আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেঁড়া পাতা (৩)

www.cameraman-blog.com/

ফারা তন্বী'র দুঃখবিলাস এবং রুহির চলে যাওয়া পোষ্ট টা পড়ে মনে হয়েছিল আমার চারপাশেও তো এমন ঘটনা ঘটছে কতো। কিছু কিছু ঘটনা তো একদম অকারণেই ঘটছে। আবার কোন কোনটা ঘটছে অন্যের প্ররোচনায়। এরকমই কয়েকটি ঘটনা নিয়ে আমার আজকের এই ছেঁড়া পাতা ... ঘটনা দুই মঞ্জু'র বাড়ী ঢাকার কাছেই। তবে সরকারী চাকরির সুবাদে থাকে পটুয়াখালীর এক উপজেলায়।

বিয়ে করেছে, একটা মেয়েও আছে তাদের। তবে তাদের মধ্যে এখন বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। ঘটনার শুরু অনেক আগেই। বলা যায় বিয়ের আগেই। তবে মঞ্জু'র বন্ধুরা এসবের তেমন কিছুই জানতো না।

জেনেছে বিয়ের অনেক পরে। যখন আর কিছু করার সূযোগ তেমন একটা ছিল না। বিয়েটা ছিল এরেঞ্জড ম্যারেজ। মেয়ে শিক্ষিত এবং তার পরিবার ঢাকায় সেটেলড। ঘটনাটা পরকীয়া, যদিও মঞ্জু সেটা স্বীকার করেনা।

তারই অফিসের এক সিনিয়র মহিলা কলিগকে জড়িয়ে ঘটনার সূত্রপাত। মহিলা সুন্দরী, বিদূষী, রুচিশীল এবং দুই পূত্র সন্তানের জননী। স্বামী গাজীপূরের কোন একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং চাকরির সুবাদে সেখানেই অবস্থান করেন। দুই ছেলে সে সময় বুয়েটে পড়তো এবং হলেই বেশীরভাগ সময় থাকতো। এদের একটা ভাড়া বাসা ছিল উত্তরায়, তবে সেটা বেশীরভাগ সময় খালিই থাকতো।

মহিলা চাকরির সুবাদে থাকতেন পাবর্ত্য জেলার কোন এক উপজেলায়। এখানে বলে রাখি মহিলার বিয়ে হয়েছিল ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময়। এরপর তিনি সংসার আর পড়াশুনা দুটোই চালিয়ে যান। সবশেষে মাষ্টার্স করেন। কিছুদিন আগে বড় ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন।

এদের কর্মস্থল আলাদা হলেও ঢাকাতে প্রতিমাসেই আসতে হতো ৫-৭ দিনের জন্য। অফিসের লোকজন এবং বন্ধুরা সন্দেহ করে এই ঢাকা অবস্থানের সময়ই হয়তো বা ঘটনার সূত্রপাত। মঞ্জু এইসব অস্বীকার করলেও তার জীবনে মহিলার প্রভাবকে সে অস্বীকার করতে পারে না কোন ভাবেই। কোন বই পড়বে, কোন গান শুনবে, কি ভাবে চলবে এসবই ঠিক করে দিয়েছেন এই মহিলা। বলা যায় মফস্বলের একজন মানুষকে কিছুটা হলেও পলিশড করেছেন এই মহিলা।

বিয়ের পর প্রথম ঘটনাটা ধরা পড়ে মঞ্জু'র স্ত্রীর চোখে। হানিমুনে যাবে স্বামী-স্ত্রী এটাই নিয়ম। অথচ তাদের হানিমুনে সঙ্গী হলেন সেই মহিলা। স্কুটার আর বাসে তিনি বসলেন স্বামী-স্ত্রীর মাঝখানে। হোটেলে আলাদা রুমে থাকলেও সেখান থেকেই উতপাত করলেন মঞ্জু'র মোবাইলে অনবরত মেসেজ পাঠিয়ে।

একবার বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাবে স্ত্রী মাথা ধরেছে বলার পর তিনি মঞ্জুকে নিয়ে যান বেড়াতে। ঢাকায় ফেরার পর স্ত্রী কাউকেই এব্যাপারে কিছু বলেন নাই। এমনকি সেই মহিলা যে তাদের সঙ্গী হয়েছিলেন সেটাও চেপে যান। স্ত্রী থাকতেন ঢাকায় মায়ের বাড়ী, স্বামী পটুয়াখালী কর্মক্ষেত্রে। সেই মহিলা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এবার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলেন স্ত্রীর উপর।

নানা রকম চিরকুট, মেসেজ আর টেলিফোন করে তিনি মঞ্জু'র স্ত্রীকে নানারকম পরামর্শ দিতে থাকলেন প্রতিনিয়ত। এদিকে আবার মঞ্জুর স্ত্রী ঢাকায় মায়ের বাড়ীতে থাকতে বেশী আগ্রহী ছিলেন। মঞ্জু তাকে একবার তাদের বাড়ীতে রেখেছিলেন তার মায়ের সাথে। কিন্তু তাতে বাধ সাধেন মঞ্জুর শ্বাশুড়ী। তার বক্তব্য ছিল তার মেয়ে ঢাকা শহরে মানুষ, মফম্বল জীবনে অভ্যস্থ না, লাকড়ির চুলায় রান্না করতে অসুবিধা হয়, তিনি মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন কি মঞ্জু'র মায়ের সাথে থাকার জন্য ইত্যাদি।

