ট হওয়ার কথা , আর ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১১ জন নিয়ে ডিফেন্স করার মানেটাই বা কি ছিল?" -----"আরিফ ভাই , বুঝার চেষ্টা করেন ।

মনে করে দেখেন তো , পাড়ার ক্রিকেটে সবসময় ওপেনার হওয়ার জন্য সবার মধ্যে মারামারি হইত কিনা? আর ফুটবলে সবাই কি স্ট্রাইকার হইতে চাইতেন কিনা? পায়ে ব্যাথা হইলে কি খেলার দাবী ছেড়ে দিতেন ? অথবা বলতেন কি , যে আজ ম্যাচে আমি বসে থাকলাম ? এমিলি ভাইয়ের কেসটাও সেইম , তার মঞ্চাইসে খেলতে , তাই যেভাবেই হোক মাঠে ছিল । আর বিজয়ের মাসে পাকিস্তানের কাছে হারলে জাতি ক্ষমা করত আমাদের ? শুরুতে যখন বুঝলাম যে এই ম্যাচ জিততে গেলে চান্সে গোল খাওয়ার সুযোগ আছে , তখনই ওরা ১১ জন স্টাইলে ডিফেন্স করার ডিসিশন নেয়া হইল" মিডফিল্ড নামের শব্দটার অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া গেল না কেন ? জার্সি ধরেও তো জাহেদ আর নাসিরকে পেলাম না । দু'একবার যাও দেখলাম , জাহেদ সামনে ২/৩ টা ভারতীয় খেলোয়াড় দেখেও বলটা ডানে না বাড়িয়ে বাঁদিকের সাইড লাইন দিয়ে জোর করে ঢুকে পড়ার চেষ্টা দেখলাম । ফলাফল হল হয় বলের নিয়ন্ত্রণ হারানো নয়ত ইন্ডিয়ার থ্রো-ইন। ওর এভাবে চিপা দিয়ে ঢুকার অভ্যেস হল কবে থেকে ?...... আরিফ জানতে চায় ---"জাহেদ ছোটখাট প্লেয়ার , ওর মনে মনে নিজেকে রবার্তো কার্লোস ভাবে মাঝে মাঝে , সেই কারণে ওভারল্যাপ করার প্রবণতা থেকেই এটা করসে মনে হয় ।

আর মিডফিল্ডের শুধু দোষ দেন কেন? ওরাও খানিক ফ্রাস্ট্রেটেড ছিল । আজ তো ছোট ছোট পাসে খেলা হয় নাই , সব ভুল পাস হচ্ছিল । এরপর ডিফেন্ডাররা দেখা বল ক্লিয়ারের জন্য সব ঊঁচু করে মারছে , বলের প্রাসের গতিতে ছোট খাট সব মিডফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে অ্যাটাকিং লাইনে গিয়ে পড়ছে । এই কারণেই মিডফিল্ড খুঁজে পান নাই" ...সময় নিয়ে বলে সিরাজীি সিরাজীর ফুটবল সেন্স দেখে হতাশ হয় আরিফ । হতাশা চেপে জিজ্ঞেস করে "আচ্ছা , ডিফেন্সের কথাই না হয় বল।

