আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদা

মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।

উপমহাদেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ স্কলার অর্জন করেন। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও ভূমিকা রাখেন তিনি। স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রথম শিক্ষা কমিশন প্রতিবেদন প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। দেশবরেণ্য বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ কুদরাত-এ-খুদার জন্ম ১৯০০ সালের ১ ডিসেম্বর ।

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের মাড়গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পীর পরিবারে। অগ্নিযুগের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন-সংগ্রামে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের অবদান নানাদিক দিয়ে স্মরণীয়। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন-সংগ্রামের বহু নেতা-কর্মী ও সংগঠকের জন্ম এ বীরভূমে। বাবা খোন্দকার আব্দুল মুকিদ। মা ফাসিহা খাতুন।

বাবা বাবা খোন্দকার আব্দুল মুকিদ ছিলেন একজন আদর্শবান মানুষ। আদর্শ ও সততা ছিল তার জীবন-দর্শন। আর্থিক অবস্থা ভালই ছিল। যে কারণে তিনি মানুষের সেবা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে।

তারপর পাঠশালা ও প্রাইমারী। এরপর ড.কুদরাত-এ-খুদার শিক্ষাজীবন শুরু হয় মাড়গ্রাম এম.ই স্কুলে। তারপর ভর্তি হন কলিকাতা মাদ্রাসায়। কলিকাতা মাদ্রাসা থেকে তিনি ১৯১৮ সালে প্রথম বিভাগ অর্জন করে এন্ট্রান্স পাশের স্বীকৃতি অর্জন করেন। এরপর ভর্তি হন বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজে।

সেখান থেকেই তিনি ১৯২৫ সালে রসায়নে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হয়ে এম.এস.সি পাশ করেন। এরপর তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড যান। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় হতে 'Stainless Configuration of Multiplanmet Ring' বিষয়ে গবেষণার জন্য তিনি ১৯২৯ সালে রসায়নে ডি.এসসি. ডিগ্রী অর্জন করেন। দেশে ফিরে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৯৩১ সালে ড.কুদরাত-এ-খুদা প্রেসিডেন্সি কলেজে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন।

শুরু হয় কর্মজীবন। ১৯৩৬ সালে তিনি এ কলেজে বিভাগীয় প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে ইসলামিয়া কলেজে অধ্যক্ষ হন। ১৯৪৬ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন। দেশ বিভাগের পর ড.কুদরাত-এ-খুদা পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন।

এ সময় তিনি জনশিক্ষা পরিচালকের দায়িত্ব নেন(১৯৪৭-৪৯)। এরপর তিনি পাকিস্তান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯৫২-৫৫ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৫৫-৬৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার সমূহের পরিচালক ছিলেন। ১৯৬৩ সালে চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য যে শিক্ষাকমিশন গঠন করা হয়, সেই কমিশনের সভাপতি নির্বাচিত হন ড.কুদরাত-এ-খুদা। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষাকমিশন রিপোর্ট প্রণীত হয়। ড.কুদরাত-এ-খুদা স্টেরিও রসায়ন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল বনৌষধি, গাছগাছড়ার গুণাগুণ, পাট, লবণ, কাঠকয়লা, মৃত্তিকা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ। বিজ্ঞানী হিসাবে তাঁর ও তাঁর সহকর্মীদের ১৮টি আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে।

যার মধ্যে ৯টি পাটসংক্রান্ত। পাট ও পাটকাঠি থেকে রেয়ন। পাটকাঠি থেকে কাগজ। রস ও গুড় থেকে মল্ট ভিনেগার আবিষ্কার উল্লেখযোগ্য। দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন বিখ্যাত গবেষণামূলক পত্রিকায় তাঁর রচিত প্রায় ১০২টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের উপযোগী সমাজগঠনমূলক একটি সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থার রূপরেখা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৭২ সালের জুলাই ২৬ গঠিত হয় ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’ প্রণীত সুপারিশমালা। এই কমিশনের সভাপতি ছিলেন ড. কুদরাত-এ-খুদা। তাঁর নাম অনুসারে পরবর্তীকালে রিপোর্টির নাম রাখা হয় ‘ড.কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষাকমিশন রিপোর্ট’। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালের মে মাসে ‘বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট’ নামে। এতে পরিশিষ্ট বাদে ৩৬ টি অধ্যায় ছিল।

পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল মোট ৪৩০। দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রভৃতিকে ধারণ করে এ নীতি প্রণীত হয়। উল্লেখ্য, ধর্ম নিরপেক্ষতা এ শিক্ষানীতির অন্যতম মূলনীতি ছিল। ফলে দেশের অশিক্ষিত ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীর নিকট এটি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করতে পারেনি। এ কমিশনের সদস্য সংখ্যা ছিল ৪৭ জন।

রচনাবলী ও প্রকাশনা ১। বিজ্ঞানের সরস কাহিনী ২। বিজ্ঞানের বিচিত্র কাহিনী ৩। বিজ্ঞানের সূচনা ৪। জৈব-রসায়ন (৪ খন্ড) ৫।

পূর্ব-পাকিস্তানের শিল্প সম্ভাবনা ৬। পরমাণু পরিচিতি ৭। বিজ্ঞানের পহেলা কথা ৮। যুদ্ধোত্তর বাংলার কৃষি ও শিল্প ৯। বিচিত্র বিজ্ঞান ১০।

পবিত্র কোরআনের পূত কথা ১১। অঙ্গারী জওয়ারা সাময়িকী ১। পুরোগামী বিজ্ঞান (১৯৬৩) ২। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা (১৯৭২) ড.কুদরাত-এ-খুদা ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর মারা যান।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.