আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৌলানা সাহেব বলেছেন আমার জানাযা তিনি পড়াবেন না

তোমার অস্তিত্বে সন্দিহান, তবু্ও সদাই তোমায় খুঁজি

একটা সময় রাস্তার মোড়ে, হোটেল বা দোকানে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেয়ার সময় তবলীগের দলবল দেখলে এদিক ওদিক দৌড়ে পালাতাম। এখন আর দৌড়ে পালাইনা। সোজা ভাষায় বলে দেই আমি অবিশ্বাসী। বাসে, রাস্তায় বা সমাবেশে মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ বা ভরণ-পোষণের জন্য কেউ দান চাইলে নিজে থেকেই কিছু দিতাম। এখন যেচে কিছু দেইনা।

জোরাজুরি করলে সোজা বলে দেই আমি অবিশ্বাসী। বাড়ি থেকে পাঁচটা প্লট দূরেই মসজিদ। একসময় এটাই ছিল এলাকার একমাত্র মসজিদ। এখন অবশ্য আশেপাশে আরো কয়েকটা হয়েছে। বেশিরভাগই সরকারি বা বিরোধপূর্ণ জমিতে।

তবে পুরণো হওয়ার কারণে এখনও এই মসজিদটির গুরুত্ব অন্যগুলোর চেয়ে বেশি। মসজিদের ইমাম সাহেবও বহু পুরনো। মসজিদকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে সাধারণত দেখা যায় ইমাম-মুয়াজ্জিনরা কোন মসজিদে বেশিদিন টিকতে পারেন না। কিন্তু উল্লেখিত ইমাম সাহেব শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তেই আছেন। মাঝখানে দু'একবার যে ঝড়-তুফান টুকটাক হয়নি তা অবশ্য নয়।

তবে ভদ্রলোকের ম্যানেজ করার ক্ষমতা সবসময়ই অসাধারণ। এলাকার পুরণো বাসিন্দা হওয়ার কারণে মসজিদটার সাথে আমার বাবা প্রথম থেকেই জড়িত ছিলেন। সে কারণে ইমাম সাহেবের সাথে আমার বাবার সম্পর্ক খুবই পুরণো এবং আন্তরিক। বাড়িতে নিয়মিত মিলাদ পড়ানো এবং মিলাদ শেষে ইমাম সাহেবের হাতে চকচকে একটা নোট গুজে দেয়ার কারণে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথেও তাঁর একটা সখ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শুধু আমি।

ধর্মীয় কার্যাদিতে অংশগ্রহণ না করার কারণে তিনি সর্বদাই আমার উপর বিরক্ত। দেখা হলেই নানা আদেশ, উপদেশ দেন। দোজখের ভয় দেখান। আমি এতোদিন এগুলো নতমুখে শুনে আসতাম। তবে সেদিন বিরক্তিটা একটু চরম পর্যায়েই পৌছে গেল।

উপদেশের একপর্যায়ে নতমস্তকটা সোজা করে বলে দিলাম, আমি অবিশ্বাসী। মুহুর্তেই ভদ্রলোকের চোখ দুটো আগুনের মতো হয়ে গেল। আগুনের গোলাগুলো একসময় চোখ অতিক্রম করে মুখ থেকে নির্গত হল। গোলাগুলোকে সংগ্রহ করে এগুলোর সারমর্ম যদি অক্ষরের ভাষায় প্রকাশ করি তবে বাক্যটা হবেঃ যদি অচিরেই আমি তওবা পড়ে মসজিদে নিয়মিত না যাই তবে তিনি আমার জানাযা পড়াবেন না। আমি জানি মৌলানা সাহেব কথাটি সিরিয়াসলি বলেননি।

আমি জানি জানাযা এবং চল্লিশার মিলাদের পরে ওনার হাতে একটা চকচকে নোট গুজে দিলে তিনি আমাকে আল্লাহ'র আরশের ছায়ায় স্থান দেয়ার জন্য অনেক অনুনয় বিনয় করে মোনাজাত করবেন। তারপরেও ভেতরে ভেতরে যে একটা ভয় কাজ করছিলনা তা কিন্তু নই। ভাবলাম যদি সত্যিই সে জানাযা দিতে অস্বীকার করে তবে আমার পরিবার এবং মৃতদেহটাকে একটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে। চিন্তা করে দেখলাম পরিবার ও মৃতদেহটাকে বিব্রতকর অবস্থার হাত হতে রক্ষার জন্য আগেভাগেই এটাকে কোন একটি হাসপাতালে ডোনেট করে দেয়াই উত্তম। এতে করে কেউ না কেউতো উপকৃত হবে।

জীবনেতো কারো উপকারে আসলাম না, মরার পরে যদি একটু আসি। কামনা করি দেশের প্রতিটি মৌলানা ওনার মতো তেজস্বী এবং ধর্মরক্ষক হোন। এতে করে নাস্তিক, আধা-নাস্তিক, সংশয়বাদীরা জানাযা না পাওয়ার ভয়ে নিজের ডেডবডিটাকে কোন হাসপাতালে ডোনেট করে দিতে বাধ্য হবে। কেউ না কেউতো এতে উপকৃত হবে; হোক না সে কোন মসজিদের ইমাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.