আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মামা আমার মামা

এডিট করুন

আমার মামা মোট তিনজন। আজকে আমার বড় মামার কাহিনী বলব। উনি যে আমাকে কি পরিমান আদর করতেন কল্পনাও করতে পারবেন না। আমার মতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মামা উনি। একটা উদাহরণ দেই আমার প্রতি উনার আদরের।

তখন মামা আমাদের বাসায় থাকেন। আমাকে নিয়ে খেলাধুলায় মেতে থাকেন। আমার বাবা আমার প্রতি তার এ আদরের আদিখ্যেতা দেখে আর সহ্য করতে না পেরে উনাকে চ্যালেঞ্জ করে বসলেন, উনি আমাকে আসলে অতটা ভালবাসেন না, যদি সত্যিই এত ভালবাসেন তাহলে তার প্রমাণ দিতে হবে। আমার মামা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন। বললেন কি প্রমাণ চান আপনি? আমার বাবা বললেন তোমার ভাগ্নের মুতুন খাও এক গ্লাস, দেখি তুমি কত ভালাবাস তোমার ভাগ্নেকে।

আমার মামা বড় কড়া পাবলিক। উনি যে কি রকম কড়া তা পরে বলছি। উনি আমাকে নেংটু করে বললেন, মামা হিসি করতো দেখি। পরে আমি গ্লাস ভরে হিসি করে দিলাম। উনিয়া আমার বাবার সামনেই খাওয়া আরম্ভ করলেন।

আমার বাবাও কম যায় না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উনি দেখলেন পুরোটা খেয়েছে কিনা। একবার বাধাও দেন নি উনি। আমার মামা গ্লাস শেষ করে বললেন, কি হক সাহেব আর কোন প্রমাণ দরকার আপনার? আমার এই মামা চরম ডানপিটে। অবশ্য আমার সব মামাগুলোই ডানপিটে।

এখন যে কাহিনীগুলো বল তা আমার মা, মামা আর দিদিমার কাছ থেকে শোনা। উনাকে একদিন উনার এক বন্ধু বলল অমাবস্যার রাতে শ্মশান ঘাটে কেউ যদি মরা কোলে নিয়ে কেউ বসে থাকে তবে মাঝরাত্রের দিকে মরা তার কাছে পানি চায়। আমার মামা ঘটনাটা ঠিক কিনা পরীক্ষা করার জন্য বললেন, চল আমরা কাজটা করি। মামার বন্ধু বললেন, আমার অত সাহস নাই ভাই। পারলে তুই যা।

আমার মামা একদিন শ্মশানের এক লোক ধরে এক বেওয়ারিশ লাশের ব্যাবস্থা করলেন। তারপর বাড়ীতে এক বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে যাবার কথা বলে বের হলেন। একটা কলস যোগাড় করলেন। পুরো এক কলস পানি ভরলেন। মরার যাতে পানির অভাব না হয় আর কি! এরপর মামার সব বন্ধুরা মিলে মামাকে নিয়ে শ্মশান ঘাটে মরার মাথা কোলে দিয়ে আর এক কলস পানি দিয়ে মামাকে বসিয়ে দিয়ে সবাই ভাগা দিলেন।

মামা সারারাত মরা কোলে নিয়ে আর এক কলস পানি নিয়ে বসে থাকলেন। কোন খবর নাই মরার। মামা মরাকে কয়েকবার ঝাকুনিও দিলেন। মরা আর ওঠে না, পানিও চায় না। ঐদিকে বাড়িতে খবর চলে গেছে।

ভোর হতেই পুরো গ্রামের মানুষ হাজির। সবাই উৎসুক হয়ে রয়েছে কি ঘটল। সবাই এসে দেখে মামা মরা কোলে নিয়ে বসে রয়েছে। মামা তো তার বন্ধুকে এই মারে সেই মারে। পুরাই কাহিনী।

আর লিখতে ভাল লাগছে না মামার কথা। আমার এই মামা উনার কলিজাটা নিজ হাতে কেটে দিয়ে দিতে পারতেন আমার জন্য, তার এই ভাগ্নের জন্য। এখনো মামার শরীরের ঘ্রাণ মনে পড়ে। শ্যামলা চেহারার হাসিখুসী, চরম বুদ্ধিমান আমার সেই মামা বেশ কয়েক বছর হল মারা গেছেন। আর কোনদিন আমাকে উনি ডাকবেন না মামা বলে।

আর কোনদিন মামাকে জড়িয়ে ধরব না মামাকে। হোটেলে নিয়ে গিয়ে কেউ কোনদিন বলবে না, মামা যা মনে চায় খা, তোর আজকে যা খেতে ইচ্ছে করে খা। ছোট থাকতে মামার হাত ধরে ঘুরতাম। আজ আর সেই হাতটা নেই ধরার জন্য। কেউ আর বাবার নিষেধ অমান্য করে আমাকে মেলায় নিয়ে যাবে না।

আমার একটা মামাতো ভাই। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। খুব কম বয়সে সে তার বাবাকে হারিয়েছে। সে আর কোনদিন তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমুবে না। মামী আর কোনদিন মামাকে ভাত বেড়ে খাওয়াবে না।

সে আমার মামা, আমি তার ভাগ্নে। পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দময় সম্পর্ক। আমার মামা আমাকে খুব ভালবাসত। মামাকে নিয়ে ঘুড়ি উড়াতাম। রাতের বেলা ঘুড়িতে আলো বেধে দিয়ে উড়াতাম।

জ্বলজ্বল করত ঘুড়িটা। যেন একটা ছোট্ট তারা যে অনেক নিচে নেমে এসেছে। রাতের আকাশের দিকে তাকালে আমার শুধু মনে পড়ে সেই ঘুড়িটা কই, যেটা আমাকে মামা বানিয়ে দিয়েছিল, যেটা হারিয়ে গিয়েছিল সুতা ছিড়ে? আমার মামাও সুতা ছিড়ে চলে গিয়েছেন সেই বাত্তি ঘুড়িটার মত। সেই বাত্তি ঘুড়িটার মতই আমার মনে মাঝে মাঝে জ্বলে ওঠে আমার মামার চেহারাটা। পরকাল, আত্মা বলে যদি কিছু থেকে থাকে তবে আমি আবার আমার মামার দেখা পাব।

মামাকে বড় দেখতে ইচ্ছে করে। (বড় বিলাই আপুর ভাগ্নে সম্পর্কিত পোষ্ট পড়ে আমার মামার কথা খুব মনে পড়ে গেল)


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।