আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাচীন ঈদগাহ ৩৬৯ বছর ধরে চলে আসছে ঈদের জামাত

উন্মাদ আমি আমার লিখা পড়বার প্রয়োজন আছে কি

আজকের মতোই ২৯ রমজান ছিল সেদিনও। ১৭২৯ সালের কথা। বাংলায় মুঘল শাসন চলছে। ১৬১০ সালে বুড়িগঙ্গাপারের ঢাকা আসীন হয়েছে রাজধানী শহরের মর্যাদায়। সুবাদার তখন দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খাঁ।

ত্রিপুরা জয়ের খবর এল সুবাদারের কাছে। তিনি এত খুশি হলেন, যেন ঈদের আগেই মাতোয়ারা হলেন ঈদের আনন্দে। মুনতাসীর মামুন তাঁর পুরানো ঢাকার উত্সব ও ঘরবাড়ি বইতে উল্লেখ করেছেন, সুবাদার তত্ক্ষণাত্ হুকুম দিলেন গরিবদের মধ্যে হাজার টাকা বিতরণের। শুধু তাই নয়, ঈদের দিনে সুবাদারের আবাস ঢাকা কিল্লা থেকে ঈদগাহে যাওয়ার পুরো পথের দুই পাশে তাঁর নির্দেশে ছড়ানো হলো মুঠি মুঠি মুদ্রা। এটিই ঢাকার সবচেয়ে পুরোনো ঈদগাহ।

এবারও সেখানে আদায় করা হবে ঈদের নামাজ। এখন এটি ধানমন্ডির শাহি ঈদগাহ নামে পরিচিত। ‘তিনি এমনই একটি ঈদগাহ নির্মাণ করেছেন, উচ্চতায় সেটি চাঁদের টুকরার ঈর্ষার বস্তু। তার মিম্বর শুভ মিনার এবং শরীয়তের তারকার আবাসস্থল। বিশেষত ন্যায়বিচারক আল্লাহ তাআলা তাঁকে এ প্রাসাদ নির্মাণ করার ক্ষমতা দান করছেন (অনু: মুনশী রহমান আলী তায়েশ)।

’ মেহরাবের ওপর লাগানো শিলালিপিতে এমনই বলা হয়েছে ঈদগাহটি সম্পর্কে। আজ থেকে ৩৬৯ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল এই ঈদগাহ। টিকে আছে এখনো। এখানে প্রতিবছর দুই ঈদে নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। তবে শিলালিপিতে যেমন বলা হয়েছিল এর মিনারের উচ্চতা সম্পর্কে, বাস্তবে তা আর তেমন নেই।

বরং এর চারপাশ দিয়ে এত সুউচ্চ ভবন উঠে গেছে যে ধানমন্ডির এই ঈদগাহ তো বটেই, এর মিনারগুলোও আর দেখা যায় না একেবারে কাছে গিয়ে না দাঁড়ালে। এটি নির্মাণ করেছিলেন মীর আবুল কাসেম, ১৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজা ছিলেন তখন বাংলার সুবাদার। তাঁর দেওয়ান আবুল কাসেম। ঢাকার এটিই প্রাচীন ঈদগাহ এবং মুঘল আমলের যে স্থাপত্যকর্মগুলো এখনো মোটামুটি ভালোভাবে টিকে আছে, এর অন্যতম।

মুঘল আমলে সুবাদার, নায়েবে নাজিম, অমাত্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই ঈদগাহেই নামাজ আদায় করতেন। মূল শহর থেকে বেশ দূরে ছিল ঈদগাহটি। মুনতাসীর মামুন উল্লেখ করেছেন, ‘এর পাশ দিয়ে তখন বয়ে যেত পান্ডু নদীর একটি শাখা। এই শাখা জাফরাবাদে সাতগম্বুজ মসজিদের কাছে মিলিত হতো বুড়িগঙ্গার সঙ্গে। ’ মুঘল শাসক ও তাঁদের অমাত্যরা বেশ জাঁকজমকের সঙ্গেই বুড়িগঙ্গা পারের ঢাকা শহর থেকে প্রায় এক ক্রোশ দূরের এই ঈদগাহে আসতেন নামাজ আদায়ের জন্য।

