আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

✿জার্নি টু মাদ্রিদ~স্পেন✿

আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই, আমায় কতটা ভালবাসো সেই কথাটা জানতে চাই..
ফ্রান্সের দ্রুততম ট্রেন TGV তে করে যাত্রা শুরু। উদ্দেশ্য স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ। পাঁচ ঘন্টা পর পৌছলাম স্পেন সীমানা সান সাবাস্টাইন। কেউ জিজ্ঞেস করলোনা কেন যাচ্ছি স্পেন বা কোন ইমিগ্রেশন করতে হলোনা। ট্রেনে শুধু একবার টিকেট আর আই.ডি চেক করলো।

মজার ব্যপার হচ্ছে স্পেন বর্ডারে গাড়ি ঢুকা মাত্র মোবাইল অটো রোমিং হয়ে গেল এবং মেসেজে জানিয়ে দিল রোমিং সিস্টেমে ইনকামিং-আউটগোয়িং কল, SMS, MMS ইত্যাদিতে কত খরচ যাবে। সেখান থেকে সরাসরি মাদ্রিদের বাস কাটঁলাম। ফ্রান্স সীমানায় রাস্হার দুপাশে বিশাল এলাকা জুড়ে দেখলাম শুধু ভুট্টা আর ভুট্টা ক্ষেত। আর স্পেন সীমানায় দেখলাম মাইলের পর মাইল সূর্যমুখী ফুলের চাষ। সম্ভবতো সূর্যমুখী দিয়ে তেল তৈরি করে।

স্পেন ঢুকে রাস্তার দুপাশে পাহাড় দেখে রাঙ্গামাটি'র কথা মনে পড়লো। যদিও এখানে রাস্হা সমান্তরাল রাঙ্গামাটির মতো উচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা নয়। গাড়ির নেভিগেশন সিস্টেম বেশ সুন্দর। রাস্তার ম্যাপ টিভি পর্দায় দেখা যায় যেমন: বর্তমানে কোথায় আছি, মাদ্রিদ যেতে কতক্ষন লাগবে, তাপমাত্রা কত ইত্যাদি। ট্যুর গাইড ছিল এক স্প‌্যানিশ সুন্দরী।

কিছুক্ষন পর সে বার্গার, বাদাম, কোক ইত্যাদি খেতে দিল। রোজা রেখে ওসব দিয়ে ইফতার করবো ভেবে সিটের সামনে রাখলাম। কিন্তু সন্দেহ হলো বার্গারের ভিতর লাল মাংস দেখে। ফ্রান্সে মোটামোটি ইংরেজী চললেও স্প‌েন ঢুকেই বুঝলাম এখানে ইংলিশ কাজ করেনা। কারণ টিকেট কাটতে হলো ইশারায় এবং কাগজে লিখে দিয়ে।

গাড়ির পাইলটও ইংরেজী বুঝলনা। তবু একটা ট্রাই মেরে সন্দেহ দুর করতে হবে। সুন্দরীকে জিজ্ঞেস করলাম: ইজ ইট বিফ? সুন্দরী নো বললো। আবার জিজ্ঞেস করি: ইজ ইট পোর্ক? সে বললো: ইয়েস। খাইছে..... সারাদিন রোজা রেখে শুকরের বার্গার দিয়ে ইফতারী? নাউজুবিল্লাহ।

তাকে বললাম: সরি! আমি এটা খাবনা। এভাবে পাঁচ ঘন্টা বাস জার্নির পর পৌছলাম এক মেট্রো স্টেশনে, যার নাম আমেরিকা নোনেজ। তার আগের স্টেশনের নাম দেখি রিপাবলিকা আর্জেন্টিনা। দেশের নামে স্টেশন। এখানেই বাস ভ্রমন শেষ।

তারপর টেক্সি নিয়ে গেলাম লাভাপিয়েস। আর এটাই হচ্ছে মাদ্রিদে বাংলাদেশীদের আস্তানা। উঠলাম আগে থেকেই ভাইয়ের ঠিক করে রাখা এক বাসায়। লাভাপিয়েস ঘুরতে গিয়ে অবাক হলাম কারণ এখানে বাঙ্গালীদের দেখার মতো সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রেস্টুরেন্ট, সাইবার ক্যাফে, সেলুন, গ্রোসারী, মাংসের দোকান, কাবাব হাউস, কাপড়ের দোকান।

তাও খুচরা নয়! পাইকারী কাপড়ের অনেকগুলো বাংলাদেশী লোকের দোকান। আগে নাকি আরো বেশি দোকানদার ছিল। অর্থনৈতিক মন্দার কবলে অথবা দু্‌ই নম্বরী ব্যবসা করতে গিয়ে ফতুর হয়ে গেছে। মাদ্রিদে শুনলাম মামুদের চেক বেশী। প‌্যারিসে মামুরা তেমন কার্ড চেক করেনা।

কিন্তু এখানে যারা অবৈধ তারা সাধারনত কাজ ছাড়া বাসার বাইরে তেমন ঘোরাঘুরি করেনা। এটি লাভাপিয়েস এলাকায় বাসার ছবি। মাদ্রিদে কোন বাংলাদেশী গেলে এখানে যাবেই। ঈদের কয়েকদিন পর বাংলাদেশ থেকে হাসান, সালমা, কনকচাপা সহ কয়েকজন শিল্পী এখানে অনুষ্ঠান করতে এল। মাদ্রিদ জিরো পয়েন্ট এলাকা, যাকে বলো হার্ট অব মাদ্রিদ... এটি রিয়েল মাদ্রিদের ক্লাব: "সান্টিয়াগো বার্নাবু স্টেডিয়াম" তাদের সমস্হ ট্রফি এখানে রাখা আছে।

টিকেট কেটে প্রদর্শনী হলে সেগুলো দেখা যায়। সিম্বল অব মাদ্রিদ... পাবলো পিকাসো'র একটি পেইন্টিং, রেইনা সুফিয়া মিউজিয়াম থেকে তোলা। অস্কার ডোমিনিংজ এর একটি পেইন্টিং, রেইনা সুফিয়া মিউজিয়াম, মাদ্রিদ। লোকটি গিটার বাজাচ্ছে যেই হাতে সেটি কৃত্রিম হাত, তার একটি হাত নেই। নকল হাত দিয়ে অসাধারণ ভাবে সে গিটারে সুর তুলে... ড্রিল মেশিন নাকের ভিতর ঢুকিয়ে দিল কিন্তু তার কিছুই হলোনা... এই লাল মিয়া শুন্যের উপর বসে হাত-মুখ নাড়াচ্ছে... লোকটি অদ্ভুদভাবে কাঁচের গ্লাসের উপর আঙ্গুলের ছোঁয়াতে গিটারের সুর তুলছে।

টুরিস্ট স্পটগুলোতে এমন আকর্ষনীয় লোকগুলোর দেখা মিলে। অনেকেই তাদেরকে কিছু পয়সা দেয়। মাদ্রিদের পাতাল ট্রেন। ঈদ পালন এবং ১৫ দিন স্পেন ভ্রমন শেষে দীর্ঘ ১৭ ঘন্টা বাস জার্নিতে আবার প‌্যারিস ফিরে আসি....
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।