আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা।



বাংলা ভাষায়ও যে বিজ্ঞানচর্চা করা যায় এবং এ ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার ও বিজ্ঞানীদের কথা সর্বস্তরে পৌছানো সম্ভব, তা হাতে-কলমে প্রথম তিনিই দেখানোর চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর তার নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই যে 'জাতীয় শিক্ষা কমিশন' গঠিত হয়েছিল, সেই কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়িত হলে হয়ত আমাদের শিক্ষার চেহারা অনেক আগেই বদলে যেত, যা দীর্ঘ চলি্লশ বছরে সম্ভব হয়নি। গবেষক ছিলেন তিনি, তবে তার কর্মকাণ্ড কেবল বৈজ্ঞানিক নানা আবিষ্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তার বড় পরিচয় শিক্ষাবিদ হিসেবে। বিখ্যাত এই বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদের নাম মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা।

তবে ড. কুদরাত-এ-খুদা নামেই তিনি বেশি পরিচিত। ১৯০০ সালের ১ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার মাড়গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পীর পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম হয়েছিল অসীম প্রতিভা নিয়ে। অবিভক্ত ভারতের বিখ্যাত কলেজে কৃতিত্বের সঙ্গে রসায়নশাস্ত্রে শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য যান ইংল্যান্ডে। কুদরাত-এ-খুদা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২৯ সালে রসায়নে ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।

এ সময় তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তিও লাভ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল জৈবরসায়ন। বনৌষধি, পাট, লবণ, কাঠকয়লা, মাটি ও খনিজ পদার্থের ওপর গবেষণা করে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তিনি বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে জৈবরাসায়নিক উপাদান নিষ্কাশনে সক্ষম হন, যা বহু রোগের মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ড. কুদরাত-এ-খুদা তার সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে ১৮টি বৈজ্ঞানিক পেটেন্ট আবিষ্কার করেন। পাটকাঠি থেকে পারটেক্স উৎপাদন তারই গবেষণার ফসল।

এছাড়াও আখের রস ও গুড় থেকে মল্ট ভিনেগার, পাট ও পাঠকাঠি থেকে রেয়ন ও কাগজ তৈরিতেও রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ড. কুদরাত-এ-খুদা কর্মজীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষক হিসেবে। ১৯৩১ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৪১ সালে ইসলামিয়া কলেজ ও ১৯৪৬ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ হন। দেশ বিভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর এই মনস্বীকেই বাংলাদেশ সরকার দায়িত্ব দিয়েছিলেন যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়নের। তিনি অনেক গ্রন্থের প্রণেতা। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : বিজ্ঞানের সরস কাহিনী, বিজ্ঞানের বিচিত্র কাহিনী, বিজ্ঞানের সূচনা, জৈবরসায়ন, পরমাণু পরিচিতি ইত্যাদি। তিনি কয়েকটি ধর্মীয় গ্রন্থও রচনা করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনসহ বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে তার অবদান অবিস্মরণীয়।

দীর্ঘ কর্মজীবনে বিজ্ঞান ও শিক্ষায় অনন্য অবদানের জন্য অর্জন করেছেন রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পর্যায়ের বহু সম্মাননা ও পুরস্কার। ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর এই বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মৃত্যুবরণ করেন। সুত্র : সমকাল-০৩/১১/০৯

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।