আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্যরকম আপনজন-১

এডিট করুন

আপনজন বিষয়টা খুবই অনিশ্চিত। কে যে কার আপনজন তা বোঝা অত্যন্ত কঠিন। ভাই ভাই আপন হয়না। ভাই বোন আপন হয় না। এমনকি পিতা পুত্রও আপন হয় না।

আবার দেখা যায় অপরিচিত একজন, যার সাথে মূহুর্তের পরিচয় সেই আপন হয়ে ওঠে। আমার এক খালা সবসময় আমাকে আর আমার মাকে শোনাতেন, "বিপদ-আপদে আপনজনই ভরসা। এই যেমন আমি তোমাদের আপনজন। " বিপদের সময় উনি উলটা দৌড় দিয়াছিলেন। যাই হোক মানুষের গীবত করাটা ঠিক না।

তা আমার কিছু অন্যরকম আপনজনের কথা বলি। যাদের সাথে আমার মোটেও রক্তের বা আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। প্রথমেই স্মরণ করছি কমলা ফুফুর কথা। উনি আমাদের কারখানায় কাজ করতেন। আমাদের কারখানাটা একটা পরিবারের মত ছিল।

কত জাতের মানুষ যে দেখেছি ছোটবেলায়! কমলা ফুফু ছিলেন তাদেরই একজন। আমার মাকে উনি ভাবী ডাকতেন আর বাবাকে ডাকতেন ভাই। আমার বাবা মা মিলে কারখানা চালাত। আমার মা ছিলেন হয় সবার ভাবী বা খালা। আমি তখন ভালই ছোট।

মানে তখনও নিজে নিজে বাথরুমের পর ছুচু করতে পারি না। মা না থাকলে কমলা ফুফু আমাকে ছুচু করিয়ে দিতেন। আমি প্রায়ই কমলা ফুফুর শাড়ীর আচল ধরে টানাটানি করতাম। আমাকে কোলে নিতেন। আমাদের কারখানা একসময় ব্যাবসায়িক বিপর্যয়ের মুখ দেখে।

অনেকেই তখন চাকরী ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু ঐযে বললাম আমরা ছিলাম একটা পরিবারের মত। তাই অনেকেই প্রায়ই আসত আমার মায়ের সাথে দেখা করতে, দু চারটা সুখ দুঃখের কথা বলতে, কিছুক্ষন খাজুইরা আলাপ করতে। কমলা ফুফু আমাদের কারখানা ছেড়ে একটা চানাচুর কারখানায় চাকরী নেন। আমার ছোটবেলাটায় আমি অনেক দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাকে দেখেছি দেশীয় পণ্য উৎপাদনে তাদের শ্রম দিতে।

আমার মতে সেই সময় ছিল একটা স্বর্ণযুগ। বিসিক শিল্প নগরী প্রতিষ্ঠার ফলে একরকম বিপ্লব ঘটে। দেশীয় পণ্য উৎপাদনে এক নতুন উদ্যোমের সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত এটা ধরে রাখা যায় নি। একে একে উদ্যোক্তারা হারিয়ে যায়।

বিদেশী পণ্যের সয়লাব ঘটে। সত্যি বলতে আমি যদিও ছোট ছিলাম খুব কিন্তু আমার পারিপার্শ্বিকতার কারনে অনেক কিছু বুঝতে শিখেছি। এখনকার যুগটা হয়ে গেছে চাকরীর যুগ। সাহসী উদ্যোক্তা এখন আর পাওয়া যায় না। কারন এখন নতুনদের জন্য ব্যাবসা মানেই লোকসান।

তাই সবাই ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার হতে ব্যাস্ত। একটা চাকরী, একটা ফ্লাট, একটা বউ, দুটো বাচ্চা, একটা গাড়ী, বাচ্চাদের ভাল স্কুল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই গন্ডীতে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে অনেকে। রোদ বৃষ্টি মাথায় করে, দিনে রাতে না ঘুমিয়ে, একটা ইটের গাথুনী দিয়ে, তার ভেতর যন্ত্রের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে, পণ্য উৎপাদনের যে কি আনন্দ তা যে করেছে সেই জানে। মূল সুর হতে ইতিমধ্যে কয়েক মাইল সরে এসেছি।

যা বলছিলাম, কমলা ফুফুর কথা। কমলা ফুফু তখন এক উদীয়মান চানাচুরের কারখানায় কাজ নিয়েছেন। আমাদের বাসায় যখনি পারতেন, অন্তত মাসে একবার হলেও আসতেন। আপনাদের সেই আমলের টিফিন বক্সের কথা মনে আছে কিনা জানিনা। গোল গোল টিনের বাটি।

একটা খাচা। সবার উপরের বাটিটার ঢাকনায় একটু গর্ত লবন রাখার জন্য। ফুফু আমার জন্য সেই সবার উপরের বাটিটায় করে চানাচুর নিয়ে আসতেন। আমি রাস্তা দিয়ে জঙ্গল দিয়ে ঘুরতাম আর চানাচুর খেতাম। আমাকে কোলে নিতেন।

আমি তার আচল ধরে টানাটানি করতাম। সবুজ রঙ্গের একটা শাড়ী প্রায়ই পরতেন ফুফু। মাঝখানে একবার উনার শরীরে পানি এসে যায়। অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন অনেক ফুলে গিয়েছিলেন ফুফু।

এরপর সুস্থ হয়ে উনি আবার আমাকে কোলে নেন। আমি ভাবি যাক কমলা ফুফু আমাকে ছেড়ে চলে যায় নাই। আমার শিশুমন আনন্দে নেচে ওঠে। শিশুরা আপনজনের ক্ষেত্রে খুবই স্বার্থপর!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।