ফ্রি-কিকের বিরুদ্ধে কি এমন ডিফেন্সিভ ওয়াল বানানো হল যে , পরপর দুই দিন দেয়ালের পাশ দিয়ে মাটি কামড়ানো শটে গোল হয়ে গেল?" "ডিফেন্সের দোষ কিভাবে দেন ? যদি এমন হত যে ওয়ালের খেলোয়াড়দের পায়ের নিচ দিয়ে বল চলে গেছে , অথবা মাথার উপর দিয়ে যাওয়া বলে কেউ হেড করতে পারেনাই , তাহলে না হয় কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেন , বল তো গেল ওয়ালের পাশ দিয়ে" "তো ওয়ালের পাশে এত বড় ফাঁকা কেন যে গোলে সরাসরি বল চলে যায় ? ওয়ালটাও তো ঠিক জায়গায় করতে পারলে না তোমরা" ----"সেটা আমিনুলের দোষ , ও ইনস্ট্রাকশন দিতে পারত , দেয় নাই । আমিনুল আসলে ডিডোর চ্যালা , তার কথা আর কি বলি" ডিডোর প্রসঙ্গ তুলতে চায়নি আরিফ । চলেই যখন আসল এবার মুখ খোলে "টুর্নামেন্টে খেললোই তো দু'জন , আমিনুল আর এনামুল , ডিডোর দুই প্রিয় খেলোয়াড় । আর ডিডোর যেসব প্রিয় খেলোয়াড়কে বাদ দিলা তোমরা , তারাও তো নিজেকে কম প্রমাণ করে নাই। প্র্যাকটিস ম্যাচে জাতীয় দলকে একা হাতে পর্যদুস্ত করে শেখ রাসেলের মারুফ তো একা হাত দেখে নিল ।

ঠিক কি কারণে ডিডোকে পছন্দ হল না বিদ্রোহীদের ?" -----"ডিসেম্বর মাসে ডিডোর কথা তুলবেন না আরিফ ভাই । আমরা সংগ্রামী জাতি , সংগ্রাম আমাদের রক্তে । দেশের জন্য উজাড় করে আমরা খেলি । ডিডো হল ব্রাজিলের মানুষ , কোনদিন শুনসেন ব্রাজিল মুক্তিযুদ্ধ করসে ? একবার বলা হল , ডিসেম্বরে জিততেই হবে । ডিডো শুনে বলে .... ১২ মাস জিততে হবে , শুধু ডিসেম্বরে কিসের জিতা ? আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতির উপর যে আঘাত ডিডো করসে , সেটা কিভাবে মেনে নেন ? আর অভিজ্ঞতাকে সে কোন দাম দিত না , পিচ্চি পোলাপাইনে টিম ভরায় ফেলার প্ল্যান করসিল , সিনিয়রদের সম্মান করত না ।

রজনী এমিলি ভাইরা দুপুরে ভাত খাওয়ার পর ভাত-ঘুম দিতে পছন্দ করেন । ডিডোর সাফ কথা বিকেলে ঘুম বন্ধ ,রানিং-স্ট্রেচিং চলবে । কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়?" "কৃষ্টি নিয়ে ডিডো আবার কি করল?"......... আরিফের চোখে মুখে বিস্ময় -----"ছোটবেলা থেকে ভাত খেয়ে বড় হইসি সবাই , আমরা ভেতো জাতি , ডিডো আমাদের ভাত খাওয়ার অধিকার কেড়ে নিসিল । একবেলা শুধু ভাত , তাও লিমিটেড । সব এনার্জি ডায়েট, ব্যালেন্সড ডায়েট দিত , আল্লাহ মালুম ।

সে থাকলে এবার কি কুরবানীর মাংস কপালে জুটত কারও ?তরকারীও দিত না ব্যাটা , কি সব স্যুপ টুপ খাওয়াইত । এসব হল হার্মাদদের খাবার । হার্মাদদের চেনেন তো ? পর্তুগীজ ...... ব্রাজিলিয়ানদের পূর্ব পুরুষ তো ঐ হার্মাদ পর্তুগীজরাই " "অভিজ্ঞতা দিয়েই বা কি রাজা-উজির মারতে পারলা তোমরা ? শেষমেশ তো হারলা ঐ পিচ্চি পোলাপাইনের টিমের কাছেই" ------"কি বলেন মিয়া ভাই , একটু ভেবে দেখেন । রজনী ভাইরা ১৪/১৫ বছর ধরে হারতে হারতে চামড়া মোটা করে ফেলসে । আজ হেরে যাওয়ার পরেও সিনিয়ররা দেখেন কেমন নির্বিকার , হারার এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কি জুনিয়রদের ছিল ? দেখা যাইত , আজ হারলে কান্নার রোল পড়ে গেসে ।

