আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন ‘কথিত গবেট’ ও ইঁদুররের গোস্ত খাওয়া মজুর দল। === (অনুগল্প)

অকবি @অ-কাজের কবি

বাংলাদেশের মানুষ এক সময় আরাকান রাজ্যে দিন মজুরের কাজ করতে যেত। কখনোবা দল বেঁধে কখনোবা একা একা। একবার কুড়ি জনের একটি দল ফসল ঊঠানোর ঋতুতে আরকান রাজ্যে গেল দিন মজুরের কাজ করতে। ওই দলটি এক মগ রাজার কাছে ধান কাটার কাজ নিল। বেতনের কথা ঠিক করল এভাবে, 'মগ রাজার জমিনের ধান কেটে তার গোলায় তুলে দিতে হবে, বিনিময়ে এক সাথে কিছু অর্থ দেওয়া হবে, খাওয়া-দাওয়া নিজেদের।

" তখন আরাকানের এক দুই পয়সাও বাংলাদেশের জন্য অনেক মুল্যবান। মজুরেরা সারাদিন কাজ করে নিজেদের খাবার নিজেদের টাকায় নিজেরা রান্না করে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। আরকান রাজ্যে তখন মুরগি, গরু সহ বিভিন্ন গোস্তের চড়া দাম ছিল। মাছও মিলত খুব কম। তাই মজুরের দলটি কিভাবে দু'চার পয়সা বাচাঁনো যায় এবং খাবারও মজা করে খাওয়া যায় তাই নিয়ে পরামর্শে বসল।

সর্ব শেষে সিদ্ধান্ত হল এই, "ধান কাটার সময় ছোট-বড় যেসব ইদুঁর পাওয়া যাবে তাই তারা রান্না করে খাবে। এতে অনেক গুলো টাকাও বাচঁবে মজা করে খাওয়াও যাবে। " কিন্তু মজুরদের মাঝে 'কথিত গবেট' নামের এক জোয়ান ছাওয়াল ছিল সে দলের উনিশ জনের ইদুঁর খাওয়ার সিদ্ধান্তটি মেনে নিতে পারলা। সে এর বিপক্ষে গিয়ে এর প্রতিবাদ করে বলল, "প্রয়োজনে আম গাছ, কাঁঠাল গাছের পাতা খাব, ঘাস খাব তবু ইঁদুরের গোস্ত খাব না, এবং তোমরা পয়সা বাঁচানোর জন্যে ইঁদুর মারা গোস্ত খাচ্ছ তাও দেশে গেলে তোমাদের বউ বাচ্ছা ও পাড়া পড়শিদের জানিয়ে দেবো। " সে উনিশ জনের দল থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে নিজেই নিজের খাবার জোগাড় করে খেতে লাগল।

উনিশ জনের মজুর দলটি 'কথিত গবেট' মজুরটিকে অনেক করে চেষ্টা করেও তাদের দলে ভিড়াতে পারলনা এবং দেশে গেলে একথা কাউকে না বলার প্রতিশ্রুতিও নিতে পারলনা। বরং 'কথিত গবেট' আরো চরমে গিয়ে এক পায়ে খাঁড়াই রইল যে, উনিশ জনের ইঁদুর খাওয়ার বিষরটি সে দেশে গেলে তাদের বউ-বাচ্ছা ও পাড়া পড়শিদের জানিয়ে দেবে। শেষে উনিশ মজুরের দলটি চিন্তায় পড়ে গেল! কি করা যায় এই গবেট'টাকে নিয়ে!! দলেও ভিড়াতে পারলনা, বারণ করেও লাভ হলনা!!! তারা উনিশ জনেই প্রতিদিন চর্বি ওয়ালা মোটা মোটা বেড়াল সমান ইয়া বড় ব-ড় ইঁদুর সাবাড় করেই চলল। পয়সাও বাচাঁল, মজা করেও খেল। অনেক দিন পর কাজ শেষে মজুর দলটি দেশে ফিরে এল।

ওই 'কথিত গবেট' বেচারা ভাবল, ঘরে গিয়ে সবার সঙ্গে দেখা করে খেয়ে-দেয়ে পাড়ার রাস্তায় বের হবে। আর এই ফাঁকে আগে থেকেই দলবদ্ধ ও পরামর্শ করে থাকা উনিশ জনের মজুর দলটির এক এক জন এক এক দিক থেকে আগে ভাগে গ্রামে এসে সবাইকে উল্টো ভাবে 'কথিত গবেট' বেচেরার ইঁদুর খাওয়ার ঘটনা বলে যাচ্ছে,,,, "ওই 'গবেটটা'কে আমরা উন্নিশ জনেই কয়েছি যে, ইঁন্দুরের গোস্ত খাসনে। দ্যাশে গেলে মানসে কি কবে? দু'পয়সা বাঁচনের জন্যে ইঁন্দুরের গোস্ত খাতে হয়! প্রয়োজনে ঘাস খা, আম পাতা-কাঁঠাল পাতা খা। গবেট'টা কারো কথাই খোনল না। " এভাবে সারা গ্রাম হয়ে গেল 'কথিত গবেট' এর ইঁদুরের গোস্ত খাওয়া না খাওয়ার কিচ্ছা।

সকাল বেলা 'কথিত গবেট' বেচারা যখন রাস্তায় বের হল দেখল তার চারপাশ থেকে পাড়ার লোকেরা তাকে তার দু'পয়সা বাঁচানোর জন্যে ইঁদুরের গোস্ত খাওয়ার কিচ্ছা শুনাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত 'কথিত গবেট' বেচারা তার জামার আস্তিনে মুখ লুকাল এবং ভাবল... "এই ইঁদুরের গোস্ত খাওয়া উনিশ জনের দলটি সত্য-মিথ্যা মিথ্যা-সত্যে যে ভাবে বদলিয়ে দিল। এভাবে বদলালে এই বাংলা সেই বাংলাই রয়ে যাবে যে বাংলায় নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাকে তার নিজের আস্তিনে লুকিয়ে থাকা চাটুকাররাই দংশন করেছিল। আজো ওই প্রেত মুক্ত হতে পারল না বাংলা। আমরা বদলাবো কি ভাবে? বদলাতে হলে আদর্শের প্রয়োজন, গুণের প্রয়োজন।

এই আদর্শটাকে যদি আমরা না চিনি, না বুঝি নিজেকে কিভাবে গুণে গুনান্বিত করা যায়! নিজেদেরকে মনে করি আমরা ভেড়া-বকরির দল তাহলে পরিবর্তনটা কে কাকে করবে? 'কথিত গবেট' বেচারা এসব ভাবতে ভাবতে নিজেই নিজের পথে চলছে... এবং বলছে... যদি তুর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে..

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.