আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু



প্রথিতযশা বিজ্ঞানী , বিশ্ববিজ্ঞানের অনন্য স্থপতি এই উপমহাদেশের বিজ্ঞানের জনক স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর ৭২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৩৭ সালের আজকের দিনে তিনি বিহারের গিরিডিতে শীতকালীন অবকাশ যাপনের সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বিক্রমপুরের রাড়িখাল গ্রামের কৃতী এ বাঙালি বিজ্ঞানী গাছের প্রাণ ও অতি ুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি এবং তা প্রেরণের েেত্র প্রভূত উন্নতি সাধন করে বিজ্ঞানকে অনেকদূর এগিয়ে দিয়েছেন। তার পিতা ভগবান চন্দ্র বসু ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে শিকতা করেছেন।

পরে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ফরিদপুর, বর্ধমান ও অন্য অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেন। তার পিতা তৎকালীন ব্রাহ্ম সমাজের একজন নেতা ছিলেন। তিনি ইংরেজি শিার বদলে ছেলেকে মাতৃভাষায় পড়াশোনার তাগিদ দিয়েছিলেন। ভাষার প্রতি বিশেষ মমত্ববোধ ছাড়াও ভগবান চন্দ্র চেয়েছিলেন তার পুত্র দেশের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে মানুষ হোক এবং তার মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হোক। জগদীশ চন্দ্র বসু চিকিৎসা বিজ্ঞান পড়তে ১৮৮০ সালে লন্ডনে পাড়ি জমান।

কিন্তু কালাজ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞান ছেড়ে দিয়ে ক্যামব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হয়ে ট্রাইপস পাস করেন। খুলে যায় তার সামনে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত। এখানে তিনি বিশ্বখ্যাত সব অধ্যাপকের সংস্পর্শে আসেন। যার মধ্যে ছিলেন বিজ্ঞানী প্রফেসর লর্ড র‌্যালি, মাইকেল ফস্টার, ফ্যান্সিস ডারউইন প্রমুখ। একই সঙ্গে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাস করে ১৮৮৫ সালে দেশে ফিরে আসেন।

এসেই তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অস্থায়ী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। কিন্তু ভারতীয় হওয়ায় তার বেতন নির্ধারিত হয় ইউরোপীয়দের তুলনায় অর্ধেক। এর প্রতিবাদস্বরূপ তিনি দীর্ঘকাল কলেজ থেকে কোন বেতন নেননি। কঠিন অধ্যবসায়ের মাধ্যমে গবেষণায় দতা প্রদর্শনে সম হলে কর্তৃপ তাকে তিন বছরের বকেয়া বেতনসহ পূর্ণ বেতনে নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়। তার গবেষণার সূত্রপাত সেখান থেকেই।

তার গবেষণাগুলোর সূতিকাগার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এ কলেজকে। সীমিত ব্যয়ে স্থানীয় মিস্ত্রিদের শিখিয়ে পড়িয়ে তিনি গবেষণার জন্য উপকরণ প্রস্তুত করতেন। সেখানে গবেষণা করে তিনি আবিষ্কার করেন উদ্ভিদের বৃদ্ধিমাপক যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ, উদ্ভিদের দেহের উত্তেজনার বেগ নিরূপক সমতল তরুলিপি যন্ত্র রিজোনান্ট রেকর্ডার। এছাড়া ১৮৯৫ সালে তারবিহীন বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণ করার তত্ত্ব ও গ্যালেনা ক্রিস্টাল যন্ত্রের আবিষ্কারকও তিনি। মাত্র ১৮ মাসে বিদ্যুতের মতো অত্যন্ত দুরূহ বিভাগের ছয়টি উলেখযোগ্য গবেষণা শেষ করেছিলেন তিনি।

জগদীশ তার সৃষ্টিশীল কর্মের জন্য ১৯১৬ সালে নাইটহুড ও ১৯২০ সালে রয়েল সোসাইটি ফেলোতে ভূষিত হওয়ার পর থেকেই তার নাম-ডাক ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতায় ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠার ল্েয তিনি ধারাবাহিক বক্তৃতা দেয়া শুরু করেন। এ সময়ে তিনি বিক্রমপুর সম্মেলনসহ ঢাকায় বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানেও অংশ নেন। তার পিতা ঋণভারে জর্জরিত হয়ে এক জ্ঞাতি ভাইয়ের কাছে নিজ বাড়িসহ সমুদয় সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। জগদীশের পৈতৃক বাড়ির স্মৃতিকে অ¤ান করে রাখার জন্য গ্রামে তার শুভানুধ্যায়ীরা তার নামে ১৯২১ সালে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্সটিটিউটশন প্রতিষ্ঠা করেন।

আজ এ শিা প্রতিষ্ঠানটি স্কুল-কাম কলেজ হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। জগদীশের পৈতৃক ভবনটি স্মৃতি সংরণাগার হিসেবে ব্যবহƒত হচ্ছে। একমাত্র স্মৃতিচিহ্ন জগদীশের বসত ঘরটির দৈন্য দশা সবাইকে ব্যথিত করে। স্যার জেসি বোস ইন্সটিটিউশনের পরিচালনা পর্ষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান স্থানীয় সাংসদ বাবু সুকুমার রঞ্জন ঘোষ ওই বসত ঘরটি সংস্কার ও পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।