পরে এরা হারার ভয়ে খেলতেই নামতে চাইত না " , সিরাজীর মুখ দেখে মনে হয় , বড় কিছু ব্যাখ্যা করে ফেলেছে। "হুমমমম , আচ্ছা , দেশের মাটি নাকি বিদেশের মাটি কোথায় ফুটবল খেলে বেশি স্বস্তি পাও?" ----"ডেফিনিটলি , বিদেশের মাটিতে । আজকের কথাই ধরেন , কেউ বলতে পারছে না যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে হেরে গেছি , সবাই দেখসে যে আমরা একটা চান্সও পাই নাই । অথচ খেলাটা যদি বিদেশে হত , আর টিভিতে না দেখাত , তাহলে আমাদের আর কে পেত? ম্যাচটা যদিও ৩-০ তে হারতাম , ফোন করে জানিয়ে দেয়া হত যে বাংলাদেশ পুরো ম্যাচে চরম প্রাধান্য বিস্তার করে খেলে গেছে , পাঁচ/ছ'টা ওয়ান টু ওয়ান পজিশনে সুযোগ পেয়েছে , ৪ টা বল বারে লাগসে , মোটের উপর ভাগ্যদেবী নাখোশ থাকায় পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। একটা অফটপিক প্রশ্ন হঠাৎ করেই মাথায় আসে আরিফের ।

সিরাজী উত্তর দিতে পারবে কি পারবে না , এই দোলাচলে বলেই ফেলে "সাফ ফুটবল টুর্নামেন্ট কিভাবে বঙ্গবন্ধু সাফ ফুটবল হয় ? কোনদিন কোন রুটিন চ্যাম্পিয়নশীপ কারও নামে হতে পারে? নেলসন ম্যান্ডেলা ওয়ার্ল্ড কাপ , অথবা মার্শাল টিটো ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপ ? চামচারা কি বঙ্গবন্ধুকেও লজ্জিত করল না?" --- ওহহ , এই কথা ? অন্য দেশগুলো হয়ত অবাক হইসে , কিন্তু কেয়ার করে নাই , সাফ নিয়ে ইন্ডিয়া পাকিস্তানের কিছু যায় আসে না। রিফিউজড হওয়ার রিস্ক এড়াইতে শুরুতে টুর্নামেন্টের নাম "মজনু স্মৃতি সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ " প্রস্তাব করা হইসিল। যখন দেখা গেল এটা নিয়ে কোন দেশের মাথা ব্যথা নাই , তখনই বঙ্গবন্ধুর নাম প্রস্তাব করা হইল। "শেষ প্রশ্নটা করি, সব খেলাতেই বাংলাদেশ হারের মাঝে পজিটিভ কিছু খুঁজে পায় । তোমার কি মনে হয় , আজকের পজিটিভ আউটপুট টা কি ?" "অনেএএএএক , জাস্ট কল্পনা করেন , আমরা ফাইনালে চলে গেছি আউল ফাউল ফুটবল খেলেই।

তারপর মালদ্বীপের সামনে ............ চিন্তা করতেই কাঁপন দিয়ে জ্বর আসে । শ্রীলংকাকে দিল ৫ টা , আফগানিস্তান আর ভারতকে দিল নাকানি চুবানি । আমাদের নিয়ে কি পৈশাচিক আনন্দেই না মেতে উঠত। ৩ লাখ মানুষের দেশের কাছে ১৬ কোটি মানুষের ১৩ ডিসেম্বরের সেই ধাক্কাটা সহ্য করা অনেক বেশি কঠিন হত । " সিরাজির সাথে হাত মিলিয়ে দ্রুত অফিসে যাবার প্রস্তুতি নেয় আরিফ ।

একবার ডিডোর কথা মনে পড়ে , তারপর মনে পড়ে বাদল রায় , আসলামদের নির্লজ্জ হাসিমুখগুলো । দেশের ফুটবল ইতিহাসের শেষ কথাটা মনে হয় বলেই গেছেন ডিডো ............ "এই দেশে ফুটবল নিয়ে কেউ ভাবে না, কেউ না"

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।