মুঘল আমলের পর ঈদগাহটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ইংরেজ আমলে পুরো এলাকাটিই জঙ্গলে ভরে ওঠে। সংস্কার না করায় ঈদগাহের প্রাচীর জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। মুনশী রহমান আলী তায়েশ তাঁর তাহরিখে ঢাকা বইতে লিখেছেন, ‘আজকাল এটি ভগ্নাবস্থায় আছে। এর আশপাশের মুসলমান এবং শহরের অধিকাংশ লোক ওখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

শহরের মুসলমান মত্স্য ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর ওখানে একটি মেলার আয়োজন করেন। এতে হাজারো লোকের সমাগম হয় এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা চলে। ’ এরপর বুড়িগঙ্গা দিয়ে বহু পানি গড়িয়েছে। ইতিহাসের বহু উত্থান-পতন ও ঘটনাপ্রবাহ বয়ে গেছে এই শহরের ওপর দিয়ে। তবে ধানমন্ডির শাহি ঈদগাহ টিকে গেছে বিলুপ্তির কবল থেকে।

বাংলা পিডিয়ার তথ্যে দেখা গেছে, ১৯৮১ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ করছে। চারদিকে ১৫ ফুট উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ঈদগাহের পশ্চিম দিকের প্রাচীরটিই কেবল মুঘল আমলের। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৮ সালে সংস্কারের সময় অন্য তিন দিকের প্রাচীর নির্মাণ করেছে। প্লাস্টার করা এই প্রাচীরের শীর্ষ প্রান্ত পারস্যরীতির ‘মোরলোন’ নকশাখচিত। বন্যা বা বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য চার ফুট ভূমি উঁচু করে ঈদগাহটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

লম্বা ১৪৫ এবং চওড়া ১৩৭ ফুট। চার কোণে রয়েছে অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ। পশ্চিম প্রাচীরের মাঝ বরাবর প্রধান মেহরাব। আরও দুটি ছোট আকারের মেহরাব আছে এর দুই পাশে। প্রধান মেহরাবটি অষ্টকোনাকৃতির।

ভেতরের দিকে খানিকটা ঢালু খিলান আকৃতির। মেহরাবগুলো দেয়ালের আয়তাকার ফ্রেমের ভেতরে অবস্থিত। প্রধান মেহরাবের দুই দিকে আছে বহু খাঁজবিশিষ্ট নকশা করা প্যানেল। এর উত্তর পাশেই তিন ধাপবিশিষ্ট মিম্বর। ধানমন্ডির ৯ নম্বর সড়কের পাশ দিয়ে গেলে ঈদগাহের পুরো কাঠামোটি দেখা যায়।

দক্ষিণ পাশে শাখা বিছিয়ে ছায়াময় করে রেখেছে বহু বছরের পুরোনো তেঁতুলগাছ। সেখানেই গাড়ি রাখার জায়গা। উত্তর দিকের প্রাচীর বরাবর মেহগনির সারি। কয়েকটি নারিকেল গাছ পশ্চিমের দেয়ালের পাশে। ভেতরের মাঠ সবুজ ঘাসে ঢাকা।

সেখানেই শত শত বছর ধরে ঈদের নামাজ আদায় করছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। মুঘলেরা আজ আর নেই। কিন্তু এই শহরে আজও রয়ে গেছে তাদের কালজয়ী বহু কীর্তির নিদর্শন ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ হয়ে। এখানে ঈদের নামাজ শেষে সবাই চলে যাবেন নিজ গন্তব্যে, তবে মাঠটি থাকবে আগামী দিনের ঢাকার নাগরিকদের জন্য। প্রথম আলোর পাতা থেকে নেয়া ....................


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।