এরমাঝে আরো একটা ঘটনা ঘটলো। মঞ্জুর খালাত ভাই এর সাথে তার শ্যালিকার প্রম হয়ে যায় এবং মঞ্জুর অজান্তেই বিয়ে দেয়ার সমস্ত কার্যক্রম শুরু করে তার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন। মঞ্জু এই বিয়েতে আপত্তি জানায়, কিন্তু তার কথায় কেউ পাত্তা দেয় নাই। বছর ঘুরে তাদের ঘরে এলো সন্তান। মঞ্জু'র স্ত্রী একসময় সাহায্য চাইলেন মঞ্জুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু এবং পরবর্তীতে কলিগ এমন একজনের কাছে।

সে পরামর্শ দিল স্ত্রী যেন সন্তান সহ মঞ্জু'র কর্মস্থলে চলে যান। কারণ দূরে থাকলে এসব সমস্য বাড়বে বৈ কমবে না। স্ত্রী যথারীতি গেলেন সেখানে এবং সপ্তাহ খানেক পর মঞ্জু'র সাথে ফিরে আসলেন। এ ব্যাপারে মঞ্জু'র বক্তব্য হলো সে যা বেতন পায় তাতে বৌ-বাচ্চা কর্মস্থলে রাখতে গেলে পোষায় না। বরং দেশে তার মায়ের কাছে রাখলেই তার সুবিধা হয়।

আর ২/৩ সপ্তাহ পর পর তো দেখা করতে আসছেই। মঞ্জুকে বলা হলো যত কষ্টই হোক সে যেন বৌ-বাচ্চা তার কর্মস্থরেই রাখে। তাকে কোনভাবেই রাজী করানো গেল না। আর মূল অভিযোগ (পরকীয়া) সে অস্বীকার করলো। এবার অনূরোধ করা হলো তার স্ত্রীকে।

শত অনূরোধের পরও মঞ্জুর স্ত্রী দেশের বাড়ীতে শ্বাশুড়ীর সাথে থাকতে রাজী হলেন না। এবার মঞ্জুর বন্ধুরা পরিবারটিকে রক্ষার জন্য তার শ্বাশুড়ী এবং স্ত্রীকে এক সাথে বসিয়ে কথা বলতে চাইলো। কিন্তু তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিলেন মঞ্জুর শ্বাশুড়ী। তিনি তার মেয়ের সাথে কাউকেই দেখা করতে দিলেন না। যোগাযোগের সব মাধ্যমেই চেষ্টা করা হলো।

কোন ফল হলো না। এরপর মঞ্জু'র স্ত্রী তার স্বামীর কর্মস্থলে সেই মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন লিখিতভাবে। আর সেই মহিলা মঞ্জুর'র স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে করলেন মানহানির মামলা। এরপর মামলা হলো মঞ্জু'র বিরুদ্ধে আদালতে - নির্যাতন, বিচ্ছেদ আর খোরপোষের দাবীতে। মঞ্জু যথারীতি গ্রেফতার হয়েছিল এবং ৭ দিন জেলে থাকার পর জামিন পায়।

সে মামলা এখনো বিচারাধীন। {মামলার শেষ তারিখে বিচারক দূ'জনকে তার খাস কামরায় ডেকে নিয়ে বলেছিলেন স্বামী-স্ত্রী'র নিজেদের চাইতে এখন বাচ্চার ভবিষ্যত চিন্তা করাটাও জরুরী। সুতরাং তারা যেন চিন্তা ভাবনা করে ডিসিশন নেয়। জবাবে মঞ্জু মেয়ের স্বার্থে আদালতের যে কোন সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার নিশ্চয়তা দেয়। মঞ্জুর স্ত্রী এব্যাপারে তার মায়ের সাথে কথা বলতে চায়।

তিনি এসে নাকি বিচারকের সামনেই অত্যন্ত রুঢ় ভাষায় মঞ্জুকে জেলের ভাত খাওয়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। মামলার নতুন তারিখ পড়েছে} আপডেট : ৫ই নভেম্বর ২০০৯ শেষ পর্যন্ত ডিভোর্সটা হয়েই গেল। (প্রাক্তন) স্ত্রীকে ২.৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে ১০ মাসে ১০টি সমান কিস্তিতে। আর মেয়ের ভরণ-পোষণ বাবদ প্রতিমাসে ২০০০ টাকা। এটা দিতে হবে মেয়ের ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত।

মঞ্জু প্রতিমাসে ২ বার (শুক্রবার) মেয়েকে একদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা (আরেকদিন সকাল ১০টা থেকে ২টা) পর্যন্ত নিজের কাছে নিয়ে রাখতে পারবে। ক্রমশ ...


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।