আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্লাস্টিকের ফুল আর খেলনা একতারার গল্প

বিকট
নীরা সুখ খোঁজেনা এখন আর। সপ্তাহান্তে মাতাল স্বামীর গালির তোড়ে ভেসে যেতে পারে অনায়াসেই। অথবা রাত আরেকটু বাড়লে নিস্পৃহ সঙ্গম অভ্যাসের পরে নিরাসক্ত দৃষ্টিতে এক পলক তাকিয়েও নিতে পারে মৃত সম্পর্কের চোখে । নীরা সুখ খোঁজেনা এখন আর। তবে নীরা বিনোদন খোঁজে।

রাতের বেলা ওর সেলফোনটা নিস্তব্ধ থাকে। কিন্তু ও ঠিকই খুঁজে নেয় আকাঙ্খিত তড়িৎ বার্তা। ফিসফাসফিস। নীরা নারী হয়ে ওঠে ক্রমশঃ... নীরাকে একজন অলৌকিক ক্ষমতাধারী ব্যক্তি একটি বিশেষ বস্তু উপহার দিয়েছে। তার অক্ষম জরায়ুতে হয়তোবা তা প্রাণ যোগাবে।

নীরা সেদিন ফুলের হাটে গিয়েছিলো। কিন্তু এতগুলো সুগন্ধী প্রাকৃতিক ফুল থাকতে সে একটা প্লাস্টিকের ফুল কিনলো! ওটাতে নিয়মিত পানি দেয় সে। কেন, কে জানে! নীরার স্বামী খুব ঘুমুতে শিখেছে ইদানীং। অফিসটাইমে মাঝেমাঝেই ঊর্ধতন কারো ধমকিতে পড়িমরি করে জেগে ওঠে। ফাইলপত্তরের মধ্যে ডুবে থাকতে তার যে খুব সুখ হয় তা না।

তাই সে সুখ খোঁজেনা। সে বিনোদন খোঁজে। সপ্তাহান্তের বিনোদনটা সে খুব উপভোগ করে। প্রাইভেট ক্যাবে করে ঊন্মাতাল বিনোদনের উৎস খুঁজতে সে পেরিয়ে যায় কুয়াশা ভেজা মাঠ, শৈশবের সোনারঙ, আর ঘাসফড়িঙের ঘর। তবে ওসব সে দেখতে পেলেতো! টুংটাংটুং।

সে পুরুষ হয়ে ওঠে খুব। বাড়ি ফিরে ত্যাঁদড় বৌটাকে আজকে পেটাতেই হবে। শুধু গালি গালাজে আর মন ভরেনা। ভাবে সে। পানশালা থেকে ফেরার পথে সে কি মনে করে যেন একটা খেলনা একতারা কিনে আনে।

প্রায়শঃই তাকে ওটা বাজাতে চেষ্টা করতে দেখা যায়। কোন সুর বের হবেনা জেনেও! কেন কে জানে। সেদিন তারা একসাথে বেড়িয়েছিলো। নীরা তার ভ্যানিটি ব্যাগে গোপনে একটুকরো সুখ ভরে নিয়েছিলো, ফেলে দিয়েছিলো পরপুরুষের চুম্বন, অনুদ্দীপ্ত ক্লিটোরিস, আর জমে থাকা একগাদা খিস্তি। তার হ্যাবি"ও (ওদিন তারা বেশ ফাঙ্কি মুডে ছিলো) পকেটে একটা কবিতার পাতা নিয়ে গেলো।

কি মনে করে যেন পকেট থেকে সব টাকা পয়সা বের করে পুড়িয়ে ফেলল। শহরের সবচেয়ে বড় উদ্যানটায় তারা ঢুকতে পারলোনা। কারণ, তারা ছিলো কপর্দকহীন। ওখানে বেশ চড়া মূল্যে সুখ বিক্রী হচ্ছিলো। ওদের এ হতশ্রী অবস্থা দেখে এ শহরের সন্ধ্যাটা নেমে এলো কিছু বিনোদন উপঢৌকন নিয়ে।

কিন্তু আশপাশের অজস্র অসুখী চুন্বন, আর অস্থায়ী আলিঙ্গন ওদেরকে উদ্দীপ্ত করতে পারলোনা মোটেও। পাংশু মুখে ফিরে গেল সাঁঝের মায়া, এই আফসোসটুকু নিয়ে, আরো কতকিছু তার দেবার ছিলো ওরা যদি দেখতে পেতো! হঠাৎ করে ওদের ব্যবহার্য বস্তুগুলো সচল হয়ে ওঠে। মানিব্যাগে ভর্তি হতে থাকে টাকা। ভ্যানিটিব্যাগে এঁটো চুম্বন। ওদের সেলফোন বেজে ওঠে।

ওরা দূরে সরে যায় কথা বলার অজুহাতে। ওদের আর কথা বলা হয়না। নীরা এখনো তার প্লাস্টিকের ফুলের টবে পানি দেয়। নীরার স্বামী এখনও খেলনা একতারাটা বাজাতে চেষ্টা করে। কেন কে জানে!
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.